
সিরিয়াস পোস্ট। হাসাহাসি করবেন না এতে পোস্টের ওজন কমে যেতে পারে।
সচরাচর যা হয়। জ্বিনের বাদশা মধ্যরাতে আমার বোনের মোবাইলে কল দিল। এর আগেও নাকি একবার জ্বিনের বাদশা ফোনকল করেছিল, আপু বিরক্ত হয়ে শেষমেষ ল্যাপটপে হৃদয়খানের গান ছেড়ে মোবাইলটা ল্যাপটপের সাউন্ড স্পিকারের কাছে রেখে দিয়েছিল ঘুম। (আহা বেচারা, জ্বিনের বাদশা নিশ্চয়ই খুব শকড হয়েছিল এই ঘটনায়)। পরদিন এটা জানতে পেরে আপুকে বললাম, আবার কল আসলে যেন মোবাইলটা আমাকে দেয় কারণ আমার অনেক দিনের ইচ্ছা জ্বিনের বাদশার সাথে কথা বলব। হৃদয় খানের কোন গানটা বাজিয়েছেন? আপু বলল, চাইনা মেয়ে তুমি অন্য কারও হও… আমি বোবা হয়ে গেলাম। ছিঃ! হৃদয় খানের গান? বালামের নাকি কান্নার একটা গান ছাড়লেও তো চলত, নইলে ‘ও টুনির মা তোমার টুনি…’ টাইপের একটি বহুল জনপ্রিয় গান ছাড়লেও তো ইজ্জতের কিছু একটা অবশিষ্ট থাকত, জ্বিনের বাদশা কী ভেবেছে বলেন তো! আপু, আমার কথা পাত্তা দিল না। আমি দ্রুত আপুর মোবাইল থেকে জ্বিনের বাদশার নাম্বারটা নিলাম এবং কল করলাম। আপু না বুঝে জ্বিনের বাদশার সাথে যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এজন্য সরি বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। ওপাশে রিং বাজছে কিন্তু জ্বিনের বাদশা কল রিসিভ করল না। আর বুঝতে বাকি নেই সে মাইন্ড করেছে। আমি ভীষণ হতাশাগ্রস্থ হয়ে একটি মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম জ্বিনের বাদশা বরাবর।
Hi jiner badsha. Ami apnar bokto. Kal rate apnar call peyeo kotha bolte parini ejonno sorry. Plz call me back.
মেসেজ ডেলিভারী হল কিন্তু জ্বিনের বাদশার কোন খবর পেলাম না। সারাদিন থেকে থেকে বেশ কয়েকবার কল দিলাম, জ্বিনের বাদশা রেসপন্স করল না। আমি টেনশনে আছি, আপুর কাছে এহেন দুর্ব্যবহার পেয়ে উনি হার্ট অ্যাটাক করে ইন্তেকাল করেছেন কিনা কে জানে!
সারাদিন টেনশনে নাকাল হয়ে অবশেষে মধ্যরাতের দিকে জ্বিনের বাদশা ওপাশে কল রিসিভ করলেন।
- হ্যালো!
- (নারী কন্ঠ! জ্বিনের বাদশা কি নারী নাকি জ্বিনের বাদশার পিএ কল রিসিভ করেছে!) হ্যালো! আমি জ্বিনের বাদশার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
- মানে?
- গতকাল রাতে জ্বিনের বাদশা এই নাম্বার থেকে কল করেছিলেন কিন্তু আমার বোন সেটার গুরুত্ব বুঝতে না পেরে ইয়ার্কি করেছে। আমি আসলে জ্বিনের বাদশার কাছে আমার বোনের হয়ে সরি বলার জন্য কল দিয়েছি। জ্বিনের বাদশাকে কি মোবাইলটা একটু দেয়া যাবে?
- কি বলছেন এসব!
- এটা জ্বিনের বাদশার নাম্বার না?
- যত্তসব আবাল কোথাকার! আরেকবার যদি ফোন দেছ দেখিস কি করি!
খট করে ওপাশে মোবাইলের লাইন কেটে গেল। আজব হয়ে গেলাম। আপুকে ডেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বিস্তারিত বললাম এবং জ্বিনের বাদশার মোবাইল নাম্বারটা মিলিয়ে দেখতে চাইলাম। আপু বিরক্ত হয়ে তার মোবাইলই দিয়ে দিলেন এবং নেক্সট টাইম রাতে এভাবে ডেকে ঘুম ভাঙ্গালে আমার কোনপাশের গালে কতজোরে থাপ্পড় বসাবেন সেটাই বুঝিয়ে দিলেন।
আমি নিজের ঘরে ফিরে এসে জ্বিনের বাদশার নাম্বারটা খুঁজে বের করে মিলিয়ে দেখলাম। না, নাম্বার তো ঠিকই আছে। তাই আবার কল দিলাম। প্রথমবার জ্বিনের বাদশার নাম্বার ব্যস্ত দেখাল। পরেরবার ওপাশে রিং বাজল।
- হ্যালো!
- (আবার নারী কন্ঠ!) হ্যালো! আমি জ্বিনের বাদশার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম আসলে…
- বলেন?
- আপনি কি জ্বিনের বাদশা?
- না, আমি জ্বিনের শাশুড়ি!
- ও মাই গড!
- বুঝলাম, ইংরেজি জানেন। তারপর?
- জ্বিনের বাদশার সাথে…
- ফাজিলের বাচ্চা কোথাকার! ইতরামি ছুটায়া দিমু, চিনস আমারে! শা…
এবার আমিই মোবাইলের লাইন কেটে দিলাম। জ্বিনের বাদশার সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম না। মনটা খারাপ। ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছি না কি করা যায়। এসব যখন ভাবছি তখনই আপুর মোবাইলে জ্বিনের বাদশার নাম্বার থেকে কল এল! ওয়াও!
- হ্যালো!
- (পুরুষ কন্ঠ! তারমানে জ্বিনের বাদশা কল দিয়েছে হয়ত!) হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
খট করে লাইন কেটে দিল ওপাশ থেকে। গতকাল রাতে আপুর গলা শুনেছে, আজ আবার পুরুষ কন্ঠ শুনতে পেয়ে জ্বিনের বাদশা ভড়কে গিয়েছে হয়ত। আমি অবশ্য অন্য টেনশন করছি আমার গলা শুনে জ্বিনের বাদশা হার্ট অ্যাটাক করল নাকি কে জানে। অবশ্য বেশিক্ষণ টেনশন করতে হল না। জ্বিনের বাদশা হয়ত মাথায় পানিটানি ঢেলে একটু সুস্থির হয়ে আবার কল দিল।
- হ্যালো! আমি শরীয়তপুর জামিলুল্লাহ শরীফ থেকে বলছি।
- জি। বলেন?
- আমি একটা মাজারের নগন্য কর্মী। আল্লা-বিল্লা করি।
- করেন। এটাতো সওয়াবের কাজ। ইউ আর এ গুড পারসন।
- হুম। আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি…
- (কথা শেষ হওয়ার আগেই) স্বপ্ন দেখা ভালো। তাছাড়া মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একথা বলেছেন। আমিও প্রায়ই স্বপ্ন দেখি…
- (আমার কথা বাগড়া দিয়ে) শোনেন! শোনেন, আমার সাথে ইয়ার্কি করবেন না আপনার অনেক ক্ষতি হবে!
- আই সি! দ্যান টেল মি হোয়াট ইউ লাইক টু টেল মি।
- জ্বিনের বাদশা স্বপ্নে আমাকে হুকুম দিয়েছে আপনাকে কল দিতে।
- বাহ! আমার নাম্বার আপনি পেলেন কোথায়?
- জ্বিনের বাদশা দিয়েছে।
- জ্বিনের বাদশা কিভাবে নাম্বার দিলেন?
- স্বপ্নে।
- উনি কি আপনাকে বলেছেন এটা আমার নাম্বার?
- হ্যা।
- হোয়াট এ গ্রেট মিসটেক! ভাই একটা কাবজাব হয়ে গেছে মনে হয়!
- কি!
- না, মানে, জ্বিনের বাদশার সদয় অবগতির জন্য জানাবেন আসলে এটাতো আমার বোনের মোবাইল নাম্বার, আমার মোবাইল নাম্বার না!
- দেখেন আপনার মত অনেকেই জ্বিনের বাদশার কথা হেসেখেলে ফেলে দিয়ে জীবনে নানা ক্ষতি ডেকে এনেছে।
- এনি এক্সাম্পল! মানে কয়েকটা কিসসা যদি বলতেন, এখন তো কেউ গল্প আই মিন কিসসা ভালো লেখে না।
- ভাই, আপনার কাছে একটা দায়িত্ব থেকে কল দিয়েছি। বাকিটা আপনি বুঝবেন, শোনেন জ্বিনের বাদশা আমাকে বলেছেন আপনাকে কথাগুলো বলা খুবই জরুরি নইলে আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের মারাত্মক ক্ষতি হবে!
- এক মিনিট প্লিজ! একটু লাইনে থাকেন প্লিজ! আমার প্রেমিকা কল দিয়েছে, কল রিসিভ না করলে ও আবার খুব মাইন্ড করে। প্লিজ ভাই একটু, এই এক মিনিট…
প্রেমিকার সাথে দুলাইন মিষ্টি কথা শেষে তাকিয়ে দেখি লাইন কেটে দিয়েছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। বেশ কয়েকবার মিসকল দিলাম। কাজ হল না। এবার কল দিলাম, রিসিভ করল না। মেসেজ পাঠালাম। ইশ! মেসেজ পাঠাতে গিয়ে একটা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি। আমার প্রেমিকার জন্য লেখা একটা ড্রাফট মেসেজ জ্বিনের বাদশার নাম্বারে চলে গেছে। মেসেজ জান-টান ছাড়াও কত কি পার্সোনাল কথা লেখা ছিল! জ্বিনের বাদশা কী ভাববে আমাকে! অবশ্য ভুল স্বীকার করার কিছু নাই কারণ ওটা আমার নাম্বার থেকে গেল আমি তো আপুর মোবাইলে জ্বিনের বাদশার সাথে কথা বলছিলাম। তাই আপুর মোবাইল থেকে নতুন একটা মেসেজ লিখে পাঠালাম।
Jiner badsha sopne apnake ki bolece bolen amake. bhallagche na
কাজ হয়েছে। জ্বিনের বাদশা কল ব্যাক করল।
- হ্যালো!
- ভাই সরি! বেয়াদবি নিয়েন না, আমার প্রেমিকা সুবিধার মেয়ে না আসলে। হেব্বি রাগী, কোন সিচ্যুয়েশন বোঝে না… সে যাই হোক। জ্বিনের বাদশার কথাটা সম্পূর্ণ করেন।
- আপনাকে শেষবারের মত বলছি মন দিয়ে শুনবেন।
- অ্যাঁ! মন দিয়ে শুনব? আমার কানে তো কোন সমস্যা নেই, মন দিয়ে শুনতে হবে কেন?
ওপাশে দীর্ঘ একটা নিশ্চুপ বিরতি, তারপর দীর্ঘশ্বাস। তারপর কথা-
- আমি জামিলুল্লাহ পীরের মুরিদ।
- এই কথা বলতে জ্বিনের বাদশা আপনাকে স্বপ্নে পেরেশানি দিয়েছে। আজব!
- (আমার কথাকে আমলে না নিয়ে) পীরের দরবারে এক লাখ টাকা আল্লার নামে দান করতে হবে নইলে আপনি ও আপনার পরিবারের সদস্যদের জানের ক্ষতি হবে।
- জ্বিনের বাদশা এই কথা বলেছে?
- হ্যা।
- আমার ছোট বোনেরও ক্ষতি হতে পারে?
- সবারই ক্ষতি হবে!
- সেটা কিভাবে সম্ভব? আমার তো ছোট বোন নেই! আমার মনে হয় জ্বিনের বাদশা আপনাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে। নইলে জ্বিনের বাদশার মাথায় ‘ছিট’ পড়েছে।
আর কথা বলার ভাষা হারিয়ে ওপাশ থেকেই লাইনটা কেটে দিল। আমি নাছোড়বান্দা, কল দিলাম। রিসিভ করল-
- ভাই, মাইন্ড করেছেন নাকি? আমি আসলে যুক্তির কথা বলছিলাম। আচ্ছা থাক, বলেন টাকাটা কিভাবে পাঠাব? আমাদের তো আর টাকার অভাব নেই, এক লাখ টাকার জন্য জ্বিনের বাদশাকে চটিয়ে লাভ কী?
- ফাইজলামি করেন? আপনার মত এমন অনেকেই বলে। আমার বলার দ্বায়িত্ব ছিল, বলেছি। এখন যা ইচ্ছে করেন।
- ভাই, ভাই, রাগ কইরেন না। লাস্ট এই কথাটা বলেন শুধু- টাকা কিভাবে পাঠাবো?
- আমাদের মাজারে এসে যে কারও কাছে দিলেই হবে। টাকা তো আর আমি নেব না, আল্লার রাস্তায় দিবেন। আল্লা আপনার বালা মুসিবত দূর করবে।
- আমি তো আপনাদের মাজার চিনি না। অন্য কোন উপায় নেই?
- না। তবে আমাদের মুরিদ আছে আপনি চাইলে ওরা আপনার কাছ থেকে টাকা এনে মাজারে পৌছে দেবে।
- এটা তো ভালো সুবিধা। তবে কি, এখন তো ডিজিটাল যুগ, অনলাইনে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা নাই আপনাদের। ক্লিক করুম, লাখ লাখ টাকা আপনার কাছে চলে যাবে।
- না, ওইসব নাই। আপনার খুব বেশি সমস্যা হলে মোবাইলেও টাকা পাঠায়া দিতে পারেন।
- কি? বিকাশ করার কথা বলছেন নাকি ডাচ বাংলার মোবাইল ব্যাংকিং কোনটা?
- না কিছু করতে হবে না, আমার এই নাম্বারে টাকা ফ্লেক্সি কইরা দিলেই হবে।
- এক লাখ টাকা ফ্লেক্সি করা যায় নাকি, আমার তো জানা ছিল না। এত টাকা মোবাইলে জায়গা নিবে তো?
- মানে?
- না ভাই, থাক…
- সেটা আপনার ইচ্ছা। রাখি তাইলে…
- আরে না, না! টাকা কীভাবে পাঠাবো সেটা তো ঠিক করা দরকার।
- বললাম তো ফ্লেক্সি করে দ্যান।
- আসলে কি ভাই টাকা তো ব্যাংক থেকে উঠাতে হবে। কাল ব্যাংকের ওখানে আসেন আমি টাকা তুলে ক্যাশ দিয়ে দেব। সেটাই ভালো হয়।
- না, ব্যাংকে থেকে টাকা আনা নিষেধ আছে। আমাদের ভাই মাজার ছেড়ে যাওয়াটাই নিষেধ, বুঝছেন।
- ও। আচ্ছা এক কাজ করি তাহলে আমি টাকাটা নিয়ে আপনাদের মাজারেই আসি।
- আসেন।
- কোথায়, এটা?
- শরীয়তপুরের হরদরিয়া থানার বালেনচর গ্রামে । এখানে আইসা শরীয়তপুর জামিলুল্লাহ শরীফ বললেই সবাই চিনায়া দিব।
- এতদূর কে যাইব! ধূরু! ভাই, আপনি আসেন না কষ্ট কইরা, আপনার ভাড়াটাও আলাদা দিয়া দিমুনে।
- থাক, লাগবে না আপনার টাকার। আমার বলার দায়িত্ব ছিল বলছি।
খট করে সে ফোন লাইন রেখে দিল।
বেশ করেকবার কল দিয়েছিলাম কিন্তু কল রিসিভ করে না। ইদানিং নাম্বার বন্ধও পাই। তবে সপ্তাহখানেক পরে আপুর নাম্বারে স্বয়ং জ্বিনের বাদশাই কল দেয়। বুঝলাম, যেই গবেটের সাথে মজা নিয়েছিলাম সে-ই আপুর সাথে কখা বলতে গেলে নিজেকে জ্বিনের বাদশা বলে পরিচয় দেয়। ব্যাচারা জ্বিনের বাদশার টাকার খুব টানাপোড়েন বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু আপুটা এইসব পাত্তা দেয় না, জ্বিনের বাদশার কথা শুনেই ল্যাপটপে গান ছেড়ে মোবাইলটা সাউন্ড স্পিকারের কাছে রেখে সে ঘুমিয়ে যায়। জানতে চেয়েছিলাম কোন গানটা ছাড়া হয়েছিল? সেবার নাকি মিলার ‘ডিস্কো বান্দর’ গানটা ছেড়েছিল। ইশরে! জ্বিনের বাদশা নিশ্চয়ই খুব শকড। এত বাজে রুচির একটা গান! আপুটার জন্য জ্বিনের বাদশার কাছে মুখ দেখানোর মত ইজ্জতের কিছু রইল না।
পুরো ব্যাপারটায় আমি সরি। এখনও, প্রায়ই জ্বিনের বাদশার নাম্বারে কল দেই, মেসেজ পাঠাই কিন্তু কোন প্রতিত্তর পাই না। বলাই বাহুল্য, জ্বিনের বাদশা ও তার শাশুড়ি খুব মাইন্ড করেছে।
লেখা: তানভীর আহমেদ