মেডিকেল কলেজে এবার ভর্তি পরীক্ষা হবে না বরং জিপিএ-এর ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হবে- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেযা হয়েছে যা সারা দেশবাসীর কাছে এখন আলোচনার বিষয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না, মেডিকেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে এ রকম সিদ্ধান্ত আসতে পারে কিংবা অন্যেরা কেউ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারে। বুয়েট এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্য ছাত্রছাত্রীরা যতটুকু পড়াশোনা ইন্টারমিডিয়েট জীবনে পড়ে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি পড়ে কোচিং এর সময় কিংবা ভর্তি পরীক্ষার আগে। এই পরীক্ষাগুলোতে মেধার সঠিক যাচাই হয়। এস.এস.সি/এইচ.এস.সি তে ভাল রেজাল্ট না করতে পারা অনেকেই কিন্তু শ্রম আর মেধার সঠিক সমন্বয়টা ভর্তি পরীক্ষায় দেখাতে পারে। কাজেই আমি মনে করি ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
আবার আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য যে, যেহেতু গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি কাজেই ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্ত নাম্বার মূল্যায়ন করা হবে- সিদ্ধান্ত অনেকটা এরকমই। কিন্তু কে কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে তাতো গ্রেডিং সিস্টেমের আলোচ্য বিষয় নয়। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বরটাও কেউ জানে না। জানার দরকারটাই বা কোথায়, কেননা ৮০ পেলেই যদি এ+ হয় কেউ কেন কষ্ট করে ৯০/৯৫ পেতে চাইবে? একজন ছাত্র হিসেবে আমি মনে করি ৮০ পাওয়া যত কঠিন তার চেয়ে অনেক কঠিন ৯৫ পাওয়া। কাজেই যদি মার্ক- কাউন্ট করতেই হয় তাহলে এখন এটা ঘোষনা দেয়াই শ্রেয় যে, "পরবর্তী এস.এস.সি যারা দেবে তাদের ব্যাচ থেকে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া গ্রেডিং এবং মার্কস এর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি নেয়া হবে"... সেটা অনেকটা গ্রহণযোগ্য হবে, যদিও পুরাপুরি নয়। তবে এক্ষেত্রে দেখা যাবে যে, গ্রেডিং পদ্ধতি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে এবং আবার পূর্ববর্তী পদ্ধতিতেই আমরা ফিরে যেতে থাকবো।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকার এরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে যা কিনা আদতে "ভর্তি দুর্নীতি" ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার এই মতের যারা বিরোধীতা করেন তাদের কাছে আমার দাবী একটাই, যদি এই পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হয় তাহলে ভর্তির পরে দয়া করে একটা সার্ভে করবেন এবং দেখবেন যে, কার ফ্যামিলী ব্যাকগ্রাউন্ড কী, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী ইত্যাদি ইত্যাদি! এখানে ক্ষমতাবানরা লাভবান হবেন এবং ক্ষমতাহীনরা আরো ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এটাই তো সর্বক্ষেত্রে ঘটছে!
জানি আমার এই লেখা হয়তো অনেকের নজরেই আসবে না। কিন্তু আমার মনে হয় এখনো আমাদের হাতে সময় আছে, এখনো ছোট ভাইবোনদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য আমরা একটা প্রতিবাদ অন্তত করতে পারি। কি বলেন, পারি না?