গাইবান্ধার যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা কুচখালী চর। এখানে থাকেন ৬৫-এর উপরে বয়ষ মরিয়ম। যমুনা ভীটা কেড়ে নিয়েছে ২৩ বার। স্বামী হারিয়েছেন এক যুগ আগে। আর সংসারের আয়ের উৎসে থাকা ছেলেও মারা গেছে এক বছর আগে।
স্বাদ-আহ্লাদ নামের শব্দও নেই মরিয়মের জীবনে। শেষ বেলায় এখন শুধু দিনে অন্তত দু’বার খেতে পাবার চাওয়া তার। তবে সেই আশাও ধুসর এখন।
পেশাগত কাজেই আসা যমুনা বুকে জেগে থাকা কুচখালি চরে। মরিয়মের ঘরে ঢোকার সময় মনে হলো পরিত্যক্ত কোন গোলয়া ঘরে এসেছি। কয়েকদিন আগেই ঘর থেকে নেমেছে বন্যার পানি। খর, কুটার ঘরে একটি ভাঙ্গা খাট আর একটি ট্রাঙ্ক। ট্রাঙ্ক খুলে দেখাচ্ছিলেন মরিয়ম। সারাজীবনের সম্বল বলতে একটি কাতা, থালা আর গ্লাস।
দুই দিন আগের ভাত শুধু কুমরা ভর্তা দিয়ে খেয়েছেন কেন জিজ্ঞেজ করতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। বললেন, জমি নাই, আয়ের লোক নাই, নিজে খাটতে পারি না, সহয়-সম্বল কিছুই নাই, নাই আপনজন। তাই চেয়ে যা পান তাই খেতে হয়। পরশুদিন উত্তর পাড়া থেকে পোয়া খানেক চাল চেয়ে এনেছেন। তাই রান্না করে পার করলেন দুই দিন। সবশেষ কবে মাংস বা মাছ খেয়েছেন তা মনে নেই মরিয়মের।
ঢাকায় বাস করে বোঝা মুশকিল কত কষ্টে থাকতে পারে মানুষ। প্রাণী হিসেবে যেহেতু জন্ম, মৃত্যু অবধারিত। তবে মৃত্যুর জন্যও যে মানুষ অপেক্ষায় থাকতে পারে, মরিয়মকে না দখলে বুঝতাম না।