দুবাই এর পর থেকেই টেনশনে আছে দিয়া "One raw tea please " বলেই চুপ করে থাকলো কিছু ক্ষন মনে হচ্ছিল হৃদপিন্ডের ধূকপুকানি বুঝি সাদা পুতুলের মত সুন্দরী Air hostess শুনতে পাচ্ছে । JFK air port যত এগিয়ে আসছে তত বুকের ভিতরের তোলপাড় বেরেই চলছে । কি যন্ত্রনা ! কোথায় খুশী হবে না উল্টো টেনশন হচ্ছে । প্লেনের ভিতর চরম ঠান্ডা। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছে তাও হাতের তালু ঘেমে যাচ্ছে,কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে । আরেকটু পরেই প্লেন ল্যান্ড করবে এতদিনের প্রতিক্ষীত শহরে । তিনটা বছর--------------কম দিন নয়। এতদিন পর পাভেলের সাথে দেখা হবে দিয়ার। সেই কবে দেখা হয়েছিল দু জনের কোনো এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় হাই ওয়ের টঙের দোকানের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অবাক দিয়া ভাবছিলো এই মোটা কালো বোকা টাইপ ছেলেটাকে আমি ভালোবাসি ।এর পর কতনা ঝড় ঝন্ঝা ভ্রকুটি দ্বিধা দ্বন্ধ পারি দিতে হলো আজো কেন পাভেল কে দেখেবে ভেবে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠে ?
সেদিনের পর থেকে আর পাভেলের সাথে দেখা হয়নি দিয়ার, দু'জনের মাঝে নানা কারনে ঝগড়া, মান-আভিমান চলেছে কিন্তু দেখা হবার আগেই পাভেল পাড়ি জমায় NY তে। পাভেলের এই হঠাৎ না বলে চলে যাওয়া টা ভাল লাগেনি দিয়ার রাগ করে বহুদিন কথা বলে নি।কিন্তু বেশী দিন রাগ করে থাকতএ পারেনা দিয়া । আস্তে আস্তে বুঝেছে পাভেল সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল । মন কি কেউ আটকাতে পারে ?
নিয়তি ওদের আবার এক করে দিয়েছে। দু জনের মাঝে কত মান-অভিমান, ঝগড়া -ঝাটি তাও কি করে যেন সম্পর্কটা টিকেই গেল, আজকাল দেখা নেই, কথা নেই, শুধু মেইল করে কি টানা ৩ বছর সম্পর্ক রাখা যায় ? যায় skype, viber এর যুগে দুরের মানুষটাকে ও কাছের মনে হয়। গত তিন বছরে এমন কোন দিন নেই মেইল দেয়া নেয়া হয়নি, এমন কোনো ছুটির দিন নেই skype এ কথা হয়নি। তবু সামনা সমানি দেখা যেন এক ভিন্ন অনুভূতি, ভিন্ন আমেজ । পাভেলের খোচা খুঁচিতে ভিসা করে আর ওমনি হুট করে পাভেল টিকেট করে পাঠিয়ে দেয়, এটা নিয়ে ও রাজ্যের অভিমান দিয়ার । পাভেল ট্যাক্সি চালিয়ে টাকা জমিয়ে টিকেট কিনেছে সেই টাকায় যেতে রাজি হয়নি দিয়া মোটামুটি জোর করে পাভেল ওকে রাজি করিয়েছে।
১৫ দিনের অভিসার ওদের , হায়রে কত মিথ্যা বলে আসতে হয়েছে ! বুকের ভিতর একটা কাঁটা খচখচ করছে এত তাড়াহুড়া করে ওকে নিবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন পাভেল ? পাভেলের আসা সম্ভব না ভিসাটা এখনো জট পাকানো বলে, নাহলে পাভেলকেই দিয়া বাংলাদেশে আসতে বলতো। বিশাল বিশাল পুলিশে ঘেরা ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ নিতে বেল্টের দিকে গেল দিয়া, বুক ধরফর করছে ঐ তো সামনে মটু দাড়িয়ে আছে ।
মন চাইছে ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরতে কিন্তু পা তো চলছে না ।
এক গাল হেসে " খুব কষ্ট লেগেছে" জিঙেস করতে করতে হাতের ট্রলি নিয়ে গাড়ীর দিকে এগিয়ে চলল ওরা, গাড়ীতে বাংলা গান পাশে বসে আছে প্রিয় মানুষ ,হাতটা পাভেলের মুঠোয়, বুকের ভিতর কত কথা জমে আছে অথচ দু'জনেই নিরব.......।
++++++
চলবে...........