কলেজছাত্র লিমন হোসেনের পায়ে র্যাবের গুলি করার ঘটনায় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ঝলকাঠির সাতুরিয়ায় লিমনের বাড়ির আশপাশের লোকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব ৮-এর সদস্যরা এলাকায় গিয়ে ভয়ভীতি দেখান বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সকাল আটটার দিকে আটটি মাইক্রোবাসে র্যাব ৮-এর সদস্যরা এসে সাতুরিয়ার পুরান জমাদ্দারহাট সেতুসহ ওই গ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। তাঁরা বিভিন্ন লোকের নাম-পরিচয় জানতে চান। গণমাধ্যমকর্মীদেরও র্যাবের জেরার মুখে পড়তে হয়।
র্যাবের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে পা হারানো কলেজছাত্র লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, লিমনকে গুলি করার বিষয়ে স্থানীয় যাঁরা সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়, কেন লিমনের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁদের ভয়ভীতিও দেখানো হয়। র্যাব গ্রামের অনেককে মুঠোফোনে ফোন করে তাদের কাছে আসতে বলে। এতে ফোন পাওয়া লোকজন একধরনের আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যাবের সশস্ত্র সদস্যরা এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।
র্যাব ৮-এর অপর একটি দল গতকাল পিরোজপুরের কাউখালী সরকারি কলেজে যায়। তারা সেখানকার পরীক্ষাকেন্দ্রে কর্মরত কাঠালিয়া পিজিএস কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষকে গাড়িতে তুলে ওই কলেজে নিয়ে আসে। র্যাবের সদস্যরা কলেজের হাজিরা খাতায় লিমনের উপস্থিতি কেমন ছিল তা দেখেন। অধ্যক্ষ নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বলেন, লিমনের উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। পরে র্যাব আবার কাউখালী সরকারি কলেজে তাঁকে পৌঁছে দেয়।
লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের দেওয়া দুটি মামলার তদন্তক কর্মকর্তা ঝালকাঠির রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম জানান, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মারামারির মামলা ছিল। তবে মামলার বাদীর নাম, স্থান ও তারিখ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেননি। দুই দিন আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, লিমনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা জিডি নেই।
জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলার পুলিশ সুপার মো. শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছেন।
গত ২৩ মার্চ বিকেলে কলেজছাত্র লিমন হোসেন ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের মাঠ থেকে গরু আনতে যায়। পথে স্থানীয় শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে র্যাব ৮-এর একটি দল তাকে সামনে পেয়ে জামার কলার ধরে নাম জিজ্ঞাসা করে। লিমন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দিলে র্যাবের এক সদস্য কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তার বাঁ পায়ের ঊরুতে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। লিমন পিরোজপুরের কাউখালির কাঠালিয়া পিজিএস কারিগরি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন দিনমজুরি করে সংসার চালান। লিমন পড়ালেখার খরচ চালাতে স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ করত।