অনেক দিন থেকেই ভাবছি ফেসবুকে একটা এ্যাকাউন্ট খুলবো। কিন্তু আব্বু-আম্মুর অনুমতি না থাকায় সেটি খোলা হয়নি। আম্মু বলতো এইচএসসি পরীক্ষা শেষে ফেসবুক খুলিস। এসএসসি’র মত যেন এইচএসসিতেও গোল্ডেন প্লাস পাই সে জন্যই তাদের এই সতর্কতা। যাহোক, ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা শেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য ঢাকায় যেতে হবে কোচিং করতে।
এরই মধ্যে আমার হাতে চলে এসেছে একটা মোটামুটির মানের এ্যান্ড্রয়েট মোবাইল সেট। মোবাইলটি হাতে পাওয়ার দিনই আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেলেছি এবং বেশ উত্তেজনার মধ্যেই সময় কাটাচ্ছি। বেশ কিছু বন্ধুও হয়েছে আমার। তাদের সাথে চ্যাটিং, পোকিং, লাইকিং, শেয়ারিংয়ের মধ্যে ভালোই দিন কাটছে।
এতোদিন ফেসবুকে না থাকায় মনেহলো আমি অনেক ব্যাকডেটেড ছিলাম এবং অনেক কিছু মিস করেছি। আমি এক অতি সাধরণ গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছিমছাম চেহারা ভাবহীন, স্টাইলহীন সমাজের আট-দশটা মেয়ের মত আমার জীবন আচরণ। আমার নাম শুক্লা।
দিনাজপুরের মফস্বল শহরের এই আমি কোচিং সূত্রে এখন থাকি ঢাকার র্ফাম গেইট এলাকায়। কোচিংয়ে নিয়মিত ক্লাস এবং ফেসবুকিং এইতো আমার জীবন।
বাড়ি থেকে পাঠানো সীমিত টাকায় ঢাকার জীবন কোন রকমে চলে যায়। অসংখ্য মেয়ের কলরবে মুখরিত আম্মুহীন-আব্বুহীন হোস্টেলের এই অবারিত স্বাধীন সংসারে দারিদ্র্যকে আমার একমাত্র অভিভাবক মনে হয়। দারিদ্র্যের কারণেই আমি খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি এবং ভালো কিছু করার স্পৃহা পাই। ইতোমধ্যে আমি পাক্কা ফেসবুকার হয়ে উঠেছি।
আমার স্ট্যাটাসে অনেক লাইক-কমেন্ট। ফ্যান- ফলোয়ারের সংখ্যাও প্রচুর। ফেসবুকিংয়ের কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় সকালের ক্লাস নিয়েছি বিকেলে। ফেসবুকে অনেক ছেলে আমাকে প্রেমের প্রোপস করেছে। সংসদ ভনের দক্ষিণ প্লাজায় অলরেডি পাঁচটি ছেলের সাথে দেখাও করেছি। লেখাপড়ায় আগের মত আনন্দ পাই না।
এরই মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে গেছে আমার জীবনে। সবার অজান্তে বড়লোক একটা ছেলে সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ফেসবুকে প্রেম অত:পর বিয়ে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট হয়ে গেছে। দুটি গোল্ডেন প্লাস থাকা সত্ত্বেও কোথাও চান্স পাই নি।
তাই বাবার হুকুম ঢাকা ছাড়তে হবে। সবকিছু নিয়ে ঘরের খোঁজে ঘরের মানুষ যখন হোস্টেলের ঘর ছেড়ে যাচ্ছি। তখন গোপন প্রেমের বিয়েটি আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। এসময় চোখের কোণে জল ছিল কিনা বুঝে উঠতে পারি নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৫
১. ০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:০১ ০