somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও শেখ রাসেল! ও সোনাভাই!

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুমি বাঁচতে চাইতে পারো ও সোনাভাই, আমি তোমারে বলি, আমার মনটা কেমন করে। যেইরকম কাঁদে। তোমার নীরব মুখের ছবি আমারে আদর করে। আর যেমন, আমার মনে হয়, আমরা যদি বন্ধু হইতাম। একদিন ভোরবেলা বের হয়ে যাইতাম মাঠে, খেলতাম, নাইতাম। রোদ্র উঠতো থাকতো আস্তে, ও সোনাভাই! কোন নদীর কিনারে গিয়া ভিজতাম। সাঁতার দিতাম। তুমি কি সাঁতার জানো?

কিছুদিন আগে একবার তোমার বাড়ি গেলাম। যদিও তুমি নাই, আমি গেলাম। এটা-ওটা দেখলাম, তারপর বের হয়া দেখি বিকাল হইছে। ঝিমায়া পড়ছে রোদ। মানুষেরা হাঁটতেছে-চলতেছে, কয়েকজন বন্ধু, ওরা লেকের কিনারে গিয়া বসছে। ওইখানে পাখি আছে, ওরা চিকুর-চিকুর করতেছে। আমার কান্না আসলো। তাতে কি? আামি কাঁদি উঠলাম না। কতোদূর গিয়া পেছনে চাইলাম। তোমার বাড়ি, একটা সন্ধ্যার মতোন তাকায়া রইছে, যেনো আমারই দিকে। ও সোনাভাই! তুমি কই?

তুমি শেষবার মায়ের কাছে যেতে চাইলা। সেই কঠিন দৃশ্য আমি ভুলে গেলাম। আজকে বাসা থেকে বাহির হইবার পরে দোকানে দাঁড়াইলাম। শুনি, মাইকে গান চলতেছে। সেই সুন্দর সুর এখানে-ওখানে বারি খাইতেছে। মানুষেরা চেয়ারে বসে রইছে। সোনাভাই, তোমারে এতো বেশি মনে পড়তেছে। তুমি বলতেছো, মায়ের কাছে যাইবা। বোনের কাছে যাইবা। তোমার বাপ কইতেছে, পালায়া যাইতে। তুমি তাও পারলা না, সোনাভাই রক্তাক্ত করিডোরে কেমন করে আগাইবা?



মায়ের কাছে যাইতে পারলা্ না আর, আমি প্রতিদিন রাতে মায়ের সামনে বসে বষে খাই। কথা কই, কই যে, কি করলাম সারাদিন। মায়ের কাছে পানি চাই। তুমি শেষবার কেনো মায়েরে পাইলা না বলো? তোমার মায়ের রক্তভেজা বুক তোমারে কেমন বানায় দিলো। হাসু আপা ছিলো কতোদূরে, হাসু আপার কাছে পাঠায় দিতে বললা। কে পাঠাবে? তারাই তো তোমারে মারলো। গুলি করলো, তোমার ছোট বুক রক্তে ভরে গেলো। সেই কঠিন ভোর আমি কিভাবে কাটায়া উঠি? আমার মনে পড়ে। কান্না আসে। লোকেরা আজকে গান বাজায়, তোমার কথা কার মনে আছে? আমি তোমরে ভুলি নাই। সোনাভাই, তুমি আছো। আমরা বন্ধু লাগি। চলো, মাঠের দিকে যাই। তারপর নদীর দিকে যাবো নে। তারপর শহরের স্কুলে যাবো। তুমি পড়বা, গান বলবা।

ওরা যখন তোমারে আর আদর করতে চাইলো না। বাবার মতোন তোমরেও মহান করে দিলো। গুলি করলো, আমি ভাবি, তাগোর মুখ। তাগোর চোখ। কেমন সেইগুলা? তারা কি তোমার দিকে চাইছিলো? তারা কি কেঁপে উঠছিলো? সোনাভাই! তারা কি হাসছিলো? সেই ভোরে, যখন ট্যাঙ্ক দিয়া বত্রিশ নম্বর ঘেরাও দিয়া ফেললো, তুমি কি জানলার কাছে গেলা? তুমি আকাশটা দেখলা? শেষ আকাশ। ওই আকাশেই তুমি চলে যাইবা। শবা্দগুলো তোমার কানের ভেতর দিযা ছোট্ট মনে কষ্ট দিলো। ওইসব শব্দে তোমার বাবা সিঁড়িতে পড়ে গেলো। তোমার মা জীবনের অন্তিমকালে তোমার দিকে চাইলো। তুমি বাঁচতে চাইলা। তুমি তারপর নীরবে ঘুমাইলা। সেই ঘুম আমারে নিস্তেজ করে দেয়। সেই ঘুম ক্ষাণিকটা ভোরের মতোই। দুঃখমাখা আলো নিযা আসে।



তুমি ওই ভোরে ঘুমানোর আগে পৃখিবীর মানুষেরা জেগে উঠছিলো। তাদের মনে কি তোমার চোখের ছায়া পড়ছিলো? বয়স হইছিলো তোমার দশ। সোনাভাই, আমার একটা ভাই আছে। সেও দশ। গতোকাল মনে হয় সে মার্কেট হইতে একটা ব্যাট কিনে আনলো। আমারে জিগাইলো, খেলবা? আমি তাকাইলাম। চলো খেলি গিয়া! ও সোনাভাই, দূর হইতে তোমার বাবার কণ্ঠ ভাসতে ভাসতে আসতেছে। আমি আর আমার ভাইটি খেলতে যাইতেছি। সোনাভাই, লও তুমিও যাইবা। খেলবা। তারপরে নদীতে যাবো নে। নদীতে আমরা তিনজন গাইবো দেশের গান। সন্ধ্যা হইবার অনেক আগে আমরা চলে আসবো। তোমার বাড়িতে তুমি ঢুকে পড়বা, যখনও আলো নিভে নাই। যেনো এই বাড়িতে কোনদিন কিছু হয় নাই। কোন শব্দঅলা ভোর নামে নাই। তোমরা সবাই আছো, তুমি চাইলেই বলতেছো, মায়ের কাছে যাইবা। সোনাভাই, তারপরে তুমি মায়ের কাছে যাইতেছো।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×