এক দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমার টাইম লাইনে একটি ভিডিও আসে।ভিডিওটি দেখে আমি শিউরে উঠি।বিষয়বস্তু ছিলো বগুড়ার একটি পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে গ্রফতার হওয়া তরুণ তরুণীর লাঞ্চনা ও অপমানের চুড়ান্ত ব্যাবস্থা। আমি ভিডিওটি দেখে ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম।তবে সেদিন সে ভিডিওতে আনন্দ প্রকাশের মানুষও কম ছিলো না।
তারপর থেকেই ভাবছি কিছু একটা করা দরকার,কিছু একটা করা দরকার।কি করব,কিভাবে করব করতে করতেই দেড় দুই বছর চলে গেল।এবং বিশ্বাস করুন এই ঘটনা আমার মনটাকে সবসময়ই পীড়া দিচ্ছিল।
কিন্তু আমার কিছু করার নাই।কারন আমি এ দেশের একজন সাধারন মানুষ।কোনমতে দুটি ডালভাতের যোগার করতেই আমার দফা রফা হয়,সময় সুযোগ পেলে ব্লগে এসে নিজের দূঃখ, রাগ,অভিমান শেয়ার করে ব্লগার ভাইদের সমবেদনা পাই।দেশের প্রশাসন নীতিনির্ধারকদের কাছে আমার কথা পৌছায় না,জীবনে পৌছুবে সে সম্ভবনাও ক্ষীন।তবে আমি ব্লগে লিখতে পারতাম।জানি কোন লাভই হতো না।তবুও আমার লিখে প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিলো।এবং আমি আজ তাইই করলাম।আমি বগুড়া পার্কে রেইড চালিয়ে তরুণ-তরুণীর (বাংলাদেশের সন্মানীত জনগন) ভিডিও ধারন করে অপমান করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন,অনেক দেরীতে আপনাদের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো আজ কেন??
কারন,আজ আবারো একটি এমন দূঃখ জনক ঘটনা ঘটেছে বরিশালে।কলেজ ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেবার দায়ে একজন সতের বছরের নাবালিক কলেজ ছাত্র কে পনের দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং পাঁচজন ছাত্রীকে মূচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।যাক আমাদের খুশি হওয়া উচিৎ এটা ভেবে যে পাঁচ জন ছাত্রীকে শুধুমাত্র মুচলেকাতেই রেহাই দেওয়া হয়েছে!
আমি আইনের ছাত্র নই।বাংলাদেশের আইন কানুন সম্পর্কে আমার ধারনা নেই বল্লেই চলে। আমি এতোদিন জানতাম নাবালিগ কেউ যদি অপরাধ করে তাকে দেওয়া হয় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে।কিন্তু আজ দেখলাম একেবারে জেলেই ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।যাক তারচে বরং আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করি যে পাঁচ জন ছাত্রীকে শুধুমাত্র মুচলেকাতেই ছাড় দেওয়া হয়েছে।তাতে আমাদের মস্তিষ্ক জটিল বিষয় নিয়ে চিন্তা করে ক্লান্ত হওয়া থেকে রেহাই পাবে।
তবে আমার শ্রদ্ধেয় সকল ব্লগারদের বলছি,আমার এ ব্লগ অনেকেই পড়বেন আমি জানি।আপনারা কেউ যদি আইনের লোক হয়ে থাকেন অথবা বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে ধারনা থাকে অথবা আপনার পরিচিত এমন কেউ থেকে থাকে যে বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখে প্লিজ আমাকে কিছু কোশ্চেনের উত্তর ম্যানেজ করে দিন:
১.পার্কে বন্ধু/প্রেমিকা নিয়ে বসে থাকা, বাংলাদেশের আইনে এর অপরাধ, ধারা এবং শাস্তি কি??
২.পার্কে গার্লফ্রেন্ড/বন্ধু /প্রেমিক-প্রেমিকা যদি প্রকাশ্যে গায়ে হাত রাখে অথবা চুম্বন করে,বাংলাদেশের আইনে অপরাধ,ধারা এবং শাস্তি কি??
৩.স্কুল/কলেজ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে পার্কে বসে আড্ডা দিলে,বাংলাদেশের আইনে অপরাধ,ধারা এবং শাস্তি কি??
৪.অসামাজিক কার্যকলাপের বিবরন,ধারা এবং শাস্তি কি??
আমি শিওর বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের দেশের আইন নিয়ে কোন ধারনা নেই।কোথায় কখন কি কারনে আপনি বাংলাদেশের আইনে আটক হতে পারেন অথবা আপনার বিরুদ্ধে জরিমানা /মুচলেকা/কারাদণ্ড হতে পারে সে ধারনা সরকার থেকে দেওয়া হয় নাই।
আইন বাস্তবায়নের আগে সাধারন জনগনকে আইন সম্বন্ধে ধারনা দিন।লিফলেট বিলি করুন।পোস্টার লাগান।নির্ধারিত স্থানে বিলবোর্ড লাগানোর ব্যাবস্থা করুন।
আর অতিদ্রুত কলেজ ফাঁকি দিয়ে আড্ডার দায়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা ছাত্র কে মুক্তি দিন।
স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি ফাঁকি দিয়ে ছেলে মেয়েরা আড্ডা দিবে এটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়।এজন্য স্কুল কলেজের নিজস্ব আইন আছে, ডাইরেক্ট জেলহাজতে প্রেরণ করা আমার মানতে কষ্ট হয়।তবে আমার আবেগ দিয়ে দেশ চলবে না।যদি বাংলাদেশের আইনে এমন ধারা থেকে থাকে তবে আপনাদের জানাই সাধুবাদ।
যদি ভবিষ্যতে কোন একসময় দেখেন এ দেশে মানুষের মনে দেশপ্রেম কমে গেছে,তখন অবাক হবেন না দয়া করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:১৫