শহরতলির বালুচর (নয়াবাজার) থেকে রংতুলি নিয়ে হাঁটতে শুরু করে অভিযাত্রী দলটি। সেনপাড়া, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, নাইওরপুল, জেলরোড, বারুতখানা হয়ে, ভুল বানান ঠিক করতে করতে তারা জিন্দাবাজার পৌঁছায়। জিন্দাবাজারের মুক্তিযোদ্ধা গলিতে বিভিন্ন প্রেসে হানা দেয় এবং প্রেস মালিকদের শুদ্ধ বাংলা বানানে শব্দ লেখার ব্যাপারে অনুরোধ করে।
দোকানদারদের রাজি করানো চাট্টিখানি কথা নয়। কতো অনুনয় বিনয় দেখাতে হয়। কেউ ধমক দিয়ে বসে- ভাগো এখান থেকে।
ভুল বাংলা বানান শুদ্ধ করা কেন জরুরি- সে বিষয়ে বক্তৃতা চলছে।
দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ- হওয়ার কথা। অথচ লেখা আছে-দেয়ালে পোষ্ঢার...
জিনিষ নয়, জিনিস; ষ এর নিচের লেজটা কেটে দিলেই স হয়ে যায়
পোস্টারের ট এর মাথায় চুল লাগানো হচ্ছে
সিলেট নগরীতে সবচে বেশি ভুল যে শব্দ হয় তার মধ্যে অন্যতম-স্টোর। ইংরেজী শব্দ বাংলায় আসলে ষ না হয়ে স হয় যে..
কার্যালয় বানানে ্য ফলা নেই। ভুল বানানটি এতো উঁচু যে ছিল নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। এক রিকশাওয়ালাকে ধরলাম- ভাই তোমার রিকশাটা সামনে নিয়ে আসবে। রাজি হওয়ার পর সাথে সাথে বনানী উঠে গেল রিকশায়-বানানটি শুদ্ধ হলো।
রং তুলি হাতে নগরীর বুকে হাঁটছে-কাকতাড়ুয়ারা
পোস্টার লাগানো নিষেধ, বানান ঠিক করা তো আর নিষেধ নয়
আমাদের লম্বু মাহির ছিল বলে রক্ষা, অনেক উঁচুতে যে বানান ভুল তা ঠিক করতে মাহির একাই যথেষ্ট
বাংলা বানান শুদ্ধির এবারের আয়োজনে আমাদের প্রাণ ছিল সমীর। ভাঙ্গা পা নিয়ে সে রং কিনেছে, গুলিয়েছে। নিখুঁত হাতে পরম মমতায় সে বানান শুদ্ধ করেছে।
একজনের হাতে তুলি, বাকীরা মজেছে আড্ডায়। কেউ আবার টুলটা ধরে রেখেছে, কেউ দোকান মালিকের সাথে কথা বলছে।
ফার্নিচার এর ণ-নেই, কারন এটি ইংরেজি থেকে এসেছে। নাইওরপুল এলাকায় যতোগুলো আসবাবের দোকান আছে সবগুলোতে এটি ছিল কমন ভুল।
সিষ্টেম কে সিস্টেম বানানো হচ্ছে
এরা আমাদের নতুন কাকতাড়ুয়া। ছেলেমেয়েগুলো খুব ভালো, অল্পতেই মিশে যায়।
বানান শুদ্ধির মাঝে চা বিরতি, সাথে প্রিয় দুটি মানুষ শাহাদাত ও বাপ্পী
লাল সবুজ তুলি হাতে দাঁড়িয়েছে নাইম, দেশকে এতো ভালবাসে ছেলেটা
ছবি নয় যেন, শহীদ মিনার
ছেলেটার নাম বিষাণ। খেতে পারে খুব। সিলেটের সব রেস্টুরেন্ট তার চাখা হয়ে গেছে। সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট-পালকি। ভুল বানান তো আর ফেলে রাখা যায় না। নে বাবা তুই-ই ঠিক কর।
বানান শুদ্ধি অভিযান শেষে আমরা চলে আসলাম সিলেটের দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারে। হেটে হেটে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে শহীদ বেদিতে বসে আছে কাকতাড়ুয়ারা
ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে স্যালুট। পরে সবাই মিলে গাইলাম জাতীয় সংগীত- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
সাধারণত যে শব্দগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় এসেছে সে শব্দগুলোই বেশি ভুল হচ্ছে। ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান গুলোও অনেকের অজানা। বাংলা একাডেমি থেকে -িকার ও ী-কারের যে নিয়মগুলো দেয়া আছে সেগুলো অনুসরণ করছে না অনেকে।
আমরা ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বানান শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলাম। গত এক বছরে অনেকবার এ কর্মসূচী চলেছে। আমরা চাই সারা বাংলাদেশে ভুল বানানগুলো ঠিক হয়ে যাক। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সারা বাংলাদেশে নিজ নিজ এলাকায় বানান শুদ্ধি অভিযান শুরু হোক এমন অনুরোধ সবার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৯