somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রভাবশালী মহলের লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চিনিকে পুঁজি করে নওয়াপাড়ার প্রভাবশালী মহলের লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য

আমিনুর রহমান মামুন

নওয়াপায় ২ ব্যবসায়ীর ৭৪ হাজার বস্তা চিনি জব্দের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। জানাযাচ্ছে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করলেও তাদের অনেকটা জিম্মি করে এখানকার অনেক প্রভাবশালী কোন প্রকার পুঁজি বিনিয়োগ না করেই হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা যাদের সন্তুষ্ঠ করতে পারেননি তাদের রোষানলে পড়ার কারণেই এখন তাদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রশাসন চিনি মজুদ করে রাখার অভিযোগে তা জব্দ করলেও ব্যবসায়ীরা যে অন্যায় করেছেন তা এখনো প্রমানীত হয়নি। তবে তারা যে প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়েছেন সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নওয়াপাড়ায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথাবলে জানাযায়, প্রশাসন জয়েন্ট ট্রেডিং কর্পোরেনের যে ৭০ হাজার বস্তা চিনি জব্দ করেছে তা ২০০৮ সালে আমদানী করা চিনির অংশ বিশেষ। ঐ বছর প্রতিষ্ঠানটি এলসির মাধ্যমে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি আমাদনী করে। যা কেনা ছিল ৩২ টাকা কেজি দরে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মতায় আসলে চিনির দর কমে ২৭ টাকা হয়ে যায়। যে কারণে জয়েন্ট ট্রেডিংসহ অন্যান্য চিনি ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওহাব ভোরের কাগজকে বলেন, কম মূল্যে চিনি বিক্রি করার কারণে এ পর্যন্ত তার অন্তত ১৫ কোটি টাকা লস হয়েছে। পরবর্তিতে চিনির দাম বাড়তে থাকায় তিনি কিছুটা রা পান। তবে এখন হয়রানী হতে হচ্ছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাল হয় এখানকার চিনি আমদানী কারকদের। নওয়াপড়ার এক শ্রেনীর প্রভাবশালী কোন প্রকার বিনিয়োগ না করেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন এখানকার আমদানীকারকদের। তারা বিভিন্ন কায়দায় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাজার হাজার বস্তা চিনি তাদের নামে ডিও দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ব্যবসা আর জীবনের ভয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকের নামে ডিও দিয়েও দেন। কিন্তু তাদের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। যা মেটানো ব্যবসায়ীদের পে সম্ভব হয়নি। সবডিও তাদের নামে দিয়ে দিলে তাদের তাদের লসের পরিমান আরও বেড়ে যেত। এতেই েেপ যান অনেকে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ধারণা প্রশাসনের চিনি জব্দের নেপথ্যে নওয়াপাড়ার ঐ প্রভাবশালীদের আক্রোশ কাজ করতে পারে।
নওয়াপাড়ার সুত্রগুলো জানায়, এখানকার প্রভাবশালী ঐ মহলটি ঈদকে সামনে রেখে ডিও বাণিজ্য করে মাত্র ১৫/১৬ দিনে একেবারে খালি হাতে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন। রোজার শেষের দিকে যখন প্রতি ট্রাক চিনি ( ৩৬০ বস্তা ) পাইকারি ক্রেতারা নওয়াপাড়ার আমদানীকারকদের কাছ থেকে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫২ টাকা দরে কিনেছেন, তখন নওয়াপাড়ার ঐ প্রভাবশালীরা আমদানীকারকদের তাদের কাছে একই পরিমান চিনি ৮ লাখ ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন। অর্থ্যাৎ প্রতিগাড়িতে আমদানীকারকরা ঠকেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে। আর কোন প্রকার বিনিযোগ না করে ঐ টাকা লাভ করেছেন মধ্যসত্বভোগী ঐ প্রভাবশালীরা। তারা আমদানী কারকদের কাছ থেকে ডিও নেয়ার পর ঐ আমদানীকারকের অফিসের সামনে বসেই বাইরে থেকে আসা ক্রেতার কাছে ৯ লাখ ৩৬হাজার টাকায় তা বিক্রি করে দিয়েছেন। শত শত কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিনি আমদানীর পর কোটি কোটি টাকা লস হওয়ার পর যখন তারা কিছুটা তি পুশিয়ে নিতে যাচ্ছিলেন, তখন প্রভাবশালীদের অপতৎপরতা তাদের নিরবে হজম করতে হয়েছে।
সুত্রটি জানায়, নওয়াপড়ার প্রভাবশালী এক মহিলা রোজার মধ্যে এভাবে অন্তত ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন তার পাঠানো লোকজনের নামে ২ থেকে ৩ গাড়ি চিনি দিতে হতো। তা থেকে ঐ মহিলার প্রতিদিন আয় হয়েছে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। যারা আসতো তাদের অনেকে চরমপন্থী দলের সাথে জড়িত। যে কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। কিন্তু শেষদিকে তাদের চাহিদা বাড়তে থাকায় তারা আর পারছিলেন না। এরপরেই মজুদ করে রাখার অভিযোগে প্রশাসন ২ ব্যবসায়ীর চিনি জব্দ করে। তবে চিনি মজুদ করে রাখার কথা অস্বীকার করেছেন জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওহাব। তিনি বলেছেন, মজুদ করে রাখার প্রশ্নই ওঠেনা। মজুদ করলে আমদানী করা বিপুল পরিমান চিনি লস করে বিক্রি করতামনা। চিনি আমদানীর পর ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমার অন্তত ১৫ কোটি টাকা লস হয়েছে। আমি ধারাবাহিক ভাবেই চিনি বিক্রি করেছি। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিত্রি করেছি ৫ লাখ বস্তা। তাহলে মজুদ করলাম কি ভাবে ? তাছাড়া আমার গুদামে কি পরিমান চিনি আছে তা সবসময় একটি গোয়েন্দ সংস্থাকে জানিয়েছি। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর ঐ সংস্থাকে জানানো হয়, আমার গোডাউনে ১ লাখ ৪ হাজার বস্তা চিনি রয়েছে। যা বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর আমার চিনি জব্দ করা হয়। তখন সেখানে ৭৩ হাজার বস্তা চিনি ছিল। অর্থ্যাৎ চিনি যে বিক্রি করা এবং ক্রেতারা ডেলিভারিও নিচ্ছিলেন এখান থেকে তার প্রমান মেলে। তিনি বলেন, ট্রাক সংকট, দু’দিনের বৃষ্টি ও ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় অনেকেই চিনি ডেলিভারি নিতে পারেনি। তাহলে যে পরিমান চিনি জব্দ করা হয়েছে তা সেখানে থাকতো না। খুলনার দৌলতপুরের মধু বাবু, বড় বাজারের আব্দুল ওদুদ, দৌলতপুরের চিত্তরঞ্জন কুনউ, নওয়াপাড়ার রাজু আহমেদ নামে কয়েকজন ক্রেতাও একই কথা বলেন।
এদিকে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের ডিও দেয়ার ক্ষেত্রে এমন কিছু পেয়েছে যাকে তারা অস্বাভাবিক হিসাবেই দেখছেন। জয়েন্ট ট্রেডিং ২৪ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৯ ব্যবসায়ীর কাছে ৬৭ হাজার ৪শ ৬০ বস্তা চিনি বিক্রি দেখিয়েছে। এরমধ্যে কেউ কেউ জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওহাবের আত্মীয় স্বজনও রয়েছেন। বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে তদন্ত কমিটি। এ জন্য গতকাল তদন্ত কমিটির প্রধান যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেফিনা বেগমের দফতরে তলব করা হয়েছিল তাদের। ব্যবসায়ীরা সেখানে তাদের বক্তব্য পেশ করেছেন। এ ব্যাপারে জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের মালিক আব্দুল ওহাব বলেন, রোজার সময় দেশে চিনির চাহিদা ৩ গুন বেড়ে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে প্রতিমাসে চিনির চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টন। সেখানে রমজান মাসে চাহিদা দাঁড়ায় ৯ থেকে ১০ হাজার টন। স্বাভাবিক ভাবে এ সময় বিক্রিও বাড়ে। ক্রেতারা চিনি কিনতে আসায় আমি বিক্রি করেছি। চিনি আমদানী করেছিতো বিক্রির জন্যই। এখানেতো আমি দোষের কিছু দেখিনা। তার আত্মীয়দের কাছে বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন আত্মীয় কি ব্যবসা করতে পারেন না ? তারা ব্যবসা করছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা তাদের কাছে চিনি বিক্রি করেছি। আমি যদি হঠাৎ করে তাদের কাছে চিনি বিক্রি করতাম তাহলে প্রশ্ন তোলা যেত। তারা ধারাবাহিক ভাবেই আমাদের কাছ থেকে চিনি কিনে আসছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তার রিপোর্ট প্রস্তুত করাহলেও তা বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কাছে পেশ করা হয়নি। এ ব্যাপারে জানার জন্য জেলা প্রশাসক মহিবুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে আগামীকাল জানা যাবে। #
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×