somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহে রমজানের ধর্মীয় গুরুত্ব

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজা ফারসি শব্দ। আরবিতে রোজাকে সাওম বলা হয়।এর আভিধানিক অর্থ অবিরাম চেষ্টা,আত্মসংযম,বিরত থাকা প্রভৃতি।ইসলামী শরিয়তরে পরিভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতের নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পযর্ন্ত কোনরূপ পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, সুস্থ, মুকিম ও বুদ্ধিমান মুসলমান নরনারীর ওপর মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। তাই মাহে রমজান মাসে রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম ।

রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অজর্ন করা যায়। মানুষের পার্থিব জীবনেসবধরনের গুনাহ বা অকল্যানকর কাজ বর্চন করা এবং সব ধরনের সওয়াবের কাজ বা কল্যানকর কাজ পালন করার নাম হলো তাকওয়া বা পরহেজগারি। মানুষ যখন রমজান মাসে রোজা রাখে তখন সে আত্মশুদ্ধি রাভ করে, আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করে। পবিত্র কোরআনে রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-"হে ঈমানদার গন! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো,যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববতীদের (নবীগনের উম্মত) ওপর যাতে তোমরা তাকওয়াবা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।" (সুরা আল বাকারা,আয়াত-১৮৩)

কাম ক্রোধ,লোভ,মোহ,মদ ও মাৎসর্য প্রভৃতি রিপু মানুষের চরম শত্রু। ষড় রিপুর তাড়নায় মানুষ বিভ্রান্ত ও বিপদ গামী হয়ে পড়ে। সে জন্য এসব কু-প্রবৃত্তি দমনের জন্যরোজার প্রয়োজন আবশ্যিক করা হয়েছে। কেননা , মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তিকে রোজাই যাবতীয় কু প্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে এবং যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত বা সংযত রাখে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা)বলেছেন - রোজা হচ্ছে মুমিনের জন্য ঢাল স্বরুপ। (সহীহ বুখারী) এই হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে,কাম ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি কু প্রবৃত্তির হাত থেকে আত্মরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হলো রোজা।

পবিত্র রমজান মাসে মানুষ লোক দেখানোর জন্য পানাহার ত্যাগ করে না,ক্ষুধা-পিপাসার কষ্টও সহ্য করেনা। রোজাদার ব্যক্তি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজাব্রত পালন করে। সে জন্য আআল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজাদার ব্যক্তি কে অত্যন্ত ভালবাসেন । হাদিসে কুদসিতে বণির্ত আছেআল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, 'রোজা শুধু আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব'। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)অর্থাৎ রোজা একমাত্র মাহান আল্লাহর ভালবাসারই পরিচায়ক। আই আল্লাহ পাক রোজাদার ব্যক্তিকে বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করবেন বলে ঘোষনা করেছেন।

মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি খুব বেশী বেশী কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করেন। তাই রোজা ও কোরআন শরীফ কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবার সুপারিশ করবে এবং আল্লাহপাক তাদের সুপারিশ কবুল করবেন। এই মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা)বলেছেন -'রোজা সমূহ ও আল কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা সমূহ বলবে, হে প্রতিপালক ! আমি এই ব্যক্তিকে দিনে খাবার অন্যান্য কামনা বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন, আল কোরআন বলবে - আমি এই ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন।' (বায়হাকি)

রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তির আগের গুনাহ পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে মার্জনা করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা)ইরশাদ করেছেন -' যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষনের সাথে রোজা আদায় করল, সে পূর্বে কৃত গুনাহ মাজর্না কিরিয়ে নিল'। (বুখারী ও মুসলিম)

নবী করিম (সা) আরো বলেছেন,'যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপ রূপে প্রসব করেছিলেন ।' মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি ,হান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারন পূবর্ক সকল প্রকার পাপ কাজ,পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকেন। সেজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত প্রদান করবেন।এই সুসংবাদ দিয়ে নবী করিম (সা) ইরশাদ করেছেন - 'এই মাস (রমজান) ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে বেহেশত' । (মিশকাত)

সুতরাং পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের যথেষ্ট ধর্মীয় গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।বস্তুত প্রকৃত রোজাদার ব্যক্তি রোজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং তার জান্নাতের পথ সুগম হয় ।মহা নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ফরমাইয়াছেন,'আর এটি (রমজান) এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহপাকের রহমত,মধ্য ভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত বা মুক্তিলাভ রয়েছে'। (মিশকাত)

আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে মাহে রমজানে রোজার গুরুত্ব অনুধাবন ও সুস্থ দেহে পবিত্র রোজাব্রত পালনের তওফিক দান করুন । আমীন ।

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×