ব্লগে ছাগুর উপদ্রব। সাধারন ব্লগাররা অস্থির হইয়া উঠিল। নিতান্ত নিরীহ সাহিত্য অনুরাগী ব্লগার পর্যন্ত ছাগুদের অত্যাচারে ত্রাহি ডাক ছাড়িল। সকলে কীবোর্ডে ভার্চুয়াল লাঠি সড়কি বর্শা বন্দুক বাহির করিয়া ছাগুটাকে মারিল। একটা ছাগু গেল, কিন্তু আর একটা আসিল। শেষে ব্লগারগণ ব্লগ বিধাতার নিকট আবেদন করিল-
বিধাতা, ছাগুর হাত হইতে আমাদের বাঁচাও। এদের অত্যাচারে আমাদের সকল সৃজনশীলতা জলে ভাসিয়া যাইতেছে। সারাদিন ব্লগে এদের পুন্দাইতে কার ভাল লাগে বল?
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
কিছু পরেই ছাগুরা আসিয়া বিধাতার দরবারে নালিশ জানাইল, আমরা সাধারন ব্লগারদের জ্বালায় অস্থির হইয়াছি। এক নিক হইতে আরেক নিকে পলাইয়া ফিরিতেছি। কিন্তু ছাগু শিকারিরা কিছুতেই আমাদের শান্তিতে থাকিতে দেয় না।ইহার একটা ব্যবস্থা করুন। বাস্তব জীবনে এমনিতেই ঠাপের উপ্রে থাকি। সবাই শুধু রাজাকার কয়। সারাদিন নিভৃতে মগবাজারে কাঁঠাল পাতা সেবন করিয়া ব্লগে যদি একটু না ল্যাদাই, তাহলে আমরা বাঁচি কেমনে? আর আমরা তো ব্লগারদের বিনোদনেরই ব্যবস্থা করি। এছাড়া…. এতটুকু বলিয়াই ছাগুরা ব্লগ বিধাতার দিকে বিশেষ ঈঙ্গিতে বাম চোখ টিপিল। কি হইল কে জানে।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
নামকরা রেসিডেন্ট ব্লগার “ABCD” এর পেছনে কয়েকটা সাধারন ব্লগার লাগিয়াছিল। সে বিধাতাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, আজীবন তোমার পূজো করে এসেছি। চামচামী করে লিখে লিখে আঙুলের চামড়া তুলিয়া ফেলিয়াছি। শালার দুই পয়সার ব্লগারদের আমি দেখে নিতে চাই। তুমি আমার সহায় হও।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
সুশীল ব্লগাররা তাদের আর্জি পেশ করল। তারা রোজ বিধাতাকে বলে, গালিবাজ ব্লগারদের ব্যান করিয়ে দাও। আজ তারা বলিল, গালিবাজদের তাড়াও, ব্লগ সৃজনশীলতায় ভরাইয়া দিব।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা, আচ্ছা।
সেলিব্রেটি ব্লগার কহিল, লক্ষ লক্ষ হিটের ব্যবস্থা করাইয়া দাও।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
আস্তিকেরা প্রার্থনা জানাইল, সব নাস্তিকদের ব্যান করাইয়া দাও। ওদের কারনে ব্লগে ঠিক মত ধর্মালোচনা করিতে পারি না। কি কি সব প্রশ্ন করিয়া মাথা গুবলেট করাইয়া দেয়। এসব শয়তানদের থেকে আমাদের দূরে রাখ।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
পাশে থেকে নাস্তিক ব্লগাররা বলিয়া উঠিল, শুন মডু। তোমারে বিধাতা বলিয়া তেলাইতে পারিব না। নিজে দুচোখে যা দেখি, তাই বিশ্বাস করি। যুক্তি দিয়ে সব কিছু ব্যাক্ষ্য করার চেষ্টা করি। এজন্য কোন ধর্মান্ধের যদি কোমল ধর্মানুভূতিতে খোঁচা লাগে, তাহলে আমাদের কি করার আছে, তুমিই বল। ব্লগে ভিন্ন মত নিয়ে আলোচনা হবেই। ওদের ফালতু চিৎকার কানে নিও না।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
কয়েকজন লুল ব্লগার কহিল, হে বিধাতা, নারী ব্লগারদের বুঝিতে চাই।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
বিএনপি অফিস হইতে চিৎকার আসিল, আওয়ামী ব্লগারদের হাত হইতে বাঁচাও প্রভু।
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা।
আওয়ামী ব্লগাররা গোঁ ধরিয়া কহিল, এভাবে ওরা নিজেদের দলের নামে সরাসরি প্রচার চালাইতেছে, এটা কি ঠিক? আমরা কি কখনো এমন করিয়াছি?
বিধাতা কহিলেন, আচ্ছা দেখিতেছি।
একটু ফাঁক পড়িতেই বিধাতা, পার্শ্বোপ্রবিষ্ট অর্ধাঙ্গীনিকে (ব্লগ বিধাতার ক্ষেত্রে একেশ্বর ধারনা প্রযোজ্য নহে।) জিজ্ঞাসা করিলেন, বাসায় খাঁটি সরষের তেল আছে?
অর্ধাঙ্গীনি বলিলেন, আছে। কেন বল তো?
বিধাতা। আমার একটু দরকার। দেবে কি?
অর্ধাঙ্গীনি। (পঞ্চমুখে) অবশ্য, অবশ্য।
বাসা হইতে ভাল খাঁটি সুরেশ সরিষার তৈল আসিল। বিধাতা তৎক্ষণাৎ তাহা নাকে দিয়া গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন।
আজও ঘুম ভাঙে নাই।
বিধাতার ছোট ছোট ছেলেপুলেরা দুষ্টুমি করে মাঝে মাঝে বিধাতার ল্যাপটপ নাড়াচাড়া করতে গিয়া ভূল বসত দুই একজন ব্লগার কে ব্যান, জেনারেল করিয়া দেয়, অথবা ব্যান তুলিয়া সেফ করিয়ে দেয়। আর সেই নিয়াই ব্লগে প্রতিনিয়ত তুলকালাম কান্ড ঘটিয়া থাকে।
==================================
==================================
বনফুল (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়) এর “বিধাতা” ছোট গল্পের ভিত্তিতে রচিত। মূল গল্পটি পাওয়া যাবে এইখানে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:৩৩