জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে তিন বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এক ব্যক্তির মৃত্যু কামনা করে ফেসবুকে লেখায়।
আমার জীবনে দু'বার খুব করুণ পরিস্থিতিতে এমন শব্দাবলী শুনতে হয়েছে।
আমার বাবা ৬৬ বছর বয়সে আকস্মিকভাবে হার্ট এটাকে মারা যান। আমার বোনেরা শোকে প্র্যায় উম্মাদের মত হয়ে যায়। রাতেই মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন বাড়িভর্তি মানুষ। আমার মামাও এলেন। মামাটি স্লিম-সুদর্শন, আমার বাবার ব্যাচমেট, অর্থাৎ সমবয়সী। তাঁকে দেখে কিছুক্ষণ পরে আমার এক বোন কাছে গিয়ে বিলাপের মধ্যে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল - "আমার বাবা কেন মরল। আপনি মরতে পারলেন না ?" মামা খুব কষ্ট পেয়েছেন বুঝলাম। খুব লজ্জিত বোধ করলাম, এবং হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। এই মামা খুব সফল জীবন কাটিয়েছেন। দু দেশের অরাজনৈতিক মন্ত্রী হয়েছেন। পঁচানব্বই বছর বয়সে যখন হার্ট এটাক হলো, ছেলেকে বললেন হাসপাতালে না নিতে। ছেলে দ্বিধায় ছিল - বাবার ইচ্ছা রাখবেন, না জোর করবেন। তিনি সেদিন আমার বাবার মতই প্রায় বিনাকষ্টে মারা যান।
আমার মা ছিলেন মামার কয়েক বছর ছোট। সারাজীবন ডায়াবিটিসে ভুগেছেন। তবু বেঁচেছিলেন একানব্বই পর্যন্ত। রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা যান।
আমার বোনদেরর স্বামীগুলোর আয়ূ খুব কম ছিল। একজন ছাড়া, পঞ্চাশ-ষাটেই সবাই ঝরে পড়ে। একজনকে কর্মস্থল সিরাজগঞ্জে হার্টে এটাকের পরে ঢাকায় এনেও বাঁচানো যায়নি, ২৯টা ব্লক ছিল। যখন শবদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এলো শোকের অসহনীয় মাতমে মনে হচ্ছিল বাড়ি থেকে পালাই। এমন সময় বিলাপরত তাঁর একমাত্র সন্তান, আমার খুবই ভদ্র নম্র বুদ্ধিমতী প্রিয় ভাগ্নী হঠাৎ আমার সামনে এসে বলল - "আমার আব্বু কেন, আপনি মরতে পারলেন না।" আমি একদম হতবাক হয়ে তার শোকের গভীরতাটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।
কারো মরণ কামনা করা অশোভন, কিন্তু তাই বলে তিন বছর জেল? যদি কেউ বলে "আপনার আই কিউ ১০০ হবে না, পাশ করেছিলেন বেবী মওদুদের সাহায্যে, আপনার স্বামী আপনাকে আর পছন্দ করত না, এ জন্য আপনি তার চিকিৎসার ভালো চেষ্টা করেন নি - তাহলে সেইসব কেমন দেশদ্রোহ মামলা হবে ?
ক' বছর করে জেল?