অপ্রকাশিত পুষে রাখা গল্প।
________________________
নিয়াজ, চল চার্চে যাই।
কেন চার্চে কেন যাবি, তুই না হিন্দু ! মন্দিরে যা...।
কই গায়ে লেখা আছে নাকি? তা তুইতো মুসলিম, তাই মাঝামাঝি যাবো। খুবতো বলিস আমি তোর অর্ধেক!
সান্তাক্রুজ বাসিলিকায় বিকেল পাঁচটার পরে এমনিতেই দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ, এসময়টা প্রার্থনার সময় কিন্তু আজ একটু আগেভাগেই গেট আটকে দিলো। আজকে বিয়ের প্রোগ্রাম রয়েছে, বিয়েটা অবশ্য প্রার্থনার পরে কিন্তু আগে থেকেই আটকে দিলো। নিয়াজ খোজ নেবার পরেও তিথি মিথ্যা বলেই ঢুকবে বলে পন করে বসে, কি আর করার ! তিথির কোন জিদই নিয়াজের কাছে কোনদিন টেকেনি, জিদ নিয়ে কথা বলতে গেলে ওর একটাই কথা, বিয়ের আগে আমাকে একটু সহ্য কর। দেখেনিস বিয়ের পরে আমি লক্ষ্মী বউ হয়ে যাবো।
ওরা প্রেয়ার হলের সামনের দিকের তৃতীয় বেন্সে গিয়ে বসে, নিয়মিত প্রার্থনাকারীরা সামনের দিকেই বসে। এখানে প্রথমে মালায়ালাম ভাষায় প্রার্থনা করা হয়, নিয়াজ একাগ্রতায় বক্তব্য শোনে। তিথি খোচা দিয়ে বলে,
"কি বলে কিছু বুঝিস?"
নিয়াজ চুপ থেকে শুনেই যায়, প্রায় বিশ মিনিটের স্পীচের পরে এবার ইংরেজীতে বক্তব্য শুরু হলে তিথি মাথায় কাপড় টেনে নেয়, এই প্রথমবার মেয়েটা মাথায় কাপড় দিয়েছে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও ও কখনো মাথায় কাপড় দিয়ে ঢুকত না, ওর কাছে ধর্মটা সুধু সামাজিকতা। বন্ধুরা নিয়াজের কথা জিজ্ঞেস করলে ওর বরাবরই উত্তর, আমি একজন মানুষ বিয়ে করব কোন ধর্ম না। তিথি সাধারণত আধুনিক পোশাক পরলেও আজকে থ্রীপিস পরা, সাদা ওড়না মাথায় তিথিকে অস্থির শুন্দর লাগে।
ফাদারের স্পিস শেষ হয়, পুরো হলরুমে পিনপতন নীরবতা ভর করে, দক্ষিণে যীশু খ্রিস্টের ক্রসের নিচে ফাদার চোখ বন্ধ করা। তিথি নিয়াজের হাত ধক্ত করে ধরে বসে, পাঁচ আঙ্গুলে শেলাই করে নেয় আঙ্গুলের ফাদ। নাকের কোনে ঘামবিন্দু ঘন হয়ে নথ বেয়ে পড়ে, নিয়াজের খুব ইচ্ছে করে তিথির ঘর্মাক্ত নাসিকায় ভালোবাসার চুমু আঁকতে, কিন্তু যায়াটাতো আসলেই অন্য রকম। ফাদার চোখ খুলে অবাক বিস্ময়ে তাকায়। হ্যা ঠিক তাই, তিথির দিকে। কি যেন বলে, কিন্তু মালায়ালাম ভাষাতো জানা নেই। একজন সিস্টার এসে বলল,
"প্লিজ কাম উইত মি"
তিথি ভয়ে জবথব, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এসে ধরা পড়ে গেলে যেমন ভয় ঠিক তেমন ! নিয়াজ ইশারা করলে এগিয়ে চলে, ফাদারের সামনে দাঁড়ানো তিথি। স্পিকার ছাড়া মালায়ালাম ও ইংরেজি মিশিয়ে কি সব কথা বলা হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারে না নিয়াজ। তিথি মাথা নিচু করে থাকে, হলের পিনপতন নীরবতায় সবাই একাগ্র চিত্তে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে ফাদার মৃদু হাসে, তিথি ফিরে এসে কলামের ফাকা যায়গায় দাঁড়ানো নিয়াজের বুকে মাথা রাখে। আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথেই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বের হবার সময় নিয়াজের কনুইয়ের ভিতর দিয়ে জাপটে ধরে তিথি বলে,
"আমরা এখানেই বিয়ে করবো, ঠিক আছে ?"
নিয়াজ চুপ করে থাকে।
চার্চে ফাদার তিথিকে কি বলেছিলো নিয়াজের জানা হয়নি কোনদিনই। তবে গেট থেকে বের হবার সময় ভিজিটিং বইয়ে তিথি লিখে ছিলো,
"I will never ever forget this prettiest moment of my life... "
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৩২