আজ মৃন্ময়ের একটু আগেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। চোখটা মেলতেই তাঁর বুকের সাথে লেপটে থাকা মিলির মুখটা দেখতে পেলো। চোখটা মেলেই প্রিয়তমা স্ত্রীর কোমল শিশু সুলভ মুখটা দেখে মনের মাঝে সুখে থাকার অনুভুতিটা আরও একবার নাড়া দিয়ে উঠলো। ঘড়িতে ৬ টা বেজে ২৫, এখনি উঠে পড়তে হবে। আজ অফিসে বেশ জরুরী কাজ আছে। নিজেকে মিলির বাধন থেকে ছাড়িয়ে ফ্রেশ হবার জন্য উঠে গেলো। মিলি তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন। ওর ঘুম কাতুরে বউটা কি অদ্ভুত সুন্দর করে ই না ঘুমোচ্ছে। এই রে সময় যে থেমে নেই, একটু পরেই যে অফিসের গাড়ী চলে আসবে। মৃন্ময় চটপট হাতমুখ মুছে কিচেনটার দিকে এগিয়ে গেলো। প্রতিদিন সকালে ব্রেকফাস্টটা মৃন্ময়ই বানায়। আজও এর ব্যাতিক্রম হলো না। স্যান্ডউইচ আর কফির কাপ দুটো নিয়ে বেডরুমে চলে আসলো। মিলি তখনও ঘুমিয়ে। মিলিকে ঘুম থেকে জাগাতে কিছুতেই যে মন চাইছিল না, যে কষ্ট করে মেয়েটা সারাটাদিন। মৃন্ময় তো সারাদিন অফিসেই থাকে, ও ই তো একা একা এতো বড় বাড়ীটাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখে। মৃন্ময় রাতে কি খাবে সেই নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। দুপুরে একা একা কি খায় কে জানে, হয়তো কোন মতে এটা ওটা ছুঁয়ে রেখে দেয়। হাতের ব্রেকফাস্ট এর ট্রে টা বেড এর পাশে রাখা সাইড টেবিলে রেখে মিলির পাশে বসলো। একটু ঝুঁকে মিলির কপালটাতে একটা চুমু দিয়ে ডাকল " মিলি " ? উঠবেনা , সাড়ে সাত টা বেজে গেছে। মিলি ওর হাতটা বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আরো একটু আয়েশ করে শুলো। মৃন্ময় তাঁর আদরের বউটার এ কাণ্ড দেখে হেসে দিয়ে বলল আমার যে অফিস আছে, দেরী হয়ে যাচ্ছে। তুমি না উঠলে আমি কিভাবে যাই। এই বলে আবার সে মিলির কপালে একটা চুমু খেলো। মিলি এবার চোখ খুলল, দুই হাত দিয়ে মৃন্ময়ের গলাটা জড়িয়ে ধরে ওকে জিজ্ঞেস করলো কখন উঠেছ? ক'টা বাজে ? এইতো একটু আগেই, মনে হয় সাড়ে সাতটার বেশী বাজে, মৃন্ময়ের উত্তরে যেন মিলির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। চোখদুটো বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল তাহলে আমাকে আগে কেন উঠাও নি ? এখন তুমি কি খেয়ে যাবে, এখনি তোমার গাড়ী এসে পড়বে যে। মৃন্ময় মিলির কথা শুনে হেসে দিয়ে ওর থুঁতনিটা একটু নাড়িয়ে বলল মাড্যাম ব্রেকফাস্ট রেডি। আপনার এতো চিন্তা করার কোন কারন নেই। মৃন্ময়ের কথা শুনে মিলি ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মৃন্ময় হাতের আঙ্গুল দিয়ে তুরি বাজিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো এই যে ম্যাডাম সকাল সকাল কোথায় হারিয়ে গেলেন ? মৃন্ময়ের কথায় যেন মিলি চমকে উঠলো। মিলি মৃন্ময়কে বলল আচ্ছা প্রতিদিন সকালে আমার আগে উঠে রোজ দুজনার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাও, একদিনও ভুল করোনা। কিভাবে পারো তুমি একটু বলবে আমায় ? উত্তরে মৃন্ময় বলল জানিনা তো, কখনো তো ভেবে দেখি নি। মিলি বলে উঠলো মনে আছে মৃন্ময় বিয়ের আগে তুমি পায়ই বলতে যে বিয়ের পরে প্রতিদিন ভোরে তুমি আমার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাবে, আর আমি বলতাম যে বিয়ের আগে সব ছেলেরাই এমন অনেক কিছু বলে কিন্তু বিয়ের পরে অনেক বদলে যায়। না তো, এমন বলেছিলাম নাকি মৃন্ময় দুষ্টুমির ছলে বলে উঠলো ? মিলি মৃন্ময়ের বুকে আস্তে একটা কিল দিয়ে বলল ধুর ফাজলামো করোনা। মৃন্ময় হেসে বলল হুম মনে আছে। আর এটাও মনে আছে যে আমি বলতাম, দেখো আমি বেঁচে থাকলে ঠিকই আমার কথা আর কাজের মিল দেখিয়ে ছাড়বো। মিলি মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল তাই ভেবেই তো আমি নিশ্চুপ হয়ে ছিলাম। আজ ৬/৭ বছর পরেও তুমি একটুও বদলাওনি। এত গুলো বছরে একটা দিন ও তোমার ভুল হয়নি। আমার প্রতি তোমার ভালবাসা এতটুকু কমে যায়নি। মৃন্ময় মিলি কে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলল কখনো কমে যাবেও না। মিলিও ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, ওর বুকে নিজের ঠোট দিয়ে ছবি এঁকে দিতে লাগলো। মৃন্ময় তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বাড়ির নীচে অফিসের গাড়ীর হর্নের শব্দে দুইজন যেন পৃথিবীর মাঝে ফিরে এলো। দুইজন দুইজনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। মৃন্ময় মিলির গালদুটো ধরে নাড়া দিয়ে বলল, সেই লেট তো হয়েই গেলো; এখন যে যেতে হবে, গাড়ী যে চলে এসেছে। মিলি ব্রেকফাস্ট এর ট্রে টার দিকে হাত বারাতে বারাতে বলল ব্রেকফাস্ট টা তো করে যাও, আর একটু লেট হয়েছে তো কি হয়েছে আমার জন্যই তো হয়েছে আর কারো জন্য তো হয়নি। মিলির কথা শুনে মৃন্ময় মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলল তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি কফিটা গরম করে নিয়ে আসছি...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:২৬