এই পোস্টে যে সিরিজগুলোকে আন্ডাররেটেড বলছি, সেটা একেবারেই আমার নিজের মত। সিরিজগুলো যে কেউই পড়ছে না তা নয় বরং বেশ কিছু পাঠক অনেক পছন্দ করছেন। যে ব্লগারদের সিরিজ তারাও সবার প্রিয়। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আরো একটু এটেনশন পাবার যোগ্যতা রয়েছে সিরিজগুলোর। এই পোস্টটি সবাইকে ভালো কিছু সিরিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে দেওয়া। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১) ব্লগার: সন্ধ্যা প্রদীপ
সিরিজ: বুকের ভেতর মৃত নদী
গড়পরতা "আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবনা" টাইপ ন্যাকামিপূর্ণ প্রেমের গল্প নয়। দুজন মানুষ - শ্রাবণী ও তুষার। শ্রাবণী বাস্তববাদী, ক্যারিয়ার সচেতন, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারী যে কারো শোকেস বউ হতে চায়না। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের সব কাজ শিখেছে। সর্বগুণসম্পন্না যাকে বলে। অন্যজন তুষার - খামখেয়ালী, নিজের মনমর্জিতে চলা মানুষ। শ্রাবণীর স্বপ্নপুরুষের মতো নয় একদমই, তবুও কেন যেন শ্রাবণী বয়ে চলেছে তুষার নদীর দিকে। ওর মনে দ্বিধাও রয়েছে তুষারকে নিয়ে আবার স্বপ্নও। আর তুষারের মনে কি আছে? সেটা তো এখনো কেউ জানেই না। অবশ্য এই গল্প নায়িকা নির্ভর, সব আলো তাকে ঘিরেই। এযুগের এক মেয়ের মনে সম্পর্ক ও সংসার নিয়ে চলা হাজারটা দোলাচাল লেখায় উঠে এসেছে সুনিপুণ দক্ষতায়।
প্রতিটি প্রথম পর্ব দ্বিতীয়টিতে "কি হবে?" নামক কৌতুহল রেখে শেষ হয়। নাটকীয়তা নেই, তবুও বাস্তবিক আবরণের গল্পটি একের পর এক টুইস্ট আনতে সক্ষম হয়ে যায় কিভাবে যেন!
শেষপর্যন্ত শ্রাবণী নিজের সম্পর্ককে এবং জীবনকে কোন মোড়ে নেয়, সেটা জানতে মৃত নদীতে ডুব দিতেই হয়.....
২) ব্লগার: বিপ্লব06
সিরিজ: এন ইডিয়ট ইন ম্যারিজ!!! (শূন্য)
এই সিরিজটি আমি নিজেও মিস করে ফেলেছিলাম, কিন্তু এই পোস্ট দিতে গিয়ে চোখে যখন পড়েছে জুড়ে যাব অবশ্যই।
বিপ্লব06 আমাদের সবার প্রিয় ব্লগার। সবার মতো শুদ্ধ ভাষায় নয় বরং আঞ্চলিক ভাষায় লেখেন যা পড়তে বেশ মজা লাগে। এই সিরিজের পুরোটা জুড়ে রয়েছে সেই সিগনেচার ভাষার ব্যবহার। লেখাটি খুব গোছালো নয় তবে সাবলীল ও সুখপাঠ্য। মনে হয় কোন এক আয়েশী বিকেলে চা খেতে খেতে খুব আপন এক বন্ধু জীবনের গল্প বলে যাচ্ছে।
সেই গল্পটি অনেকটা এরকম: এক প্রবাসী ছেলে বিয়ে করবে এবং তার কোন আহামরি চাহিদা নেই পাত্রীকে নিয়ে। কিন্তু তবুও মনের মতো পাত্রী পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। ওনারই ভাষায় "এমনে নাকি বহুত সুন্দরি মাগার বিয়া করার সময় নাকি লাইট দিয়া খুঁজলেও পাওয়া যায়না!" বিভিন্ন সূত্রে ওনার পরিচয় হয় একেক পাত্রীর সাথে। তারপরে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে যেহেতু প্রবাসীদের বিয়ে অনেক কঠিন একটা ব্যাপার।। দেশে বসবাসরত পাত্রী বিয়ে করতে গেলে ভয় হয় সে বিদেশে মানিয়ে নিতে পারবে তো? প্রবাসে জন্মানো পাত্রীর সাথেও মন মানসিকতা মেলেনা যেহেতু তারা পুরোপুরি আমেরিকান স্টাইলে জীবনধারণ করেন।
শেষমেষ কাকে পছন্দ করবেন নায়ক, কোন পাত্রী হবে কণে - সেটা জানতে একবার পড়তে বসলে গড়িয়ে গড়িয়ে অন্য পর্বগুলোর দিকে চলে যাবেন মনের অজান্তেই!
৩) ব্লগার: কবিতা পড়ার প্রহর
সিরিজ: চিলেকোঠার প্রেম
ভীষনই ঝরঝরে, গোছালো ও সাবলীল লেখনী। পড়তে শুরু করলে কখন শেষ হয়ে যায় তা বোঝাই যায়না। প্রথম পাতায় আসার সুযোগ হয়েছে সম্প্রতি। সেজন্যে মডারেশনকে অনেক ধন্যবাদ। নতুন হয়েও বেশ ভালো রেসপন্স পাচ্ছেন, সিরিজটি শুরু থেকে প্রথম পাতায় জায়গা পেল আরো সম্মানিত হত। এজন্যেই ঠাঁই করে নিয়েছে আমার এই লিস্টে।
নিখাঁদ প্রেমের গল্প। অন্তর্জালে পরিচয় হয় দুজন মানব মানবীর। প্রথমে হয় ভালো বন্ধুত্ব এবং সেখান থেকেই পরম বন্ধুকে জীবনসঙ্গী করার চিন্তা। কিন্তু কাহিনীতে টুইস্ট আছে বস! মেয়েটি চাকরি করছে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে এবং ছেলেটি স্টুডেন্ট! সমাজ/পরিবার এমন সম্পর্ক মেনে নেয়না। তাতে প্রেমিক জুটির পরোয়া নেই। তারা বিয়ে করে একট ছোট্ট চিলেকোঠায় ঘর বাঁধল।
সুখেই চলে যাচ্ছে সংসার কিন্তু মাঝেমাঝে প্রেমে স্পিড ব্রেকার হয়ে আসে সমাজের "ছেলে কামাবে, মেয়ে ঘর সামলাবে" চিন্তাগুলো। আশেপাশের মানুষের টিকা টিপ্পনী, পরিবারের অভিমানকে এক পাশে রেখে কি চলতে থাকবে ভালোবাসার গাড়ি? নাকি থমকে যাবে মাঝপথে?
নাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, জানতে হলে পড়তে হবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শেষ কথা: আমার চোখে এমন আরো বেশ কিছু সিরিজ আছে যেগুলো আন্ডারেটেড। কিছু কিছু তো আমার নিজেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল, এই পোস্টটি তৈরি করতে গিয়ে পড়লাম। ভেবে দেখলাম সবগুলো নিয়ে একসাথে লিখলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই রোমান্টিক জনরার গুলো আলাদা করে দিলাম। পরের পর্বে অন্য কোন জনরার আন্ডাররেটেড পোস্টগুলোর সাথে পরিচয় করানোর চেষ্টা থাকবে। সিরিজ নামক রেলগাড়িটি একেকটি স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছায় শুধুমাত্র পাঠকের অনুপ্রেরণায়। তাই বলব, ভালো সিরিজগুলো পড়ুন, উৎসাহ দিন এবং নিজেও ভালো লিখতে থাকুন।
ছবিসূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৫