সুন্দর বনের শেষ সীমানায় সাগর আর কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মোহনায় দুবলার চর। হিন্দু পৌরানিক মতে রাস হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের মিলন, যা বর্তমানে রাস মেলা নামে পরিচিত। প্রতিবছর অগ্রহায়ণের শুক্লাদ্বাদশী তিথিতে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পার্থিব জীবনের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষ্যে দুবলারচরের রাস মেলায় হাজির হন। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল, আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার জেলে দলে দলে এই চরে মাছ ধরতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। জেলেরা দিনভর সাগরে মাছ ধরে সন্ধ্যায় আগেই তারা ফিরে আসে।চরে মাছ শুকিয়ে তারা শুঁটকি মাছ তৈরি করে। এ দৃশ্যও অত্যন্ত উপভোগযোগ্য। গত ৬/১১/২০১৪ সালে গিয়েছিলাম রাস মেলায়, তা নিয়েই আমার আজকের পোষ্ট।
(২) খানজাহান আলী সেতু, রূপসা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার বলা যায় কারণ এই সেতু খুলনার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই সেতুর নিচ দিয়াই লঞ্চে করে আমরা দুবলার চরের উদ্দেশ্যে ছুটে চলি।
(৩/৪) নদিতে জেলেরা মাছ ধছে।
(৫) খুলনা থেকে সকালে ছেড়ে আসা লঞ্চ প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দুরত্বের দুবলার চরে পৌছে শেষ বিকেলে।
(৬) দুবলার চরে একটা জেলে নৌকাকে ঘিরে আছে সীগার্লগুলো।
(৭) দুবলার চরে রাস মেলাকে ঘিরে পূণ্যার্থী বা দর্শনার্থীদের নিয়ে আশেপাশে অনেক লঞ্চ ও ট্রলার এসে ভীড়েছিলো।
(৮) দুবলার চর আমাদের বরণ করে নিয়েছিলো এমন চমৎকার লাল রঙা আকাশ দিয়ে।
(৯) দুবলার চরে দাড়িয়ে রাশ পূর্ণিমার এমন ছবি তোলার সময় যে রোমাঞ্চিত ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
(১০) দুবলার খুব কাছেই রাতে আমরা লঞ্চেই অবস্থান করেছিলাম, কারণ খুব ভোড়েই নাকি লগ্ন, আর পূণ্যার্থীরা সএবং সেই সাথে আমরাও ক'জন সেই লগ্নের অপেক্ষায় ছিলাম।
(১১/১২) রাস মেলায় পূণ্যার্থীরা সারিবদ্ধভাবে নদীর কিনারায় শুকনো স্থানে দেবতার উদ্দেশ্যে ভেট নিয়ে বসে নানা রকম ঐশ্বরিক বাণী পড়তে থাকে, নদী বা সাগরে তখন জোয়ার থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পূণ্যার্থীদের পায়ে এসে সাগর বা নদীর পানি আছড়ে পড়ে। তখনি তারা ছুটে যায় কোমড় সমান বা আরো বেশী পানিতে, ওখানে তাদের হাতে থাকা দেবতার ভেট ( ডাব, মিঠাই, মন্ডা) পানিতে ছুড়ে ফেলে নিজেরা ডুব দিয়ে পবিত্র হয়ে ডাঙ্গায় ফিরে আসে। দেবতাদের জন্য ভেট হিসাবে জীবন্ত খাশিও আমি পানিতে ছুড়ে ফেলতে দেখেছি।
(১৩) দুবলার চরে রাস মেলা দেখতে অনেক বিদেশীদের ও আগমন ঘটে।
(১৪) দুবলার চড়ে প্রচুর হরিণ থাকায় রাস মেলাটা সত্যিই ওদের জন্য খুব বিপদের কারণ হয়ে দাড়ায়, এই সময়ে কিছু লোক শুধু হরিণের মাংস খাওয়ার জন্যও পূণ্যার্থী বা দর্শনার্থীর বেশে এখানে আসে, যা সত্যিই দুঃখজনক।
(১৫) মাছ যেহেতু আছে মাছ রাঙ্গা তো থাকবেই, তবে এমন রঙের মাছ রাঙ্গা আমি আগে আর অন্য কোথাও দেখিনি।
(১৬) বানরগুলো পানির ধারে কি খুটে খাচ্ছে কে জানে?
(১৭) ট্রলার থেকে মাছ নামানো হচ্ছে।
(১৮/১৯) কতো রকমের মাছ যে এখানে আছে তার ইয়ত্তা নাই।
(২০) ওরা মাছ নিয়ে যাচ্ছে শুটকী পল্লীর দিকে।
(২১/২২) এই সময়ে শুটকী পল্লীর বাসিন্দাদের কোন ফুরসৎ থাকেনা। আর গোলপাতায় তৈরী শুটকী পল্লীর এই ঘরগুলো দেখতেও বেশ চমৎকার!
(২৩) ঢেড়ার ভেতরে শুকিয়ে রাখা শুটকী।
(২৪) ফিরে আসার সময় দুঃখ পল্লী বাণীশান্তার পাশ দিয়া যখন আমাদের লঞ্চ আসছিলো তখন তোলা একটি ছবি।
এই চমৎকার শুটকী পল্লীর গোল পাতার ঘরে গিয়ে কয়েকদিন থাকার একটা পরিকল্পনা আমার আছে, জানিনা কোনদিন সেটা আদো হয়ে উঠবে কিনা। তবে ওখানে মাছের সাথে সাথে প্রচুর কাকড়া এবং অপ্রয়োজনীয় জলজ কীট পতঙ্গ যেভাবে জেলেরা নষ্ট করছে তাতে আমি শংকিত, আর হরিণ শিকারীদের কথাটা নাইবা বললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:০৯