বোঝা যাচ্ছে না কোথায়। হাল্কা আলোয় অনেকে। খুব ঠাহর করলে মুখ দেখা যায়। আবার পরমুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। ইশারা আছে, নিশ্চয়তা নেই। শব্দের খেলাতেও তাই। শোনা যায়, আবার মনে হয় ভুল শুনেছি। সব চেয়ে মুশকিল হলো মনে হচ্ছে একটি শরীরের ভেতর দিয়ে আরেকটি চলে যাচ্ছে। অবলীলাক্রমে। যাহ, তাই কি হয় নাকি। সবই মনের ভুল, নাকি এটাই আসল সত্য!
শোনা গেল কন্ঠস্বর।
- এই একটা জাঙ্গিয়া দেতো আমায়।
তখন খেয়াল করা গেল, আসলে এখানে কারো পরনেই কোন সুস্পষ্ট বস্ত্রখন্ড নেই। ব্যালে নাচের সময় ছেলেরা যেমন পরে। ন্যাংটো নয়, শরীরের ভঙ্গিমা রেখা দিয়ে ধারণ করে রাখা হয়েছে। তখন কেউ খেয়াল করলে বুঝত আসলে কন্ঠস্বরও হাওয়ার রিনি রিনি দিয়ে তৈরী, কোন কাঠিন্য নেই কোথাও। তবু বৈচিত্র আছে। প্যাটার্ন আছে। এবং সবশেষে অর্থ আছে।
ভদ্রলোকের কথায় একে একে পায়জামা, গেঞ্জি, পাঞ্জাবী, ওয়েস্টকোট এসে হাজির। এখন অবয়ব আরো সুস্পষ্ট হলো। দীর্ঘ দেহ, গোঁফ সবকিছুই চেনা গেল। তবু সব রেখা সম্পূর্ণ হলো না। নীলাভ একটা আলোয় সব আবৃত হয়ে রইল, যা আলো আর আঁধারের মাঝামাঝি। যাতে ইচ্ছা করলে সব দেখা যায়, আবার ইচ্ছা না করলে সব লুকিয়ে থাকে।
দর্শক যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তাঁর কাছে আরেকটা মূর্তি দেখবেন। এনার পরিচ্ছদ টাইটফিট - ব্যালে নর্তকের মতই, কিন্তু চশমা চোখের গর্ত ঢেকে রেখেছে।
প্রথম জন বললেন - আমার আবার সেই বক্তৃতাটা দিতে ইচ্ছা করতেছে।
দ্বিতীয় জন বললেন। আই ডোন্ট সি এনি প্রবলেম। আরো কিছু লোক ডাকা যাক। জীবন তো এখন শুধু অতীত নিয়েই।
একে একে অনেক লোক এসে বিশাল আঙিনা ভরে দিল। প্রথম জন বললেন- আরে আমার ইয়াং ফ্রেন্ডরা কই।
বাঁটকু মত একজন কারাকুল ক্যাপ মাথায় বললেন - আপনার ইয়াং ফ্রেন্ডরা তো এখনো এঞ্জয়িং লাইফ। তবে দুই চার বছরের মধ্যে আমদের জয়েন করবে। টাকা বানাইতে ব্যস্ত।
প্রথমজন বললেন - তাইলে ভুট্টোরে লইয়া আয়। সেতো শোনে নাই কখনো।
পাশে লম্বা চুল মাঝে বিরাট টাক মাথা লম্বা স্লিম একজন আবির্ভূত হলেন।
- অলরাইট আ'ইল হিয়ার ইট ওয়ান্স। বাট আই ডোন্ট বিলিভ ইট ওয়াজ অ্যাজ গ্রেট অ্যাজ ইউ সাউন্ড আউট টু বি। গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস, হা, হা।
প্রথমজন ছাড়া বাকি সকলে বিরক্ত মুখে অন্য দিকে তাকাল। কিন্তু প্রথমজনের কছে মনে হলো এঁর প্রশংসার মূল্যই সব চেয়ে বেশি। গদ গদ হয়ে বললেন ।
- আইম শিউর ইউ উইল লাইক ইট।
কিন্তু এতদিন পরে তো হুবহু বলা যায় না। সেটা করতে গিয়ে বরং ছন্দপতন হলো, বারবার পুনরুক্তি হলো। তবু সবাই হাততালি; দিল শেষোক্ত জন বললেন- কেয়া খুব। আই নো দ্য মিনিং অব সাদিনাতা। অফ কোর্স ইউ মিন ইট ওনলি ইন এন এলেগরিকাল সেন্স, বিকজ উই অল নো অন দ্য নাইট অব দ্য টুয়েন্টিফিফথ হোয়েন তাজুদ্দিন ওয়েন্ট টু ইয়োর হাউজ ইউ রিফিউজড টু ডিক্লেয়ার ফ্রিডম ইন রিয়েল টার্মস। ইঊ ওয়েয়ার স্টিল হোপিং ফর এ রিকন্সিলিয়েশন। লেটার আফটার দ্য ওয়ার উইথ ইন্ডিয়া আই সেন্ট ইউ হোম উইথ দ্য সোলেম ওথ ইউ উড গেট রিড অব দ্য ইন্ডিয়ান অকুপাইয়ারস এন্ড ব্রিং দ্য টু উইংস টুগেদার এগেন। বাট ইউ কুড নট ডু ইট। আই কোয়াইট আন্ডারস্টান্ড। ইভেন লেটার ইট ওয়াজ নট পসিবল।
বাঁটকু বলল - দেয়ার ওয়াজ্ নো সাচ চান্স। পিপল স্টিল ভেরি হস্টাইল। টু মাচ ব্লাড।
প্রথমজন দ্বিতীয়জনের দিকে তাকিয়ে বললেন - আমি বাকশাল বানাইলাম সব ভেদাভেদ দূর করার জন্য। আর তুই ব্যাটা ষড়যন্ত্র কইরা আমার পুরা ফেমিলির সাথে আমারেও খুন করলি। শালা অকৃতজ্ঞ।
দ্বিতীয়জন সবেগে মাথা নেড়ে বললেন - না স্যার, আমি ষড়যন্ত্রে ছিলাম না। জুনিয়ররা আমার কাছে আসলে আমি ফেরত পাঠিয়ে দি। বাট ইয়েস আই শুড হ্যাভ রিপর্টেড টু ইউ। কিন্তু সবাই তো জানতোই। আপনার দলের রাশিয়াপন্থীরা যেভাবে এগুচ্ছিল একদলীয় রাজত্বের দিকে, সাম পিপল হ্যাড টু রেসিস্ট ইট। আর আমার পার্সোনাল রাগ হয়েছিল আপনি সিনিয়রিটি ভেঙে ছাগল শফিউল্লাহকে চীফ করলেন যখন।
বাঁটকু দ্বিতীয়ের কাঁধে কষ্টে হাত রেখে বললেন - আরে এখন আর ক্ষেইপা কি লাভ।
তারপর প্রথমের দিকে তাকিয়ে বললেন - বাড়াবাড়ি হইয়া গেছিল। ভাবিজান পুরা ফ্যামিলি নিয়া লন্ডন্ গেলেন। হ্যারডস দোকানের অর্ধেক প্লেনে নিয়া আসলেন।পরদিন হ্যারডস-এর পিছে দুইবার মিউনিসিপালিটির ট্রাক গেছিল ছেঁড়া র্যাপিং পেপার আনতে। লন্ডনের কাগজেই উঠসিল। লেট বাইগন্স বি বাইগন্স। কি কন ভুট্টো সা'ব।
ভুট্টো বলে উঠলেন - উই আর অল শহীদস হেয়ার। আই ডোন্ট নো হাউ দিস ম্যান গট ইন।
বাঁটকু রেগে উঠলেন - হ, হ, শহীদস ইনডীড। খুনের দায়ে গলায় ফাঁসী। আমি কাউরে মারি নাই, তবে মরাল সাপোর্ট দিসি। যখন রাশিয়ানরা দ্যাশরে রাশিয়া বানাইয়া ফেলল, চোরাগোপ্তা খুন আর খুন, রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন, আওয়ামী হাতে খুন, ভাইজানের সকল আত্মীয়সজনের হাতে খুন। তখন আমি না বাঁচাইলে কে বাঁচাইত।
প্রথমজন বললেন - থাম, থাম, এখানে কাইজা কইরা কি লাভ। এইটা শেষ বিচার না। আর ওনার বিচার বহুত জটিল। আর হগলে হগলরে মাফ কইরা দেওয়াই সর্বোত্তম।
এতদিন পরে এক জুৎসই শব্দ বলতে পেরে প্রথমজন মহাখুশী।
ভুট্টো সব বুঝলেন না, কিন্তু রাগ দেখলেন, এবং বুদ্ধিমানের মত চেপে যাওয়াই শ্রেয় মনে করলেন।
প্রথমজন দ্বিতীয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- আমি তো তোর ভাংগা বিয়া জোর দিসিলাম।
দ্বিতীয় বললেন - আই এম নট শুওর হোয়েদার দ্যাট ওয়াস এ গুড থিং।
ভুট্টো কিছুটা ইংগিতে কিছু বুঝলেন - ডোন্ট ব্লেম আস। ইউ, লাইক আস, হ্যাভ ইনাফ মুনাফেক্স এমং ইওরসেল্ভস।
প্রথমজন জিজ্ঞাসা করলেন - আচ্ছা আমার বড় পোলারে কেউ দেখসস?
বাঁটকু বলল - সে এইখানে নতুন মাইয়া খুঁজতেসে। আপনার বড় বউ তো কইসে, ঐটা রাক্ষস বিবাহ ছিল। সে নাকি এখন ফ্রী।
হঠাৎ আকাশে বাতাসে একটা কোমল সুরের ইশারা শোনা গেল। সবাই অবাক হয়ে শুনল। এক বুজর্গ বললেন - হ্যাঁ এমনি হয়। কাউকে আবার ফেরত পাঠাবার পালা। একই স্মৃতি নিয়ে তো মানুষ অনন্তকাল থাকতে পারে না। স্মৃতি বদলে আসে মাঝে মাঝে। এখানকার কারো এবার যেতে হবে।
সবাই অনিশ্চিত চিন্তিত মুখে অপেক্ষায় রইল। হঠাৎ প্রথমজনের কাছ থেকে শোনা গেল - এই, কে আমারে টান দেয়। আমার পাজামা গেল কই? আমার জাঙ্গিয়া , আমার জাঙ্গিয়া ----।
দ্বিতীয়জন বললেন - স্যার, ডোন্ট ওয়ারী। প্রথমে লাগবে না।