কানাডার টরেন্টোর একটি পার্ক। বিকেল বেলোয় হাঁটতে বেরিয়েছি, এ রাস্তা ও রাস্তা এ গলি ও গলি এবং বেশ কয়েকটা শপিং মলে ঘুরেফিরে শেষে ক্লান্ত হয়ে সুন্দর সাজানো গোছানো এই পার্কে এসে একটা গাছের নিচে একটি বেঞ্চের ওপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। আজ বেশ কিছুদিন হলো কানাডায় এসেছি। এখানে একটি বিশেষ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য। তিন দিনের সেই বিশেষ সেমিনারটি শেষ হয়েছে আরও কয়েকদিন আগেই। এখন কানাডার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ফিরে দেখার জন্য রয়ে গিয়েছি। আজ ৭-৮দিনে প্রায় সব যায়গাগুলোই ঘোরা হয়েগেছে এখন কিছু শপিং করছি। আজ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানেই কেউ একজন আমাকে অনুসরণ করছে। প্রথমে বিষয়টি আমলে না নিয়ে আমি আমার মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু বিষয়টা প্রথমে নজরে এল যখন একটি কফিশপে ঢুকে একটা খালি টেবিলে বসে বার্গার আর কফির অর্ডার করি।
টেবিলে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেল এক অষ্টাদশী কালোকেশী অপ্সরীর উপর। আপাদমস্তক বাঙ্গালী পোশাকে সজ্জিত হয়ে চোখে একটি কালো রঙের সানগ্লাস আর হাতে একগোছা লাল টকটকে গোলাপ হাতে মেয়েটি কফিশপের দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ থেকে রোদচশমাটি খুলে গুটিয়ে কামিজের গলার ওপর ঝুলিয়ে রাখল, তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, মনে হল কাউকে খুঁজছে। আমার দৃষ্টি আটকে গেল মেয়েটির ওপর একদম চুম্বকের মতো। আমি সচরাচর মেয়েদের দিকে ঐভাবে তাকাই না, কিন্তু এই বিদেশ বিভুঁইয়ে ওয়েষ্টার্ণ পোশাকের ভিড়ে আমাদের দেশের সালোয়ার কামিজ আর ওড়না পরে যে কোন মেয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে আর তাকে দেখতে যে এত সুন্দর লাগতে পারে তা ওকে না দেখলে আমার জানাই হত না। চাকুরীর সুবাদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেতে হয় আমার, বিভিন্ন য়্যুনিভার্সিটি বা সংস্থায় আমার গবেষণার বিষয়বস্তু উত্থাপন করতে হয়। যাহোক মেয়েটি পুরো কফিশপের প্রতিটি টেবিলে নজর বুলিয়ে এবার তার কাজল কালো হরিণ নয়নের ফোকাস করল আমার ওপর।
আমার এবার অবাক হওয়ার পালা। আমাকে কেউ যেন ২০ হাজার ফুট ওপর থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে, আমি পড়ছি তো পড়ছিই। আমার পতন কিছুতেই থামাতে পারছি না, কফিশপের দরজা থেকে আমার টেবিলিটা মাত্র দশ ফিট দুরে অবস্থিত, কিন্তু এইটুকু পথ মেয়েটি যে নিপুণভাবে এত অনন্ত সময় নিয়ে পাড়ি দিবে কে জানত। সে সোজা এসে আমার টেবিলের সামনে দাড়িয়ে কিছু বলছে,আমি কেবল তার ঠোট নড়াটাই দেখতে পাচ্ছি, কোন শব্দ আমার কর্ণকূহরে প্রবেশ করে আমার মস্তিষ্ককে আন্দোলিত করছে না কারণ আমার পতন এখনও শেষ হয়নি, আমি পড়ছি তো পড়ছিই। মেয়েটি বোধহয় এবার কিছুটা বিরক্তই হয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার উল্টোপাশে বসে পড়ল, ওর দৃষ্টির গভীরতা আমি স্পর্শ করছি। সে আমার বিহ্বলতা পুরোপুরিই এনজয় করছে আর তার পদ্মকলির মত ঠোটের পাপড়ি দুটো সমানে নড়েই যাচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছে না, নাকি আওয়াজ বেরোচ্ছে কিন্তু আমি তীব্রগতিতে পতনের কারণে শুধুমাত্র বাতাশের শো শো আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না। আমার পতন এখনও চলছে। আচ্ছা বিশ হাজার ফুট ওপর থেকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পৃথিবীর স্পর্শ পেতে কত সময় লাগতে পারে, আমার এ পতন কি তার চেয়েও বেশি সময় নিচ্ছে? নাকি তীব্র গতির কারণে অল্প সময়কেও আমার অনন্তকাল বলে মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১৫