ইদানিং আমি প্রাণীদের ওপরে আগ্রহী হয়ে পড়েছি। আমি আমার বন্ধুদের সবসময় বলি, "ইফ আই ওয়াচ ইট, ইউ হ্যাভ টু ওয়াচ ইট!" নিজের যত প্রিয় শো, গান আছে সব বন্ধুদেরও দেখাই (জোর করে হলেও


ওহ হ্যাঁ, একটি দুটি ছবি একটু ঘিনঘিনে মনে হতে পারে কারো কাছে। কিছু খেতে খেতে পোস্টটি না পড়াই ভালো।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১) টেক্সাস হর্নড লিজার্ড!
ওরা পিঁপড়া, ফড়িং, পোকা, মাকড়সা ইত্যাদি শিকার করে। ওরা চলতে চলতে নজর রাখে চারিদিকে, যখনই কোন শিকার পায় জিভ দিয়ে মুখে টেনে গিলে ফেলে।
জঙ্গলের এক শিকারীর অন্য শিকারী রয়েছে! বাজপাখি, সাপ, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, নেকড়ে ইত্যাদি শিকার করে হর্নড লিজার্ডকে। কিন্তু ওরা সহজে হার মানে না। নিজেদের বাঁচানোর জন্যে আপ্রাণ লড়াই করে। সবচেয়ে প্রথমে নিজেদের কন্টকময় শরীর ব্যবহার করে শিকারীকে হারানোর চেষ্টা করে। যদি সেটা কাজ না করে তাহলে, ওদের শরীরের রং কে ব্যবহার করে যা মাটির সাথে মিলে যায়। তাই ওরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে চুপচাপ মাটির সাথে মিশে থাকার চেষ্টা করে। নিজেদের শরীরটাকে ফ্ল্যাট করে রাখে যেন মাটিতে ওদের ছায়া শিকারীর নজরে না আসে! শিকারীরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় চারিদিক, কিন্তু মাটির সাথে মিশে যাওয়া ধূর্ত হর্নড লিজার্ডকে খুঁজে পায়না!
যদি কোন কারণে মুখোমুখি হয়ে যেতে হয় শিকারীর তাহলে ওরা যা করে তা অকল্পনীয়!
নিজের চোখ দিয়ে রক্ত বের করে সেই রক্ত শিকারীর চোখ ও মুখের দিকে ছুড়তে থাকে! ওরা ৫ ফিট পর্যন্ত রক্ত ছুড়তে পারে! নিজেদের শরীরের এক তৃতীয়াংশ রক্ত পর্যন্ত রক্ত খরচ করতে পারে এই কাজে। এটিই ওদের শেষ সম্বল, যদি এই স্ট্রাটেজী ফেইল করে, তবে ওদেরকে মৃত্যু বরণ করতে হয়।
২) গ্রেট হোয়াইট শার্ক এবং এলিফ্যান্ট সিল!
গ্রেট হোয়াইট শার্ক এবং এলিফ্যান্ট সিলের সম্পর্কটা চোর পুলিশের মতো! হোয়াইট শার্ক নিজের অসাধারণ শ্রবণ শক্তির মাধ্যমে বুঝে যায় যে কোথায় আছে তার প্রিয় শিকার সিল! কিন্তু সিলও কম যায়না। তারা মাটির ওপরে থেকে কিছু সময় নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু কতদিন পানি থেকে দূরে থাকতে পারে সিল? এলিফ্যান্ট সিলের সামনে দুটো রাস্তা থাকে। হয় পানির ওপরে থেকে আত্মহত্যা করো, অথবা পানির মধ্যে গিয়ে খুন হও! হোয়াইট শার্ক সেই একটি মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকে যখন সিল আর না পেরে পানির মধ্যে যাবে। আর এলিফ্যান্ট সিল অপেক্ষায় থাকে কখন শার্ক একটু অন্যমনস্ক হবে। ধৈর্য্যের খেলায় যে জেতে সেই পায় জীবন অথবা জীবন বাঁচানো খাদ্য!
৩) ফ্রেঞ্চ গুয়ানা টার্মাইট!
ফ্রেঞ্চ গুয়ানায় পাওয়া যায় এমন একধরণের টার্মাইট, যাদের বয়স্ক সাথীরা পুরো সমাজকে বাঁচাতে আত্মহননের মিশনে চলে দেয়! বয়স্ক হওয়ায় তারা আগের মতো শ্রম দিতে পারেনা দলের কোন কাজে কিন্তু বয়সের সাথে সাথে তাদের তলপেটের গ্রন্থি প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত নীল ক্রিস্টালের মতো পদার্থ উৎপন্ন করে ফেলে। এই বিষাক্ত পদার্থ শত্রুদের ওপরে বিস্ফারিত হয়, তাদেরকে প্যারালাইজ করে মেরে ফেলে। দুঃখজনক ভাবে সেই বৃদ্ধটিও একই সাথে মারা যায়। আমাদের দেশের এবং বিদেশেরও অনেক মানুষ দেশের জন্যে যেভাবে জীবন দেয়, নি:শ্বার্থ ভাবে, এই ক্ষুদ্র প্রাণীরাও প্রয়োজনে তা করতে পারে। ফ্যাসিনেটিং!
৪) সি কিউকাম্বার!
সমুদ্রের শসার শেপের এই প্রাণীগুলো মাছ এবং অনান্য সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করে। আর ওদের শিকারী সামুদ্রিক কচ্ছপ। ওরা নিজেদের শরীরের বিষাক্ত অংশগুলোকে আলাদা করে ছুড়ে মারতে পারে শিকারীর দিকে। যদি জানে বেঁচে যায় তাহলে আবারো সেই অর্গানগুলো গজিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ যেহেতু এই অর্গানগুলো আবার গজাতে সময় নেয়, কিছু কিছু সি কিউকাম্বার বালুর মধ্যে ঢুকে নিজেদের ঢেকে দিয়ে শিকারীদের চোখের আড়ালে থাকে। কিন্তু সবসময়ের জন্যে তো আর বালুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয়।
এই অসাধারণ প্রাণীরা নিজেকে বাঁচানোর জন্যে আরো যা করে তা আমাদের মানুষের ক্ষমতা ও কল্পনার বাইরের! ওরা নিজেদের শরীরকে লিকুইড থেকে সলিডে এবং সলিড থেকে লিকুইডে পরিবর্তন করতে পারে! শুধু তাই নয়, নিজেকে নানা ভাগে ভাগ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে, এভাবে এদের শিকারীরা বোকা হয়ে যায় এবং ভাবে ওরা মৃত্যু। শিকারী সামনে থেকে চলে গেলে আবার নিজের শরীরকে জোড়া লাগিয়ে ফেলে! গ্রেট সুপারপাওয়ার!
৫) হ্যাগফিস!
হ্যাগফিসকে যদি কোন শার্ক বা অন্যকোন শিকারী এটাক করে তবে তারা নিজেদের শরীর থেকে আঠালো পদার্থ বের করে, পানির সাথে মিশে সেটা শক্ত জেলের মতো আঠা হয়ে যায়। সেই আঠা শিকারীদের আটকে দিতে পারে আবার শিকারীদের শ্বাসযন্ত্র রোধ করে মেরেও ফেলতে পারে! বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যাগফিশের আঠাকে বুলেট প্রুফ ভেস্ট তৈরীর কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে!
একবার দেখা গিয়েছিল যে একটি হ্যাগফিসকে ১৪ বার এটাক করে শার্ক, কিন্তু প্রতিবার হ্যাগফিশকে কামড়ানোর পরে অস্বস্তিতে ছেড়ে দেয় এবং শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় সাঁতরে পালিয়ে যায়!
তার মানে এই না যে ওদেরকে শিকার করাই যায়না! ওদেরকে শিকারের সবচেয়ে এবং সম্ভবত একমাত্র উপযুক্ত সময় হচ্ছে যখন ওদের আঠা উৎপন্নকারী গ্রন্থি খালি হয়ে যায়! একবার খালি হয়ে গেলে ৩-৪ সপ্তাহ লাগে আবারো রিফিল হতে। এটি একধরণের ভাগ্যের খেলা, সময়ের খেলা! যার সময় ভালো চলবে, সেই জিতবে শিকার ভার্সেস শিকারীর খেলায়!
ওপরের ছবিটি একটি বাস্তব ঘটনা! একটি ট্রাক অনেকগুলো হ্যাগফিশ নিয়ে যাচ্ছিল এশিয়ান কোন দেশের উদ্দেশ্যে যেখানে হ্যাগফিশ খাওয়া হয়, একটি গাড়ির সাথে এক্সিডেন্টে সেই হ্যাগফিশগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে যায় এবং আঠালো পদার্থে পুরো রাস্তা এবং গাড়িটি কভারড হয়ে যায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হতে পারে, তবে বুলডোজার ব্যবহার করতে হয়েছিল সবকিছু পরিষ্কার করতে!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সকল প্রাণী সে হোক মাটির ওপরের বা পানির নিচের, একটি মিল খুঁজে পাই। এরা শিকার করে শুধুমাত্র পেট চালানোর জন্যে। "না খেলে মারা যাব" ব্যাস একারণেই শিকারীর রূপ ধারণ করে। আর নিজেদের বাঁচাতে শিকারগুলোও অসাধারণ ও অকল্পনীয় সব উপায় ভেবে রাখে। খেলাটি পুরোপুরি বাঁচা মরার।
আমাদের মতো নয়। আমরা মানুষেরা অনেক সস্তা কারণে (যেমন ইগো, স্বার্থ, এনটারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টর) অন্য মানুষকে মারতে পারি! তাই হয়ত একজন মানুষের কখনো অন্য মানুষকে "জানোয়ার" বলে গালি দেওয়া উচিৎ না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:০৮