হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ডিম লাইট জ্বলছিল।দুটো বিড়াল পুষি।ছেলেটির বয়স ৭ মাস আর মেয়েটির বয়স ৬ মাস।বড্ড আদর-যত্ন পায় ওরা আমার কাছ থেকে;ঠিক যেন মানুষের বাচ্চার মত!!
আমার শোয়ার খাট হতে প্রায় ৬ হাত দূরে একটি বড় টুকরিতে ওদের রাতের শোয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছি আমি।শুধু শীতের জন্যই এই সাময়িক ব্যাবস্থা।বুঝতে পেরেছি,ওরা এই শীতে কষ্ট পেলে আমারও অনেক কষ্ট হবে।আরেকটি কথা,জন্মের পরে ওদের এই ক্ষুদ্র জীবনে এটাই কিন্তু প্রথম শীত।সুতরাং,স্বাভাবিকভাবেই ওরা অনভ্যস্ত এবং বিব্রত ও ভীত।
ঘুম ভাঙতেই প্রথমেই মোবাইলের ঘড়িতে দেখে নিলাম - বাজে ঠিক রাত ৪ঃ৫৯ মিনিট।তারপর ডান পাশে ফিরে দেখলাম বাচ্চা মেয়েটি ওর বিছানার উপড় বসে কোন এক অজানা আতঙ্কে বেশ জড়সড় হয়ে বসে আছে।ডিম লাইটের মৃদু আলোয় ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম,মেয়েটির চোখে-মুখে ভোর করেছে সুতীব্র আতঙ্ক!!
আর বাচ্চা ছেলেটি মেয়েটির পাশে নেই!! কেবল শুনতে পাচ্ছি - ছেলেটি আমার ঘরের বাইরে কোন এক জায়গায় থেকে থেকে রক্ত হিম করা গর্জন করছে;যা ওর স্বভাবের সাথে এবং ওর বয়সের সাথে একেবারেই বেমানান।
ইতিপূর্বে আর কখনো আমি ওকে এই অবস্থায় দেখিনি বা দেখতে পাইনি বা শুনিনি।হঠাৎই ধোঁকা লাগলো,যেন কোন অশরীরী আত্মা আমার ঘরের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমার বিড়ালগুলো তা দেখে ফেলেছে এবং আমাকে তাদের বোবা ভাষায় সতর্ক করে দিচ্ছে!!!
আবারও মোবাইলে চোখ রাখলাম,বাজে ভোর ৫ঃ০৩ মিনিট আর ঠিক তখনই ঘটলো সেই ভয়াবহ ঘটনাটা......
প্রথমেই সুতীব্র একটি ঝাঁকুনি খেলাম,মনে হল কে যেন তার শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে আমাকে অনেক জোরে এক লাথি মারল।আর ঠিক তার পর পরই শুরু হল অসহনীয় ও চরম অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি।কে যেন অদৃশ্য থেকে তাঁর সমস্ত ক্রোধ এই বাংলার জমিনে ঢেলে দিচ্ছে!!মনে হচ্ছে এই ধরাতল এখনই মাটির সাথে মিশে যাবে।ঐ চরম দুঃসময়েই কেন জানি বারবার মনে হতে লাগলো -ঢাকা শহর হতে যাচ্ছে আরেকটি আটলান্টিস অথবা পম্পেই !!!
৭ সেকেন্ড,টানা ৭ সেকেন্ড চলল এই অসহনীয়,অমানবিক আর সুতীব্র ভয়াবহ দুলুনি! আর তাঁর সাথে সাথে বেড়ে চলল আশেপাশের সমস্ত বিড়াল-কুকুর আর যত সামান্য কিছু মানুষের সুতীব্র রক্ত হিম করা অপার্থিব চিৎকার,যা ইতিপূর্বে আমি কখনো শুনিনি।কেননা আমার এই ৩৪ বৎসরের ক্ষুদ্র জীবনে এরকম নির্মম ভূমিকম্প এই-ই প্রথম।জীবনে অনেক ভুমিকম্প দেখেছি কিন্তু আজ ভোর ৫ঃ০৩ মিনিটের এই কুৎসিত দানবের মুখোমুখি ইতিপূর্বে আর কখনো হইনি!!
খাট থেকে একটুও নড়িনি,শুধুই প্রতিপালককে মন ভরে ডেকেছি।একসময় দেখলাম সব কিছু কেমন জানি শান্ত এবং একজন বাদে (১ জন হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছে) বাদ বাকি সবাই বহাল তবিয়তে খোদার খাস কৃপায় জীবিত!!
আর ঘুম হয়নি,হওয়ার কথাও নয়!! এখন লিখছি এক প্রত্যক্ষদর্শীর অনুভূতির কথা......
(দয়া করে এই পোস্টটি সবাই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করবেন,কেননা আজকের এই ভুমিকম্পে অনেক খারাপ কিছুই হতে পারত;জাস্ট সৃষ্টিকর্তা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।শেষ রাত হওয়াতে অনেক মানুষই এই ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হতে পারেনি।মানুষ জেগে থাকলে হুড়োহুড়ি করতে যেয়ে লোক মারা যেত আরও অনেক বেশী!!)
আমার আগের পোস্টঃ
ভুলেও ফেলে দেবেন না সিলিকা ব্যাগ , কিন্তু কেন?