ইমাম বুখারী নাকি ১০০০ শিক্ষকের তত্বাবধানে থেকে ১৬ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৬ লক্ষ হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও শ্রেনীভূক্ত করেছেন , যার ভিতরে ১ লক্ষের ও বেশি হাদীস তার মুখস্ত ছিল। তিনি হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও শ্রেনীভূক্ত করার কাজটি অতি সতর্কতার সাথে করেছিলেন। তিনি ৯৯% হাদীস বাদ দিয়ে মাত্র ৭ হাজারের মতো হাদীসকে সহীহ আখ্যা দিয়ে তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। তার এই অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য মুসলিম উম্মাহ ৫ লক্ষ ৯৩হাজার মিথ্যা হাদীসের প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছে , এ জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবীদার।
তিনি যে কত সতর্ক ছিলেন এবং কি পরিমান কষ্ট স্বীকার করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি নিজে প্রতিটি হাদীসের বর্ননাকারীর বাড়িতে গিয়ে খোজ নিয়েছেন , বর্ননাকারী মদ খেতো কিনা , জীবনে কখনো মিথ্যা কথা বলেছে কিনা , তার চরিত্র কেমন , স্মরনশক্তি কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর কোন কিছুতে এতটুকু ব্যাত্যয় পেলেই তিনি সেই হাদীস ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এই সকল বর্ননাকারী আবার আরবের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। প্রতিটি বর্ননাকারীর বাড়িতে যাওয়া এত সহজ ছিল না। তখনকার দিনে প্রাইভেট প্লেন বা পাজেরো বা road sign দেয়া রাজপথ ছিল না যে নিমেশেই তিনি পৌছে যাবেন। ফলে তাকে শত শত মাইল উট বা ঘোড়ার পিঠে করে যেতে হয়েছে। সঙ্গে নিতে হয়েছে রসদ , রাস্তার গাইড , চোর দস্যু মোকাবেলার জন্য পাইক বরকন্দাজ আরো কত কি। হয়তো বা দেখা গেছে একজনের বাড়িতে যেয়ে ফিরে আসতেই বছর শেষ। ছিল না টেলিফোন, যোগাযোগ ব্যবস্থা বা অন্য কোন প্রযুক্তি।
বুখারী হয়তো করিৎকর্মা লোক ছিলেন , তার এতো সময় নাও লাগতে পারে। ধরে নিলাম প্রতিটি হাদীস সংগ্রহ , যাচাই বাছাই ও মুখস্ত করতে তার মাত্র ১ ঘন্টা সময় লেগেছে। এই হিসাবে দিনে ২৪ ঘন্টা ঘুম খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে তিনি এক নাগাড়ে কাজ করলেও ৬৮ বছর লাগার কথা। তারপরেও না হয় প্রতিটি সহীহ হাদীস (৭০০০) লিপিবদ্ধ করার পরে তার ওজু করে ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়ার কথা বাদই দিলাম। অখচ তার আয়ুষ্কালই ছিল ৬২ বছর।
সত্যটা বের করতে পারলেন? কাগজ কলম এবং ক্যালকুটার নিয়ে বসলে এই গবেষনাটা আপনি নিজেও করতে পারবেন।
এবার আসুন বুখারীর বিচার বুদ্ধি নিয়ে সহজেই প্রশ্ন তোলা যায় এমন অগুনিত হাদীসের মাঝ থেকে মাত্র একটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। বুখারী, বুক ৫৮, হাদীস ১৮৮ (বাংলায় হাদিস নং ৩৫৭০)
Narrated 'Amr bin Maimun: During the pre-lslamic period of ignorance I saw a she-monkey surrounded by a number of monkeys. They were all stoning it, because it had committed illegal sexual intercourse. I too, stoned it along with them.
৩৫৭০। নুয়া’ঈম ইবনু হাম্মদ (রহঃ) ... আমর ইবনু মাইমূন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে দেখেছি, একটি বানর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে অনেকগুলো বানর একত্রিত হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম।’’
জিনার কারণে পাথর মেরে হত্যার ব্যাপারে মানুষ প্রশ্ন তুলতে পারে বলেই কি বুখারী বানরের এই অবিশ্বাস্য হাদীসটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন? এই ঘটনা যে সত্য নয় তা সহজেই অনুমেয় তবু আলোচনার খাতিরে ধরে নিলাম যে এটা সত্য, সেক্ষেত্রে বানরের এই ঘটনা যার সাথে নবীর কোন সম্পর্কই নাই এমনকি যা ইসলামের আগের যুগের ঘটনা তা হাদীসের বইতে ঢুকানোর অর্থ কি? আর বানর দিয়ে আল্লাহ জিনার শাস্তির ডেমনস্ট্রেশন দেখালেন অথচ নবীর সারাটা জীবন চলে গেল একটা কোরানের আয়াত নাজিল করলেন না, করলেন এমন অন্তিম সময়ে যার পরপরই নবী মারা গেলেন, আর সেই সাথে সেই আয়াতও ছাগলে খেয়ে ফেলল!
মহান আল্লাহপাক বুখারি গং-এর মিথ্যাচার থেকে আমাদের হেফাজত করুন। বিশ্বে কোরআনের রাজ কায়েম হোক। মিথ্যা দুরীভূত হোক, সত্য উদ্ভাসিত হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯