পৃথিবীতে হানা দিয়েছে এক নতুন ধরনের ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ এই নতুন ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও আমার মত সাধারণ মানুষ যথেষ্ট উদ্বিগ্নতায় দিন কাটাচ্ছে।উদ্বিগ্ন হবার মত যথেষ্ট কারন আছে।প্রথমত এই ভাইরাস /অসুখের কোন ভ্যাক্সিন বা ঔষধ নেই।দ্বিতীয়ত ছোঁয়াচে। বাংলাদেশের মত একটি বিপুল জনসংখ্যার দেশে দ্বিতীয় কারনটিই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের।
করোনাভাইরাস হলো নিদুভাইরাস শ্রেণীর করোনাভাইরদা পরিবারভুক্ত করোনাভাইরিনা উপগোত্রের একটি সংক্রমণ ভাইরাস প্রজাতি।এ ভাইরাসের জিনোম নিজস্ব আরএনএ দিয়ে গঠিত। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৬ থেকে ৩২ কিলো বেস পেয়ার (kilo base-pair) এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ। করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনাথেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারণ ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটি দেখতে অনেকটা মুকুটের মত। ভাইরাসের উপরিভাগে প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রামিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। সকল প্রজাতির করোনাভাইরাসে সাধারণত স্পাইক (এস), এনভেলপ (ই), মেমব্রেন (এম) এবং নিউক্লিওক্যাপসিড (এন) নামক চার ধরনের প্রেটিন দেখা যায়।সূত্র ঃউইকিপিডিয়া
চীন রাশিয়ার বিজ্ঞানিদের সাথে মিলে প্রতিষেধক তৈরীর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।গণচীনের মিডিয়া সমাজতান্ত্রিক সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এজন্য চীনে আসলে কি ঘটছে তা পুরোপুরি জানা দুঃসাধ্য ব্যাপার।চীন ছাড়াও অনেক দেশে এ ভাইরাসের পাদুর্ভাব লক্ষ করা গেছে এবং গতকাল একজন ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত মালয় প্রবাসী শ্রমিক করোনা ভাইরাসের কারনে মৃত্যু বরন করেছে।চীনের সরকারি হিসেবে ১৮০ জন মারা গেছে এবং কয়েক হাজার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশের সাথে চীনের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।প্রচুর চীনা প্রকৌশলী, কর্মকর্তা এবং শ্রমিক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশের ব্যাবসা বানিজ্য চীনের উপর নির্ভরশীল। এজন্য প্রচুর পরিমাণে চীনা এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের চীন-বাংলাদেশ যাতায়াত হয়।
নবেল করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
**বাংলাদেশ এখন অনেক আপগ্রেড একটা দেশ।এখন আর সরকারের "আপনাদের চিন্তার কোন কারন নেই" কথা শুনে আমরা নিশ্চিত হতে পারি না।আমরা জানতে চাই আমাদের নিশ্চিত করতে সরকার কি কি পদক্ষেপ গঠন করেছে। যেমন চীন ছয় দিনে (ভিন্নমতে দশ দিন) একটি বিশেষায়িত হসপিটাল নির্মান করেছে।বাংলাদেশে যদিও এটা সম্ভব নয় তবে নির্দিষ্ট জোন সিলেক্ট করা,অথবা নির্দিষ্ট একটা হসপিটাল কে শুধু মাত্র করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর জন্য ব্যাবহার করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
**অতিদ্রুত করোনা ভাইরাস পরীক্ষা পদ্ধতি /ম্যাটেরিয়ালস,ট্রেনিং এবং পর্যাপ্ত জনবল কি নির্দিষ্ট করা হয়েছে??বাংলাদেশের হসপিটাল গুলোতে এমনিতেই চিকিৎসক এবং নার্স সংকটে ভূগে।এমত অবস্থায় বিপুল জনগোষ্ঠীর (আমাদের সবচে খারাপ অবস্থা বিবেচনা করে প্রস্তুতি নিতে হবে) রোগ নিরীক্ষা এবং সেবাদান( সেচ্ছাসেবেক ছাড়া সম্ভব নয়) সরকার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কোন দিক নির্দেশনা আমরা জানতে পারি নাই।
** সর্বনিম্ন পাঁচ কোটি লোকের (ঢাকায় তিন কোটি এবং বড় বড় বিভাগীয় এবং জেলা শহরে দুই কোটি, আনুমানিক) লোকের স্বল্প মূল্যে/ বিনামূল্যে ব্রিদিং /ফেস মাস্ক যোগান /সরবরাহ, উৎপাদন /আমদানি করতে সরকার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানতে চাই।
**বাংলাদেশ আক্রান্ত হলে সরকার কিভাবে প্রতিরোধ করবে সেটা জানা জরুরি,কারন বড় শহর অবরুদ্ধ করার আগে আমাদের খাদ্য মজুতকরণ, পানি গ্যাস এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা উচিৎ নইলে একটি বিশৃঙ্খলা পূর্ণ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সর্বশেষ বলতে চাই এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে এক বড় দুঃসময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
লেখক :
মোঃহাসানূর রহমান রিজভী
হেলথ,সেফটি এন্ড এনভায়রনমেন্ট অফিসার
ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিঃ
ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রজেক্ট
সিপি-৩ এবং সিপি-৪
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৫