পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা গুলো ছিল রহস্যের মায়াজালে ঘেরা। মদ্ধযুগ থেকে এখন পর্যন্ত সেই সভ্যতা গুলো মানুষকে চিরস্থায়ী রহস্যের মায়াজালে আটকে রেখেছে। কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এই সভ্যতা গুলো । কেমনই বা ছিল সেইসময়কার মানুষগুল আর তাদের জীবন ধারা আর কেনইবা তারা হাড়িইয়ে গিয়েছিল কালের গহবরে তার সঠীক উত্তর কেউ দিতে পারেনি। সেই রহস্যময় সভ্যতা গুলোর একটি হল মায়া সভ্যতা । মায়াদের অবস্থান সম্পর্কে নেটে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে,তার পরেও এটা সম্পর্কে সামান্য জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন।
******মাচ্চু পিচ্চু, পালাঙ্কি*******
ইনকারা যেমন রহস্যময় ছিল ঠিক তেমনি রহস্যময় ছিল তাদের প্রচলিত প্রথা গুলো। আর তাদের এই রহস্যময় প্রথা গুলোর মাঝে একটি ছিল শিশু বলী বা Capacoch।
প্রাচীন Mesoamerica সভ্যতা গুলোর মাঝে বলী প্রথা ছিল খুবি জনপ্রিয়। দেবতাদের তুষ্ট করার সবচেয়ে উত্তম মাদ্ধম হিসাবে বলী প্রথা সব সংষ্কৃতির মাঝে প্রচলিত ছিল। গাছ পালা প্রানী মানুষ নাড়ী শিশু সকল কিছুই ছিল এই বলীর অন্তভুর্ক্ত। তবে এইসকল বলীর মাঝে শিশু বলী সকল সম্প্রদায়ের মাঝেই ছিল জনপ্রিয়।
শিশু বলী যে কতটুকু নিঃস্বংশ ও পবিত্র ছিল তার বর্ননা পাওয়াযায় স্পানিশ ঐটিহাসিক দের কাছ থেকে। এই প্রথা নিয়ে খুব যে তথ্য পাওয়া যায় তা নয়।। ইঙ্কা দের ভাষায় এই বলীকে বলা হত capacoch. স্পানিশ ঐতিহাসীকদের কাছ থেকে যেই শিশুটির তথ্য বেশি পাওয়া যায় তার নাম ছিল Tanta Karhuya, যার নর্ননা আপ্নারা ইতিমদ্ধে পেয়েছেন । প্রাচীন মায়াদের কাছে এই capacoch ছিলো সর্বোচ্চ সন্মানের বিষয়। আর সেই সন্মান অর্জনের লোভে পিতামাতারা তাদের প্রানপ্রিয় সন্তানদের বলীর জন্য পাঠাত।
কিন্তু কেন এই বলী। আর কেনই বা বলী হিসেবে শিশুদের বাদ দেওয়া হত না। তার ধারনা পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ্য থেকে। আজ যেমন শিশুদের পবিত্র বলে ভাবা হয় ঠিক তেমনি সেই সময়েও শিশুদের জগতের সবচেয়ে পবিত্র বস্তু বলে বিবেচনা করা হত। তাই দেবতাদের পবিত্র অর্ঘ হিসেবে শিশুদের বিবেচনা করা হত। যখনি কোন প্রাকৃতিক দুর্্যোতগ আঘাত হানত কিংবা কোনো রাজা মারা যেত ঠিক তখনি দেবতাদের তুষ্ট করার জন্য শিশু বলী করা হত।
তবে যেনতেন শিশুকে বলীর জন্য নির্বাচন করা হত না। নির্বাচিত হবার জন্য শিশুটিকে হতে হত সবচেয়ে সুন্দরি। সাধারনত কোনো গোত্র প্রধানের বা যাযকের সন্তানকেই এই বলীর জন্য পছন্দ করা হত। কারন তারা বিশ্বাস করত যে বলীর পর শিশুটির আত্মা মৃত রাজা ও যাযকের মাঝে সম্পর্কের সৃষ্টি করবে। প্রাচীন মায়াদের মতে রাজা ছিল সুর্য দেবতার প্রতিনিধি। মৃত্যুর পর শিশুটি দেবতায় রুপান্তরিত হবে এবং দৈব বানীর মাদ্ধমে তার লোকেদের সাথে কথা বলতে পারবে ।
একটি শিশুকে বলীর জন্য নির্বাচিত করার পর একটা বিশাল মিছিলের মাদ্ধমে শিশুটিকে তার গ্রাম থেকে রাজার রাজধানী cuzcu তে নিয়ে যাওয়া হত। বলীর সেই মিছিলে উপস্থিত থাকত তার পিতামাতা , যাজকেরা ও তার গ্রামবাসীরা। রাজধানী তে তাদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হত বিশাল ভোজনশালার। তারপর যাজকদের একটি রাজকীয় মিছিল তাকে নিয়ে যেত সেই পর্বতের চুরায় যেই জায়গাই হবে তার শেষ ঠিকানা। পর্বতে আরোহন করাটা ছিল কষ্টসাদ্ধ ব্যাপার। তাই পর্বতের বিভিন্ন স্তরে তৈরি করা হত কিছু বেস ক্যম্প। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় আন্দেজ পর্বতের চুরায় যেখানে বরফ শিতল পরিবেশে বাশের ও পাথরের তৈরি মন্দিরে তাকে সমাধিস্ত করা হবে।
যেই দিনটিতে তাকে বলী করা হবে সেদিন তাকে ভুট্টার তৈরি একধরনের কড়া মদ প্রচুর পরিমানে খাওয়ানো হয়। এই মদ তাকে খাওয়ানো হয় যাতে করে সে সহজে মৃত্যু কষ্ট সহ্য করতে পারে। তারপর শুরু হয় বলীর আনুষ্ঠানিকতা। তাকে ও তার মন্দির কে ভরে দেওয়াহয় বিভিন্ন খাবার দাবারে ও মুল্যবান ও পবিত্র রত্ন ও পালক দিয়ে। ধারনা করা হয় এই রত্ন গুলুই তাকে নিয়ে যাবে সর্গে। শিশুবলীই ছিল কার্যত সবচেয়ে মুল্যবান অর্ঘ যার মাদ্ধমে ইঙ্কারা পর্বত দেবতাদের তুষ্ট করতে পারত। কিন্তু আসলেই কি মদ খেয়ে,এন্ডেজের হিমশিতল বরফে ও বন্দি অবস্থায় শিশুটীর মৃত্যু হত? এর উত্তর পাওয়াযায় বর্তমানে পাওয়া কিছু মমী ও প্রত্নতত্ববিদদের কাছ থেকে। পরবর্তিতে আবিষ্কার হওয়া অনেক গুলো মমীর খুলি পরিক্ষা করে প্রত্নতত্ববিদরা মাথায় আঘাতের চিহ্ন খুজে পেয়েছেন। তাই ধারনা করা হয় মৃত্যু তরান্বিত করার জন্য মাথায় বলীর আঘাত করা হত।
পবিত্র শিশুটি এখন তাদের দেবতা। সে তাদের জন্য বয়ে আনবে চিরস্থায়ী সুখ ও নিরাপত্তা।
শেষ। আপনাদের ভাল লাগ্লে এ নিয়ে সামনে আরো লেখার ইচ্ছা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১:৩২