somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়লানের চিরনিদ্রা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বোদরামের সুন্দর সৈকতে আয়লান ভেসে আসলো। নিহত আয়লান। সেটা কিন্তু একটা ঘটনা হইলো। নিখাদ আপনার মনে দরদ ও ব্যথার বাইরেও আয়লান আপনাকে ইউরোপের প্রতি নাখোশ করে তুললো। আপনি যেমনটা স্বাভাবিক মিতভাষি, আয়লানের এমন ছবি দেখে ততোটাই ব্যথাতুর হইলেন। ফলে কথা বলতে শুরু করলেন অনেকটা ব্যাগ্র ভঙ্গিতে। যেনো বলতে চান, ইউরোপের এই মনোভাব পুথিবীকে নতুন একটা সমস্যাকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিতেছে। হ্যা, এইটা একটা দিক। এই দিকটি প্রাচ্যের জন্য একটা বিপ্লব বয়ে আনতে পারে। ইউরোপের জন্য ভয়ংকর ঠেকতে পারে।

আয়লানের বিষয়টা, সে একজন তিন বছরের শিশু। এবং তার এক ভাই আছে। গালিব। গালিবের বয়স পাঁচ। তার মাও তাদের সঙ্গে, রেহানা। তো, এরা একই পরিবারের তিনজন সমুদ্র ধোয়া মানুষ। এর বাইরে আয়লানের পিতা, আব্দুল্লাহ কুর্দি। তিনি মারা যাননি। দুই ছেলে, আর বউকে ছেড়ে দিয়ে বেঁচে যাইবার কঠিন দুঃখ তাকে বয়ে বেড়াতে হবেই। এইটা পষ্ট। এবং এই দুঃখই একজন আব্দুল্লাহ কুর্দির নতুন করে আবির্ভাবের ঘটনা ঘটাইতে পারে। যেখানে তার কাছে ইউরোপের, বিশেষভাবে কানাডার ব্যাপারটাই প্রধান। এমন হইতে পারে বটেই যে, এই কুর্দি দাঁড়িয়ে গেলেন প্রতিবাদ হিসেবে।



আমি মূলত এই ব্যাপারটাই বলতে চাই। রিফিউজিদের নিয়ে কানাডা-মানের দেশগুলার গা-বাঁচানোর দায়টা খাটতে হবে পুরো ইউরোপকে। অনেক আগে থেকেই যদিও চলে আসতেছে এই ইউরোপের ফিরিয়ে দেয়ার কাহিনী। কিন্তু এখন সেটা ফেসবুক, টুইটারের মতো স্ব-মিডিয়াগুলোর কারণে একটা আলাদা মাত্রা পাবে। এবং ব্যাপারগুলা যখন ভেসে উঠবে পত্রপত্রিকায়, টিভি-কম্পিউটারের স্ক্রিনে, তখন একটা দরদের আবিষ্কারের মধ্য দিয়া প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। মানে, প্রাচ্যে এবং মোসলমানদের মনে ইউরোপবিরোধী ধারণাটা ঘষামাজা হবে। আমি ভাবতেছি, সেটা কিভাবে কাটায়ে উঠবে পশ্চিম।

ইউরোপের কি ঠ্যাকা? এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। এই প্রশ্নটা আমারে কাবু করে না। কারণ, আমার ব্যক্তিগত অভিমত দাঁড়ায় যে, আমি এই অভিবাসীদেরকে টেনে নেই। তথা, আমি ভালো আছি। তাইলে আয়লানের কষ্টের সময়ে তাকে আর তার বাপ-মা-ভাইটাকে টেনে নিতে তো আমার সমস্যা না। এইখানেই আমার সঙ্গে কানাডার বিরোধ। কানাডা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিজস্ব পলিটিক্স চালায়। আয়লান তো রিফিউজি। তাকে নিয়ে তার হিসাবে কি ভাবার আছে। কানাডার লিবারেল পর্টির প্রধান দাবি করেন, এইতক পঁচিশ হাজার অভিবাসীর জায়গা হলো কানাডায়। অন্যদিকে আরেক পার্টি এনডিপির খণ্ডন জারি থাকে, তো ব্যাপারটা পলিটিক্যাল মাত্রা নিলে কানাডার নিজের ফায়দা হয়। আর কি? কিন্তু আয়লানের পিতা আর ফুফু কাঁদতে থাকেন। সারা বিশ্ব সেই কান্না দেখতেছে।

আব্দুল্লাহ কুর্দির এক বোন অনেক আগে থেকেই রইছিলেন কানাডায়। যার নাম তিমা কুর্দি। তিমা কুর্দির কানাডা-প্রবাসই মূলত এই পরিবারকে ওইখানে গিয়ে বাঁচতে প্রলোভন করে। ফলে আব্দুল্লাহর মনে হয়, চলে গেলে হয়তো আরাম হবে। কানাডার নিরাপদ অবস্থা সেই কথাই বলে। যেই দেশে প্রেসিডেন্টের স্পিচ হয়, ইয়ুথ আর মাল্টিকালচারিজমের মতো সৌখিন বিষয়ে। আব্দুল্লাহর বোনের কারণে সেখানে গিয়ে তার বাঁচবার তাগিদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেটা অনেক ঘটনার মতোই দুই ছেলে আর বউয়ের মৃত্যুর মাঝ দিয়ে সমাপ্ত হয়ে যায়। তিমা তার বন্ধু আর কলিগদের থেকে কিছু হেল্পের চাহিদা করেছিলেন, এবং তার ভাইয়ের কানাডা প্রবেশের ব্যাপারে এপলিকেশন পৌঁছেছিলো মিনিস্টারের টেবিলে। কিন্তু রিফিউজিদের কোন আবাস তৈরি হয় নাই। মার্চ মাস থেকেই এই প্রক্রিয়া চলমান ছিলো, গত সেইদিন আয়লানদের মৃত্যুতে সেটা চরমভাবে নাকচ হলো। কানাডা অবশ্যই পলিটিক্যাল ফায়দা আদায়ে ঝাপিয়ে পড়লো। কানাডায় তারা কোন অনুমতি পাইলেন না, ফলে ছুটছিলেন সমুদ্রে। শেষমেষ কিছু মৃত্যুই প্রাপ্তি হইলো।

এই সকল ঘটনার উপরে দাঁড়ায়ে কি কোন সল্যুশন আদায় হয়? একটা ব্যাপরই দেখা যায়, মোসলমানরা একটু অভিনব পয়দায় এইখানে শরিক হইতে পারতেছে। মোসলমান বলে, অনেকটা মানবতার খাতিরেই যেনো বলতে পারে, ইউরোপের ফিরিয়ে দেয়াটা মানবতার সঙ্গে যায় না। তথা এর মাঝে দিয়ে একটা জায়গা তৈয়ার হয়। সেটা কেমন? আইসিসকৃত ইসলাম আর এই মজলুমের ইসলাম, দুইটি ভাবধারা প্রবাহিত হইতে থাকে। এই যে, যারাই সীমান্ত দিয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চিন্তা করেছিলেন, তারা প্রথম ওই দেশের সীমান্ত-পুলিশ, দ্বিতীয়ত আক্রান্ত হন আইসিস সন্ত্রাসীদের দ্বারা। সুতরাং এই রিফিউজি মুসলমানদের ইসলাম অনেক শুদ্ধ আর মানবিক হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। অন্যদিকে এদের সঙ্গে আইসিসের বিশাল তফাৎ পরিস্কার হয়ে যায়। আমি যেটা ভাবতেছি, ব্যাপারটা পশ্চিম কিভাবে হিসাব করে? ইসলামের কোন ভালো এবং মায়াবী জায়গা প্রতীয়মান হলে তো তাদের জন্য সেটা ভালো খবর না।



ইউরোপের প্রধান চ্যালেঞ্জ মানেই তো ইসলামের নামে টেররিজম, আর ইউরোপকে সমর্থনের জায়গাটাই হলো, তারা আছে মানবতার সঙ্গে। আর এই সমীকরণের পরে যখন পৃথিবী দেখে যে, এক ধরনের মজলুম মুসলিমগণ, যারা একই সঙ্গে আইসিসের হাতেও আক্রান্ত, তারাই ইউরোপের দরোজায় কড়া নাড়ছে। বাট ইউরোপের দেশগুলো মাততেছে না। তখন অনেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দেয়। আমি দেখি, এই যে নতুন করে মোসলমানদের জায়গা বানায়ে দিতেছে ইউরোপের মগা মগা দেশগুলো, তাতে আয়লান যদিও মরে গেছে। কিন্তু সমস্যা হয় খোদ ইউরোপের জনপ্রিয়তায়। বিশ্বের দরবারে প্রস্ফুটিত তাদের মুগ্ধকর ইমেজ থুবলে পড়ে।

যা হোক, আয়লান মারা গেছে। এবং ভাসতে ভাসতে চলে আসছে বীচের বালিতে। সে পড়ে আছে। তার গায়ে রঙিন কাপড়। পায়ে শিশুদের জুতো। সে মারা গেছে। কিন্তু আমরা তো জানি, এই এক মৃত্যুর ফলে প্রতিজন মানুষের মনে কী পরিমাণ ক্ষতের আবিস্কার হইছে। সেটা সরাসরি কথা বলতে আরম্ভ করছে, আমি আপনে এবং আয়লানের বয়সী অনেক শিশুর পিতা, তারা নিজেদের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠতেছেন। তারপর জেগে উঠতেছেন। এইটাই মূলত একটা বড় মৃত্যুর প্রভাব। আয়লানদের মৃত্যুতে এখন কী না হতে পারে? সবাই তো আঙুল খাড়া করবে ইউরোপ অভিমুখে। সেখানে বেকায়দা-ভাব দাঁড়াইলে সিরিয়ার সমস্যায় নতুন একটা নিরসন দেখা যাইতে পারে। যেমন, এই প্রবলেম থেকে উদ্ধার করার জন্য তারা জালিম অবস্থানের বিরুদ্ধে কঠিনভাবে দাঁড়াইলেন। তখন, ইউরোপের এই দাঁড়ানোটাই রিফিউজিদের জন্য একটা নিরাপত্তাবেষ্টিত ভূমির দাবি করলো। ইউরোপকে অসম্মান করা তো আমাদের কাজ না। আমরা চাই, এই শিশুগুলো নিজের দেশেই বাবার হাতে লেখাপড়া শিখুক। অতো দূরে, সেই বোদরামের সৈকতে সে কেনো মারা যাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×