ওহ! মাত্র স্কুল থেকে আসলাম। ৩০-৩৫ ঘণ্টা হয়ে গেছে ঘুমাই নি।শরীরে প্রচণ্ড অবশাদ।কিন্তু এতো ভালো লাগছে যে বলার না।গতকাল রাতেই আমরা হুমকি পেয়েছিলাম যে এক্স ভিকিরা কিভাবে স্কুলে ধুকে তা আমাদের মিউচুয়াল এক্সপার্ট দেখে নেবেন। তার আজকে ৭.৩০ তে অফিস করার ও কথা ছিল।তাই আজকে ভোর ৬.৩০ থেকে স্কুলে ছিলাম। গিয়ে পুলিশের বহর দেখে কিছুটা যে ভয় পাইনি তা নয়। কি হয় কি হয় একটা বিষয় ছিল। বাইরে থেকে শুঞ্ছিলাম, প্রাক্তন ও বর্তমান কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এক পরজায়ে পলিশ আসে এবগ্ন বলে আউট ড্রেসে কোন মেয়েকে দেখলেই তাদের এরেস্ট করা হবে। পুলিশকেনা খেপিয়ে আমরা অডিটোরিয়াম ও ফিজিক্স লাবে লুকিয়ে ছিলাম। কিচ্ছুখন পর পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা বেরিয়ে আসি। এবং আমাদের বেশ কয়েক জন এক্স ভিকি সিদ্ধান্ত নেন যে প্রধানমন্ত্রীকে সারকলিপি দেওয়া হবে। কিছু বর্তমান ছাত্রীদেরকে সাথে নিয়ে তারা চলে জান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং সেখানে দায়িত্তরত একজনকে পত্রটি দেওয়া হয়। যদিও তিনি বলছিলেন বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু কথাটি৮ আসলেই আমাদের হজম হয় নি।
এরি মধ্যে আমাদের শ্রদ্ধেয়া আম্বিয়া আপাকে বোর্ড ডেকে পাঠায়, আপা বোর্ডে যান, কিন্তু কেন জানি বোর্ড তার আগের ডিসিশনে অনড় থাকেন।
এই দিকে বিক্ষভে উন্মাতাল হয়ে ওঠে ভিকারুন নিসা। এতো টুকু মেয়েরা বলতে থাকে আমাদের আপুদের গায়ে হাত দিলে কি হবে তারা নিজেরাও জানেনা। দল বেধে স্লোগান আর মিছিল কড়তে থাকে তারা। কিছুক্ষন পর পর যখন ই শোনা যাচ্ছিল হুস্নে আরা আসছেন, তারা প্রিঞ্চিপালের কক্ষে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়ে। এক সময় এমন অবস্থা হয় পড়ে যে আমরা যারা এক্স ছিলাম। যারা ছাত্রী দের আচরন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায় সেটা দেখছিলাম, তারাও আর পেরে উঠছিলাম না। এক পলকের জন্য তাদের কাছ থেকে দূরে গেলেই তারা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিল। এম্নকি এক সময় প্রিন্সিপালের বাসায় তারা পানির বোতল, স্যান্ডেল ছুরে মারে।
আমরা আমাদের আপাদের প্রতিও অসম্ভব কৃতজ্ঞ। আপারা আমাদেরকে বার বার বলেছেন শান্ত থাকতে, বার বার বলেছেন অসব্বহতা আমাদের কালচার না।মেয়েদের খেয়াল রেখেছেন। এম্নকি কোন অভিভাবক তাদের সন্তানকে নিয়ে যেতে চাইলে তাও দিয়েছেন।একটা মেয়ে কেও জোর করেনি। জখন একটু পর পর নেতিবাচক খবরে আমরা হতাশ হয়ে জাচ্ছিলাম। আপারা বলেছিলেন সত্তের জয়ের কথা। অসম্ভব সুন্দর ভাবে, আমাদের এরিস্ট্রক্রাসি মেনে বেয়াড়া সাংবাদিকদের জবাব দিয়েছেন।
যদিও এক পরজায়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় তার কারন ছিল তারা নিজেরাই। প্রতিদিন আমাদের ফুটেজ, ছবি নিয়ে যাচ্ছে; অথচ খবর দিচ্ছে নেতিবাচক ভাবে এটা মেয়েরা মেনে নিতে পারেনি। আমরা আশা করছিলাম, মিডিয়া অন্তত আমাদের আবেগের জায়গাটা বুঝবে। কিন্তু বুঝলাম না, কেন মিডিয়া বার বার উশকানি মুলক প্রশ্ন করছিলো! তারা কি ভুলে গেছিল, যে ভিকারুন নিসা অত্যন্ত মিডিয়া বাতসল একটি প্রতিষ্ঠান? নাকি কাঁদায় পড়া হাতিকে পেয়ে লাথি দেওয়ার লোভ সাম্নলাতে পারেনি। তারা কিভাবে ভুলে গেল, ভিকারুন নিসার খারাপ কিছু হলে তার প্রভাব সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষায় পড়বে। আমরা শুধু মেয়েদের মধ্যেই শ্রেষ্ঠ নই। আমরা সারা বাংলাদেশের একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আজকে মিডিয়ার যা করার কথা ছিল, সেই কাজটি করলেন রাতমজুর আর আলিম আল রাজি ব্লগার। জানিনা আপনাদেরকে ঠিক কি ভাবে ধন্যবাদ দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হবে! প্রতিটি মুহূর্ত আপনারা জেবাহবে সাথে ছিলেন। দারুন এবং দারুন। আরও ধন্যবাদ সকল ব্লগারদের যারা আমাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন প্রতি মুহূর্তে, কমেন্ট পোস্ট করেছেন, লেখা দিয়েছেন। সবাইকে আমাদের ভিকারুন নিসা পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। অনেক এবং অনেক!
যাই হোক, সারা দিন অনেক নাটকিয়তা হোল। আমাদের আম্বিয়া আমা দুই দুই বার মিটিং এ গেলেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রিও বেশ কবার আমাদেরকে হতাশা জনক কথা বললেন। কিন্তু বলে না সব ভালো তার, শেষ ভালো যার। অবশেষে আমাদের অদম্য ভিকি স্পিরিটের কাছে হার মানল সব কলুষিত রাজনীতি, হসনে আরাকে অপশারন করা হোল। যদিও আম্বিয়া আপাকে অদ্ধক্ষ করা হয়নি, তবুও আমাদের প্রান প্রিয়, অসাধারণ বেক্তিত্তের অধিকারি মঞ্জু আরা বেগম আপাকে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হোল।
সরকারকে ধন্যবাদ দিচ্ছি অবশেষে আমাদের পাশে এসে দাড়ানর জন্য। এবং প্রমান করার জন্য যে তারা সত্যি ই আমাদের বিষয়ে সহানুভূতিশীল ছিলেন।
আর আমাদের ভিকি বোনদের কথা আর কি বলবো। মানে, দুরজয় তারুণ্য কথাটির মানে এই এক সপ্তাহে আমরা হাতে কলমে বুঝে নিলাম। ছোট ছোট মেয়েরা বাবা মায়ের ভয়, টিসি, হুস্নে আরার হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে যা দেখাল মনে হলে এখনও কায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
আর আপারা! বিশ্বাস করুন, আপনাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসার যে জায়গাটা, তা আরও বেড়ে গেল।
আর দিন শেষে বলবো ভিকারুন নিসা পরিবার সুখী পরিবার!