একদা নিশিথে
জ্যোস্না রাত। ভার্সিটি শেষে সিফাত বাসার উদ্দেশ্যে চলে আসল। সারা দিনের ক্লান্তিতে তার শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। তাই শরীরকে একটু প্রকৃতির মিতালীর আভাস দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে বেলকুনির গ্রীলের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ আচমকা একটা শব্দ হৃদয়ের মণিকোঠায় কড়নাড়া দিল। সিফাত সাথে সাথে পিছনের দিকে ফির তাকাল। দেখল নীল আকাশের পরী, পদ্মফুলের মত নিস্কলঙ্ক একটা সুন্দরী মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। এহেন মুহুর্তে অস্ফুট হাসির একটা মেয়ে দেখে সিফাতের কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন মনে হল। মেয়টা যতই কাছে আসতে লাগল ততই পরিচিত মনে হতে লাগল। কিন্তু সিফাত সূচনায় 'থ' হয়ে গেল। মেয়েটা সিফাতের কাছাকাছি আসতেই সিফাতের শরীরে জমে থাকা পানি গুলো শুস্ক মৌসুমে পরিণত হল। সিফাত মেয়েটার চোখে এক ধরনের ভয়ের আভাস দেখেতে পাচ্ছে। মেয়েটা টি তাকে দেখে্ই ভয় পাচ্ছে? তাহলে কি মেয়েটাকে তার সাহায্য করা উচিত? মেয়েটা যদি ব্যাপারটা অন্যভাবে নেয়। তাই সিফাত সকল চিন্তা-ভাবনাকে তাড়া দিয়ে অন্য মনস্ক ভাব ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু মেয়েটা এসে পাশ ঘেসে বেলকুনি দিয়ে সাম্মি আপুর বাসায় চলে গেল। সিফাত তার দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।এ যে তারই হৃদয়ের বাগিচায় ফুটন্ত এক সতেজ গোলাপা। যার পাপড়ি ও কেশ অতিব মুগ্ধকর। যার বর্ণালী ঠোঁটের হাসিতে শক্ত হৃদয় নরম হতে বাধ্য। যার দৃষ্টির মাঝে অপরুপ মায়াবী ভঙ্গি। যাবার পথে একরাশ গোলাপের পাপড়ির সুঘ্রাণ সিফাতের শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে গেল। সিফাত বেকারার হয়ে ভাবনার জগতে ডুবে গেল।
পরদিন রাত
দিনের সারাটা ক্ষণ, মুহুর্ত সিফাতের কাটছে তৃষ্ণার পিপাসায়। মনের মাঝে একটা বাজনাই বাজে। যতই নিজেকে ঘর্মাক্ত কাজে বিরত রাখে না কেন তবুও অজানা শুর হঙ্কার দিয়ে চেতনা ফিরিয়ে দেয়। তাই অস্থিরতার মধ্য দিয়েই দিবালোকের সূর্য্যকে বিদায় জানাতে হল। তাই এবার কলেজের শেষে বাসায় এসে আবার সেই মায়াবী জায়গায় গ্রীল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
আকাশের তারাগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সিফাত এগুলো ভাবতে লাগল। বাতাসের চোট তীব্র আকার ধারণ করার কারণে সিফাত গ্রীলের পাশ থেকে একটু সড়ে দাঁড়াল। চোখ ফেরাতেই সিফাতের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল পার্শ্ববর্তী একটা রূমের দিকে। একি, সেই মেয়েটা! যার সাথে কাল রাতে দেখো হয়েছিল। এতরাতে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটা কি করে? নাকি আমার মত তারও দাঁড়িয়ে থাকতে ভাল লাগে!
তবে মেয়েটাকে দারুণ সুন্দর লাগে। থেকে থেকে দক্ষিণের দমকা হওয়া মেয়েটার চুলগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর চুলগুলো আচড়ে গিয়ে মেয়েটার অস্ফুট হাসির মুখটাকে ঢেকে দিচ্ছে। এমন একটা দৃশ্য দেখে সাঈদের পড়া সেই সাড়া জাগানো কবিতাটা মনে পড়ে গেল-সেটা ছিল---
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে
বারংবার মেরোছো উঁকি
আমিও দেখেছি নিজ নয়নে
নিজেক দিয়েছি ঝুকি
কবি তার বাস্তব কল্পনায় কিভাবে একটি মেয়ের বাস্তব চিত্র অংকন করেছেন। কিভাবে উভয়ের দৃষ্টির পালাবদলে মনে ভালবাসার জোয়ার এসেছিলো। নাকি কবির সেই ফেলে আসা মুহুর্তটা আমার কাছে ফিরে এসেছে।
এমনি একটা মুহুর্ত অতি অল্প সময়েই শেষ হল। সিফাত বেলকুনি থেকে বাসার ভিতরে প্রবশে করল ঘুমের আয়োজনে।
এভাবে সিফাতের কেটে গেল কয়েকটি রাত, দিন। তবুও কি নিদ্রা সুখকর হয়? অবশ্যই না। সে প্রত্যহ ক্ষণে ক্ষণে মেয়েটা সিফাতের দিকে এবং মেয়েটার দিকে নিস্পলক অবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। কি মায়া কাজল কালো ঐ চোখে? বিধাতা যেন রাজ্যের সমস্ত সৌন্দর্য্য মেয়েটাকে অকৃপণ হস্তে দান করেছেন। মেয়েটাকে দেখার পর থেকে সিফাতের অস্থিরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। মেয়েটার জন্য তার কষ্ট হচ্ছে কেন? কেন তার মনে ব্যকুলতার সৃষ্টি করছে? কেন তাকে দেখার জন্য মনটা বার বার কাঁদছে? তবে একেই কি বলে ভালবাসা? যদি তাই হয় তাহলে মেয়েটাকে সিফাত ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু আজ ভালবাসার দাবি নিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়ানোর ত' সাহস সিফাতের নেই। এক অজানা ভয় সিফাতের অস্টে-পিস্ঠে বেধে রেখেছে। মেয়টা যদি ফিরিয়ে দেয় কিংবা সেে যদি অন্য কাউকে ভালবাসে। এভাবে দ্বিধার মধ্যে কেটে গেল আরো কয়েকটা দিন।
এভাবে সিফাত মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার অনেক দিন অতিবাহিত হতে লাগল। তবে এটা তো সুস্থ জীবন নয়? এটাতো অসুস্থ জীবন। তাই তো এই অসুস্থ জীবনকে সুস্থ করতে সিফাত মেেয়েটার দ্বারস্থ হওয়ার উপায় খুজতে লাগল। এর পূর্বে অবশ্যই বিভিন্ন আঙ্গিকে মেয়েটাকে বুঝোনোর চেষ্টা করছে অন্যের মাধ্যমে। তবে তাতে সে মনের গহীনে তেমন কোন আত্মতৃপ্তি লাভ করে নাই। তাই এবার সে নিজের মনের আকুল গহীনে হিমালয়ে পর্বতের মতো জমে থাকা অজস্র কথন থেকে গুটি কয়েক কথা স্বল্প পরিসরে উপন্যাসাকারে লিখে মেয়েটার কাছে পাঠিয়ে দিল তার মনের বাস্তব অবস্থান নিরুপন করার জন্য।
ধরেছি কলম লিখিবার তরে
রঙ্গিয়ে দিলে প্রাণ
জনমের তরে রাখিব ধরে
তুমি যে অম্লাণ