এভাবে দিন যায়, মাস যায়; একে অপরের কাছে আসে। ভাল লাগা বাড়ে। কোথায় জানি দুজনেই বুঝতে পারে ভালোবাসার কথা মুখে না বললেও দুজনের মনে তার সুর উঠছে। দিন যায়, ক্ষণ যায়। নির্বাক আবেগের জালে বন্দি হতে থাকে দুজন।
ছেলেটার মাথা খারাপ রকমের পাগ্লামিতে দিন দিন তন্বী মুগ্ধ হয়। বর্ষার বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজে তার জানালার সামনে আসা, ওর প্রতি নির্ভেজাল ছেলেমানুষি নির্ভরতা সব যেনও তন্বীকে অর্কর প্রতি আসক্ত করে চলেছে।আর তন্বীর অসম্ভব রকম যত্ন আর মায়ায় গা ভাসিয়ে চলেছে অর্ক।
এক সাথে এক রাতে-
এর মধ্যে দুজনের এক সাথে ছুটি শুরু হলো। অর্ক জেদ ধরেছে এবার দুজন একসাথে বাড়ি যাবে। তন্বীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সে জানে অর্ক এবার কারো কথাই শুনবে না। কিন্তু ওকে একা যেতে দেবেন না বলে ওকে ওর বাবা নিতে আসবেন। কাকে কি বলে বোঝাবে ঠিক করতে করতে তন্বী আবিষ্কার করলো পাগলটার পাগলামি তাকেও ধরেছে।বাড়িতে কিছু না বলেই রাতের ট্রেনে দুজন রওনা করলো, ঠিক ভোরে নামবে।
এই রাতটা এই দুজনের জন্য অনেক বেশি ভাল লাগার রাত ছিল। সারা পথ তন্বী কথা বলেছে। অর্ক শুধুই হেসেছে আর ভেবেছে এর চেয়ে সুন্দর কোন রাত কি কেউ কনদিন কাটিয়েছে। এক সময় বক বক করতে করতে ক্লান্ত তন্বী অর্কর ঘারে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। অর্কর যেনও হঠাত কোঁরে মনে হোল এই মেয়েকে সে কোন দিন হারাতে পারবে না। একে হারালে সে বেচে থাকতে পারবে না। এবার ঢাকাতে গিয়েই খুব আয়োজন করে তন্বীকে বলবে; তন্বীকে ছাড়া অর্ক অচল।
ট্রেন দুলে চলেছে, ভোর হবে হবে এমন সময় ট্রেনটা তাদের বাড়ির ষ্টেশনে এসে থামল। এখন তাদেরকে আলাদা হতে হবে। তন্বীকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে অর্ক চলে গেল ওর ছেলে বেলার বড় প্রিয় নদীর তীরটায়। অনেক দিন পর নদির বুকে ভোর হতে দেখল। পানকৌড়িদের উড়াউড়ি ওকে যেনও আবার সেই শৈশবে নিয়ে গেল। একটা খালি নৌকা দেখে উঠে পড়লো। নদী ঘুরে বাড়ি পৌঁছুতে পৌঁছুতে দুপুর প্রায় গড়িয়ে এলো। অনেক দিন পরে নিজের শেকড়ে ফিরে কেমন জানি হাল্কা লাগতে থাকে অর্কর।