বাথরুমে দাঁড়িয়ে পেশাব করার সময় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখে একটা থালার মতো চাঁদ। পেশাব শেষ হয়ে যায় তবু মামুন বাথরুমে দাঁড়িয়ে থাকে। তার বাথরুম থেকে বেরুতে মন চায় না। অনেকক্ষণ পর একটা কালো মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিলে মামুন বাথরুমের দরজা খোলে। নিজের ঘরে ফিরতে মন চাইছে না, বারান্দায় যায় সে।
বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে একটা সিগারেট টানতে টানতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে। এই মাঝরাতে কাউকে কল দেয়ার মতো কেউ নেই তার। সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে আকাশে তাকায় মামুন। চাঁদটা এখনো মেঘে ঢাকা। চোখ নিচে নামাতেই দেখে গেটের কাছে দারোয়ানটা ঘুমে ঢুলছে। কত নিঃসঙ্গ মানুষ। সারারাত কুকুরের চিৎকার আর ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ শুনে শুনে রাত কাটিয়ে দেয় দারোয়ান।
আস্তে করে চোরের মতো দারোয়ানকে ডাক দেয় মামুন, ’চাচা! ও চাচা! চমকে উঠে দারোয়ান। দ্রæত বাঁশিতে ফুঁ দেয় সে, ’কেডা? ডাকে কেডা?’ মামুন এবারো ফিশফিশিয়ে উত্তর দেয়, ’চাচা উপরে তাকান। তিনতলার ভাড়াটিয়া আমি।’ ভয়ে ভয়ে দারোয়ান উপরে তাকায়। ঘুম জড়ানো লাল চোখ স্পষ্ট, ’কি হইছে বাজান? কোন সমস্যা নি? অতো রাইতে জাইগ্যা রইছেন ক্যারে? মামুন আবারো আস্তে করে বলে, ’চাচা আজ পূর্নিমা না অমাবশ্যা? ’ স্মিত হেসে দারোয়ান বলে, ’রাইত তো আমাবশ্যার মতোন ঘুটঘুইট্টা কালা। তয় আজকে পূর্নিমা। আষাইঢ়া পূর্নিমা। বাজান ঘুমাইতে যান। রাত উজাগরি ঠিক না।”
সিগারেটে আরেকটা টান দেয় মামুন। কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো দারোয়ানকে ডাক দেয় সে, ’চাচা সিগারেট খাইবেন? ’ কিছুটা লাজুক হেসে দারোয়ান উত্তর দেয়, ’বাজান আমি পান তামুক কিচ্ছু খাই না। তয় আজকে খাইতে মন চাইতাছে।’ মামুন প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিচে ঢিল মারে। চকচকে সিগারেটটা দারোয়ানের পায়ের সামনে পড়ে। তারপর সে এটাকে ঝেড়ে মুছে আগুন ধরায়, টুলে বসে আয়েশ করে টানতে থাকে। মামুনও আরেকটা সিগারেট ধরায়। দারোয়ান এবার ফিশফিশিয়ে মামুনকে ডাকে, ’বাজান ও বাজান! এই বিড়ির নাম কি, খাইতে তো চমৎকার! আগে কোনদিন টেশ করি নাই।’ ’বিড়ির নাম মার্লবোরো। আরেকটা দিবো?’ এবার হাসির চোটে দারোয়ানের সবগুলো দাঁত বের হয়ে যায়, ’দ্যান বাজান। এইটা শেষ রাইতে খামু।’
দুটি প্রাণী নিঃশব্দে রাতের আধারে সিগারেট টানছে। গেটের বাতিটার সাথে পাল্লা দিয়ে রাস্তার ল্যামপোস্টটাও টিমটিম করে জ্বলছে। চাঁদটাকে এখনো ঢেকে রেখেছে মেঘ। বাতাসের নাম গন্ধ নেই। শেষ রাতে বৃষ্টি আসতে পারে।