somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমোহিত সরোবরে

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই সকল ভাষা শহিদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা! আমরা তোমাদের ভুলব না। তোমাদের ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়। সকল শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি-আমিন।



জানালার কাছে বসে চাঁদের সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে। আসলে ঠিক যেন কথা না! অনেক দিনের জমানো ব্যথার যে আলোড়ন মনে আজ! বহু আগে থেকেই ঐ আকাশ আর চাঁদই যেন তার একমাত্র সাক্ষী! আর তাই ওদের সাথেই সব ইচ্ছেরা স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নেয়। মৌ এই জানালায় কত রাত জেগে জেগে কাটিয়েছে! কত কথা বলেছে আনমনে ঐ দূরের আকাশ পাণে চেয়ে। কত হিসাব নিকাশ আর পাওয়া না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাটিয়েছে,এক একটা নিঃসঙ্গ দীর্ঘ রাত! যদি আগে একটু কঠিনভাবে ভাবতে পারত সবকিছু? তাহলে কী আজ দুঃখ ভুলাতে মধ্যরাতে গুনগুন করে তাকে গান গেয়ে,মনের তৃষ্ণা মেটাতে হত!? খুব ইচ্ছে জাগে...। জানালা খুলে বাতাসে নাম না জানা কোন ফুলের সুবাসে গভীর নিঃশ্বাস নিতে! "নাহ এত ঠাণ্ডা পড়েছে আজ!"মৌ কথাটা বলেই মুখ বাড়িয়ে জানালার কাঁচে মাথা রাখে। চোখ মেলে দেখে চারদিকে সাদা পেঁজা পেঁজা মেঘের মত স্নো ভাসছে। কতদিন স্নো ধরে দেখেনি সে! বুক চীরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।

আজ কোনভাবেই মন বসাতে পারছে না তার মনের রাজ্যে! পাশের ঘর থেকে টুং টাং গ্লাসের শব্দ আর হাসির সাথে,ইংরেজি গানের সূর-ভীষণভাবে মনে জ্বালা ধরাচ্ছে। কানে হাত দিয়েও নিজেকে এসব কিছু শোনা থেকে বিরত রাখতে পারছে না! রাগে গলা ছেড়ে যত জোরে সম্ভব সে এবার গান গায়তে চেষ্টা করল। কিন্তু তা কেবল চিৎকারই মনে হল। ভীষণভাবে আবেগ ও চোখের জলে ভাসতে ইচ্ছে হচ্ছে! রেকর্ড করা গানের সিডিটা হাতে কিন্তু বাজাতে পারছে না। অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। মনে পড়ে মায়ের বলা কথা-"শোন মা,গাড়ী যখন ভাঙা রাস্তায় আটকে যায়? তহন পিছন দিক থাইকে,খালি একটু ধাক্কা দিতি হয়। তালি পরে গাড়ি আবার চলতি শুরু করে! কোন সময় ধাক্কাটা এট্টু আস্তে,আবার কোন সময় এট্টু জোরে দিতি হয়। ধাক্কা না দিলি গাড়ী আর আগে যায় না! তহন হয় চালকের কষ্ট। নিজে ধীরে ধীরে টাইনে টাইনে সামনে নিতি গেলি দেখা যাবে, নিজেই ক্লান্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। আর গাড়ীখানাও অকেজো হয়ে,জং ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে।"
-তাহলে কী এখন একটা ধাক্কার প্রয়োজন!? চেষ্টা করতে তো কোন দোষ নেই! সে তো এখনো বেঁচে আছে...।
মৌ নানা কথা ভাবতে ভাবতে শুনতে পায়,পিছনে পাশের ঘরের দরজা খোলার শব্দ-
-মা তুমি এভাবে চিৎকার কেন করছ? আমার বন্ধুদের কাছে কেন আমাকে এভাবে এমবারাস করছ?
-তোকে আমি এমবারাস করছি,না তুই আমাকে?
তমাল মায়ের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলে- লিসেন মা,আজকে আমার জন্য একটা গর্বের দিন। আজকে "ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে"একজন বাঙালি হিসাবে এটা আমার জন্য অনেক গর্বের। বিদেশি বন্ধুরা এই দিনটি সেলিব্রেট করে আমাদেরকে,মানে বাঙালিদেরকে খুশি করতে চায়ছে। আর তুমি...!?
মৌ ছেলের দিকে ঘুরে তাকায়...বুকটা ভেঙে কষ্টরা সব বিদ্রোহ করতে চায়। নিজেকে অনেক কষ্টে সংবরণ করে। ধীরে ধীরে বলে-
-বাংলা ভাষা নিয়ে তুই কেন গর্ব করবি? তুই তো আর বাঙালি নেই! ইংরেজি বলছিস,আজকের দিনে শ্যাম্পেন খেয়ে ইংরেজি গান শুনে পার্টি করছিস। এতে তোর গর্বের কিছু নেই তমাল।
-মা প্লিজ আমাকে আমার মত এই দিনটিকে সেলিব্রেট করতে দাও...প্লিজ...!
একটু থেমে তমাল আবার বলে- আমাকে তোমার যা বলার তা ওরা চলে গেলে বল।
মৌ কিছু বলতে যাচ্ছিল। এমন সময় একজন বিদেশি বন্ধু আসে ওখানে। বলে -
- টম এনি প্রব্লেম?
-নো নো… ডোন্ট ওয়ারী এভ্রিথিং ইজ ফাইন ম্যান...!
কথাটা বলে তমাল এক রকম ঠেলেই বন্ধুকে নিয়ে ভীতরে যেতে দু কদম যায়। মৌ চিৎকার দিয়ে বলে উঠে-
-নাহ...কিছুই ঠিক নাই...! তুই তমাল থেকে টম হয়ে গেছিস! তমাল আমাকে মিনারে নিয়ে যা। আমি মিনারে ফুল দিয়ে একফোঁটা পানি ঝরিয়ে প্রায়শ্চিত্তের আগুন নেভাব। আমাকে নিয়ে যা তমাল...।
"প্রায়শ্চিত্তের আগুন"কথাটায় যেন তমাল ক্ষনিকের জন্য থমকে গেল। মৌ আবার আকাশের দিকে তাকায়। বিড়বিড় করতে করতে স্মৃতির সাগরে সাঁতার কেটে কেটে ভাবনার অতলে ডুবে যায়।
মনে পড়ে তমালের বাবা আদর করে ওর নাম রেখেছিল তমাল। অথচ মাত্র এই কয়েকদিন আগে থেকে,সেই তমাল এখন বন্ধুদের কাছে তম থেকে টম হয়ে গেছে! "নাকি অনেক আগেই হয়েছে? হয়ত সে ঠিক খেয়াল করে শোনেনি কখনো। হবে হয়ত...।" তমালের কয়েকজন বাঙালি বন্ধুও আছে! মৌয়ের মনে হয় "ওদের বাবা মায়ের কী ওর মতই মনের অবস্থা?" কথাটা ভাবতেই মনের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। মনে পড়ে তমালের ছোট বেলায় ওর বাবা কাজ থেকে এসে যত ক্লান্তই থাকুক না কেন? ওকে নিয়ে ফুল দিতে ছুটে যেত প্রবাসীদের করা অস্থায়ী শহিদ মিনারে। শত তুষার ঝড়,হিম ঠাণ্ডাও দমাতে পারেনি কোন বাঙালিকে! দমাতে পারেনি একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে। এই দিনটাতে প্রবাসে থাকা বাঙালিরা মাতৃভাষার বিজয়ে আনন্দ উৎসব করে! শহিদদেরকে স্মরণ করে তাঁদের আত্মদানকে সম্মান করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

এই দিনটিতে যদি তমালের বাবা অফিস থেকে আসার আগে ফুলের দোকান বন্ধ হয়ে যায়? এই ভয়ে তমাল মাকে নিয়ে বিকালেই ঠাণ্ডার মধ্যে বের হয়ে কিনে নিয়ে আসত নিজের পছন্দনীয় ফুল। বাসায় এসে সেই সন্ধ্যা থেকে প্র্যাকটিস করত টেলিভিশনের কেউ যদি কোন প্রশ্ন করে ওকে? তাহলে সে কী বলবে তাই নিয়ে। ওকে একবার একটা টিভি চ্যানেল থেকে জিজ্ঞাসা করেছিল-
- আচ্ছা বাবু তুমি কেন ফুল দিতে এসেছো?
সেদিন একেবারে শুদ্ধ বাংলায় মায়ের কাছ থেকে শিখে নেয়া কথাগুলো বলেছিল-
-আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি তাই শহিদদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে এসেছি!
প্রশ্নদাতা অনেক খুশি হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন
- আচ্ছা বেশ ভাল বলেছ। তো বাবু তুমি কী জানো কেন আজ এই দিনটিতে শহিদদেরকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হয়?
সেদিন তমাল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল। খুব আমতা আমতা করে বলেছিল
-এই দিনেই তো আমাদের মায়ের ভাষার জন্য রফিক,সালাম,বরকত রক্ত দিয়েছিল। আর আর...!
আর কিছু মনে করতে পারছিল না বলে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিল সে। কিন্তু চ্যানেলের ছেলেটা বুদ্ধি করে বলল-
- বাবু তুমি তো অনেক কিছু জানো দেখছি...তো আজ তো আব্বু আম্মুর সাথে এসেছ। বড় হয়েও নিশ্চয় মিনারে আসবে?
সেদিন তমাল কিছুই বলেনি। কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে "হ্যাঁ" বলেছিল। আর ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকিয়েছিল! তারপর থেকে যতবার মিনারে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছে? ততবার ওর মাঝে ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে জানার আগ্রহ অনেক বেড়েছে ।

তারপর...তারপর প্রকৃতির নিয়মেই জীবন কেটেছে...। তমালও ধীরে ধীরে বড় হয়ে গেছে। আশ্চর্য ও এখন আর মিনারে যায় না। পড়াশুনা শেষে ভাল একটা চাকুরী করে...। এই বিদেশের মাটিতে বাবা মা হিসেবে যতটা করা সম্ভব, যতটা সুযোগ আছে ততটাই ওরা সন্তানের জন্য চেষ্টা করে গেছে। বাংলা স্কুলে নেয়া,বাংলা শেখানো সবই করেছে। কিন্তু তমালের বাংলা চর্চাটা ঠিক যেভাবে করা দরকার ছিল,সেভাবে করা হয়নি। সারাদিন ইংরেজি বলে বলে ও একরকম অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আর তাই স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পেরোতে একটা সময় এসে বাংলা লিখতে এবং পড়তে ভুলে গেছে! কিন্তু ও বাংলা বলতে পারে...! খুব সুন্দর করে বাংলা ভাষাও বোঝে...। হয়ত মৌ এখনো ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না বলে। আসলে সে ভাল করে ইংরেজি বলতে পারে না...। শেখার অনেক সুযোগ ছিল কিন্তু ইচ্ছে হয়নি কখনো। তমাল তাই বাধ্য হয়ে মায়ের সাথে বাংলা কথা বলে।

এখন তমাল ওর মাতৃভাষা দিবস নিয়ে গর্ব করে যে উৎসব পালন করছে? তা ওর বাবাকে দেখে যেতে হয়নি। ছেলে যেন মায়ের ভাষাটাকে সম্মান দিতে ভুলে না যায়। এই ভাষার জন্য যারা নিজেকে উৎসর্গিত করেছে,বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতিকে গর্বিত জাতি হিসাবে স্থান করে দিয়েছে। পিতা হিসাবে সে সব সময় চেয়েছে সন্তান যেন ভিন্ন পরিবেশে,ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতেও কোনদিন তা ভুলে না যায়। আর তাই তো হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেঁটে এসেও,সন্তানকে নিয়ে ছুটে গেছে। ছুটে গেছে প্রবাসে স্বদেশীদের সংস্পর্শে গড়ে তোলা একখণ্ড বাংলার পদতলে। যখন সারি সারি বাঙালিদের মাঝে সন্তানের হাত ধরে সবাই,সমস্বরে লাল সবুজের পতাকা তলে দাঁড়িয়েছিল! যখন প্রাণের বর্ণমালায় ঘেরা মিনারে মাথা উঁচু করে এক সূরে সূর মিলিয়েছিল "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কী ভুলিতে পারি..." হাজার মাইল দূর থেকেও যেন সবাই তখন,সোঁদা মাটির স্পর্শে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। গর্বভরা মাতৃভূমির মায়ায় প্রতিটা বাঙালিই ভিজে গিয়েছিল। সবার হৃদয়ের পরতে পরতে হয়েছিল তখন,অসীম রক্তক্ষরণ।

কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সেই স্পর্শ থেকে মৌ বঞ্চিত। অসুস্থতার কারণে সে চাইলেও এখন মিনারের কাছে গিয়ে মাতৃভাষার ঋণ শোধরাতে পারে না! তবুও সে এতোগুলো বছর ফুল দিয়েছে...! দেশ থেকে আনা লাল সবুজ পতাকা মাঝে শহিদদের স্মরণ করে সে ফুল দিয়েছে...! দোয়া পড়েও দিয়েছে...। তমালের বাবা এইদিনে আরও একটা কাজ করত! শহিদদের স্মরণে দেশে টাকা পাঠিয়ে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে বলত। এ সবকিছুই সে অনেক আনন্দ নিয়েই করে গেছে।
অথচ আজ...! আজ দীর্ঘ বছর পরে মৌ জানে না কীসের ভুলে? সেই একই দিনে চার দেয়ালের মাঝে সে বন্দি থাকে। কেন সেই গর্বিত সন্তান আজ মাতৃভাষায় শহিদদের শ্রদ্ধা জানাবার গুরুত্ব হারায়!? কেন বন্ধুদের সাথে শ্যাম্পেনের স্বাদে মনে নেশা ধরিয়ে,এই দিবসটিকে সেলিব্রেট করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে!?মৌ কোনদিন এইদিনটা দেখতে চায়নি...।
মনের মাঝে চিনচিন করে বুকের মাঝে ব্যথা করে...। সে জানে না এর শেষ কোথায় বা আদৌ শেষ হবে কিনা। ওর কাছে এই বরফ ঘেরা রাত,জ্যোৎস্না ঝরা আকাশ,সবকিছুই মিথ্যে মনে হয়...। মনের কোণে ভাসে মেঠো পথ আর সবুজ ঘেরা একটুকরো ভূমি! যেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একটি স্মৃতি স্তম্ভ...! যেখানে বাবার হাত ধরে মৌ ফুল দিয়েছে। যে মাটিতে দাঁড়িয়ে সবার সাথে নিজের কণ্ঠ মিলিয়ে সারাটা জীবন অন্যরকম একটা শক্তি পেয়ে গেছে। আর সে শক্তি হচ্ছে মাকে ভালোবাসার,জন্মভূমিকে ভালোবাসার। যে শক্তি মনে উদ্দীপনা জাগায় নিজের অস্তিত্ব রক্ষায়!

নানা কথা ভাবতে ভাবতে মৌয়ের মনে হয় যেন তমালের বাবা ঠিক ওর পাশে এসে বসেছে। ক্লান্ত সূরে সে যেন বলছে-"মৌ ছেলেটাকে হাত ধরে আরেকটু পথ চল...ও পথ ভুলে গেছে। তুমি ওকে পথ দেখাও!" মৌয়ের দুচোখে টপটপ করে পানি ঝরে ।
-নাহ এভাবে ভেঙ্গে পড়া চলবে না! আরও শক্ত হতে হবে। বেঁচে থাকতে এভাবে নিজের কাছে নিজেই হেরে যাওয়া চলবে না...!

হুইল চেয়ারটা ঘুরিয়ে সোজা ঢুকে যায় পাশের রুমে। রিমোট কন্ট্রোলটা নিয়ে মিউজিক বন্ধ করে দিতেই,সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। মৌ কারো দিকে না তাকিয়ে হাতের সিডিটা যথাস্থানে রাখে। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে প্লে দিতেই...সূরের মূর্ছনায় ঘরের চারদিক আন্দোলিত হয়। মৌ সিনাটাকে সামনে এগিয়ে,মাথা উঁচু করে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠে-"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কী ভুলিতে পারি...ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি,আমি কী ভুলিতে পারি...।" তমালের চোখের সামনে ভেসে উঠে বাবার হাত ধরে মিনারে যাওয়ার সব স্মৃতি! ওর যে কী হয়!
সামনে এগিয়ে দাঁড়ায় মায়ের পাশে। বুকের ভেতরটা কেউ যেন শক্ত কিছু দিয়ে প্রচণ্ডভাবে বাড়ী মারছে! কিছু একটা দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে আসে...। চোখ ভরে পানি পড়তে চায়...। সে বুঝতে পারে বড় ভুল হয়ে গেছে তার। বন্ধুদেরকে সে আজকের দিনের করণীয় কর্তব্য কী? তা বললে নিশ্চয় ওরা আনন্দিত হয়ে নিজেরাও দিনটির গুরুত্ব জেনে নিত? যার যেতে ইচ্ছে হত না,হয়ত সেও সবার সাথে যেতে বাধ্য হত!

তমালের মনে পড়ে কোথায় যেন পড়েছিল! আজকে সে যে "ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে" সেলিব্রেট করছে? তার মূল উদ্যোক্তা রফিক এবং সালাম নামে দুজন কানাডা নিবাসী। যাঁদের ত্যাগ তিতিক্ষা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের মাতৃভাষা দিবসের দিনটিই আজ "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে নির্ধারিত করা হয়েছে। দেশ ও জাতিকে সাহসী জাতি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে,দুজন প্রবাসীই বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে! অথচ সেও কিনা একজন প্রবাসী বাঙালি হয়ে আজ...আর ভাবতে পারে না! সে ভুল করেছে,অনেক বড় ভুল!

একে একে সবাই হাত থেকে গ্লাস নামিয়ে রাখে। তমালের দেখাদেখি টেবিলে রাখা ফুলদানি থেকে ফুলগুলো একটা একটা করে সবাই হাতে তুলে নেয়। তারপর সবাই ঘিরে ধরে মৌকে। ফুলগুলো রাখে মৌয়ের কোলের উপর রাখা পতাকা মাঝে...! "মনে রেখ বাবা...জীবনের একটা ভুল সিদ্ধান্ত তোমাকে শেষ করে দিতে পারে! আবার তোমার একটা সঠিক সিদ্ধান্ত তোমাকে নিয়ে যেতে পারে স্বর্গীয় চুড়ায়!" বাবার বলা কথা ভেবে তমালের হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি খেলে যায়...! আজকে মাকে শহিদ মিনারে নিয়ে যায়নি বলে সে মনে মনে আফসোস করে। প্রতিজ্ঞা করে মা যতদিন বেঁচে থাকবে,সে এই ভুল আর কোনদিন করবে না। "চেহারা নয়,এই ভাষাই আমাকে বাঙালি জাতি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেবে!"সে অনুভব করে এভাবে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে টিকে থাকা যায় না! সে উপলব্ধি করে ট্র্যাডিশন,কালচার এ সবকিছুই তার শিকড়কে পরিচয় করিয়ে দেবে। সে যদি তার শিকড়কে সম্মান না দেয় তাহলে অন্য কেউ দিবে না। এভাবে সে নিজের শিকড়ে পচন ধরাতে দেবে না...। এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে মায়ের হাত ধরে...মায়ের কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলায়।

মৌ শুনতে পায় একে একে ঘরের সবাই বাঁধো বাঁধো সূরে গেয়ে যায়-"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কী ভুলিতে পারি..." ওর মনে হয় একঝাঁক পায়রা এই মাত্র সারা ঘরে এসে ঠায় নিয়েছে...! "আহঃ কি যে প্রশান্তি মনে!"ও বুঝতে পারছে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ ওর চারপাশটা ঘিরে ধরেছে...।

!! শেষ !!


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×