সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁওয়ে দোকানের খুঁটির সাথে বেঁধে প্রায় দেড় ঘণ্টা নির্যাতন করা হয় ১৫ বছরের কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজনকে। বাঁধা অবস্থায় পানির জন্য বেশ কয়েকবার আর্তনাদ করেও রাজনকে পানি দেয়নি নির্যাতনকারীরা। পানি চাইলেও নির্যাতনকারীরা তাকে উল্টো বলে ‘পানি নাই ঘাম খা’। কয়েকজন মিলে উল্লাসের সাথে কিশোর রাজনের উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। ভিডিও চিত্র ধারণ থেকে পাওয়া যায় কিশোর সামিউল হত্যাকান্ডের নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য।
এদিকে, মামলার এজহারনামীয় আসামিদেরকে গ্রেফতার করার জন্য শনিবার দিবাগত রাতে কুমারগাঁও এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালালেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত বুধবার নিমর্মভাবে নির্যাতন করে হত্যা করার পর গুম করার সময় উদ্ধার করা হয় কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজনের লাশ। এবার তাকে নির্যাতন করার দৃশ্য ভিডিওচিত্রে প্রকাশ পেয়েছে। কিশোর শরীরে টানা নির্যাতন সইতে না পেরে শেষে পানি খাওয়ার আকুতি জানালেও পাষণ্ডরা তাকে পানি পর্যন্ত দেয়নি।
পুলিশ জানায়, লাশটি ওই দিন পর্যন্ত অজ্ঞাত ছিল। খবর পেয়ে বুধবার রাত ১১টায় থানায় গিয়ে পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় রাজনের লাশ ফেলার সময় হাতেনাতে আটক মুহিত ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।
রাজনকে নির্যাতন করার প্রায় ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, চোর সন্দেহে রাজনকে কুমারগাঁও বাসস্টেশন এলাকার বড়গাঁওস্থ সুন্দর আলী মার্কেটের একটি ওয়ার্কশপের সামনে বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রাখা। ভিডিওচিত্রে তিন-চারজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও ভিডিওধারণকারী আরও দুজনের উপস্থিতিও দেখা গেছে। ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক… লগে কারা আছিল…’ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চেয়ে মারধর করা হয়।
একনাগাড়ে প্রায় ১৬ মিনিট রাজনকে অনেকটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রোল দিয়ে পেটানো হয়। এরপর চোখ-মুখ ফোলা অবস্থায় দেখা গেছে। একপর্যায়ে মাটিতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে পানি খাওয়ার আকুতি জানায়। কিন্তু পানির বদলে ‘ঘাম খা’ বলে ফেলে রাখা হয়। এমনকি নির্যাতনের সময় নির্যাতনকারীরা উল্লাস করতে দেখা গেছে। এছাড়াও নির্যাতনের এক পর্যায়ে সামিউলকে বোতলের কর্ক দিয়ে একজন কয়েক ফোটা পানিও দিতে দেখা গেছে।
ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময়ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত রয়েছে সময়। তখন সকাল সাড়ে ৭টা। মারধর করার সময় একদিকে রাজনের মুখে আর্তচিৎকার, আর অন্যদিকে নির্যাতনকারীদের মুখে অট্টহাসি দিয়ে নানা কটূক্তি করতেও শোনা গেছে। রাজনের নখে, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করে এক সময় বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মুচড়াতেও দেখা যায়। কয়েক মিনিটের জন্য রাজনকে হাতের বাঁধন খুলে রশি লাগিয়ে হাঁটতে দেওয়া হয়। ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরও মারো…’ বলে রাজনের বা হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটানো হয়। এসময় রাজনের শরীর ও চোখ-মুখ বেশ ফোলা দেখা গেছে।
যে ভিডিও ধারণ করার কাজটি করছিল, তাকে নির্দেশ করে নির্যাতনকারীরা জানতে চায়- ঠিকমতো ভিডিও ধারণ হচ্ছে কি-না। ওপাশ থেকে ‘ফেসবুকে ছাড়ি দিছি, অখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখব…’ বলতে শোনা গেছে। শেষ দিকে নির্যাতনকারী একজন সঙ্গীদের কাছে জানতে চায়, কিতা করতাম?’ বলে। অপর একজনকে তখন ‘মামায় যে কইছন, ওই কাম করি ছাড়ি দে!’ বলতে শোনা যায়।
রাজনের বাড়ি কুমারগাঁও বাসস্টেশন পার্শ্ববর্তী সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন মাইক্রোবাসচালক। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাজন সবজি বিক্রি করত।
আজিজুর জানান, তিনি যেদিন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হয় রাজন।
মা লুবনা আক্তার জানান, ওইদিন (বুধবার) রাজনের বাবা গাড়িতে (ভাড়ার ট্রিপে) ছিলেন বলে বাড়ি ফিরেননি। ভোরে টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য রাজন বের হয়েছিল। সারা দিন ছেলের খোঁজ পাননি তারা। রাতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় এক কিশোরের লাশ পাওয়ার সূত্র ধরে রাজনকে শনাক্ত করা হয়। তিনি বলেনন, ‘আমার পুয়া (ছেলে) চোর না, ই কথা সারা এলাকার মানুষ জানে।
শনিবার ঘটনাস্থল কুমারগাঁও বাসস্টেশনে গেলে মুঠোফোনে সংগ্রহ করে অনেকেই ওই ভিডিওচিত্র দেখেছেন বলে এলাকাবাসী জানান। এ কারণে এলাকাবাসী গত শুক্রবার জালালাবাদ থানায় মিছিল করে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, প্রবাসী কামরুলের ভিডিওচিত্র ধারণ করার বিকৃত অভিলাষ চরিতার্থ করতেই কিশোর রাজনকে চোর সাজিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার জন্য এলাকাবাসী নির্যাতন করার ভিডিওচিত্র ধারণ ও হত্যাকান্ড এ দুই ঘটনায় পৃথক বিচারও দাবি করেন।
তোদের একই ভাবে নিযাতন করে মারা উচিত ।শুকরের বচ্চারা তোদের জন্ম কে দিয়েছে মানুয় নাকি শুকর?
কুত্তার চাইতে অধম তোরা যারা এই বাচ্চা ছেলেটাকে মেরে ফেলেছিস।তোদের নির্যাতন প্রাগৌতিহাসিক নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। ওকে দেখেতো মনে হয় না চোর !!!
প্রথম-আলোর সিলেট শাখার কাছে এই ভিডিওটি পুরোটা রাখা আছে।
ফাঁসি চাই এদের,শুধুই ফাঁসি চাই এবং তা অবিলম্বে!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬