কোন কোন মেয়ে, নরম প্রকৃতির বোকা পুরুষদের পছন্দ করে। ইচ্ছে মতো ধমকানো যায়, যা ইচ্ছা বলা যায়। এমন এক মেয়ের খপ্পরে পড়েছিলাম। ফেইসবুকে টুকটাক কথা হতো। একদিন সুন্দর শাড়ি পড়ে মাইডে দিলো, আমি বললাম ‘নায়িকাদের মতো লাগছে’। মেয়েতো সাথে সাথে এংরি রিএক্ট দিলো। বুঝলাম অল্প পরিচয়ে ‘নায়িকা’ বলা ঠিক হয়নি, টিজ করে ফেললাম কি না! আবার স্ক্রিনশট মেরে লুচ্চা বলে পোস্ট মেরে দিতে পারে। আজকাল কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। এমনিতে আমার অযথা স্ক্যান্ডালের অভাব নেই। একটু সামলে নিয়ে বললাম,
-স্যরি। আর করবো না।
-কি করবেন না?
-না, যদি কিছু করে থাকি।
-আপনি কিছু করতে পারেন? আমার তো মনে হয় না?
-কি করার কথা বলছেন? (ভয়েভয়ে)
-ওইযে কিছু করা..
দিনটি ছিলো মেঘলা। কিছু না করার দিন। নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার দিন। মেয়েটি এবার অট্ট হাসির রিঅ্যাক্ট দেয়। আর বলে,
-আপনি একটা বোকা। কিচ্ছু বুঝেন না।
-কি বুঝবো?
-আমি আপনার সাথে ভালোমতন পরিচিত হতে চাইছি।
-আমরা তো পরিচিতই।
-আরে দেখা করা, সামনা-সামনি বসা ইত্যাাদি
আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। কেন জানি বললাম, ‘সামনা-সামনি দেখতে কিন্তু আমি কেবলাকান্ত’ সে দ্রুত লিখে দিলো, “ধুর বাল”। মেয়েদের গালাগালের কি চার্ম সেদিন বুঝেছিলাম। আমার ভেতরের সব পাখি একসাথে শিস দিয়ে উঠলো। আমি মেসেজ সিন করে রেখে দিয়েছিলাম। কয়েক মিনিট পর সেই লিখলো
-স্যরি, রাগ করলেন?
-আরে না না।
-আসুন না দেখা করি। আপনার কথা অনেক শুনেছি। দেখা করতে মন চাইছে। এমসি কলেজের মাঠে বসে এক ঠোঙা বাদাম খাওয়া যাবে।
-ইয়ে মানে, বাদামও আমার পছন্দ না।
-আচ্ছা আমি বাদাম খাবো, আপনি সিগারেট খাবেন। শুনুন আপনার নীল একটা শার্ট আছে না? সেদিন যে ছবি একটা আপলোড দিলেন, ওটা পড়ে আসবেন।
-আপনি?
-আমি নীল শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। আপনার সাদা প্যান্ট আছে?
-সাদা তো নেই, চকোলেট কালারের আছে।
-কি আর করা। ওটাই পড়ে আসবেন!
নারীসঙ্গের একটা আলাদা মাদকতা আছে। ভেতরের দরজা জানালা খুলে যায়। ঘ্যাচর-ম্যাচর পৃথিবীটা ভালো লাগতে শুরু করে। শক্ত আলু সেদ্ধ করলে যেমন নরম হয় তেমন চটকানো একটা ভাব থাকে।
এমসি কলেজের পুকুর পাড়ের শহিদমিনার ঘেসে দাঁড়িয়েছিলাম। শ্যাম্পু করা চুল উড়িয়ে উড়িয়ে মেয়েটি উপস্থিত হলো। নীল শাড়ির আঁচল মেলে ধরে বললো,
-কেমন লাগছে আমাকে?
-মন্দ না।
ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে কথা বলতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা বাসর রাত নয়, যে সব উজাড় করে বলে দিতে হবে। তবু সে বিকালটি স্মরণীয় হয়ে ছিলো। হাঁটতে হাঁটতে হাত লেগে যাচ্ছিলো। রসায়ন ভবনের সামনের আঙিনায় আমরা বসলাম। সে আমাকে অনেকটা প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারনির মতো জিজ্ঞেস করলো
-অমন কাঠের পুতুল হয়ে বসে আছেন কেন?
-ভয় লাগছে।
-কেন আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো না কি?
-না, মানে এভাবে কারো সাথে আমার দেখা হয় নি।
নিজের ন্যাকা ন্যাকা ভ্যাবাচেকা চেহারা সাবধানে আড়াল করলাম। নীরিহ পেলেই পাশের জন ঝাপিয়ে পড়ে যে। অতো সাবধান হবার আগেই ঝুম করে বৃষ্টি নামলো। আমরা দৌড় দিলাম।
অতিরিক্তি ন্যাকামিতেই কিনা আমি মেয়েটির জুতো ও লেডিস ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম। পুকুরের কাছে এসে মেয়েটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি চিৎকার করে ডাকলাম, কি হলো? আসুন! মেয়েটি ঝুম বৃষ্টিতে মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। আমি আর কি করবো! একজোড়া চপ্পল আর লেডিস ব্যাগ হাতে নিয়ে পুকুরের বাঁধানো ঘাটে পা মেলে বসে পড়লাম।
এমসির পুকুরে সেদিন অনেক পদ্ম ফুল ফোঁটেছিলো।
*সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত