আইটি সেক্টরের সবাই মোটামুটি ভার্চুয়াললি একে অপরকে চিনে। লিঙ্কডইন, ফেইসবুক,জি প্লাস এই সুবাদে বাংলাদেশের অনেক সফটওয়্যার ফার্মের লোকদের সাথে আমাদের পরিচয়। লিঙ্কডইনের মাধ্যমে পরিচয় হল তেমনি একজনের সাথে আমার বন্ধু সার্কেলের মানে আমি সহ সবগুলো মেয়ের। ইয়াহু আর জিমেইল চ্যাটেও অ্যাডেড হলেন জনৈক মাসুক খান। শুরুতেই বলে রাখা ভাল আমাদের জব সেক্টরে এখনও করাপ্সন ঢুকে নাই, তাই পরিচিত মানুষ মানে সিভি ড্রপ তারপর নিজ যোগ্যতাতেই জব পাওয়া যায়। তাই ভার্চুয়াললি সবাই চেষ্টা করি পরিচিতি বাড়ানোর!
শুরুতে ঠিক’ই ছিল, হ্যাই-হ্যালো কেমন আছে, কি ল্যাঙ্গুয়েজে কাজ করেন- কোন কোন সফটওয়্যার বানালো আপনার অফিস। অতঃপর বদলালো লোকটার কথা বলার প্যাটার্ন। যেমন আকদিন তার অফিসে সিভি দিয়ে তাকে জানালাম ব্যাপারটা। উনি বললো সিভিটা তাকেও যেন ফরওয়ার্ড করে দেই। দিলাম। এরপর মাসুক জানালেন মেইল পাই নাই। আমি বললাম স্পাম চেক করতে। উনি বললেন আমি তো জানি স্পার্ম দেয়া যায়, চেক করব ক্যামনে? মেজাজটাই খারাপ হলও।
এইতো শুরু। পরে বন্ধুদের কে বলতেই এবং লোকটার কথা বলতেই জানলাম লোকটা নাকি এমন, এককথায় পার্ভাট। সবার সাথেই নোংরা কথা বলে চান্স পেলে আর ভালো আছেন টাইপ প্রশ্নরে উত্তরেও।
তাই ঠিক করলাম তারে ভার্চুয়াললি’ই সাইজ করব।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে দুইটা ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললাম, একটা বাংলাদেশী মেয়ের অন্যটা ইউরোপিয়ান একটা মেয়ের নামে। ফেইক অ্যাকাউন্ট ক্যামনে বোঝা যায়, তা আমি জানি’ই তাই এমন কোন ফাঁক রাখলাম না, জাতে তার বিন্দুমাত্র সন্ধেহ হয়। দেন ফ্রেন্ড রেকুস্ট সেন্ড অ্যান্ড আক্সসেপ্টেড। তারপর চ্যাটিং শুরু। হারামি লোকটা একটা ছবি আপ করতেই মেসেজ দিলে লাগলো তুমি সুন্দর, তুমি আকর্ষণীয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর একদিন শুরু করলো সেক্স নিয়ে কথা বলা। এইটাই চাইসিলাম! দুই অ্যাকাউন্ট থেকে লোকটার সব কথা ইনবক্সে রেখে দিলাম। এরই মধ্যে মাসুকের আরও দুইটা অ্যাকাউন্টের খোঁজ সে দিল যেগুলো হারামিটা কেবল সেক্স চ্যাটিং এর কাজে উইজ করে! এবং স্ক্যাইপ অ্যাকাউন্ট আছে যা সে ভিডিও চ্যাটে উইজ করে। রোজ রাত ১টা ২টা পর্যন্ত সে অনলাইনে এইসব চ্যাটিং করে। তার বউ আছে, কিন্তু সল্প শিক্ষিত বলে সে তাকে পছন্দ করে না। তার ১০ বছরের একটা ছেলেও আছে।
তারপর মনিটরিং শুরু করলাম। কখন সে অনলাইনে থাকে কখন থাকে না। কবে কবে একদম থাকে না তাও লিস্ত করলাম। দেন তার চ্যাটিং এর স্ক্রীন শট নিলাম, তার ছবি সহ, অর্থাৎ তার আসল অ্যাকাউন্টের ছবি। দেন আমার প্রোফাইলে কেউ যেন কিছু লিখতে না পারে কিছু ট্যাগ না দিতে পারে সব অফ করে দিলাম। মাসুকের আসল অ্যাকাউন্টের সবাইকে ফ্রেন্ড রেকুস্ট পাঠালাম যেন ওর কর্ম সবাইরে জানাতে পারি। মাসুক অফলাইনে এমন সময় ওনার চ্যাটিং দিলাম ওনার ওয়ালে পোস্ট করে। চ্যাট অপশন অফ করে রাখলাম। অন্য ব্রাউজারে খোলা রাখলাম অন্য অ্যাকাউন্টটা, ঘন্টা খানেকপর মাসুক অনলাইন, সাথে সাথে ওই অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভিটেডেড!
এই করলাম টানা দিন দশেক। আমি অনলাইন হলেই পোস্টটা আবার রি- পোস্ট করি, এবং কেউ না কেউ মাসুককে জানায় মাসুক সাথে সাথে অনলাইন এবং আমার অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভিটিভ- মাসুক কিছুই দেখে না। উনি তখনও পর্যন্ত জানেন না আমি কি পোস্ট দিচ্ছি।
সারমর্মঃ যারা আজে বাজে চ্যাটিং করে মজা পান, তাদের বলছি- ভাই সাবধানে কইরেন, এইরকম আপনার সাথেও করতে পারি। নিজেরে বদলান, দুনিয়াটা এখনও আপনার মতন পুরোপুরি নোংরা হয়ে যায় নাই।