somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্গীত আমার ধর্ম, সঙ্গীত হচ্ছে ভালোবাসা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিতর্ক থাকতে পারে তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তী সময়ে আমাদের বাংলা ভাষায় সবচেয়ে প্রসিদ্ধ একজন কবি জয় গোস্বামী। যার অসংখ্য কবিতার নিখুঁত শব্দমালা খুদার্ত প্রাণের তৃষ্ণা মেটায়। তিনি সম্প্রতি ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সাহিত্য সম্মেলন ‘হে উৎসব’ এ কবিতা আবৃত্তির জন্য আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন।

অপেক্ষার প্রহর শেষে জয় গোস্বামী শুরু করলেন কবিতা আবৃত্তি। আবৃত্তির স্বপ্নময় আধা ঘণ্টা সময় নিমিষেই কেটে গেল। দর্শক ও তার পাঠকেরা সেই আবৃত্তি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন। কিন্তু কবির শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশিক্ষণ অবৃত্তি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তীব্র আকাঙ্খা ও অতৃপ্তি নিয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন দর্শক ও শ্রোতা।

অনেক কষ্টের পর ‘নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’ এর প্রতিনিধি এবং আলোকচিত্রী কবির সাথে মুখোমুখি হয়ে কবির মতবাদ, দর্শন এবং জনপ্রিয় কবিতাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ হয়।

প্রশ্ন: আপনি কি দয়া করে আপনার ‘পাঁচালি দম্পতি কথা’ কবিতার সংক্ষিপ্ত অন্তর্নিহিত অর্থ আমাদেরকে বলবেন?

জয়: কবিতাটিতে মোটেই পেছনের কোনো জটিল গল্প নেই। ২০ বছর আগে আমার স্ত্রী ‘কাভেরী’ ছিল সেই কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা উৎস। আমার অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে একটি বইয়ে আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে একটি বিখ্যাত নোট লিখেছিলাম ‘পাগলি তোমার সাথে ভয়াবহ জীবন কাটাবো।’ সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রকাশক ওই লাইনের উপর ভিত্তি করে আমাকে একটা কবিতা লিখতে বলেছিলেন। পরে আমি যখন পার্কে বসেছিলাম তখন ওই লাইনটি আমার মনের মধ্যে খেলা করেছিল এবং তক্ষণাৎ আমি বাড়ি ফেরার পথের জনাকীর্ণ ব্যস্ত বাসে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে নিত্যদিন সেই বাসে বিরক্তিকর যাতায়াতের অস্থির অনুভূতি থেকেই মনের মধ্যে সেই লাইনটার উদ্রেগ ঘটেছিল। বাড়িতে পৌঁছেই একটা কাগজে বিরতহীনভাবে সম্পন্ন কবিতাটি লিখে ফেলি। এটাই মূলত ওই কবিতাটার অন্তর্নিহিত কথা। আসলে রহস্যময় কিছু নেই।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন আপনার কবিতা বিশ্বব্যাপী প্রেমিক যুগলের ধর্মশাস্ত্র হওয়ার সম্ভাবণা আছে অন্তত আমাদের সংস্কৃতির জন্য ?

জয়: যখন ধর্মশাস্ত্রের বিষয়টি আসে তখন আমি কিছু পরিষ্কার করে বলতে চাই, সঙ্গীত আমার ধর্ম, সঙ্গীত হচ্ছে ভালোবাসা এবং পরক্ষণে ভাবি সঙ্গীত আসলে কিছুই না, ভালোবাসাই সব। নিখাঁদ, খাঁটি দূষণমুক্ত ভালোবাসা যে ভালোবাসার জন্ম ভালোবাসা থেকেই। সেই দৃষ্টিভিঙ্গি থেকে আপনি বলতে পারেন রোমান্টিক ভালোবাসা নয়, লোক দেখানো ভালোবাসা নয় বরং অতি সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার নিযার্স হিসেবে কবিতাটি কয়েক দশক থেকে স্থায়ী হয়ে আছে এবং আগামীতেও থাকবে।
আমি বলতে চাই কবিতাটিতে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গতানুগতিক ইচ্ছা, অভিরুচি এবং জীবন ধারার চিত্রই অঙ্কিত হয়েছে। যেখানে তাদের স্বাভাবিক জীবনের লক্ষ্য, আশা-প্রত্যাশা, ধ্যান-ধারণা, প্রচণ্ড ভালোবাসা ও ভালোবাসাহীনতাই ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন: কি অথবা কে অথবা কোথায় ‘অলকানন্দা’?

জয়: এই প্রশ্নের জবাবে তিনি যে মৃদু হাসি দিলেন লিওনার্দো ভিঞ্চির সৃষ্টি ‘মোনালিস’র সেই হেয়ালিপূর্ণ হাসির মত অনেক অর্থ বহন করে তা। ‘অলকানন্দা’ হিসেবে বিখ্যাত কবি তিনি স্বভাব সুলভভাবে বললেন সেটি তার সেরা সৃষ্টি।


প্রশ্ন: আপনারই কবিতার লাইন -‘আমার জীবন আমি হারিয়ে ফেলেছে/ খুঁজে পাওয়া কঠিন এখন’
বহুকাল ঘুরে, খুঁজে এমন কিছু কি পেয়েছেন যা আপনি আপনার জীবনে হারিয়েছেন?

মহাকালের যাত্রা শেষ হবার নয়। এই যাত্রায় যাত্রীরা হারিয়ে যায়। কেউ জয়ী হতে পারে না। এই হলো বাস্তবাতা। আমার সমগ্র জীবনে আমি সেই চরম বাস্তবতার অনুসন্ধান করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: আপনি লিখেছেন- ‘এক পৃথিবী লিখবো বলে/ একটা পাতাও শেষ করিনি’

কাকে উদ্দেশ্যে করে এমনটা লিখেছেন, আপনার দুনিয়া আপনি কাকে সপে দিয়েছেন?

জয়: এমন প্রশ্ন শুনে তিনি বিরক্ত না হয়ে বরং আরো একটি মৃদু হাসি দিয়ে ঘরটাকে আলোকিত করে ফেললেন। আগের হাসিটার চেয়ে এবারের হাসিটার অর্থ অন্যরকম। ডান পাশে নিশ্চুপ বসে থাকা স্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন ‘এই হচ্ছে সেই মানুষ, যাকে আমি আমার সমগ্র বিশ্ব দিয়ে দিয়েছি এবং কবিতা লেখাই তার জীবনের সবকিছু।’

জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তখন পশ্চিম বাংলার রানাঘাটে চলে যায় তখন থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। তাঁর পিতা একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার হাতেই মূলত জয়ের কবিতা লেখার হাতেখড়ি। তার একাডেমিক লেখাপড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়। তখন থেকে তিনি সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় পুরোদমে লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়।

১৯৮৯ সালে তিনি ‘ঘুমিয়েছ’, ‘ঝাউপাতা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’ কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

মূল: নাহিদ রিয়াসদ: ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সজিব তৌহিদ


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

Appalachian Trail ৩৫০০ কিমি পায়ে হেটে

লিখেছেন কলাবাগান১, ০১ লা মে, ২০২৫ ভোর ৬:০৭


অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল: এক অসাধারণ অভিযানের গল্প

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবুন, আজ আপনাকে ১৫-২০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। রাত হবে পাহাড়ের কোলে তাঁবুতে, খাওয়া-দাওয়া চলবে নিজের রান্না করা খাবারে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×