একদিন সন্ধ্যায় বের হয়েছিলাম টুকিটাকি বাজার করতে পরিবারের তিন সদস্য মিলে। কেনাকাটার পরে এক রেস্টুরেন্টে বসলাম, উদ্দেশ্য ডিনার সেরে বাসায় যাব আমরা। জুতা খুলে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতে হলো। ভিতরে যাবার পর বুঝতে পারলাম রেষ্টুরেন্টের ইন্টেরিওর ডিজাইন থেকে শুরু করে খাবারের মেনু,আপ্যায়ন সব কিছু শতভাগ জাপানিজ ট্রাডিশনাল আবেদনে করা হয়েছে।
সাধারণত রেস্টুরেন্ট গুলির মেনু বইয়ে খবারের ছবি থাকে বা খাবারের আইটেম গুলি সাজিয়ে রাখে যেইটাকে বলে (disply wax imitations). কিন্তু আমরা যেই রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম সেইটার মেনু বইয়ে না আছে খাবারের ছবি, না আছে ডিসপ্লে ইউনিটে খাবার সাজাইয়া রাখা। ঝামেলার শেষ এইখানেই না.............
জাপানে দুই ষ্টাইলের লিখন পদ্ধতি আছে। "কান্জি" এবং "হিরাগানা কাতাকানা"। কান্জি লিখন পদ্ধতি মূলত আগে ব্যবহার হইতো। বর্তমানে তারা "হিরাগানা কাতাকানা" লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে।আমার ছেলের বাবা হিরাগানা কাতাকানা পড়তে পারে কিন্তু কান্জি পারেনা। মেনু বইয়ের লেখা আবার কান্জিতে। রেস্টুরেন্টে বইসা জাপানিজ ট্রাডিশনের ভারে চাপা পড়ে মোটামুটি কাইত আমরা সেদিন। খাবার অর্ডার দিবো কি! পড়তেই পারতেছি না লেখা। ছবি থাকলে না দেইখা, চিনা অর্ডার দেয়া যাইতো!
আমার ব র ওয়েটার কে বললো, মেনু বইয়ের এই কান্জি লেখা পড়তে পারিনা মুখ দিয়া বলো কি আছে। তিনি বেশি কথা বলতে চাচ্ছিলেন না অথবা এইভাবে কি হয়?? ভদ্রলোক বুঝতে পাইরা কই যে গেলো ........... । যাবার আগে সামনে দিয়া গেলো ড্রিংকস, সালাদ আর ছোট একটা বাটিতে ছোট ছোট মাংসের টুকরার মতন কি জানি একটা। আমার তো খিদায় জীবন যায়। খাইতে শুরু করলাম সালাদ, ছোট বাটিতে কি হইতে পারে ভাবাভাবি না করে আমি খাইতে শুরু করলাম। আসলে বাটিতে কি ছিলো পরে কই।
সে আমাকে বহু বার জাপানিজদের প্রিয় ঐতিহ্যবাহি খাবার "শুসি" "(কাচাঁ মাছ) খাওয়াতে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। সে এখানে এই সুযোগটা হাত ছাড়া করে নাই। যদিও এইটা "শুসি" ছিলোনা।
ওয়েটার বেশ কিছুক্ষন পরে এক লোক ধরে আনলো, যিনি এই রেষ্টুরেন্টে কাজ করেন। ওমা!! হে দেহি বাংলা কয়!!! জানলাম উনি বাংলাদেশী। উনি একটা একটা করে বললেন খাবারের নাম যা যা আমরা খেতে পারি।। সব শুনে খাইলাম স্যামন, টুনা আর চিকেন। ডেজার্টও খাইলাম কিছু। আমার বর খেতে বসলেই মাছ খোজেঁ। আমি খুজিঁ মাংস।
যাই হোক, খাবার শেষে আমি বাংগালী ভাইরে কইলাম , ভাই ছোট বাটির ভিতর এইটা কি ছিলো? তিনি কি মনে করে বললেন সামুদ্রিক মাছ। তার বলার ধরন দেখে আমি আমার বরকে বল্লাম ,বাটিতে আসলে কি ছিলো? উনি হাসিয়া কহেন "শামুক", "ঝিনুক" খুব সুন্দর জিনিস, খেতে এবং দেখতে। আমার এই শোক আরো বহু গুন বৃদ্ধি পাইলো খাবার শেষে বিল দিতে গিয়ে।কারন খাবার গুলো মজার ছিলোনা এবং ঐ জিনিস খাওয়ার কারনে। মোটা অংকের বিল দিয়ে, বিশাল রকমের অতৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬