নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান বাড়ি ছেড়ে হুট করেই নতুন বাড়িতে চলে এসেছি। আট ভাই তিন বোনের বিশাল সংসার আমাদের, তো নতুন বাড়িতে সবাইকে দাওয়াত দেওয়াটা আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। পরিকল্পনা হলো রোজার ঈদের পরই সবাইকে নতুন বাড়িতে দাওয়াত দিবো।
আমার মায়ের বয়স প্রায় আশি। ইদানিং হাই ব্লাড প্রেসারও ডায়াবেটিস খুব কষ্ট দিচ্ছে মাকে। ঈদের দিন আমার মামা মারা যাওয়ার খবরে মা আরো বেশী মুষড়ে পরেন। বিশেষ করে শরীর খারাপ থাকায় ভাইকে শেষ দেখাটা দেখতে না পারাটা ছিল মায়ের জন্য অত্যন্ত বেদনা দায়ক। মা থাকেন আমাদের পুরান বাড়িতে। আমাদের পুরান বাড়িটা বেশ ছোট, আর ভাই বোন আমরা বেশী হওয়ায় আমাদের শেকড় পোতা পুরান বাড়ি ছাড়ার কোন বিকল্পও ছিলো না। সিদ্ধান্ত হলো ঈদের চার দিন পর মা আমার নতুন বাড়িতে আসবে, তারপর নতুন বাড়িতে ভাই বোনদের মিলন মেলা হবে। মায়ের পছন্দের খাবার কি হবে, কোন রূমে থাকলে মায়ের সুবিধা হবে এসব নিয়া বউয়ের সাথে আগের রাতে বেজায় পরিকল্পনা।
খুব ভোরে ছোট ভাইয়ের ফোন এলো, জানালো মায়ের শরীরটা বেশী খারাপ। দুই ছেলেকে নিয়া ছুটে গেলাম পুরান বাড়িতে, অবস্থা বিবেচনায় এম্বুলেন্স ডাকা হলো। দ্রুত মাকে নিয়ে হসপিটালে পৌছলাম। হসপিটাল আঙ্গিনায় পৌছেই ডাক্তারকে ডেকে আনা হলো। এম্বুলেন্সের ভেতরেই মাকে পরিক্ষা করে ডাক্তারের হতভম্ব চেহারা দেখে মনের ভেতর কু ডাক ডাকছিলো। পরিক্ষা শেষে বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে ডাক্তার যখন তার চেম্বারে ঢুকল তখন আর কিছু বুঝতে বাকী রইল না আমাদের। এম্বুলেন্সের ভেতরে আমার বোনদের আহাজারিতে আশে পাশের পরিবেশ বিষন্ন হয়ে উঠল। পুরুষদের সাধারণত উচ্চস্বরে কান্না করার নিয়ম নাই, তবে আমার মনে হলো নিয়মটা ভাঙ্গতে পারলে বুকটা বেশী হালকা হতো।
অবশেষে মা নতুন বাড়িতে পৌছে গেল। সেটা আমার বাড়ি নয়, মায়ের নিজের বাড়ি। পাতা বাহার গাছটা আমার নিজের হাতে লাগানো, সেটাও প্রায় ৪০/৪২ বছর আগের কথা। তার ছায়ায়ই তৈরি হলো আমার মায়ের নতুন বাড়ি.........

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪