আজ সকালে অনিমের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন তার হাতে অফুরন্ত সময়। অনিম এ সময়টার প্রতীক্ষা করছিল সেই পরীক্ষা শুরু হবার দিন থেকে। পরীক্ষা শেষ হলে এটা করবে, সেটা করবে। সারাদিন খেলবে মজার সব কমিক্স পড়বে। যতক্ষণ খুশি টিভি দেখবে ইত্যাদি শত রকম প্ল্যান করেছিল সে তখন। এখন সে তার কাঙ্ক্ষিত সময় পার করছে। অথচ তার ইচ্ছেগুলোর একটাও তার পূরণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে পরীক্ষাই তো ভাল ছিল। সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থাকা যেত। আর এখন কোন পড়া নেই। খেলা-ই বা আর কতক্ষণ ভাল লাগে। বেলা চারটা বাজতেই আছরের আযান হয়ে গেল। শীতের দিনে বিকালটা খুব দ্রুত আসে, দ্রুত ফুরিয়ে যায়। তাই অনিম বিনা আনন্দলাভে বিকালটা চলে যেতে দিতে চাইল না। কিন্তু কিভাবে আনন্দ পাওয়া যায়? আজ তার খেলতে ইচ্ছে করছে না, টিভিও দেখতে মন চাইছে না। আচ্ছা এ শহরটা ঘুরে দেখলে কেমন হয়? খুব একটা খারাপ হয় না। যদিও এ শহরের অধিকাংশ স্থানই তার দেখা। তবুও সে দেখা ছিল আলতো করে দেখা। আজ সুন্দর মন নিয়ে ভাল করে একে দেখতে হবে।
রাস্তায় বের হতেই অনিমের সাথে দেখা হলো তার বন্ধু মুনের সাথে। মুনের বাবা লেখালেখি করেন। বাবার গুণের কিছুটা মুনও পেয়েছে। সে ছড়া লেখে।
ছাত্র হিসাবেও সে বেশ ভাল।
মুন, চল আজকে আমরা একটা অন্যরকম বিকাল কাটিয়ে দিই।
কি রকম?
আজ পায়ে হেঁটে আমরা আমাদের শহর বরিশাল দেখব। এক সময় নদীর পাড়ে চলে যাব। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা দেখব। তারপর বাসায় ফিরব। মুনের জায়গায় অন্য কেউ হলে অনিমের কথা শুনে নির্ঘাৎ বলে বসত, বেটা আতেল। খেয়েদেয়ে কাজ নেই শহর দেখবে। তাও যদি এটা বরিশাল না হয়ে প্যারিস হতো তাহলে এ বিষয়ে ভাব যেত!’ কিন্তু যারা লেখালেখি করেন, তারা যে একটু অন্য মেজাজের হন-এটা সবার জানা। মুনও এর উল্টোরূপ নয়। সে খুশি হয়ে বলল, দারুণ আইডিয়া চল।
ওরা রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে লাগল। রিকশা আসছে, যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’একটা টেম্পো ছুটে চলছে। এখানে বিকালবেলা রাস্তায় খুব একটা গাড়ি দেখা যায় না। একেবারেই না তা ঠিক নয়। তবে ঢাকার মতো অত বেশি নয়। তাই এ জায়গায় ধুলোবালির পরিমাণ আশঙ্কাজনক নয়।
অনিম দ্যাখ, দ্যাখ। বলল মুন।
অনিম দেখল রাস্তার একপাশে এককোণে একটা মা-কুকুর তার ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চাগুলো প্রচণ্ড ঠেলাঠেলি করছে। ঠিক যেন এটা এক ধরনের প্রতিযোগিতা। কে কত বেশি মায়ের কাছে ঘেষতে পারে, তার জন্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অনিম বলল, জানিস, আমি আর আপু যখন ছোট ছিলাম, তখন কে আগে আম্মুর কোলে উঠবে- তা নিয়ে রীতিমতো আপুর সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিতাম।
এক সময় ওরা বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে চলে এলো। ওরা অবাক হয়ে দেখল, কয়েকটা যুবক বয়সী ছেলে জুতো পরে শহীদ মিনারের উপর বসে সিগারেট ফুঁকছে। কী বিশ্রী দৃশ্য। অনিম বলল, দ্যাখ এরা শিক্ষিত হয়েও খালি পায়ে শহীদ মিনারে যে উঠতে হয়- এটা ভুলে গেছে।
ভুল বললি। এরা কখনোই শিক্ষিত হতে পারে না। এরা যদি শিক্ষিতই হতো তাহলে জুতো পরে শহীদ মিনারে উঠে ধূমপান করার মতো ধৃষ্টতা এরা দেখাতে পারত না। চমৎকার মন্তব্য মুনের।
জিলা স্কুলের সামনে এসে ওরা সাংঘাতিক বিপদে পড়ে গেল। ছেড়া কাপড় পরা, উসকোখুসকো চুলঅলা, সারা গায়ে কাদামাখা এক লোক ওদের পিছু নিল। ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করল মুন। সে অনিমকে খোঁচা দিয়ে দেখাল, অনিম! পা-গল।
ওরে বাপরে! তাড়াতাড়ি হাঁট। ওরা যতই হাঁটার গতি বাড়াতে লাগল ঐ লোকটাও ঠিক ততই দ্রুত হাঁটতে লাগল। এক সময় ওরা দৌড় না দিয়ে পারল না। ঐ লোকটাও ছুটতে শুরু করল আর চিৎকার করে বলতে লাগল, এই খোকারা যাসনে। এগিয়ে আয়। তোদের কামড়ে দিই।
বাবা গো! কী ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য। এবার ওরা প্রাণপণ ছুটতে লাগল। এক সময় ওরা ঐ লোকের নাগালের অনেক বাইরে চলে গেল।
অনিম ও মুন এখন কির্তনখোলার তীরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট, শান্ত এক নদী। ঝিরঝিরে বাতাস বইছে। একটু শীত নদীতে বিকালবেলা খুব বেশি ডিঙি নৌকা চোখে পড়ে না। তবে ট্রলার, কার্গো, তিনতলা লঞ্চ বেশ নজরে পড়ে। যে কয়েকটি ডিঙি নৌকা চোখে পড়ে সেগুলোর বেশিরভাগে লোকজন নৌবিহার করছে। প্রতি বিকালেই এখানে অসংখ্য দর্শনার্থী বেড়াতে আসে। কয়েকটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে খেলছিল। এক লোক ছোট্ট একটা মেয়ে কোলে নিয়ে এসে অনিমের পাশে দাঁড়াল। মেয়েটার বয়স বড় জোর দেড় কি দুই বছর হবে। অনিম অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, ছোট্ট মেয়েটা কী সুন্দর করে অনিমের দিকে চেয়ে হাসছে। অনিমের খুব ইচ্ছে হলো পিচ্চিটাকে কোলে নিতে। হাত বাড়াতেই ছোট্ট মেয়েটা ওর কোলে চলে এলো। সাথের লোকটা বলল, ও আমার মেয়ে। ওর নাম আঁখি। তখনও আঁখি হাসছিল। মুন হঠাৎ বলল, অনিম, দ্যাখ পাখি। অনিম আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে। বোধহয় শীতের পাখি। হয়ত ওরা সাইবেরিয়া থেকে এসেছে। ছোট্ট আঁখিও পাখিগুলোকে অবাক চোখে দেখতে লাগল আর বলতে লাগল, পাখ-খি পাখ-খি।

আলোচিত ব্লগ
জুম্মাবার
জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ
প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই
ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন
অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !
বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেই পুরোনো সিনেমা
ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।
ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'
'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন