somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গডফাদার : শ্রদ্ধেয় আজম খান অভিনীত একমাত্র চলচ্চিত্র

২৫ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুতেই বলে রাখি এই ছবিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে।
ইউটিউবের কল্যাণে ছবি মুক্তির এত বছর পর কৌতুহলের বশে দেখা! বছর খানেক আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম এই ছবি নিয়ে। আজম খানকে উৎসর্গ করে শুরু করা হলো এই পোস্ট।


কেন ভালো লেগেছে তার ব্যাখা পরে করছি। সম্ভাব্য কারণ এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত পপগুরু আজম খান (১৯৫০-২০১১)। এটাই তাঁর অভিনীত প্রথম ও শেষ ছবি। আমাদের নিম্নমানের, বাজে প্রিন্টের, বাজে ডায়ালগের, অশ্লীল দৃশ্যসংবলিত ঢাকাই ছবি দেখে অনেকেই নাক সিঁটকে বলি, ছি: এই দেশে কবে ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হবে? কবে মানুষ সপরিবারে সিনেমা দেখবে হলে গিয়ে?... এই যে আমাদের নিরুৎসাহ, একটা ছবি দেখে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়া এতে করে বাংলাদেশি সিনেমার কোনো উন্নতি তো হবেই না বরং খেই হারিয়ে ফেলবে প্রযোজক-পরিচালকেরা। সিনেমায় অসংলগ্নতা বেড়েই চলবে। মূল যাত্রাপথ থেকে তা ছিটকে পড়বে কালের স্রোতে। ধ্বংস হয়ে যাবে চলচ্চিত্র বা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। কেবল ফারুকী বা গুটিকয়েক নাট্যনির্মাতার ভালো প্রিন্টের "টেলিফিল্ম" দেখে বাংলা সিনেমার স্বাদ আমি পেতে ব্যর্থ হয়েছি। কেন জানি এফডিসির কিছু ভালো ছবি দেখতেও আমার ভালো লাগে। কাটপিসওয়ালা ছবির কথা বলছি না। বাংলাদেশের অকালপ্রয়াত সুপার হিরো মান্না অভিনীত "আম্মাজান" ছবিটা কিন্তু অশ্লীল কাটপিস সংবলিত ছিলো না। কাহিনী, মান্নার আবেগী অভিনয়, অপরাধের ভেতরে থেকে অপরাধ দমন সবমিলিয়ে অনেকক্ষেত্রেই ছবিটা কাছে টানার মতো। আর এই কাটপিস প্রদর্শন অনেকাংশেই নির্ভর করে হলমালিকদের ওপর। আয় বাড়াতে নোংরা ছবির প্রদর্শনী, পর্নোছবি নির্মাণ সারা বিশ্বেই প্রচলিত। তবে কিছু ছবি আসলেই "চলচ্চিত্র" হয়ে ওঠার চেষ্টা করে যায়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতে, চলচ্চিত্রে "অতি-অভিনয়" তারা ধ্বংস করে দিয়েছেন। থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারে তিশার ন্যাকামিপূর্ণ অভিনয় দেখে সেটা মোটেও মনে হয় নি। অতি-অভিনয় বা পরিমিত অভিনয় মূল বক্তব্য নয়, সবার আগে একটা ভালো মৌলিক স্ক্রিপ্ট, একজন ভালো ফিল্মমেকার দিয়ে ছবিটা বানানো আর উপযোগী পরিবেশ ও অর্থ-সহযোগিতা পেলে এই জড়তাটুকু কি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়? কিছু ক্ষেত্রে অতি-অভিনয়েরও প্রয়োজন থাকতে পারে। যে অভিনয় করছে, সে একেবারে যে বাস্তবে মিশে গেছে তা নয়, ছবি কল্পনারও একটা অংশ। এবং অবশ্যই ব্যাকরণ মেনেই তা নির্মাণ করা উচিত। এই যে এফডিসি-বিকল্পধারার নির্মাতাদের মধ্যে "মতবিরোধ", সেটা ফিল্মকে জাগাবে না, ধ্বংস করবে। সবাই যদি "সিনেমা" বানাতেই চায় অনেক স্বল্প বাজেটের নিম্ন প্রিন্টের এই ছবিগুলো একটু যত্ম করে, পড়াশোনা করে বানালেই কিন্তু সাধারণ (শিক্ষিত!) দর্শক হলমুখী হবে আবারো, আমার ধারণা। এক্ষেত্রে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম একচ্ছত্রভাবে যেমন বাজার দখল করে আছে, এ রকম দু-চারটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে ফিল্ম তৈরী হবে। তবে সবার আগে যেটা দরকার, ভালো মানসিকতার ফিল্ম মেকার, কোরিওগ্রাফার, সিনেমাটোগ্রাফার, একটি দক্ষ টিম এবং অবশ্যই শিক্ষিত, অন্তত ফিল্মমেকিংয়ের ব্যাপারে।

একনজরে গড ফাদার




পরিচালনা : শাহীন সুমন
প্রযোজনা : মেহেদী হাসান কাকন
সিনেমাটোগ্রাফি : এম.এইচ. স্বপন
সঙ্গীত : ইমন সাহা
সম্পাদনা : তৌহিদ হোসেন চৌধুরী
ফরম্যাট : ৩৫ মিমি


কাহিনী সংক্ষেপ/সমালোচনা :
ঢাকার অপরাধ জগতকে ঘিরে আবর্তিত কাহিনী। একটু ভিন্ন সূচনা, হলিউডের ছবিগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই পরিচালক সজ্ঞানে কাজটা করেছেন। শুরুতে একটি ছোট অ্যানিমেটেড কার্টুন চরিত্র বাড়তি দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে, যদিও সেটা দক্ষ অ্যানিমেটরের ম্যাক্রোমিডিয়া ফ্ল্যাশ বা মায়ার জাদুতে তৈরী হয়েছে কি-না সন্দেহ! শুরুতে প্রস্তাবনা, এবং ন্যারেটিভ ফিল্ম স্ট্র্যাকচারে টাইম লাইন এগিয়ে গেলেও, মধ্যাহ্নে এবং শেষে সেই আমেজ ধরে রাখতে পারে নাই। অপরাধ জগতে ক্ষমতার বাজার-বদল, সাম্রাজ-সিংহাসন-দখল নিয়েই কাহিনী। অভিনয়ে মূল চরিত্রে রুবেল বরাবরের মতোই ঠান্ডা মাথার অ্যাকশন হিরো, বাবলা (রুবেল), যে গড ফাদার আজম খানের (স্বনামে) বিশ্বস্ত শিষ্য। এই রুবেলের জীবনে পরিচয় ঘটে একজন কুখ্যাত, রগচটা শ্যুটারের, যার নাম মুন্না। সে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মানুষ খুনের কাজটা করতে পারে। পরবর্তীতে গ্রুপিং এবং মারদাঙ্গা ফাইটিং। খুনের বদলা খুন। বাবলার প্রণয় এক চলচ্চিত্র নায়িকার সাথে (শানু)। আকর্ষণীয় সন্ত্রাসী (তাকে সন্ত্রাসী বা খুনি বলাটাই শ্রেয়) সবার চক্ষুশূলে পরিণত হয়। সবাই তাকে সরিয়ে দিতে চায়। আর যারা বাবলাকে সরিয়ে দিতে চায়, তাদেরকেই সে খুন করে। এভাবেই অন্ধকার জগতের সাম্রাজ্য পতন-উত্থানের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলে গড ফাদার ছবির কাহিনী। কে হবে পরবর্তী গড ফাদার? প্রশ্নটা যেন রয়েই যায়।

আজম খানের অভিনয় এবং ডায়ালগ বলার পারদর্শীতায় অপূর্ব মুনসিয়ানা রয়েছে। চমৎকার অভিনয় করেছেন তিনি এই ছবিতে।


আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় "গুরু" আজম খান

৩৫ মিমি যেন আমাদের চলচ্চিত্রনির্মাতাদের কাছে ছবি তৈরীর একমাত্র মাধ্যম। অনেকেই এটাতে ছবি বানাতে পারে না, এই ক্যামেরা (অ্যারিফেক্স) বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটা আছে, ৩৫ মিমি এর ফিল্ম বাংলাদেশে সেভাবে পাওয়াও যায় না। এফডিসি থেকে ফাইনাল প্রিন্ট করালে সেটার ওপর লাল লাল ছোপ পড়ে ফলে অরিজিনাল প্রিন্ট, কালার কোনোটাই পাওয়া যায় না। ইমপ্রেস এর ব্যানারের ছবিগুলো দৌঁড়ায় চেন্নাই, মুম্বাই বা দিল্লিতে। মানলাম, এফডিসির প্রযোজকদের এত টাকা নেই বিদেশ থেকে প্রিন্ট করানোর, কিন্তু ঐ চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করে মেকিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সবাই শিক্ষার অভাব। একজন সিমেন্ট শ্রমিক কীভাবে ইটের দেয়ালে সিমেন্ট মাখবেন সেটা সে ভালো জানে। সে কাজ করে শিখেছে। একজন আর্কিটেকচার ডিজাইন দাঁড় করাতে পারবে, কারণ সে ফিজিক্স পড়েছে, ক্যালকুলাস পড়েছে, অটোক্যাড দিয়ে কাজ শিখেছে, হাতে কলমে শিখেছে। কিন্তু একজন ফিল্মমেকার? সে কাজ করেও শিখতে পারে, পড়াশোনা করেও সেটা বাস্তবে রূপ দিতে পারে। ফিল্মে পড়াশোনার দরকার অবশ্যই আছে। তার মানে এই না মূর্খ মানুষ ফিল্ম বানায় নাই্। বাণিজ্য বা টাকার চিন্তাটা এরা মাথা থেকে দূর করতে পারে না। সৎ চেষ্টা দিয়ে স্ক্রিপ্ট দাঁড় করাতে পারে না। একটু যত্ম নিয়ে বানালেই গড ফাদার আমজনতার জন্য একটা থ্রিলার ছবি হয়ে দাঁড়াতো, কিংবা হয়ে উঠতো "পলিটিক্যাল থ্রিলার"। কিন্তু এই "থ্রিলার" জেনারটার মানে কি সেটা কি পরিচালক, যিনি ছবিটি তৈরী করেছেন, তার জানা আছে? মনে হয় না। মার্টিন স্করসিস স্টাইলে তিনি শুরু করেছেন, টাইটেল অ্যানিমেশন করিয়েছেন, ন্যারেটিভ স্টোরিলাইনে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আবার সেই পুরনো কাসুন্দি! তবে হ্যাঁ, ক্যামেরার কিছু শট, হ্যান্ড হেল্ড কিছু শটের ব্যবহার আমাকে সন্তুষ্ট করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হয়তো বা সাউন্ডে সমস্যার কারণে ফুটে ওঠে নাই, ডাবিংয়ে প্রচুর সমস্যা। নায়িকা শানুর অযথা আগমন কিছু জায়গায় বিরক্তিকর, না তার পোশাক নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। ফিল্ম জগতে ভালো কস্টিউম ডিজাইনার না থাকলে সেখানে পরিচালকের দোষ দিয়ে লাভ নাই। সব কয়টা জিনিসের জন্যই এক্সপার্ট লোকের দরকার আছে। হয়তো পরিচালক বা চিত্রগ্রাহক ৩৫ মিমি ফিতায় শ্যুট ঠিকভাবেই করেছে পরে সম্পাদনার টেবিলে অনেক কিছুই বাদ পড়েছে। আমি প্রিন্টকে হাইলাইট না করে মেকিংয়ে নজর দিতে চাচ্ছি, নজর দিতে অনুরোধ করছি এফডিসির পরিচালকদের।

একসময় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হয়তো আবার উঠে দাঁড়াবে, হাল ধরবে তরুণ প্রজন্ম, নগ্নতা-অশ্লীলতা-মাদক সন্ত্রাস-মিডিয়া সন্ত্রাস থেকে আমরা চলচ্চিত্রজগত বা নাটক-ফ্যাশন জগতকে পরিণত করবো আমাদের সংস্কৃতির রুচিতে, এই প্রত্যাশায় স্বপ্ন দেখি আজো...

আজম খান, আপনি পরম শান্তিতে জেগে থাকুন গীতিময় অন্যভুবনে।

ছবিটা অনলাইনে দেখার লিংক :
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:০৩
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×