সমস্ত প্রশংসা সেই মহান জাতপাক রাব্বুল আলামীনের, যিনি সৃষ্টি করেছেন এ বিশ্ব মহিমন্ডল এবং সাথে তাঁর হাবিব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতবা (সাঃ) এবং তার নায়েবে রাসুলগনের প্রতি যারা হলেন বেলায়েতের গগনে উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক, মানব জাতির দিশারী তথা পতিতপাবন।
ইহা পড়িবার পুর্বে আমার লেখা পুর্বের পর্বগুলো আগে পরে নেবার অনুরোধ রইল। তাহলে বিজ্ঞ পাঠকদের পড়িতে সুবিধা হবে। পুনরায় বলিতেছি ইহা একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তা ধারনা, কাউকে আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, যেটা সত্য মনে হয়েছে তাই প্রকাশ করিলাম। অতি আস্তিক; ধর্মভীরু, এবং যারা সব সত্য জেনে গেছেন, সকল কিছুই পূর্বে বুঝে গেছেন, জেনে গেছেন এবং সেখানেই স্থিত আছেন, হাজার সত্য হোক পরিবর্তন হবেনা, দয়া করে তারা পড়বেন না। যদিও তারাও বিজ্ঞ পাঠক। সবাইকেই সন্মানের সাথে আমার লেখা শুরু করছি।
অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে নবী এন্তেকাল করিতেছেন। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সত্যের বিজয়-মুকুট উন্মতের মাথায় পরাইয়া দিয়া তিনি ইহধাম ত্যাগ করিবেন। কিন্তু তার এই ইসলামকে এইরুপ করুন অবস্থায় রেখে যেতে তিনি দুঃখ-সাগরে নিমজ্জিত হয়ে পড়লেন। অন্তিম শয্যায় তাঁরই উন্মতগণ তাঁরই মুখের উপর তাঁরই নির্দেশ অমান্য করল।
যারা ইসলামের দরদী সেজে রাসুল (সাঃ) এর ইচ্ছার বিরোধিতা করেছে, উন্মতের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি করেছে- হযরত ওমর (রাঃ) ও তার দলবল যে ভাষনটি প্রয়োগ করেছেন- “ইন্না রাসুলুল্লাহ ইয়াহজার”-মানে নিশ্চয় রসুল প্রলাপ বকছেন [আল মুরাজায়াতঃ ৩২৩ পৃষ্ঠা]। মেশকাতের ৫৭১৪ নং হাদিসে বর্নিতঃ “আহাজারাজ তাফহামুন?” তিনি কি প্রলাপ বকছেন? বোখারী ৩য় খন্ডের ২৮২৫ নং হাদিসে ভাষ্য হ্লঃ “হাযারা রাসুলুল্লাহ” মানে রাসুলুল্লাহর বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পেয়েছে। আর যখন হযরত ওমর (রাঃ) হতে হাদিসটি বর্নিত হয়েছে, তখনই ইহা সরলীকরন করে প্রকাশ করা হয়েছে “ ইন্না নাবীয়া ক্বাদসালাবা আলাইহিম ওয়াজি” মানে- নিশ্চয় নবীর ব্যাথ্যা তীব্র হয়েছে। এভাবে আবু বকর হতেও যেসকল হাদিস বর্নিত হয়েছে তার ভিতরেও সরলীকরনের একটা ছাপ খুজে পাওয়া যায়। ঠিক ঐ দিন হতে ইসলাম প্রথম দ্বিখন্ডিত হল। এভাবে ইসলাম খন্ডে খন্ডে ভাগ হয়ে আজ সহস্র ধারায় বিভক্ত হয়ে তিয়াত্তর তালির পোশাকে আবৃত হয়ে আছে মোহাম্মদী ইসলাম। হযরত ওমরের (রাঃ) দ্বন্দের কারণে, ঝগড়ার কারনে রাসুল (সাঃ) শেষ ইচ্ছা মোতাবেক ওছিয়ত লিখা হল না। আর যারা একেবারেই মানতে নারাজ, বুঝতে নারাজ, সব বুঝে গেছি এই ধরনের; অন্ততঃ এতটুকু স্বীকার করবেন যে, ওছিয়ত নামা না লিখাতে চিরদিনের জন্য একটি প্রচন্ড মত বিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেল। উন্মতে মোহাম্মদী দু’দলে বিভক্ত হওয়ার সূচনা বা গোড়া পত্তন হলো।
মেশকাত শরীফের ১১তম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় “অছিয়ত নামা” লিখার হাদিসটির ব্যাখ্যায় অনুবাদক আফলাতুন কায়সার সাহেব বলেছেনঃ-
“ওলামায়ে কেরামের মতে রসুল (সাঃ) এ ক্ষেত্রে দ্বীন ইসলামের অসম্পুর্ন নতুন কোন বিধান লিখে দিতে চাননি। কারনঃ ইহার পূর্বেই “আল ইয়াওমা আক্মালাতু লাকুম দীনাকুম” আয়াত নাজিল হয়ে গিয়েছিল। হয়ত পূর্বের কিছু সংক্ষিপ্ত বা প্রচ্ছন্ন বিধানের ব্যাখ্যা প্রদান করিতে চেয়েছিলেন...এ রহস্যটি অনেকেই বুঝিতে না পারায় বিতর্কের অবতারনা হয়েছিল...।
মেশকাতের উক্ত খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় অনুবাদক সাহেব আরও বলেছেনঃ
“ওছিয়ত নামা নিয়ে শীয়ারা বলে থাকে যে, রসুল (সাঃ) আলী (আঃ) এর খেলাফত বিষয়ে লিখতে চেয়েছিলেন। হযরত ওমর একথা জেনেই লিখার বিরোধিতা করেছিল এবং ইহা নিছক ধারনা মাত্র। কোরান হাদিস ও ইতিহাসে এমন কোন দলিল নাই”।
এ সমস্ত কট্টর মৌলবাদী খারেজী মৌলবীগন যে, উমাইয়া-আব্বাসীয়া, রাজা-বাদশাদের এবং তাদের পোষা বিকৃতি চিন্তাধারার মোল্লা মৌলবীদের প্রেতাত্নার বহিঃপ্রকাশ, তা তাদের বক্তব্য হতেই স্পষ্ট বুঝা যায়। ইনাদের পূর্ব পুরুষ এবং ইনারাও যুগে যুগে সরকারী ইসলামকে মোহাম্মদি ইসলাম বলে চালিয়ে আসছে, দইয়ের নাম করে টাটকা চুনের গোলা দিচ্ছে মানুষের পাতে। ইনাদের মধ্যে পাওয়া যায় বড় বড় আলেম, গবেষক, বুদ্ধিজীবি, চিন্তাবীদ; যাদের এ ধরনের চন্তা-গবেষনার ফাদে পড়ে ইসলাম তিয়াত্তর তালির পোশাক পড়ে জোকার সেজে বসে আছে এবং আল্লাহ, নবী ও জীবরীল আজ মহা চিন্তার ভিতর পড়ে গেছে। আল্লামা ইকবাল তাই বলেছিলেনঃ “মৌলবী সাহেবদের আমার সালাম জানিয়ে বল তারা কোরানের যে অর্থ করেছে তাতে আল্লাহ ও জীবরীল তাজ্জব বনে গেছে”।
কথিত কায়সার সাহেবের যে কোরান-হাদিসের এবং ইতিহাসের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারনা নেই, তা উক্ত আলোচনায় হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেল। তিনি শুধু “ইলমুল কালাম” [আক্ষরিক বিদ্যা] শিক্ষা করেছেন ইলমে নব্বী সম্পর্কে সামান্য ধারনা নেই। মনে হয় কোন সত্যকার নবীর প্রতিনীধির সংস্পর্ষে যাননি অথবা গোলাবী ওহাবী মার্কা পীর বা তথাকথিত নবীর প্রতিনীধিদের কাছে গিয়েছিলেন, আর বানোয়াট কিচ্ছার ফল কুড়িয়েছেন। এই আক্ষরিক বিদ্যার বড়াই করা আলেমদের উদ্দেশ্য করে মাওলানা রুমী (রাঃ) বলেছেন- গাধার পেশাবে একটি ঘাসের উপর বসে মাছি সমুদ্র যাত্রা করে আসার মত। মাছি ভাবে গাধার পেশাব হল সমুদ্র, আর ঘাসের পাতা হল একটি জাহাজ এবং মাছি হল সুদক্ষ এক নাবীক। যারা কথায় কথায় এই আক্ষরিক কোরান ও হাদিস নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি করে তাদের সাথে এই মাছির তুলনা দিয়েই তিনি এই কথা বলেছিলেন। এরা অখন্ড এক অসীম কালকে চার দেয়ালের ভিতর, এক বইর ভিতর আবদ্ধ করে রাখে। এদের ভিতর সামান্য তম এলমে নাব্বীর জ্ঞান থাকত তাহলে আইনুল ইয়াকিনে দেখতে পেত কোরান ও আহলে বায়াত একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত।
যাইহোক, রাসুল (সাঃ) ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দ্বিপ্রহরের পরে ইন্তেকাল করেন। তিনি কি অবস্থায় ইন্তেকাল করেন সে বিষয় বিস্তর মতভেদ রয়েছে। এর কারণ উমাইয়া বংশের মুয়াবীয়া তৎপুত্র ইয়াজিদ, এবং আহলে বাইয়েতের অন্যান্য বিদ্বেষীগন, শত্রুগন এখানেও কসাইয়ের মতো ছুরী চালিয়েছে। বোখারী এক বর্ননায় বলা হয়েছে, হযরত আয়েশার গলা ও তুথনীর মাঝে রসুল (সাঃ) ইন্তেকাল করেন। অন্য বর্ননায় পেট ও বুকের মাঝে ইন্তেকাল করেন, এবং আয়েশা মেছাক চিবিয়ে দিয়েছিল দাত মাজার জন্যে। [বোখারী সুত্রে ১১তম খন্ডের ৮০ পৃষ্ঠায় ৫৭০৭ নং হাদিসে হযরত আয়েশার বক্তব্য দ্রষ্টব্য]। আবার মেশকাতের ৫৭১২ নং হাদিসে একই আয়েশা হতে বর্নিত হাদিসে বলা হচ্ছে রসুল (সাঃ) নাকি তার কোলের উপর মাথা রেখে দেহত্যাগ করেছেন। আবার অন্য আর একটি বর্ননায় পাওয়া যায় ঠিক একই আয়েশা হতে বর্নিত- তিনি বলছেন হযর রসুল (সাঃ) আমার পেট ও বুকের মাঝে ইন্তেকাল কএরছেন। একই জনের বিভিন্ন মতবাদ পাওয়া যায়। জানিনা বিজ্ঞ পাঠক কোনটিকে সত্য নিবে। আমার ধারনা মতে ইহা একদম ভুল। ইহা আমার ধারনা। কেননা একই জনের বিভিন্ন মত। আর ইহা শুধু তিনি নিজেই বর্ননা করেছে। ইহা হল নবী বংশ বিদ্বেষী, শত্রু এবং আবু বকর(রা) ও আয়েশা (রা) এর প্রেমিক গন এই ধরনের হাদিস লেখাটা স্বাভাবিক।
“কানযুল উন্মাল” ৪র্থ খন্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় ১১০৮ নং হাদিসে বর্নিত আছে যে, ইবনে আব্বাছ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি দেখছেন, ওফাতের সমউ রসুল (সাঃ) এর মাথা কার কোলে ছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আলীর বুকে ভর দিয়েছিলেন। তাকে বলা হলোঃ উরওয়া হযরত আয়েশা(রা) থেকে বর্ননা করেছেন যে, নবী (সা

ইবনে সা’দ শা’বী হতে বর্ননা করেছেন, রাসুল (সাঃ) আলী (আঃ) এর কোলে মাথা রেখে ইন্তেকাল করেন এবং তিনি তাকে গোসল করান।
আবার “নাহজুল বালাগার”১৯৬ নং খুৎবায় স্বয়ং আলী (আঃ) হতে বর্নিত আছে যে, তিনি বলেনঃ রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের সমউ তাঁর পবিত্র মাথা আমার বুকের উপর ছিল এবং তাঁর পবিত্র নিঃশ্বাস আমার হাতের তালুতে লেগেছিল এবং উহা আমার মুখমন্ডলে লাগিয়েছিলাম। এবং আমি তাকে শেষ গোসল করিয়েছিলাম...।
“তাবাকাত” গ্রন্থের ২খন্ডের ৫১পৃষ্ঠার সুত্রে “আল মুরাযায়াত” গ্রন্থের ২৯৫পৃষ্ঠায় বর্নিত হয়েছে।
হযরত ওমর (রাঃ) হতে যখন কেউ রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকাল কালীন ঘটনা জানতে চাইত, তখন তিনি বলতেন, “আলীকে জিজ্ঞাসা কর, সে এ কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিল”।
“তাবাকাত” গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৫১ পৃষ্ঠায় হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী হতে বর্নিত হয়েছে যে, কাবউল আহবার হযরত ওমর (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন নবী (সাঃ) এর শেষ কথা কি ছিল? হযরত ওমর জবাবে বললেন,”আলীকে প্রশ্ন কর”। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হযরত (সাঃ) কে গোসল কে করিয়েছিল তখন ওমর (রাঃ) বলেছিলেন “আলীকে জিজ্ঞাসা কর”।
এ বিষয়ে আরও অনেক ঘটনা আছে যা বললে মোটা একটি বইয়ের মতই হবে, একদম সংক্ষিপ্তে বর্ননা করিঃ
বিরোধীদল অন্তর-বিপ্লব শুরু করে দিল, যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নবীর নিয়োজিত প্রতিনীধি মাওলা আলীর হস্তাগত না হয়। বিরোধী দল সমস্ত মদিনার ভিতরে ভিতরে দল পাকাইয়া ফেলিল আলীর বিরুদ্ধে। এমনি পরিস্থিতির মধ্যে নবী এন্তেকাল করেছেন। এন্তেকালের সময় বিরোধি দলের নেতা ওমর নবীর পার্শ্বে উপস্থিত ছিলেন না। আবু বকর ও ওসমানও তথায় ছিলেন না। তারা দল সংগঠন করার ব্যপারে জনমত সৃষ্টি করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। রসুলুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ পাবার পর দুজনের ভিতরে প্রথমে ওমর আসিয়া উপস্থিত হয় এবং তিনি তরবারি উন্মক্ত করে উন্মত্ত পাগলের মত তরবারী ঘুরাইতে ঘুরাইতে বলিতে লাগিলেন- রসুলুল্লাহ (সাঃ) এন্তেকাল করিতে পারেন, একথা আমি বিশ্বাস করিতেই পারি না, ইহা অসম্ভব ব্যপার। যে বলিবে রসুলুল্লাহ এন্তেকাল করিয়াছেন তাকে আমি কতল করে ফেলব...ইত্যাদি নানারুপ প্রলাপ বকিতে করিলেন। তবে এই ঘটনায় যারা ওমর প্রেমিক আছেন তারা বলে থাকেন ইহা নবীর প্রেমে পাগল হয়ে দিশেহারা, উন্মত্ত পাগল হয়ে গিয়েছিল, তিনি মৃত্যু শোকে অভিভুত হয়ে একথা বলছেন, তিনি নাকি সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু পরক্ষনেই যখন হযরত আবু বকর (রাঃ) আসলেন তখনই চুপ হয়ে গেলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) রসুল (সাঃ) কে দেখে মসজিদের মিম্বরে উপবেশন করে শোকার্ত জন মন্ডলীকে লক্ষ্য করে একটি বক্তব্য দিলেন, তাতে তিনি আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সাঃ) এর প্রশংসা করলেনঃ-
“যারা হযরত মোহাম্মদের উপাসনা করতে তারা আজ অবগত হোক যে, তার মৃত্যু হয়েছে; এবং যারা আল্লাহর উপাসনা করতে তারা অবগত হোক যে, আল্লাহ পাক জীবিত আছেন, কখনও তাঁর মৃত্যু হয়না”(৩-১৪৪ দ্রষ্টব্য)।
পরবর্তি কালে এই বাক্যটি করানে অন্তর্ভুক্ত করা হইল, যদিও সেই সময়ে মসজিদে উপস্থিত জনগণের কাহারো ইহা করানের বাক্য বলিয়া জানাই ছিল না। এই জন্য কোরানের ভাষ্যকরগণ বলেন যে, খলিফা আবু বকর ইহা কোরানে ঢুকাইয়া দিয়াছেন।
ব্যপারটা হল উক্ত আয়াত সম্পর্কে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন যা বুঝে উঠতে আমি অক্ষম- কেননা আল্লাহ কোরানে বলছেনঃ যারা আল্লাহ ও রাসুলের ভিতর পার্থক্য করে, তারা কাফের”(সুরা নিসাঃ১৫০-১৫২)। আবার যে রসুল (সাঃ)-কে নিজের প্রানের চেয়ে বেশী মহব্বত করতে না পারল সে মুমিন হতে পারবেনা, তাহলে রাসুল (সাঃ) ব্যতিত আল্লাহর ইবাদত হয় কিভাবে আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। ইহা পাঠক সমাজের কাছে চিন্তার বিষয় হিসাবে নিবেন আশা রাখি। কারণ সেত মুমীন-ই হতে পারছেনা(কোরান)।
তাহলে হযরত আবু বকরের (রাঃ) এর এই ভাষন হতে বুঝা যাচ্ছে তিনি নবী (সাঃ) কে বেশি ভালোবাসতেন না, কেবল আল্লাহরই উপাসনা করতেন।
মুলত রসুল (সাঃ) কে একমাত্র মাওলা আলী (আঃ) দর্শন করেছেন, সাথে খুব কাছের কিছু সাহাবা, যাদের ভিতর ওমর (রাঃ) আবু বকর (রঃ)-ইনারা কেউ দর্শন লাভ করতে পারেননি। তারা নবী বলতে, নবুয়্যত খেলাফত বলতে শুধু মাত্র দুনিয়া গত ক্ষমতা দখল বলে মনে করেছে, কেননা এলমে নব্বী তারা পায়নি। তাহলে বলতে পারত না নবী (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন, কেননা সাথে তিনি এটাও বলেছেন আল্লাহ জীবিত। যেখানে একজন ওলীর মৃত্যু হয়না, হতে পারেনা, এবং তাদের মৃত্যু হবে এটাও বলা যাবেনা বলে কোরান একদম জোড় করে আদেশ, নির্দেশ দিয়েছেন(সুরা বাকারা)। সেখানে সারা জাহানের মালিক, সকল নবী, ওলী, পীর ফকির, দেবতা, ভগবান এর এবং সকল কিছুর উপর রহমত স্বরুপ, জগত গুরু তিনি নাকি মারা গেছেন- বলেন এই কথা কি মানা যায়??? আবার এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা নবীকে এত উপরে দেখতে নারাজ, অনেকটা ক্ষিপ্র হয়ে যায়, হয়ত আমার এই লেখা পড়ার পরেও দেখতে পাবেন এরা মন্তব্য করে বসেছে।
যাইহোক, চারিদিকে তখন গন্ডগোল শুরু হল; নবীর ইন্তেকাল নিশ্চিত হয়ে আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) এবং মাওলার বিরোধি দলের অনেকে সাথে কিছু আনসারও রসুল পাক (সাঃ) এর লাশ মোবারাক ফেলে রেখে “বনী সাকীদার” বস্তিতে গিয়েছিলেন খেলাফত লাভ করে খলিফা হবার জন্য। এ ঘটনা বহু গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে বিশেষ করে ঐতিহাসিক গ্রন্থে। কিন্তু কট্টর মৌলবাদ খারেজিদের কোন গ্রন্থে এই ঘটনার বর্ননা পাওয়া যায়না। কুরাইশ বংশের দোহাই দিয়ে হযরত আবু বকর ও ওমর (রাঃ) খেলাফত জবর দখল করেন রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অমান্য করে এবং পরবর্তিতে এ স্রোতধারার কারণে খেলাফত চলে যায় উমাইয়া গোত্রের হাতে। তারা তাদের গোত্রগত প্রতিহিংসার কারনে একই হাশেমী বংশের ভিতর একই সাথে নবুয়্যত ও খেলাফত দেখতে পারেনি।
এখানে ইতিহাস হালকা একটু বলে নেয়া ভালো, কোরাইশ বংশ হতে দুটি শাখা এসেছে-একটি হাশেমী-যা রসুলুল্লাহ (সাঃ), মাওলা আলী (আ) এর গোত্র, অপরটি উমাইয়া গোত্র তথা মোয়াবীয়ার। বহু পুর্ব হতেই এই দুই গোত্রের ভিতর মক্কা, কাবা নিয়ে লড়াই। আরও অনেক কিছু। উমাইয়া গোত্র পুর্ব হতেই জালিম, এই মোয়াবীয়ার মাতা হেন্দা রসুল (সাঃ) এর চাচা হামজার কলিজা ছিড়ে খেয়েছিল।
যাইহোক বনী সাকিদায় যেয়ে তারা আবু বকর (রাঃ) কে খলিফা নির্বাচন করে ফেলল, অনেকেই আবু বকর ও ওমর (রা) কে লম্বা চুড়া বলে, বুজুর্গান বলে, তাদের ফজিলতের কিস্সা গেয়ে, বয়স্ক, সন্মানিত বলেম কুরাইশদের দোহাই দিয়ে, নামাজের ইমামতির দোহাই দিয়ে এক ধরনের নাটক করে তাদের খলিফা করে ফেলল। গনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে , নবী করিম (সাঃ) এর গাদিরে খুমে দেয়া ওয়াদা ভুলে, রসুল (সাঃ) এর নির্দেশ অমান্য করে, নবী (সাঃ) এর লাশ মোবারাক ফেলে, নবী বংশের কারও মতামতের ধার না ধেরে মসজিদে নব্বী ছেড়ে বনী সাকিদায় আবু বকর (রা)-কে খলিফা নিযুক্ত করে ফেলল। তারা আসলে খেলাফত, নবুয়্যত ভেবেছিল পার্থিব কোন ক্ষমতা দখল, আর নবী ও নবী বংশ আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন (আ)-গণকে দুনিয়াদারী মানুষ ভেবেছিলেন, কিন্তু তারা জানেনা সৃষ্টির সুরু এখান থেকে এবং শেষ এখানেই। ইনারাই বেলায়েতের ধারক বাহক...। শিয়ারা আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন (আঃ) কে শুধু জৈবিক দেহের মানুষই ভেবে থাকে।
কিন্তু এদিকে ওমর (রাঃ) এর ভক্তদের ফতোয়া লেখা আছে-“হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খেলাফত ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত; ইহার অস্বীকারকারীগণ কাফের”।
এদিকে মদীনার কিছু আনসার, শোকার্ত ভক্ত গণকে নিয়ে মাওলা আলীর নির্দেশে তিনদিন পর নবী (সাঃ) এর দেহ মোবারাক দাফন ক্রিয়া সম্পাদন করলেন। ঐদিক যেহেতু সহজেই খেলাফত প্রাপ্য নয় তাই তিন দিন কেটে গিয়েছিল। তাই তিনদিন পর মদীনায় প্রবেশের পূর্বেই তারা জানতে পারল নবী (সাঃ) এর লাশ মোবারক দাফন সমাপ্ত হয়ে গেছে।
যারা রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র লাশ মোবারক বে-কাফন ফেলে রেখে বনী সাকীদার সাকিফায় খলিফা বানানোর উদ্দেশ্যে জমায়েত হতে গিয়েছিলেন, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী বলছেনঃ-
চুঁ সাহাবা হুব্বে দুন্য়া দাস্তান্দ
মুস্তফারা বে-কাফন আন্দাখ্তান্দ।
আহলে দুন্য়া কাফিরানে মুতলাকান,
বাক বাকান জাক জাকান্দার বাক বাকান্।
অর্থাৎ-
সাহাবারা দুনিয়ার মহব্বতে ঘিরে
মোস্তফাকে বে-কাফন রেখে কোথায় ফিরে
বে-শক কাফির হেন দুনিয়াদারেরা।
বকাঝকা জানে সব- দুনিয়ার সেরা।
আশা রাখি কেউ মাওলানা রুমী (রাঃ) এই কথা শুনে তাকে আবার কাফের বলে বসবেন না। অনেকেই বলতেও পারেন। অস্বাভিক কিছুই না। আর তাঁর মত এমন একজন মহামানব না জেনে, না বুঝে, বিনা দলিলেই এইরুপ মন্তব্য করতে পারেননা।
হযরত ওমর (রাঃ) রসুল পাক (সা) এর দাফন কাফনের চেয়ে আবু বকরের (রাঃ) খলিফা হবার গুরুত্ব বেশি দিয়েছিলেন তাই সব কিছু রেখে সেখানে তিনি খলিফা করতে গিয়েছিলেন (বোখারী ৬ষ্ট খন্ড)। সাথে এই ঘটনা পাওয়া যাবে বোখারীর ৬৩৫৭ নং হাদিসে। আবু বকর (রাঃ) এর বক্তব্য-
“খুব নাজুক সময় অত্যন্ত তাড়াতাড়ির ভিতরে আমাকে খলিফা নির্বাচন করা হয়েছে (খেলাফতের ইতিহাসঃ ১৬পৃষ্ঠা, বোখারী ৬ষ্ঠ খন্ড)
যাইহোক তাহারা মদীনায় প্রবেশের পূর্বেই জেনে গেছে নবী (সাঃ) এর দাফন কাফন হয়ে গেছে; তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল কবর থেকে রসুলুল্লাহর দেহ পুনরায় তুলে তাদের ইচ্ছামত দাফন করবেন। ইহার উদ্দেশ্য অন্য কিছুই নয়, নেতার দাফন ক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রের নেতার তথা খলিফা আবু বকরের (রাঃ) দ্বারা করা হবে। তাদের এইরুপ সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে মাওলা আলী (আঃ) তাঁর জুলফিকার নিয়ে মাটির কবরের উপরে বসে পড়লেন, তাদের এই কাজে বাধা দেবার জন্য। নিকটে এসে ওমর আবু বকরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “আপনে আমাদের নির্বাচিত খলিফা, আমাদের নির্দেশ দান করুন, আমরা আলীকে আক্রমন করি”। আবু বকর খানিক চিন্তা করে বললেনঃ আমি রসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছিঃ “এমন এক সময় আসবে যখন আলী মাটির ঘোড়ায় সওয়ার হবে, তখন যে তার মোকাবিলা করবে সে কাফের হয়ে মারা যাবেঃ। আমার মনে হয় ইহাই সেই মাটির ঘোড়া। তাই তিনি তার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলেন।
চলবে...।
দোহার
কাদরীয়া পাক দরবার শরীফ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৩৪