বছরের সবচাইতে পবিত্র মাস হল এই রমজান! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই মাসে আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন নিজেদের আত্মশুদ্ধি করার জন্য।
কিন্তু আমরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পরিবর্তে এমন ভাবে নিজেদের পরিচালিত করছি দেখলে মনে হবে আমরা যেন আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আসুন আমরা এই রমজান মাসে আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা না করে নিজেদের মাঝ থেকে এমন কিছু দোষ দূর করার চেষ্টা করি যা আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকর।
১। ধূমপান: যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তারা দিনের বেলা না খেয়ে থাকতে হবে এটা ভেবে যতটা না কষ্ট পান তার চাইতে বেশী কষ্ট পান সারাদিন ধূমপান করতে পারবেন না সেটা ভেবে। তাদের ধূমপান থেকে বিরত থাকতে কি পরিমানে কষ্ট হয় সেটা উপলব্ধি করা যায় যখন ইফতারের পরপরই তারা সিগারেট নিয়ে ঝাপিয়ে পরে। মাগরিবের নামাজের জন্যও অনেকে অপেক্ষা করার চিন্তা করে না। আপনি ধূমপানে অভ্যস্থ হলে নিজের বাজে কাজকে সঠিক প্রমাণিত করতে অযুক্তি, কুযুক্তি, খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তর্ক করবেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, নিজের জন্য ক্ষতি কর, অপরের জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য ক্ষতি কর। এর এত ক্ষতিকর জিনিসটা বাদ দিলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না বরং আপনি সহ চারপাশের সবারই উপকার হবে।
তাই চেষ্টা করুন ধূমপান ছেড়ে দিতে। আর ছেড়ে দেওয়ার জন্য রমজান মাস আপনাকে উত্তম একটি সুযোগ করে দিতে হবে। কষ্ট করে যেহেতু সারাদিন ধূমপান থেকে বিরত থাকেন তাহলে আরেকটু কষ্ট করে কেন রাতটাও ধূমপান মুক্ত থাকবেন না? যদি একেবারেই ধূমপান ছাড়তে না পারেন তাহলে একটা দুইটা করে ছেড়ে দিন। ইচ্ছে থাকলে এক মাস বিশেষ করে রমজান মাসের মত একটি মাসে এটা কোন ব্যাপারই না।
তাই আসুন, নিজের ক্ষতি না করে, নিজের অনাগত সন্তানের ক্ষতি না করে ধূমপানের মত একটা বাজে অভ্যাস ছেড়ে দেই!
২। চোখের পর্দা! সব সময় নারীদের পর্দার কথা বলা হয়। কিন্তু পুরুসের যে পর্দা করতে হয় সেটা কিন্তু আমাদের দেশে খুব বেশী উচ্চারিত হয় না। নারী যেমন আটোশাটো পোষাক পরতে পারবে না ঠিক তেমনি পুরুষকেও বলা হয়েছে আটো সাটো পোষাক না পড়তে। পুরুষের জন্য সবচাইতে বেশী জোড় দেওয়া হয়েছে চোখের পর্দা করার জন্য!
আপনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন আপনি ইভটিজিং করেন না। সেটা ভাল কথা। কিন্তু আপনি কি চোখ দিয়ে ইভটিজিং করেন না? আপনি যখন শাড়ী পড়া কোন নারীর দেহের ভাজগুলো দেখার চেষ্টা করেন, যখন স্কুল ফেরত মেয়েটার দেহে ঘুরে ফিরে আপনার চোখটা, যখন কোন নারীর বুকের আচল কিংবা উড়না সরে যায় তখন সে দৃশ্য আপনি মিস না করে বুকের ভাজটুকু দেখে নিতে দেরি করেন না, কোন এক নারীর দিকে আকৃষ্ট হলে তার প্রতি আপনার চোখ আঠার মত লেগে থাকে তাকে অতিক্রম করে গেলেও তার দিকে পেছন ফিরে হলেও চেষ্টা করেন চোখ দিয়ে তাকে চেটে নিতে! এগুলো কি ইভটিজিং না? যদি না বুঝে থাকেন এগুলো করলে নারীদের কেমন লাগে তাহলে অনুরোধ করবো যদি বোন থাকে তাহলে বোনকে জিজ্ঞাসা করুন। যদি মা থাকে তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করুন, যদি বান্ধবী থাকে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যখন কোন পুরুষ তাকে চোখ দিয়ে ধর্ষণ করে তখন তার কেমন লাগে?
আপনি যদি চোখের পর্দা করেন তাহলে কোন ভাবেই আপনার পক্ষে ইভটিজিং করা সম্ভব হবে না। কারণ চোখই আমাদের উদ্বুদ্ধ করে এই কাজের জন্য।
তাই আসুন নিজের ভেতরের পশুত্বকে মেরে ফেলতে আজ থেকেই আমরা এই চোখের পর্দার চর্চা করি। নিজে যেমন পশু হওয়ার হাত থেকে বাঁচি ঠিক তেমনি আমদের সমাজের নারীদের পথে প্রান্তরে অসহায় কান্নার হাত থেকে রক্ষা করি।
৩। পুরুষদের যে দুটি পাপের কারণে সব চাইতে বেশী কবরের আজাব দেওয়া হবে সে দুটি হল পেশাবের ছিটা থেকে না বাঁচা এবং টাখনুর নিচে পোষাক পরা।
প্রথমেই আলাপ করি পেশাব করা নিয়ে। আমাদের দেশে পথে ঘাটে পেশাব করার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই এটা মানতেই হবে। এই ব্যবস্থা না থাকার দরুন আমরা পুরুষরা যে যেখানে পারছি বসে যাচ্ছি। একটু চিন্তা করছি না আমাদের মুত্রের গন্ধে সাধারণ মানুষদের কি অবস্থা হয়। তাছাড়া যেখানে হাদিসে দাড়িয়ে পেশাব করাকে বার বার নিষেধ করা হয়েছে সেখানে আমরা যেন দাড়িয়ে পেশাব করতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। এতে করে যেমন হাদিসের নিষেধকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে ঠিক তেমনি নিজের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করা হচ্ছে। আমরা চাইলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যদি আমরা একটু খেয়ার করে পেশাব-পায়খানা করে বের হই তাহলে কিন্তু আমাদের পথে ঘাটে এই কাজ করতে হয় না। একটু নারীদের কথা ভাবুন! আপনি না হয় যেখানে সেখানে দাড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু নারীরা? তারা কিন্তু তাদের এই সমস্যার সমাধান হিসেবে যথাসম্ভব চেষ্টা করে যেখানে সুযোগ আছে সেখান থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বের হতে। হয়তো মাঝে মাঝে তাদের বিপদে পড়তে হয়! নারীরা যদি এই ভাবে নিজেদের সুবিধা করে নিতে পারে তাহলে আমাদের উচিত নিজেদের একটু বদ ফেলা। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার আগে, অফিস থেকে বের হওয়ার আগে যদি একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বের হই তাহলে কিন্তু আমাদের রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে দাড়িয়ে যেতে হয় না। আর যদি একান্তই সমস্যা হয় তাহলে মসজিদগুলো ব্যবহার করতে কোন সমস্যা দেখি না। এতে করে আপনি পেশাব করার পর উপযুক্ত ভাবে পবিত্র হতে পারবেন যেটা খুবই জরুরি বিষয়।
আমি একজন পুরুষ হিসেবে পথে ঘাটে চলার সময় সর্বাত্মক চেষ্টা করি যেখানে সেখানে পেশাব না করতে। আমার যতদূর মনে পরে ২০১০ থেকে চেষ্টা করে আমি এই পর্যন্ত একবার বাধ্য হয়ে শুধু গাছের গোড়ায় পেশাব করেছি। কারণ আমার কোন উপায় ছিল না। আমি যদি পারি তাহলে আপনিও পারবেন!
এর পর রয়েছে টাখনুর নিচে পোষাক পড়া। খুবই বিরক্ত হয়ে আমাকে এই বিষয়টি দেখতে হয়। নামাজের সময় অনেককেই দেখি তাদের প্যান্টকে ভাজ করে নিচ্ছে। ভাল কথা। যে অংশটুকু ভাজ করছে তা এত বড় যে ঐটুকু কেটে নিলে আমাদের আড়াই বছরের ভাইগনার জন্য আরেকটা প্যান্ট তৈরী করা যাবে। পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় লাগতে লাগতে ঐ স্থানে ছিড়ে যায় তার পরও তারা একটু কষ্ট করে উচু করে প্যন্ট পরে না বা প্যান্টের দৈর্ঘ্য ঠিক করে নেয় না। এই বিষয়টা হাদিসে স্পষ্ট ভাবে নিষেধ করেছে। এটা আপনার মাঝে এক ধরণের অহংকার তৈরী করে। আর অহংকার করতে কোরআনে বার বার নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের উচিত এমন কিছু না করা যা আমাদের পতনের দিকে নিয়ে যাবে।
আসুন এই মাসেই আমরা এই দুটি অভ্যাস বদলে দেই। বাইরে যেখানে সেখানে পেশাব না করি এবং টাখনুর নিচে জামা না পরি।
৪। নারীদের পর্দা: রমজান মাসে সম্ভবত সবচাইতে বেশী পরিবর্তন দেখা যায় নারীদের পোষাকে। রমজানের ভাবগাম্ভীর্যকে মাথায় রেখে তাদের মাথাতেও ওড়না চলে আসে। অনেকেই এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে হিজাব পড়া শুরু করেন। এই সময় অনেককেই বেশ শালীন পোষাকে দেখা যায়।
কিন্তু বাকী ১১ মাস! বর্তমান সময়ে বেশীরভাগ নারীরই পছন্দের পোশাকটা বেশ আটোসাটো। শরীরের সাথে লেগে থাকা এই পোশাকগুলো দেহটাকে ঢেকে রাখার পরও তা অন্যদের কাছো উন্মুক্ত করে দেওয়ার মতই। তাছাড়া বর্তমান সময়ে যে ধরনের ওড়না ব্যবহার করা হয় তা ওড়না না একটা ন্যাকড়া ঠিক বুঝা যায়। অনেকের মাঝেই দেখা যাচ্ছে সেই ন্যাকড়াটুও যেন রাখতে পারছে না।
অথচ পর্দার বিষয়টাকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নারীদের জন্য এবং সেটা সারাবছর ধরেই। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনাকে সখ করে হিজাব পরে ফেসবুকে ছবি দেওয়ার জন্য পর্দা করতে বলা হয়নি। এই পর্দা যেমন আপনাকে শালীন করবে, করবে অন্যদের কাছে মর্যাদাবান ঠিক তেমনি এই পর্দার কারণে পুরুষের পক্ষে সম্ভব হবে তার চোখের পর্দা মেনে চলে সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। এই পর্দার বিধান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। তাই একে বোঝার জন্য সবারই পর্দা নিয়ে পড়ালেখা করা উচিত!
সকল বোনদের বলছি! পর্দা মানে যদি মনে করেন আপনাদের প্যাকেট করে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখা তাহলে বলতে হবে এটা আপনার বোঝার ভুল কিংবা যে সকল পুরুষ ইসলামের বিধানকে সামনে রেখে নারীদের তাদের অধস্তন করে রাখতে চায় তাদের ভুল বোঝানোর ফল। ইসলামের যে নীতিটা আপনাকে মর্যাদাবান করবে, যে নীতিটা আপনার নিরাপত্তার জন্য তৈরী করা হয়েছে তাকে একটু বোঝার জন্য যদি ইসলামী বইগুলো অধ্যায়ন করেন তাহলে বিশ্বাস করুন, আপনি নিজেই অনুধাবন করতে পারবেন ইসলামের কত বড় একটি নিয়ামত থেকে আপনি দূরে সরে ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৭