বিদ্যালয় বন্ধ থাকিলে এবং আফিস আদালত খোলা থাকিতে প্রত্যুষের কিছু পড়ে দ্বীপ তাহার বাটী হইতে বাহির হইয়া আমার বাটীতে উপস্থিত হইতো। আমার বাটীতে উপস্থিত হইলেও কিনতু আমার সাক্ষাৎ মিলিত নাহ,প্রথমে আমার দাদা জানের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পরেই সে আমার কাছে আসিতে পারিতো। যে দু-চারজন সহপাঠীদের আমার বাটীতে প্রবেশাধিকারে কোন হস্তক্ষেপ অথবা জবাবদিহিতার মধ্যে পড়িতে হইতো না, তাহার মধ্যে দ্বীপ একজন। আমরা আড়ালে আবডালে তাহাকে ডীলু"ও (তাহার বাবার নাম) বলিয়া ডাকিতাম।এতে সে কোনোরূপ মনোক্ষুণ্ণ হইতো না।
দ্বীপ আমার সহপাঠী, আমরা একই বিদ্যালয়ে একই শ্রেণীকক্ষে অধ্যায়ন করিতাম (একই শ্রেণীকক্ষ বলার কারন হইলো আমাদের পাঠশালায় একটি শ্রেণীর চারটি শ্রেণীকক্ষ থাকিতো)।আমরা বাটী হইতে বাহির হইয়া কোর্টের পেছনের পুকুরপাড়,নয়তো পাগলা গারদের পাশের আশ্রমের পুকুরপাড় অথবা ফরেস্টের পেছনের লাশকাটা ঘরের পাশে সময় ক্ষেপণ করিতাম এবং দেশ বিদেশ,মহাকাশের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়া চিন্তিত হইতাম।
আমি হয়তো আপনাদের বোঝাইতে পারিয়াছি দ্বীপ বন্ধু হিসেবে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলো।শ্রেণীকক্ষে আমাদের রোল নম্বর আগেপিছে ছিলো তাই পরীক্ষায় আমাদের ছিটও আগে পিছে পড়িত। তো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে পরীক্ষার হলে ছিট পড়িলে যা হবার তাই হইতো, দুই জনের খাতা আলাদা করা মুশকিল হইয়া পড়িত।
একবার ক্লাশ নাইনে পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় দ্বীপ আমার চেয়ে এক নম্বর বেশি পাইয়া তাক লাগাইয়া দিলো! আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হইয়া ভাবিতে লাগিলাম এমন তো হইবার কথা নয়,পরে খাতা মিলাইতে বসিলাম।তখনই সম্রাট আকবরের জাঙ্গিয়া আবিস্কার হইলো।আকাশ কেন নীল দেখায়,এই প্রশ্নের উত্তর আমি দ্বীপের খাতা হইতে কপি করিয়া ছিলাম, এবং নীল আলোর তরঙ্গ ভাসিবার স্থলে আমি আসিতে থাকে লিখিয়াই গোলমাল বাধাইয়াছিলাম যাহা এখনো আমার অন্তর পীড়ার কারন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:০৫