ঘটনাটা বছর পাঁচেক আগের।
তখন আমি চাকরি জীবন সবে শুরু করেছি। উত্তরার একটি কোম্পানিতে মাসে সাত হাজার টাকা বেতনে খুব ছোট একটা চাকরি করি। সময়টা ছিল এখনকার মতই অর্থাৎ ঈদের আগে আগে। ঘটনাটা ঘটেছিল সন্ধাবেলা। মালিবাগ আবুল হোটেলের অপরপাশের রাস্তা থেকে রিকশা নিয়েছি। গন্তব্য খিলগাঁ রেলগেট। রিকশা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে। গরমে ঘামে ভিজে গেছে শরীর। ধুলো আর ঘামে জড়াজড়ি করে আমার শরীর জুড়ে শুয়ে আছে। ভ্যাবসা গরমের মাঝে দূর আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ দেখে ভাল লাগল। তারাগুলো মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। হঠাৎ আমার রিকশার পাশ থেকে একটা প্রাডো শা-ই করে ছুটে গেল। আমি লোলুপ দৃষ্টিতে গাড়িটার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজেকে বললাম, আহারে ... আর সাথে সাথে পিছ পকেটের ম্যানিব্যাগের উপর আলতো হাত বুলালাম ... বেতন পেয়েছি ঠিকই কিন্তু বোনাস দেয়নি। আবার নিজেকে বললাম, আহারে ...
হঠাৎ কে যেন বলল, আবুল ভাই ভাল আছেন?
আমি দেখলাম আমার রিকশার সমান্তরালে চলা আরেকটি রিকশায় বসে একজন আমাকে এই কথা বলছে। আমি বললাম, ভাই আমি তো আবুল না।
- কি যে কন! আপনেই তো আমাদের আবুল ভাই। বলল অচেনা লোকটা। একটু পর সে আমার রিকশাওয়ালাকে বলল, ওই মিয়া দাঁড়াও, ভাইয়ের লগে একটু কথা কই।
আমি কিছু বলার আগেই খিলগাঁ কমিউনিটি সেন্টারের কাছেই আমার রিকশা থেমে গেল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার পাঁচ জনের একটা দল আমার রিকশা ঘিরে ধরল। একজন আমার পাশে বসে পেটে শক্ত কিছু ঠেকিয়ে বলল, যা আছে সব দে ...
তখন বুঝলাম আমি আজকে আসলেই এদের আবুল ভাই!
আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে মানি ব্যাগ, মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে লাগলাম। ওদের একজন আমার শার্টটা ধরে বলল, মামা ব্যাপক শার্ট তো!
আরেকজন বলল, এই তোর প্যান্টটা স্টক লটের মাল নাকি?
এইরে এরা কি আমার শার্ট প্যান্টও খুলে নেবে নাকি? আমি তো ভয়ে অস্থির। ওদের মতিগতি তো সুবিধার থেকছে না। দৌড় দেব নাকি? পরে বুঝলাম এটা ওদের একটা টেকনিক। আমার সাথে এমন আচরণ দেখে সবাই যেন ভাবে, বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছি!
ওদের আরেকজন বলল, শালার মানিব্যাগে তো ভাল টাকা আছে মনে হয়। কিন্তু মোবাইল নকিয়া ১১০০ ক্যান?
- ভাই আজকেই বেতন পাইছিলাম জীবনের প্রথম ইনকাম।
ওরা কিছু বলল না। আমাকে ব্যাপক তল্লাশি করে আর কিছু না পেয়ে চলে গেল। যাবার আগে সিমটা আর ২০০ টাকা দিয়ে গেল আর বলল, মিষ্টি খেয়ে নিস। পরের মাসের বেতনে আজকের লস পুষিয়ে নিস!
আর এভাবেই আমার জীবনের প্রথম ছিনতাইয়ের শিকার হবার গল্প চরিত হল!

আলোচিত ব্লগ
জন্মদিনের উৎসব বা মৃত্যু চিন্তা
এখনকার দিনে জন্মদিন উৎসব খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। বলতে গেলে একটু সচ্ছল পরিবার হলেই এখন ঘটা করেই জন্মদিন পালন করে। আমার ভাইয়ের ছেলের প্রথম জন্মদিনটা রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা... ...বাকিটুকু পড়ুন
নারী অধিকার সংস্কার কমিশন কেন বাতিল করা হচ্ছে না ?
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইন্টেরিম সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে। তারা দেশকে আমূলে বদলে দেওয়ার জন্য কতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে নারী অধিকার সংস্কার কমিশন নিয়ে দেশব্যাপী... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপির অবস্থান পরিবর্তন: মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন মাত্রা!
গত দেড় দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে লক্ষণীয়, তা হলো মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রশ্নে বিএনপির নিরবতা। এক সময়ের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হয়েও তারা এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে স্পষ্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন
একা আমেরিকা নয়, শেখ হাসিনা বিরোধী সকল পক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে তাড়িয়েছে
সোনাগাজী হাসিনা বিতাড়নের পুরো ক্রেডিট আমিরিকাকে দিচ্ছে। হাসিনা বিরোধী গণরোষের বিষয়টি তাহলে কি? আমেরিকা গণরোষকে কাজে লাগিয়েছে বলে গণরোষের কি কোন মূল্য নাই? কানা দাজ্জালের মত সোনাগাজী একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
কি লিখি কবিতা
কবিতা কত রঙের পিঠ হয়ে গেছে
ভাবতেই বেদনা আর কবিতা কে
ছুঁইতে চায় না মন-ছুঁইতে চায় না-
শুঁকে যাচ্ছে সমস্ত নদ ভরা কালি;
এক দিকে কবিতা বেওয়ারিশ লাশ
অন্য দিকে ধর্ষণ খুন, আর কত... ...বাকিটুকু পড়ুন