দেশের প্রথম ২৪ঘন্টার নিউজ চ্যানেল হিসেবে আমরাও চেয়েছিলাম বিবিসি, সিএনএন এর মতো কারিশমা দেখাতে। প্রযুক্তির কারিশমা দেখাতে আমরা নিজেরাই শুরু করেছিলাম নতুন কিছু প্রযুক্তি ডেভেলপের। এ লক্ষ্যে মাত্র ১০ জন ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে গঠন করা হলো সিএসবি আইটি টিম। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে লাইভ নিউজ, দ্রুত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ, নিউজ অটোমেশন সহ সব ধরনের অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি হবে সিএসবি নিউজ, এ লক্ষ্যে বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আনা শুরু হলো। কিন্তু বাধ সাধলো সরকারি কর্তাদের সহজাত চরিত্রের কাছে। এয়ারপোর্টে এসে দীর্ঘদিনের জন্য আটকা পরে রইলো সিএসবি'র যন্ত্রাংশ। চ্যানেল অনএয়ারের নির্ধারিত সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। আমরা আইটি ও ব্রডকাস্টের কয়েকজন অভয় বাণী শুনালাম। আইটি ডিপার্টমেন্টের আমরা দুই তিনজন সারা রাত-সারা দিন কাজ করলাম (এরকম আমরা কেউ কেউ টানা ৩৬ ঘন্টাও ডিউটি করেছি)। ব্রডকাস্টের জন্য প্লে-আউট মেশিন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রাংশ দেশিয় ক্লোন পিসি দিয়ে আমরাই তৈরি করলাম। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়া থেকে ভাড়া করা কিছু যন্ত্রাংশও সহায়তা দিল। এভাবেই শুরু হলো সিএসবি'র যাত্রা...। পাশাপাশি চলছে এয়ারপোর্টের কর্তাবাবু ও বিটিআরসিকে তেল মালিশ করার পর্ব। আমাদের ডিজিএম নিয়মিত গিয়ে বিটিআরসি'র বলদগুলানকে টেকনিক্যাল বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে আসতেন এয়ারপোর্টে আটকা পরা যন্ত্রাংশ দিয়ে কী হয় সেই বিষয়ে। যাহোক খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি দিয়ে (ঘুষের পরিমাণ যন্ত্রাংশের দামের চেয়েও ছাড়িয়ে গেছে) বেশ কিছু যন্ত্রাংশ আনা হলো (এখনো এয়ারপোর্টে আটকা পড়ে আছে অনেক যন্ত্রাংশ)। টানা তিন মাস চললো আমাদের তৈরি বাংলা-অটোমেশন। মাথার সব সময় টেনশন কাজ করতো কখন ঐ বাংলা-মেশিন হ্যাং করবে।
পাশাপাশি আমরা ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও শহরগুলোতেও ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ফেললাম। দেশের যেখানেই কোন ঘটনা ঘটুক না কেন আমাদের এই নেটওয়ার্কের কারিশমাতে তা চলে আসতো মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই। ডিএসএনজি ছাড়াই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই সময়ে একাধিক লাইভ দেখানোর মতো সেটআপ আমরা করে ফেললাম। সবমিলিয়ে চলতে থাকলো...। ইতিমধ্যে আইটি ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বিশেষ কাজে এক্সপার্ট হয়ে উঠলেন । সবার নামের সাথে আলাদা একটি করে বিশেষণ যুক্ত হলো। যেমন ফাইবার ফয়সাল, আইটি মাসুম, অক্টোপাস আতক সফটওয়্যার অরুণ আর ওয়েব টিভি এবং লাইভ ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য আমি একটি প্রযুক্তি ডেভেলপ করলাম। এজন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকাও আমাকে নিয়ে লিড নিউজ হলো। তাই আমার নাম হলো বিজ্ঞানী ভাই। আর আমাদের সবার গুরু ছিলেন রেজাউল ভাই। আমাদের কাজের উৎসাহ যোগাতে মার্টিন ভাই (ডিজিএম) নিজেই তৈরি করে খাওয়াতেন বার্গার, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি। মাঝে মাঝে অফিসের নিচে চটপটি উৎসব। যেকোন প্রকার উছিলা দিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে চলতো পিজা উৎসব (দূর সম্পর্কের আত্নীয়সজনের বিয়ে কিংবা বাচ্চা-কাচ্চা হলেও তা উছিলা হিসেবে ধরা হতো)।
আমরা এক বুক আশা নিয়ে এগিয়ে চললাম...। আরও নতুন কিছু দেখানো উন্মাদনায় আমাদের চেষ্টার অন্ত ছিল না। কিন্ত মাঝ পথে মঈনুল প্রদত্ত এক অনাঙ্ক্ষিত ঝড় আমাদের থামিয়ে দিল। আমরা থমকে গেলাম। চার শতাধিক কর্মীর জীবনে হতাশা নেমে এলো। আমরা সবাই ছ্যাঁকা খাইলাম!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫