প্রেম আর বেল একই স্বভাবের, সময় হলে পড়বেই--
প্রেম কি যাচিলে মিলে, আপনি উদয় হয় শুভযোগ পেলে;
- এ সেই অর্ধকুম্ভ, পূর্ণচন্দ্রের মত,
গ্রহে গ্রহে যোগ হবে তবেই হবে।
আমিই সেই পিয়ন কোর্টের পেয়াদা, সমন আমি ধরাবই;
চিঠি আমি গুজবই!
যখন বাড়ি ফিরছে, তখন হবে না; ধোলাইয়ের ভয় আছে!
যখন পাড়া ছেড়ে যাচ্ছে, তখন পেছন পেছন যেতে হবে--
বে-পাড়ায় গিয়ে নির্জনে কুটুস।
এবার সুযোগ এসে গেল- সে চলছে, আমি চলছি-
মাঝে হাত কুড়ির ব্যবধান-বেশ যাচ্ছিল!
হটাৎ ঘুরে গেল! আবার বাড়ী মুখো;
আমার পাশ দিয়ে হনহন করে হেঁটে বাড়ী চলল-
-কিছু ভুলে-টুলে গেছে হয়তো!
এরকম মেয়ে-ছেলে আমি লাইফে দেখিনি!
-এসব মেয়ে-ছেলে সংসার করবে কি করে?
যার কোন মতি-ই স্থির নেই'
আমিও যদি হটাৎ ফিরি, তাহলে লোকে সন্দেহ করতে পারে
তাই অকারণে বেশ কিছু-দূর সামনে হেঁটে গেলাম;
প্রেমের ভীত আর বাড়ীর ভীত এই জাতের ব্যাপার-
খেটে-খুঁটে তৈরী করতে হয়!
রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, বেকার একটা চক্কর মেরে
আমি এলুম গোপীদা-র দোকানে, গোপীদার কচুরীর দোকান।
গোপীদা বললে - কী হল? তুমি গেলে ও-দিকে, ও এলো এ-দিকে
ধেড়িয়েছ নিশ্চয়ই! কেস-টা কি?
--বললাম কেস আবার কি; নেঁজে খেলছে-
মহা ধরিবাজ, আগেই বলেছিলুম;
মেয়ে-ছেলে কি চিজ্-রে বাবা-
শোন বসন্ত, তুমি একটা কাজ কর!
ছোট-বেলা থেকে শুনে আসছি- বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা;
বসুন্ধরা মানে তো মেয়ে-
তুমি- তুমি, তুমি বীর হও!
বীর হও? বীর হব কি করে? যুদ্ধ করবো?
আরে-শোন না; আমাদের পাঁড়ায় একটা বড় বদ-মেজাজী ষাঁড় আছে জানো- তো ?
ওই ষাড়টার পিঠে তুমি চেপে বসে তুমি পাড়া-মহল্লা প্রদক্ষিণ কর।
-- প্রমাণ করো যে তুমি বীর।
তোমার খুব নাম হবে, আর সেই নামের-টানে সে তোমার কাছে আসবে।
আমি জানি এরকম রসিকতা আমায় অনেক সহ্য করতে হবে-
গোপীদা বললে, শোন বসন্ত; আর একটা কাজ তুমি করতে পারো।
তুমি এখন বেশ কিছুদিন শিবের মাথায় জল ঢালো-
মেয়েরা যদি শিবের মাথায় জল ঢেলে বর পায় তাহলে তুমিও বউ পাবে।
কিন্তু, বৌ পেলে খাওয়াবে কি? রোজগার-পাতি তো কিছু নেই,
- নাহ্, লোকটার মাথায় কিস্সু নেই, সব গুলিয়ে ফেলেছে;
প্রেম আর বিয়ে - সব গুলিয়ে ফেলেছে এক্কেবারে।
সারাটা জীবন ট্যাটে বসে পয়সা আর পয়সা-
আর ঢামার-মতো একটা ভূঁড়ি।
না পড়েছে কবিতা, না পড়েছে উপন্যাস-
আরে - প্রেম হচ্ছে- খুকখুক কাশি, রক্ত, সমাধি, আধুনিক গান-
তোমার সমাধি ফুলে-ফুলে ঢাকা;
প্রেম বলে নেই, তুমি নেই-
প্রেমিক মরলে চিতায় পুড়ানো হয় না; সমাধি দেয়া হয়;
আর তার পাশে থাকে শিউলি, বকুল---
গোপীটার যদি রবীন্দ্রনাথের গানটাও একটু মন দিয়ে শুনতো-
তাহলে অনেক কিছু বুঝতে পার-তো!
আরে পড়তে হবে না, শুধু কান-টা গানের দিকে রাখা;
এ গানটা প্রায়ই হয়- আমি জেনে-শুনে বিষ করেছি পান'
গান-টা আমার একটু একটু আসে- জানালা খুললে যেমন উনুনের ধোঁয়া আসে
অটোমেটিক আসে!
বেশ ধরেছিলুম- জেনে-শুনে বিষ করেছি পান'- গলা পরিস্কার,
সুর-টাও বেশ লেগেছিল - গোপে পাঠা বলল-
এতো আত্মহত্যার কেস!
বুঝে গেলুম- গোপী যে লেভেলের লোক তাতে
ওর বাপের ক্ষমতা হবে না এ গানের মানে বোঝার!
--আরে প্রেম যে একটা কত্ত বড় কাজ, কী দহণ, কী জ্বালা-
গোপীর একটাই জ্বালা, ধারের পয়সা আদায়ের জ্বালা
পাওনাদারের কাছে তলব করার জ্বালা;
একবোরে কোর্স ম্যাটেরিয়েল- কী আর করি!
নিজেই আপন মনে গাইতে লাগলাম-
"প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
যতই দেখি তারে ততই দহি-
আপন-মন জ্বালা নিরবে সহি
তবু পারিনে দুরে যেতে - মরিতে আসি
লইগো বুক পেতে অনল বান- আমি জেনে-শুনে বিষ করেছি পান-
রবীন্দ্রনাথ ইজ রবীন্দ্রনাথ, কি বোধ, পারসেপশন, কনসেপশন, রিয়্যালাইজেশন-
সকলের মনে ঢুকে বসে আছে- ই্শ্বরের মতো।
- এই গান তো আমার জন্যই লেখা;
প্রেমের একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি শরীর-টাকে করে দেয় জলের ট্যাংক।
কথায় কথায় জ্বল এসে যায় চোখে ।
লংকা চিবোলে নাকের জল, আর প্রেমে পড়লে চোখের জল।
--আর সংসারে ঢুকলে চোখের জল নাকের জল দুটোই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২৮