২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক সরাসরি তার প্রশ্নের উত্তর পান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আসীন বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে। এ বছর টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বড়ধুল আদর্শ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে কৃষক হেলাল উদ্দিন, মোস্তফা, এ. কে. এম. নূরুল হকের মত অনেক কৃষকই অর্থমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন কৃষি ও কৃষির উপখাত পোল্ট্রি, মৎস্য, মধু চাষ, উেইরির নানা সমস্যা ও সম্ভবনার কথা। এই সমস্যা ও সম্ভবনার কথা শুনে অর্থমন্ত্রী কৃষকদের নানা ধরনের আশ্বাস দেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষকের কষ্ট ও উৎপাদিত ফসল বাঁচাতে বিদ্যুৎ, বীজের নানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে সরকার। স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল এসব ফসলের জন্য কৃষিবীমা করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের বীমার কথা আমাদের চিন্তাতে আছে।
আলু বিদেশে রফতানি করা হলে আলু চাষিরা উপকৃত হত এ কথার উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আলু বিদেশে রফতানি করার মধ্যে অনেক ঝামেলা রয়েছে। তবে সে ঝামেলা দূর করার চেষ্টা চলছে। ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে কৃষক যাতে তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় তার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। ঋণ কৃষকের মাঠে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে ঋণ সুবিধায় আরো সহজীকরণ করা হবে বলেও তিনি জানান। আগে যেখানে দিনের পর দিন ব্যাংকে গিয়ে কৃষকরা ঋণ পেতে ঝামেলা পোহাতে হত এখন তারা সহজেই ঋণ পাচ্ছেন। “সব এলাকার ব্লক সুপারভাইজার এক রকম কাজ করে না” কৃষকের এমন অভিযোগের কথা শুনে মন্ত্রী বলেন, একজন ব্লক সুপারভাইজার ১৭০০ জন কৃষককে সহায়তা করে
তবে একেবারেই যে সহায়তা করে না এমনটা ঠিক না। পোল্ট্রিখাতের নানাবিধ সমস্যার কথা খামারিরা তুলে ধরেন। তার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী জানান, পোল্টিখাতে ৮% হারে ঋণ পাওয়া উচিত। তবে খাতটি যখন সমস্যায় পড়েছিল তখন সাহায্য করা যায়নি। এ কারণে আমাদের পোল্ট্রিখাত অনেক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে এই খাতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার। আমি এটুকু বলতে পারি গত বাজেটে যেমন ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল আগামী বাজেটেও ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ থাকবে। মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশের কৃষকরা সংগঠিত নয়। তাদের ভাল কোনো সংগঠনও নেই। কৃষকদের কল্যাণের জন্য তাদের সংগঠিত হতে হবে এবং সংগঠন বাড়াতে হবে। এ জন্য তাদের পাশাপাশি সরকারও কাজ করবে। মন্ত্রী আরো বলেন, এক একজন এক এক ধরনের কৃষিকাজ করেন। তাই সবার সমস্যা এক নয়। সবার সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। কোল্ড স্টোরেজের কথা তুলেছেন কৃষক। সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে এর সংখ্যা বাড়ানোর। এতে আমাদের ফসল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে। কৃষকও স্বস্তিতে থাকবে। গত ২৬ বছর আগে দেশে সাড়ে ১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা উপযোগী গুদাম ছিল। এখন মানুষ বাড়লেও গুদামের স্থান কমেছে। সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে ১৪ লাখ টন। এদিকটায়ও সরকারের বিশেষ খেয়াল আছে। দেশে সাড়ে ৩ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। যার ৫০% চলে যায় বাজারে। চাতালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারাই আগে কিনে ফেলে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার মন মানসিকতায় সরকারের কোনো ঘাটতি নেই। ভুট্টা চাষ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ভুট্টার চাষ করেন। সরকার তা রফতানি সব ব্যবস্থা করবে। আমাদের এখনো ৫০ লাখ মে. টন ভুট্টা চাষ করা দরকার। কৃষি ও কৃষির উপখাতের নানা প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, আমরা উন্মুক্ত ফিসারিতে মার খেয়েছি। এক একটি হাওরের মধ্যে ৫০-৬০টি মৎস্য খামার হয়েছে। দেশের নদ-নদীগুলোতে অনেক উন্মুক্ত মাছ আছে সেগুলো এখনি রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। আমরা যে জলাবদ্ধতার উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি সেটা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক সময় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। আমরা এ বিষয়টাকেও মাথায় রেখেছি। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে নানা সমস্যা আছে। আমরা সেগুলো দূর করে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সব ব্যবস্থাই করব। এ সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। বিগত বছরগুলোর চেয়ে কৃষিকে যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তা আজ সবার জানা। আগামী বাজেটেও কৃষিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:০০