মানব ইতিহাস বিকাশে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতার উদ্ভব। সভ্যতার ক্রমান্বয়ে উন্নতির ফলেই মানুষের জীবনযাত্রা সহজ থেকে সহজতর হয়েছে৷ আজকের আধুনিক যুগও সভ্যতার কল্যাণেই বাস্তব রুপ পেয়েছে ৷ বন্যতা থেকে বর্বরতা এবং বর্বরতা থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ৷এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মানবগোষ্ঠী তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড- দ্বারা জীবনপ্রবাহের মানোন্নয়ন করতে থাকে ৷ বিশেষ সময়-কালের পরিপ্রেক্ষিতে মানবগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্মিলিত কর্মকান্ড সভ্যতা নামে পরিচিত হয়৷ প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বহু সভ্যতা গড়ে ওঠে ৷ এই সিরিজে পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত ও উল্লেখযোগ্য সভ্যতাকে ছবি ও তথ্যে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস।
মিশরীয় সভ্যতা
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম হচ্ছে মিশরীয় সভ্যতা৷ প্রায় ৫০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নীল নদের তীরবর্তী মিশরে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে ৷ মিসরীয় সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশে ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়া অনন্য ভূমিকা পালন করেছে ৷ উত্তরে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে নুবিয়ার মরুভূমি, পূর্বে লোহিত সাগর, পশ্চিমে লিবিয়ার মরুভূমি ৷
বস্তুত মিশরের প্রাণ নীল নদের জন্যই এ অঞ্চলে মানবসভ্যতার সর্বাপেক্ষা দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সভ্যতার সূচনা হয়েছিল ৷ প্রথমদিকে মিশর ৪০টি নোম বা নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল৷ রাজা মেনেস প্রথম একটি একক রাষ্ট্রের পত্তন ঘটান ৷ এরপর ৩০টির মতো রাজবংশ মিশর শাসন করে৷ মিশর প্রথমে গ্রিক, পরে রোম, তারওপর আরব শাসনের অন্তর্গত হয় ৷
মিশরীয় সম্রাটদের বলা হতো ফারাওন বা ফারাও৷ মিশরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্যেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করে ৷ জমিতে জলসেচ, বাঁধ নির্মাণ, জল নিষ্কাশনের কাজে সফল হওয়ার জন্যই এর উন্নতি সাধিত হয় ৷
মিশরীয়দের ধর্মভাব ছিল প্রবল ৷ নানা দেবদেবীর উপাসনা করতো তারা ৷ তাদের বিশ্বাস ছিল, এসব দেবদেবী প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে৷
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে মিসরে হায়ারোগ্লিফিক বা চিত্রলিপি নামে এক উন্নত লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয় ৷ শর বা নলখাগড়া জাতীয় গাছের মজ্জা থেকে তৈরি প্যাপিরাস নামের একধরনের কাগজের ওপর তারা লেখার কাজ সম্পন্ন করতো ৷ ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য প্রাচীন মিশরে জন্ম হয় গণিত শাস্ত্রের ৷ খাল খনন, ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাণ, পিরামিডের পাথরের আয়তন ও কোণের পরিমাপ করতে গিয়ে উদ্ভব ঘটে জ্যামিতির ৷ ক্যালেন্ডার তৈরি করার প্রথম কৃতিত্বও তাদের৷ তারাই প্রথম ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু করে ৷
ফারাওদের মৃতদেহ পচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য মিশরীয়রা মমি (পিরামিড) তৈরি করে ৷ পিরামিডগুলো আজ অবধি বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য হিসেবে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে৷ মিশরীয়দের সবচেয়ে বড় পিরামিডের গিজায় অবস্থিত। নাম 'ফারাও খুফু'৷
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৩:১৬