মুসলমানদের এক রক্তিম অধ্যায়, যার অর্ধেকটা আমরা জানি (প্রথম পর্ব)
কারবালার ঘটনার প্রেক্ষাপট হজরত মুহাম্মদ (সা) প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা) হজরত আলীর মৃত্যুর পর মিসর ও সিরিয়া ছাড়া অন্যান্য সমস্ত অঞ্চলের খলিফা বলে স্বীকৃত হয়েছিলেন। অপরদিকে জেরুজালেমের মসজিদে মু’য়াবিয়া নিজেকে ইসলাম জগতের খলীফা বলে ঘোষনা করেন। কিন্তু ছয় মাস পরই ইমাম হাসান সেচ্ছায় মু’আবিয়ার আনুকূলে খিলাফাৎ পরিত্যাগ করে সপরিবারে মদীনায় বসবাস শুরু করেন ৪০ হিজরীতে।
এই ঘটনা সম্পর্কে মহানবী (সা) ভবিষ্যত বানী করেছিলেন ‘আমার মৃত্যুর পর খিলাফাৎ ত্রিশ বছর স্থায়ী হবে, তারপর মুসলিম বিশ্বে সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হবে।’ এই হাদিস অনুসারে ইমাম হাসানের খিলাফাৎ লাভের ছয় মাস পরে ‘খিলাফাতের ত্রিশ সময় কাল বছরপূর্ণ হয়।’ সরল হৃদয় হাসান মু’আবিয়ার কাছে নিম্ন লিখিত শর্তে খিলাফাৎ পরিত্যাগ করেছিলান।
১। মু’আবিয়া হাসানের পক্ষে খিলাফাতের দ্বায়ীত্ব পালন করবেন
২। মু’আবিয়া কাউকেও পরবর্তী উত্তরাধীকারী মনোনীত করতে পারবেন না।
৩। মু’আবিয়ার মৃত্যুর পর হাসানের কনিষ্ঠ ভাই হুসাইন খিলাফাৎ লাভ করবেন।
৪। হাসানের পারিবাক ব্যায়ের জন্য কুফার রাজকোষ থেকে বার্ষিক পঞ্চাশ দিরহাম নিয়মিত হারে বৃত্তি প্রদান করবেন।
মু’আবিয়া শর্ত সমূহ স্বীকার করে পারস্যের একটি জিলার রাজস্ব ইমাম হাসানকে অতিরিক্ত প্রদান করতে অঙ্গীকার করলেন। (Vide- Hitti’s History of the Arabs-P.190)
কিন্তু সমস্যার শুরু হয় ৪৯ হিজরীতে (৬৬৯ খীষ্টাব্দ) ইমাম হাসান ৪৭ বছর বয়সে মদীনা শহরে শত্রু কতৃক বিষ প্রয়োগে নিহত হন এবং তাকে জিন্নাতুল বাকি গোরস্থানে দাফন করা হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের ধারনা ও স্থির বিশ্বাস মু’আবিয়ার ষড়যন্ত্রেই তিনি নিহত হন। (Ibid-p190)
আর ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইমাম হুসাইন উমাইয়াদের বুরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেন। যা একদম কল্পনা প্রসূত ছাড়া আর কিছুই না। হাসানের মৃত্যুর প্রায় ১০ বছর পর ইমাম হুসাইন নিহত হোন।
খ্রীষ্টাব্দ ৬৭৬ ও হিজরী ৫৭ সনে খলীফা মু’আবিয়া স্বীয় পূত্র ইয়াযিদকে সম্রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী বলে ঘোষনা করেন এবং প্রাদেশিক শাসককর্তা ও রাজ্যের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগনকে কৌশলে ইয়াযিদের আনুগত্য স্বীকার করতে প্ররোচিত করেন। ইসলামের সনাতন নির্বাচন প্রথার বিরুদ্ধচারন ও ইমাম হাসানের সঙ্গে প্রতিশ্রুত সন্ধিশর্ত ভেঙ্গে ফেলায় ইমাম হোসেন, আবু বক্কর (রা) এর পুত্র আব্দুর রহমান, খলীফা উমরের পুত্র আব্দুল্লাহ এবং আব্দল্লাহ ইবনে যুবাইর মু’আবিয়ার কাজের প্রতিবাদ জানান। মু’আবিয়া একহাজার সৈন্য সহ মদীনা এবং মক্কা গিয়ে বিদ্রোহী নেতৃবর্গকে বাধ্য করার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু অন্য কারনে তাকে অচিরেই দামিস্ক ফিরে আসতে হয়।
৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে উমাইয়া বংশীয় প্রথম খলীফা দামেস্ক নগরে প্রাণ ত্যাগ করেন। তার পুত্র ইয়াযিদ সিংহাসনে আরোহন করেন। অপর দিকে সন্ধিশর্ত অনুযায়ী ইমাম হুসাইন খলীফা পদ দাবী করেন। ইয়াযিদের নাচ-গান ও মদ্যপান ছিলো তার দৈননন্দিন কাজ। আবু কায়স্ নামের তার এক পোষা বানরের সঙ্গে পালাক্রমে তিনি মদ পান করে আমোদ উপভোগ করতেন। ঐ বানরকে সুন্দর পোষাকে সাজিয়ে, গাধার পিঠে বসিয়ে তিনি রাজপথে অশ্বারোহন করতে ভালোবাসতেন। একারনেই ইরাকবাসীরা তাকে খলীফা হিসেবে মনতে নারাজ হয়।(Vide- Hitti’s History of the Arabs-P.227)
ইরাকবাসীর সমর্থনে আশ্বাস পেয়ে ইমাম হুসাইন (রা) সপরিবারে মদীনা থেকে ইরেকের রাজধানী তৎকালীন কূফা যাত্রা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা মরুভূমিতে পথ হারিয়ে কূফার পচিশ মাইল দূরবর্তী ‘কারবালা’নামক স্থানে উপস্থিত হলে ইয়াযিদ সেনাপতি উমর ইবনে সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস চার হাজার সৈন্যসহ হুসাইনকে ফুরাত নদীর তীরে অবরুদ্ধ করেন। মরুভূমির উত্তপ্ত বায়ূ এবং শত্রুদের অবরোধের পানীয় জলের অভাবে কষ্টভোগ করে মুষ্টমেয় অনুচর সহ ইমাম হুসাইন অতি নির্মমভাবে নিহত হন।
এই লোমহর্ষক বিষাদপূর্ণ স্মৃতি চিরস্মরনীয়। হজরত আলী ও তার বংশধরদের প্রতি ভক্তের আতিশয্যে শিয়া মুসল্মানগন প্রতি বৎসর মহর্রম মাসের প্রথম দশ দিন পর্যন্ত শোক প্রকাশ করে থাকে। কারবালার যুদ্ধে ইয়াযিদের রাজনৈতিক বিজয় লাভ হলেও হুসাইন এবং তার অনুচরগণের প্রানের বিনিময়ে দুনিয়ার মুসলমানের হৃদয় রাজ্য জয় লাভ হয়। হজরত আলী অপেক্ষা ইমাম হুসাইনের হত্যায় মুসলিম সমাজ একতা সমধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হজরত মুহাম্মদের (স) থেকে নবুয়াত সমাপ্ত হলে পরবর্তীকালী হজরত আলীর বংশধরদের ‘ইমামতী’-এর প্রশ্ন নিয়ে নতুন নতুন মতবাদের উদ্ভব হলো।
কূফার শাসন কর্তা আব্দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ শিমার নামক সেনাপতির সঙ্গে ইমাম হুসাইনের দুই শিশু পুত্র, ও শহীদ ইমামের ছিন্ন মস্তকসহ পরিবারের মহিলাদের ইয়াযিদের নিকট প্রেরণ করেন। এই কথা কথিত না যে, ইমাম হুসাইনের ছিন্ন মাথা দেখে ইয়াযিদ অত্যান্ত মর্মাহত হন। মুসলিম জাহানের ক্ষুদ্ধতা ও রাষ্ট্র-বিপ্লব ও অরাজকতার আশঙ্কা করে ইয়াযিদ হুসাইন পরিবার বর্গকে সসন্মানে মদীনায় প্রেরন করেন। এবং মৃতদের কারবালার প্রেন্তরে সমাহিত করার আদেশ দেন।
এর পর থেকে যে ঘটনা কালের বিবর্তনে ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গিয়েছে সেই ইতিহাস এখন তুলে ধরবো আমি।
৬৮০খ্রীষ্টাব্দে হুসাইন (রা) নিহত হলে মক্কা ও মদীনাবাসীর সমর্থনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর সমগ্র হিজযে খলীফা বলে ঘোষিত হন।
৬৮৩ খ্রীষ্টাব্দে দামেস্কে খলীফা ইয়াযিদ আফ্রিকা-বিজয়ী বীরবর উক্বার (এক চক্ষু বিশিষ্ঠ) পূত্র মুসলিমের নেতৃত্বে সিরিয়ান খ্রীষ্টান ও মুসলমানদের দ্বারা গঠিত একদল সৈন্য হিজাযের খলীফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন, মদীনার পূর্ব দিকে অবস্থিত হারা প্রান্তরে মুসলিমের কাছে যুবাইরের সেনাদল পরাজিত হয়। দুর্দান্ত সিরিয়ান সৈন্যরা তিনদিন পর্যন্ত মদীনা নগর লুট-পাট করে। এর মধ্যে হটাৎ করেই সেনাপতি মুসলিম প্রাণ ত্যাগ করেন স্বাভাবিক ভাবে। আর মদীনার এই যুদ্ধ সম্পর্কে মুহাম্মদ (সা) এর সুস্পষ্ট ভবিষ্যত বানী হাদীস ‘মিস্কাত শরীফ’-এর চতুর্থ খন্ডে ‘কিতাবুল ফেতন’-এ ব্যাখ্যা করা আছে। সিরিয়ান সৈন্যরা মদীনা লূটের সময় সেনাপতি মুসলিমের আকস্মিক মৃত্যু হয় এবং প্রায় সেই সময়েই রাজধানী দামেস্কে সম্রাট ইয়াযিদের মৃত্যুও ঘটে। এই বিষয়ে চিন্তা করলে হজরতের হাদীসে__ ‘যে ব্যাক্তি মদীনার অবমাননা ও ক্ষতি করবে, সে জলে মিশ্রিত লবনের ন্যায় বিলুপ্ত হবে। স্মৃতিপথে উদিত হয়।’
মুসলিমের মৃত্যুর পর সহকারী সেনাপতি মদীনা পরিত্যাগ করে মক্কা আক্রমন করে। মেন্জনিক যন্ত্রযোগে আগ্নিবান নিক্ষেপ করে তারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত মক্কা আবোরোধ করে রাখে। ঐ অগ্নি নিক্ষেপের ফলে কাবা ঘরের গেলাফ (আচ্ছাদন) পুড়ে যায়। ইতোমধ্যে ইয়াযিদের মৃত্যুর কারণে সিরিয়ান সৈন্যদল মক্কা প্রস্থান করেন।
আপনাদের কি ধারণা প্রতিশোধ শেষ। বন্ধুরা এটা কেবল এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে শুরু। চেয়ারে শক্ত হয়ে বসুন দ্বিতীয় পর্বের জন্যে।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন