ঘুরে আসুন সিলেটের স্বর্গ: বিছানাকান্দি (ছবিসহ ভ্রমন পোষ্ট)
বিছানাকান্দি এতো সুন্দর, আমি এর নাম দিয়েছি সিলেটের স্বর্গ। বাংলাদেশের সীমান্তে মেঘালয় পাহার থেকে নেমে আসা ঠান্ডা পানির প্রবল স্রোত থরে থরে সাজানো পাথরের উপরদিয়ে বয়ে চলে। ঠিক যেন একটি পাথুরে নদী। বিছানাকান্দি থেকে ফিরে আসার পর প্রায় গোটা পঞ্চাশেক কাছের মানুষ বিছানাকান্দিতে যাওয়ার উপায় এবং জায়গাটি নিয়ে লিখতে অনুরোধ করছেন।
রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে সর্বপ্রথম আপনাকে প্রকৃতির অপরূপ হাতে সাজানো সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট শহরে ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ৩০০টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয় যায়। নিরাপত্তাও ভাল আছে হোটেলগুলোতে দরগাগেটে কয়েকটি ভাল হোটেল আছে।
বিছানাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি হাদারঘাট নামক জায়গা পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভাল হয়। পাঁচজন মিলে ৪০০টাকায় সাধারণত ভারা নেওয়া হয়। তবে মানুষ কম থাকলে ৮০টাকা জনপ্রতিও যাওয়া যায়।
বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা অনেক সুন্দর। চারপাশে শুধু সবুজ চা বাগান। নীল আকাশ আর যেন সবুজ কার্পেটের উপর তাবু টানিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সালুটিকর রাস্তায় প্রবেশ করলেই রাস্তা চরম খারাপ। পিচ ঢালা কালো রাজপথে একটু পরপরই ভাঙ্গা গর্ত। মনে হয় একটু আগেই যেন এ পথে গডজিলা হেটে গিয়েছে। ভারী বালুর ট্রাকগুলো রাস্তার এ দশা করেছে। খারাপ রাস্তা পার হয়েই আপনি একদম গ্রামের ভেতর ঢুকে যাবেন। সিলেটের গ্রামগুলো যেমন সবুজ বৃষ্টিতে ধুয়ে রেখেছে। চিকন রাস্তাগুলো সাপের মতোই আঁকাবাঁকা হয়ে গ্রামের মাঝখানে। একটু পরপর দেখা যায় দুষ্টু ছেলের দল ন্যাংটু হয়ে ফুটবল খেলছে।
গ্রাম দেখতে দেখতে আপনি হাদারঘাট এসে পৌছাবেন। হাদারঘাট বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না।
মুটামুটি সবকিছুই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। তবে আমি খাবার না নিয়ে যেতে অনুরোধ করবো। বিছানাকান্দি প্রকৃতির কোলে জেগে উঠেছে। সেখানে পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি ফেলে কেন জায়গাটি অপরিস্কার করবেন?
হাদারপার বাজারেই বিছানাকান্দি যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়।
সুন্দর বেশভুষা দেখে মাঝিরা ২০০০টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ৫০০টাকা হলে ভাল। দরাদরি করে এর চেয়ে কমে পেলে ভাল তবে অবশ্যই এর বেশি দামে যাবেন না। এর চেয়ে হেটে যাওয়া ভাল। তবে আমরা যেদিন গিয়েছিলাম তার আগের রাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। তাই জায়গায় জায়গায় পানি জমে নালা হয়ে গিয়েছিল। এরকম আবহাওয়া হলে একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও নৌকায় যাওয়া ভাল। তবে এডভেঞ্চার করতে চাইলে হেটে যাওয়ার বিকল্প নাই। আমরাও তাই করলাম। হাটা...
ঐ দেখা যায় মেঘের সাড়ি ঐ দেখা যায় মেঘালয়...মেঘালয়ের টানেই আপনি হাটবেন..শত পরিশ্রমেই আপনি হাটবেন...
যদি হেটে বিছানাকান্দি যান তাহলে আপনাকে এরকম কয়েকবার নৌকা দিয়ে পার হতে হবে।
খাল গুলো আগে শুকনো ছিল। এ কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে অনেক পানি বেড়েছে..
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে, পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি..দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি..ছোটবেলার কবিতার সাথে ছবির অনেক মিল। বিছানাকান্দির পথে অনেক বাঁধা ছিল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাটু পানির খালগুলো সাতারপানি হয়ে গিয়েছে। স্রোত তো আছেই, এর উপর আবার কোন নৌকা নেই। সাইজে খাটো, তার উপর আবার সাঁতার জানি না। বন্ধু রাকিব ও কিশোরের সহযোগিতায় এ নদী পার হলাম।
চল চল চল..উর্ধ্বগগনে বাজে মাদর, নিম্নে উতলা ধরনী তল...অরুন প্রাতের তরুন দল, চলরে চলরে চল..
এরকম অনেক পাথুরে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল আমাদের.
হাটতে হাটতে আমরা পৌছে গেলাম বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে। বিজিবির একটি অফিস আছে একদম শেষ মাথায়। বিছানাকান্দি নামার আগে অবশ্যই তাদের সাথে পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে নিবেন।
বাংলাদেশের শেষ সীমানা। এতোবেশি ক্লান্ত ছিলাম, মাতৃভুমির মাটিতে বসে পরলাম। যারা হেটে বিছানাকান্দি যাবেন তারাই একমাত্র সুন্দর ঝরনাটি দেখতে পাবেন। মেঘালয় পাহারের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনাটির নাম পাওয়া গেলনা। আমি এর নাম দিলাম-দুধ সবুজ !
it is too much risky...অনুমতি না নিয়ে ভারতের মাটিতে চলে যাওয়া, এখানে ছবি তোলা অপরাধ। আশেপাশে বিজিবি-বিএসএফ ছিলনা বলে ছবিটি তুলতে পেরেছি। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: যেকোন সময় গুলি চলে আসতে পারে।
অবশেষে পৌছালাম বিছানাকান্দি ! এতো সুন্দর !! খুশিতে সাত-পাঁচ না ভেবেই নেমে গেলাম। স্রোতের শক্তি কল্পনা করতে পারিনি। ধপাশ করে পাথরে আছাড় খেলাম। শীতল জলের পরশ পেয়ে আছাড়ের ব্যাথা, দুই কিলো বন্ধুর পথ হাটার ক্লান্তি ভুলে গেলাম।
শীতল জলে গা জুড়িয়ে যায়
মনে হয় বিছানাকান্দির পাথুরে বিছানায় শুয়ে থাকি
নিচের ছবিতে বিছানাকান্দির যে জায়গাটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি খুব বিপদজনক (অন্তত স্রোত যেদিন বেশি থাকে সেদিনের জন্য বিপদজনক) । পাথুরে নদীর দেখে সবাই পাথরের ওপর পা রেখে নদী পার হতে চায়। আমি যে জায়াটিতে আছি সেখানে পানির স্রোত তীব্র । আমি অনেক দূরে ছিলাম। শ্রোতের এতো তীব্র বেগ ছিল আমাকে প্রায় টেনে নিয়ে এই ছেলেটির উপর ফেলল। ভাগ্যিস দুজনের পাশেই একটি বড় পাথর ছিল। কোনমতে বাঁচলাম। যারা সাতার জানেনা তাদের জন্য বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের ভ্রমনের একজন সদস্য মরতে মরতে বেঁচে এসেছে। সাতার জানলেও পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং বেশি স্রোতের সময় বিছানাকান্দিতে সাবধানে নামুন
সত্যি সত্যি “মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া“ হচ্ছে। ভারতীয় কাঁঠাল খুব সহজলভ্য এখানে।
গাজা, মদ (রাম, ভোদকা, সেম্পেইন) সহ অনেক মাদক নেয়ার জন্য দালালরা এসে আপনাকে সাধতে পারে। সাবধান! ভুলেও এ ভুলটি করবেন না। একটু পরপর বিজিবি-বিএসএফ চেক হয় এখানে। ধরা পরলে জেল-জরিমানা সহ হয়রানির শিকার হতে পারেন। মেজাজ খারাপ হলে বিএসএফ কখন গুলি করে বসে ইয়াত্তা নাই।সবচে বড় কথা হলো মাদক থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন।
পাপলু বাঙ্গালী নামটা শুনেই এই লোকটাকে ভাল লাগা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে যখন ভর্তি হই প্রথমআলো বন্ধুসভার সাথে প্রথম থেকেই যোগাযোগ। পাপলু ভাই তখন বন্ধুসভা করতেন। পরে শুনেছি তিনি ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত। বর্তমানে তিনি সিলেট ছাত্র ইউনিয়নের বড় লীডার। পাপলু ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় আমার কাছে বড় বিষয় নয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক এর চে আর বড় পরিচয় কি হতে পারে। তিনি ভাল লিখেন, অনেক বই পড়েন, অনেক সুন্দর করে হাসেন-একটা মানুষকে ভাল লাগার জন্য যথেষ্ট। আজ বিছানাকান্দিগিয়ে পাপলু ভাইয়ের সাথে দেখা। পাপলু ভাইয়ের সাথে এটাই আমার প্রথম ছবি। ছবিতে পাপলু ভাইয়ে অনেক পিচ্চি লাগলেও তিনি কিন্তু বিশাল মানুষ ।
বলার অপেক্ষা রাখেনা-আজ সারা দিন কি যে মজা করেছি। বহুদিন পর প্রান খুলে হাসলাম।
নগ্ন দেহে মগ্ন মোরা , প্রানের উচ্ছাসে । এতো সুন্দর দেখে অনেকেই নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না।
জায়গাটা নিরব ছিল । এখন মানুষ বাড়ছে। আমার খুব ভয় লাগছে, বিছানাকিান্দি মানুষের অত্যাচারে নষ্ট না হয়ে যায়।
প্রিয় বিছানাকান্দি ছেড়ে ফিরে যাবার সময়। এবার আর হাটা নয় ক্লান্ত শরীরে নৌকায় উঠলাম। মেঘালয় পাহারের কোল ঘেসে নদী দিয়ে আমাদের নৌকা যখন এগিয়ে চলছিল মনের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম- আশা ছিল মনে মনে, প্রেম করিবো তোমার সনে। তোমায় নিয়া ঘর বান্ধিবো গহীন বালুর চরে..গো..গহীন বালুর চরে..
গান গাইতে গাইতে আমাদের নৌকাটি সত্যি সত্যি বালুচরে আটকে গেল। কি আর করা..সবাই মিলে নেমে পড়লাম..ঠেলতে হলো...আরো জোরে হেইও...জোড়সে মারো হেইও...
নৌকাটি দিয়েই শেষ পর্যন্ত আমরা নদী পার হয়েছিলাম।
বিছানাকান্দি: একবুক সুখস্মৃতি নিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম।
বাংলাদেশের জয় হোক। সবুজ প্রকৃতি বেঁচে থাক। জয়তু বিছানাকান্দি
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন