এক.
এলাকাটায় এসেছে বেশিদিন হয়নি নাফিসের। তাই বন্ধু বা পরিচিত মানুষের সংখ্যাটাও কম। অবসর টাইমটা সে কাটায় নদীর পাঁড়ে থাকা একটা বেঞ্চে বসে। একাই থাকে, তবে মাঝে মাঝে তাকে সঙ্গ দিতে আসে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে হওয়া একমাত্র বন্ধু ইরফান।
অবশ্য নাফিস এসব নিয়ে ভাবে না। তার একা থেকে অভ্যাস ছোট বেলা থেকেই। বাবা সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ায় কয়েকবছর পরপরই জায়গা বদল করতে হয় নাফিসদের। এসব কারণেই গুটি কয়েক নামধারী বন্ধু হলেও ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধু হয় নি তার।
সময় কাটানোর জন্য বই পড়ে। বলতে গেলে তার জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই বই। রহস্যের গল্পের পোকা। রহস্য গল্প পড়তে পড়তে ওর মাথা সারাক্ষনই পড়ে থাকে রহস্যের ভিতরে। এই যেমন এখন ভাবছে তার ক্লাসে পড়া মেয়ে ইরাকে নিয়ে। ইরা মেয়েটা দেখতে সুন্দর, ছাত্রী হিসেবে ভাল হলেও ক্লাসের অন্যান্য সবাই তার কাছ থেকে কেন জানি দূরে দূরে থাকে। পারতঃপক্ষে কেউ ওর সাথে কথাও বলে না। এর মাঝে অবশ্যই কোন রহস্য আছে এমনটাই ধারনা নাফিসের।
বেশিক্ষন বসে থাকতে পাড়ল না বেঞ্চটাতে। মাথায় একবার কিছু ঢুকে গেলে সেটা আর সহজে বের হয় না নাফিসের। এখন ইরাকে সবাই কেন দূরে দূরে রাখে, সেটাই নাফিসের জানার ইচ্ছা প্রবল। হয়তো অন্যরা জানে, কিন্তু নাফিস তো ইরফান ব্যাতিত আর কাউকে চিনেও না। ইরফানের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। বেঞ্চ থেকে উঠে ইরফানের বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল।
****
এনএফএস মোষ্ট ওয়ান্টেড গেমের একটা রেসের একদম শেষের দিকে। একজনের পিছনে আছে এখন ইরফান। স্টার্টিং বাজে হওয়ায় পিছিয়ে গেছে অনেকটা। এগিয়ে যাবে যাবে এই মুহুর্তেই পিছন থেকে ডাক শুনল। ঘুরে দেখে নাফিস। পাত্তা না দিয়ে গেমের দিকে নজর ফেরাল, কিন্তু ততক্ষনে যা ঘটার ঘটে গেছে। অর্থাৎ ইরফান হারল। রাগে গজ গজ করতে তাকাল নাফিসের দিকে।
‘আরেকটু পর ডাক দিতে পারলি না, তর জন্যই রেসটা হারলাম।’
‘রেসের কথা রাখ তো। সিরিয়াস কথা আছে তোর সাথে।’
‘সিরিয়াস কথা। শার্লক হোমস হতে চাচ্ছিস?’ ইরফান নাফিসের সবকিছুতেই রহস্য খোজার বাতিকটা সম্পর্কে জানে।
‘বলতে পারিস। আচ্ছা ইরা মেয়েটার সাথে সবাই এমন করে কেন?’
‘কেমন করে? ওর সাথে কেউ কথাই বলে না।’
‘সেটাই বলতে চাচ্ছি। কেন ওকে সবাই এত এড়িয়ে চলে?’
‘ও তুই তো নতুন তাই জানিস না। ইরা মেয়েটা আসলে ভূতুড়ে।’
‘ধূর কি বলছিস এসব?’
‘আগে শোন পুরাটা।’ ইরার কাহিনী বলা শুরু করল ইরফান।
“গতবছর ওকে আমাদের ক্লাসেরই রাশেদ নামের একটা ছেলে প্রপোজ করে। জানিসই তো ইরা দেখতে সুন্দরী, ভাল ছাত্রী্, বুদ্ধিমতিও। যে কেউই চাইবে ইরাকে তার গার্লফ্রেন্ড করতে। গতবছর ওকে আমাদের ক্লাসেরই রাশেদ নামের একটা ছেলে প্রপোজ করে। রাশেদকে সরাসরি মানা করে দেয় ইরা। আজব ব্যাপার হল এরপরের দিন থেকেই রাশেদ নিঁখোজ।”
‘শুধু এইটুকের জন্যই ভূতুড়ে? সবাই ওকে এড়িয়ে চলে?’ ইরফানের কথা থেকে তেমন কিছু রহস্যজনক না পাওয়ায় নাফিস কিছুটা আশাহত হল।
‘শোন আগে পুরোটা।’ আবার বলা শুরু করল ইরফান।
“এর কয়েকদিন পর মামুন ইরাকে প্রপোজ করে। আশ্চর্যজনক ভাবে এর পরের দিন থেকে মামুনও নিঁখোজ। যাই হোক এর পর আর কেউ ইরাকে প্রপোজ করেনি। একবার নিলয় ইরার সাথে একটু মজা করেছিল, অবশ্য ইরা ব্যাপারটায় বেশ সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন নিলয় নিঁখোজ। নীলিমা একবার একটা বিষয়ে ইরার থেকে বেশি মার্কস পেয়েছিল। পরেরদিন নীলিমাও নিঁখোজ।”
‘আজব তো। মানে যার কারনে ইরার মন খারাপ হয়েছে, এরপরই সে নিঁখোজ হয়ে গেছে।’ মজা পেয়ে গেছে নাফিস। ‘পরে বল।’
‘পরে আরকি গত বছর প্রায় ছয়জন নিঁখোজ হয়ে গেছে আমাদের ক্লাস থেকে। হ্যা তুই যা বলেছিস তাই। কারও কারনে ইরার মন খারাপ হলেই সে নিঁখোজ হয়ে গেছে। এই কারণেই তাকে ভূতুড়ে বলা হয়। তার সাথে কথাও বলে না এই ভয়ে যদি ইরার আবার মন খারাপ হয়।’
‘হুম, বুঝলাম। এদের কাউকেই কি খুজে পাওয়া যায় নি?’
‘না। সব একেবারে গায়েব।’
ভাবনার ঝড় শুরু মনে নাফিসের মাথায়। যারা নিঁখোজ হয়েছে তারা কি বেঁচে আছে না মেরে ফেলেছে কেউ?
দুই.
ডায়েরিতে লিখে রাখছে ইরার ‘ভুতুরে ও নিঁখোজ হওয়া’র রহস্যটা।
যারা এখন পর্যন্ত নিঁখোজ হয়েছে তাদের সবার নাম এবং নিঁখোজ হওয়ার আগে ইরার সাথে তাদের ঘটা ঘটনা গুলো লিখল। ভিক্টিম এখন পর্যন্ত ছয়জন। তাদের মধ্যে দুইজন মেয়ে (নীলিমা ও রেশমা) এবং ছেলে চারজন (রাশেদ, মামুন, নিলয়, রাহাত)। সাসপেক্ট এর তালিকাটা খালি। কারন সন্দেহ করার মত কেউ নেই।
রাত বাড়ছে। সাথে সাথে ভাবনাটাও বাড়ছে নাফিসের। নিঁখোজ হওয়ার পর ছয়জনকে কি করেছে? মেরে ফেলেছে? না কোনও জায়গায় বন্দী করে রেখেছে?
****
ক্লাসের মধ্যেও নাফিস এটাই চিন্তা করছে। মনোযোগটা রহস্যের মধ্যে এতটাই দিয়েছে ইরফানের ডাকছে সে দিকে খেয়ালই নেই। বাস্তবে ফিরল ইরফানের হাতের কিল পিঠে পড়ায়।
‘শার্লক হোমস! রহস্যের কোন কূল কিনারা পেলি।’
‘এখনও ভাবছি। ওদেরকে খুব সম্ভবত মেরেই ফেলেছে।’
‘তুই শিওর কিভাবে?’
‘শেষ নিঁখোজ হয়েছে রেশমা। প্রায় চারমাস আগে। এখনও বেঁচে থাকলে তাকে পাওয়া যেত এতদিনে। কারণ, যে কাজটা করছে সে কাছেরই কেউ। খুব সম্ভবত আমাদের ক্লাসেরই।’
‘কি বলিস তুই?’ চোখ বড় বড় হয়ে গেছে ইরফানের।
‘হুম, ক্লাসেরই কেউ। কারণ হারিয়ে যাওয়ার আগে সবার সাথে যে ঘটনা গুলো ঘটেছে তা শুধু ক্লাসেই হয়েছে। না ক্লাসের বাইরেও ঘটেছে?’
‘না। ক্লাসেই ঘটেছে।’
‘তারমানে ক্লাসেই কেউ আছে যে সে চায় না ইরা কোন কারনে মন খারাপ করুক। কেউ ইরার মন খারাপের কারন হলেই তাকে নিঁখোজ মানে মেরে ফেলছে।’
‘তুই তো পাক্কা গোয়েন্দারে। তা কে সেই পাপি?’
‘এটা বলা কঠিন। কারণ ক্লাসে কারও সাথেই তো ইরার কথা বলতে দেখলাম না। আগে কাদের সাথে বেশি খাতির ছিল ই……’ ইরাকে হঠাৎ একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে থেমে গেল সে।
নাফিসের পরিবর্তনটা চোখে পড়ল ইরফানের। ঘুরে দেখল কি জন্য নাফিস থেমে গেছে। ইরার সাথে কথা বলছে রাজু।
‘ছেলেটার নাম রাজু।’ নাফিসের জিজ্ঞেস করার আগেই বলল ইরফান। ‘ক্লাসের একমাত্র রাজুই ইরার সাথে কথা বলে।’
ইরফানের সাথে আরও কথা বলে জানতে পারল রাজুর সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক ভাল ইরার। নিঁখোজ হওয়ার ঘটনাটার পরও রাজু ইরার সাথে কথা বলে গেছে। নাফিসের মুখে একটা বাকা হাসি চলে এসেছে। সন্দেহভাজনের তালিকায় একটি নাম যুক্ত করা যায়। রাজু। রাজুর উপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল।
****
স্কুল টাইম শেষ। সবাই যার যার বাসার দিকে যাচ্ছে। শুধু নাফিস ছাড়া।
‘হাই, ইরা।’
‘হাই। বাসায় যাওনাই এখনও?’
‘মাত্র তো ছুটি হল। আস্তে ধীরে যাব। তোমার সাথে তো স্কুলে কথাই হয় না, তাই ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলতে বলতে যাই আজ।’
‘স্কুলে তো আসলে কেউই আমার সাথে কথা বলে না।’ ইরার কথায় অভিমানের সুরটা স্পষ্ট।
‘হ্যা। জানি ঘটনাগুলো। আগে পরিচয় করাই আমাকে।’
‘তুমি নাফিস। এসেছ বেশ কিছুদিন হল।’
‘তুমি জানলা কি করে? কখনও বলা হয় নি তোমাকে?’
‘বারে, একই ক্লাসে পড়ি আর এটা জানব না।’
‘হ্যা। তা তো অবশ্যই। আসলে আমি তো জানতাম যে ক্লাসে কেউই তোমার সাথে ঠিকমত কথা বলে না।’
‘না বললেও শুনেছি।’
হয়ত রাজুর কাছে শুনেছে ভাবল নাফিস। ইরাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাচ্ছিল, কিন্তু কিভাবে করবে বুঝতে পারছে না।
‘আসলে আমার সাথে ঝগড়া হওয়ার পর ছয়জনের মারা যাওয়াটা আমাকে সবার কাছেই ভুতুরে বানিয়ে দিয়েছে। সবাই ভয় পায় আমার সাথে কথা বলতে।’ এই প্রসঙ্গটাই তুলতে চাচ্ছিল নাফিস। তার আগেই ইরা তুলে ফেলেছে। অবশ্য ইরার অভিমানের সুরটা কান্নার সুরে বদলে যাচ্ছে।
‘সবাই কিন্তু ভয় পায় না তোমাকে। এই যেমন আমি পাই না আর…’
‘আর কে?’
‘রাজুও ভয় না তোমাকে।’
এই কথায় কাজ হল। একটু হাসি ফুটল ইরার মুখে।
‘হ্যা। রাজু ভয় পায় না। একমাত্র রাজুই আমার সাথে কথা বলে। এই ঘটনা গুলো ঘটার পর হয়তো রাজু না থাকলে হয়ত আমার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যেত।’
‘আসলেই। কঠিন মুহুর্তগুলোতে কারো সহায়তা না পেলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।’
‘হুম। আমার বাসা তো এসে গেছে প্রায়।’
‘কোনটা তোমার বাসা?’
‘ঐটা।’
আঙুল দিয়ে একটা ধূসর সাদা বাসার দিকে ইশারা করে ইরা। যদিও জায়গাটা থেকে তার বাসা আরও বেশ দূরে। নাফিস বুঝল যে এখন আর কথা বলতে চায় না ইরা। চলে আসল ওখান থেকে।
****
রাতে ডায়েরিটাতে লিখে রাখছে। সাসপেক্ট রাজু। রাজুর উপর কড়া নজর রাখতে হবে এখন থেকে ভাবছে নাফিস। ইরার সাথে কথা বলার সময়ও তার কিছুটা আজব লেগেছে। ইরার আবেগিত হওয়াটা তার কাছে কেমন যেন খাপ ছাড়া লেগেছে।
তিন.
রাজুর উপর প্রতিদিনই নজর রাখছে নাফিস। মনে করেছিল হয়ত সন্দেহজনক কিছু দেখতে পাবে। হতাশ হতে হয় তাকে। রাজুর কোন কাজই সন্দেহজনক না। নিয়মিত স্কুলে আসে, ক্লাস করে, ক্লাস শেষে বাসা, বিকেলে হালকা খেলাধুলা। নাহ, রাজুকে সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে বাদ দিতেই হচ্ছে নাফিসের। যদিও তার খুতখুতে মন তা চাইছে না। তার মনে হচ্ছে রাজু এই রহস্যের মধ্যে কোনভাবে যুক্ত আছে।
****
ঐদিকে নিজের অজান্তেই কেন জানি নাফিস ইরার উপর নজর রেখেছিল। চাইছিল, এমন কিছু জানতে পারবে যা থেকে সহজেই রহস্যটা উদঘাটন করা যাবে। কিন্তু হতাশই হতে হয় শুধু রাজুকে।
ইরাদের বাসার ঠিক সামনেই একটা চায়ের টঙ থাকায় নাফিসের নজর রাখতে সুবিধা হয়।
ইরাকে ক্লাসে দেওয়া নামের মতই ইরাদের বাসাটাও ভুতুরে। পুরো বাড়িটাই গাছপালায় ঘেড়া, কেমন জানি একটু অন্ধকার। রঙ অনেকবছর যাবৎ না করায় বাড়িটা রঙচটা হয়ে গেছে। দোতালা বাসা। ইরারা দোতালায়ই থাকে। একতালায় আজ অবধি কেউ থাকেনি বলেই সে শুনল দোকানটা থেকে। দোকানটা থেকে ইরার রুমের সামনের বারান্দাটা দেখা যায়। ইরা বেশির ভাগ সময় বারান্দাতেই কাটায়।
বেশ কিছুদিন নজর রাখার পরও নাফিস তেমন কিছু দেখতে পেল না। তবে হঠাৎ একদিন খেয়াল করল, ইরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে ঠিকই কিন্তু তাকিয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গার দিকে। নাফিসের মনে প্রশ্ন জাগে কি আছে ঐ জায়গাটাতে?
****
একদিন ক্লাসে ঢুকেই দেখে কোন একটা কারণে ইরা আর রাজু ঝগড়া লেগেছে। নাফিসের বুঝতে পারল যে, কালকের খবর হবে রাজু নিঁখোজ। রাজুর উপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল।
ক্লাস শেষে বাসায় গেল রাজু। পিছু পিছু গিয়ে নাফিসও ঘাপটি মেরে রইল রাজুদের বাসার একটা ঝোপে। বিকেল পর্যন্ত এভাবেই বসে আছে নাফিস, কিছু ঘটার নামগন্ধও নেই। নাফিস উঠে যাবে কিনা ভাবছে, এই সময়ই দেখল রাজু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছে। তারমানে রাজু নিঁখোজ হল, নাফিসের ভাবনা এটা।
ঝোপ থেকে বেরিয়ে রাজুদের বাসায় গেল। দরজা খুলল রাজুর মা।
‘কি চাও?’ বিরক্তভরে রাজুর মায়ের প্রশ্ন।
‘আন্টি আমি রাজুর ক্লাসমেট নাফিস।’
‘ও বাবা চিনতে পেরেছি। রাজু বলেছে তোমার কথা।’ রাজুর মায়ের মুখে আন্তরিক হাসি এসেছে একটা। ‘কিন্তু বাবা ও তো বাসায় নেই। বেরিয়ে গেল মাত্র।’
‘ওহ! বই নিতে এসেছিলাম একটা। আসবে কখন আন্টি?’
‘তা তো জানিনা। একটা ফোন আসল, কিছুক্ষন চেচামেচি করে বেরিয়ে গেল। আসবে হয়ত সন্ধ্যার আগেই। ’
যা জানার জানা হয়ে গেছে নাফিসের। রাজু যে আর কখনও আসবে না তা আর বলল না রাজুর মাকে। ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসল।
চার
রাজু নিঁখোজ। সবারই জানা হয়ে গেছে মোটামুটি। ইরার সাথে ঝগড়ার পরেই এই ঘটনা ঘটায় সবাই ইরাকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে।
নাফিস এখনও নিশ্চিত এটা তাদের ক্লাসেরই কারো কাজ। সে সাইকো কিলারের কথা ভাবছে। হয়ত ইরাকে সে মনপ্রান দিয়ে ভালবাসে, তাই ইরার উপর কেউ কোন আঘাত হানলে তাকে সরিয়ে দেয়।
হয়ত ইরার সাথে কথা বললে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। তবে নাফিসের ধারনা রহস্যটা ইরাদের বাসায়ই। ইরার বাসায় যে কোন ভাবেই যেতে চায়।
কপাল ভাল নাফিসের। পরদিন ক্লাস টেস্ট থাকায় ইরার বাসায় যাওয়ার একটা সুযোগ আসে তার।
‘ইরা।’
‘আমার সাথে কথা বলবা না আর। আমি ভূতুড়ে।’
‘ধুর কি আজব কথা বল। আমি ভয় পাই না ওসব।’
‘সত্যি?’ বিশ্বাস করতে পারছে না ইরা। ‘বল তাহলে কেন ডাকলা?’
‘ইয়ে মানে কাল তো পরীক্ষা। আমার নোট পত্র তেমন কিছুই করা হয় নি। তোমার নোট খাতাটা কি দেওয়া যাবে?’
‘তোমাকে দিলে আমি পড়ব কিভাবে?’ অবাক হয় ইরা।
‘এখন দাও। বিকেলে তোমার বাসায় গিয়ে ফেরৎ দিয়ে আসব।’
ইতস্তত করছে ইরা। দিবে কি দিবে না ভাবছে।
‘আচ্ছা থাক। না চাইলে আর দিতে হবে না।’
‘আচ্ছা নাও। বিকেলে দিয়ে আইস বাসায়।’ ব্যাগ থেকে নোট বের করে নোট দিল ইরা।
****
ইরাদের বাসাটা বাইরে যতটা ভূতুড়ে লাগত। ভিতরে তার চেয়েও বেশি ভূতুড়ে। গাছের পাতা জমতে জমতে পুরুত্ব অনেক হয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় শ্যাওলা জন্মেছে। স্যাতস্যাতা একটা গন্ধ নাকে লাগছে নাফিসের। নোট ফেরৎ দিতে এসেছে সে।
নক করল। গেট খুলল গেটটা মধ্যবয়স্ক লোক। ইরার বাবাই হবে হয়তো।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাফিসের দিকে লোকটা।
‘আমি ইরার ফ্রেন্ড নাফিস। ওর নোট নিয়েছিলাম ফেরৎ দিতে এসেছি।’
‘আস। ভিতরে আস।’ লোকটা বলল।
নাফিস ভিতরে ঢুকল। ভিতরে ঢুকে রীতিমত অবাকই হল। যেই দিকে তাকায় শুধু বই আর বই। কত রকমের বই যে আছে তার হিসাবটা সে জানে না। বই এর নাফিসের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকাটা লক্ষ্য করল লোকটা।
‘আমি ইরার বাবা সেলিম হায়দার। আধিবাসীদের উপর রিসার্চ করি।’ ইরার বাবা পরিচয় দিলেন।
‘এইখানে সব বই কি আধিবাসীদের নিয়ে?’
‘হ্যা। ইয়াং ম্যান। অনেক বছর যাবৎ রিসার্চ করছি। মাঝখানে অবশ্য বেশ কয়েকবছর বন্ধ করে দিয়েছিলাম ইরার মা মারা যাবার কারণে। এখন আবার শুরু করলাম নতুন করে।’
‘বেশ ইন্টারেস্টিং তো। কি নিয়ে করছেন এখন রিসার্চ?’
‘রাঙামাটির একটা আধি……’
‘আহ! বাবা, থাম তো। যাকে পাও তার সাথেই শুরু কর এইসব।’
ইরার কথায় থেমে গেলেন সেলিম সাহেব। নাফিসকে ইরার রুমে যেতে বলল।
ইরার রুমেও বইয়ে ভরা। বইয়ের থেকে অবশ্য নাফিসের এখন জানার মুখ্য বিষয় হল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কি দেখে সেটা। ইরা নিজে থেকেই বারান্দায় বসে চা খাওয়ার আমন্ত্রন জানানোয় তার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
বারান্দায় গিয়ে দেখার চেষ্টা করছে এমন কি আছে? কিছুই চোখে পড়ছে না তার একটা কুয়া ছাড়া। একটা টিনের চালা দিয়ে কুয়ার মুখটা বন্ধ করা। না, দেখার মত কিছুই নেই। হতাশ হল নাফিস।
চা খাওয়ার পর্ব শেষে ফিরার সময় ইরার পড়ার টেবিলে একটা বই দেখল নাফিস। ‘The secret power of Magajatik tribes’ নাম বইটার। এই বইয়ে কি এমন আছে এই বইতে যে পরীক্ষার আগের দিন এইটা পড়তে হবে? থাক আর বেশি না ভেবে বেরিয়ে আসল নাফিস।
****
ইরফানকে কয়েকটা কাজ দিয়েছিল নাফিস। কাজটা হল যারা নিঁখোজ হয়েছে তাদের সবাই কি ফোন পেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিল কিনা? সবাই ফোন পেয়েই বের হয়েছিল। কিন্তু কেউই ব্যাপারটা সিরিয়াসলি না নেওয়ায় আর পুলিশকে জানায়নি। তাই নিঁখোজ রহস্যটা রহস্যই হয়ে আছে এতদিনেও।
অবশ্য নাফিসের তাতে খুব একটা বেশি সুবিধা হয়েছে তা না। বরং একটু জটিল হয়ে গেছে আরও তার জন্য। নিঁখোজ রহস্যটা গোলক ধাঁধাঁর মত ঘুরাচ্ছে নাফিসকে। যেখান থেকে শুরু করেছিল ঐখানেই এখনও।
****
মাথাটা ক্লিয়ার করার জন্য ফেসবুকে ঢুকল নাফিস। ইরার আইডিতে গেল। দেখল কাল ইরার জন্মদিন।
ফেসবুকেও তেমন একটা মজা না পেয়ে বের হয়ে গেল। ল্যাপটপ শাট ডাউন করবে এই মূহুর্তে তার মনে পড়ল ইরার বলা একটা কথা। নেটে ঢুকে সার্চ দিল। কিছুক্ষন দেখার পর মুখে হাসি আসল একটা নাফিসের। কেস সলভড। কাল ইরার জন্মদিন। কোন সন্দেহ নেই, একদম মিলে গেছে।
ইরফানকে ফোন করে কিছু নির্দেশ দিয়ে নাফিস ছুটল ইরার বাসার দিকে।
পাঁচ
দিনের বেলাতেই জায়গাটা ভূতুড়ে লাগছিল নাফিসের। রাতে দুই একটা ভূত দেখলেও সে অবাক হবে না। অবশ্য সে ভূতই দেখতে এসেছে এখানে।
কুয়াটার কাছে গেল। দিনের বেলা চোখে না পড়লেও এখন তার চোখে পড়ল। কুয়ার ইট আর দেয়াল অনেক পুরোনো হলেও টিনের চালাটা এখনও নতুনের মত। আরেকটূ ভাল করে দেখায় বুঝতে পারল, টিনের চালাটা নিয়মিত জায়গা থেকে সরানো হয়। মানে কুয়াটাকে অচল মনে হলেও, আসলে হয়ত এর ভিতরেই সচল আছে নিঁখোজ রহস্যটা।
‘নাফিস। এতরাতে এখানে কি কর?’ ইরার কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরল নাফিস।
‘না কিছুনা। নিঁখোজ রহস্যটার সমাধান করে ফেলেছি।’ শীতল কন্ঠে বলল নাফিস।
****
যখন জ্ঞান ফিরল নাফিসের, হাত-পা চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করল নিজেকে। পিছন থেকে মাথায় কিছু একটার আঘাতে জ্ঞান হারিয়েছিল সে। চোখ খুলে প্রথমে সব ঘোলাঘোলা দেখতে পেল। আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি পুরোটাই পেল। অজ্ঞান অবস্থায় রাজুকে বাঁধা অবস্থায় দেখল। তারই মত রাজুকেও চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে।
ইরা দাঁড়িয়ে আছে সামনে একটি গজাল আর কালপাথর নিয়ে। এটাই আশা করেছিল নাফিস। রাজুর দিকে এগিয়ে ইরা। সেলিম হায়দার সাহেবও আছেন রুমে। হাতে একটি কাঁটার জন্য যন্ত্র। খুব সম্ভবত ধারালো কোন করাত।
রাজুর কপালের মাঝখানে গজালের চোখা অংশ এক হাতে ধরে আরেক হাতে পাথর দিয়ে মারতে যাবে, এইসময় নাফিস বলে উঠে, ‘লাভ নেই ইরা। পুলিশ এসে যাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই।’
নাফিসের কথায় থমকে গেল ইরা। ‘পুলিশ এসে খুজে পেলে তো?’
‘হুম। পাবে। আমার মোবাইলে জিপিএস অন করা আছে।’ প্রমানস্বরুপ পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখতে বলল ইরার বাবাকে।
ইরার বাবা মোবাইল দেখে ইরাকে জানায় আসলেই জিপিএস অন করা। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে গেল ইরা। কি করবে এখন সে? ইতস্তত করে গজাল আর পাথরটা রেখে দিল।
‘তুমি বুঝলা কিভাবে?’ ইরা জিজ্ঞেস করল।
‘তোমার টেবিলে রাখা বইটা দেখে আর তোমার বাবার আধিবাসীদের উপর রিসার্চ করার কথা শুনে।’ শান্ত কন্ঠে বলল নাফিস।
ইরা তার বাবার দিকে তাকিয়ে, ‘আগেই বলেছিলাম। এইসব ব্যাপারে বেশি কথা না বলতে। দিলা তো বলে।’
সেলিম হায়দার কিছুটা বোকা বনে গেছে। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ইরা আবার বলা শুরু করল।
‘যাই হোক খুজে পাবে না আমরা কোন রুমে আছি। রাজুর সাথে সাথে তোমাকেও শেষ করে প্রমান করে ফেললেই আর আমাদের কোন বিপদ নেই। পুলিশ কখনও এই রুম খুজে পাবে না।’
‘এইটা তোমার রুমের পাশের রুমটা না? যেটার দরজা হল তোমার ঘরে থাকা আলমারীটা?’ ইরাকে জিজ্ঞেস করল নাফিস।
ইরার চুপ থাকা থেকেই বুঝল তার অনুমান সঠিক। ‘হুম। আমি এটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম।’
ইরা আর কিছু না শুনে গজাল আর পাথর নিয়ে ছুটে গেল রাজুকে মারতে। ‘এখন আর লাভ নেই। সময় শেষ আগেই।’
ঘড়ি দেখল ইরা। ১২.০৭। সময় আরও সাত মিনিট আগেই শেষ। আর কিছু করার নেই ইরার।
ধরা না পড়ার শেষ চেষ্টা করল ইরা। ‘বাবা, এদের বাঁধন খুলে দাও। ড্রয়িং নিয়ে গিয়ে বস। পুলিশ আসলে প্রমান চাইবে, আর এদের কাছে কোন প্রমান নেই। আমাদের ধরা পড়ার ভয়ও নেই।’
‘কুয়ার ভেতরে মাথা কাটা বডি গুলো আর তোমার বিছানার নীচে ছিদ্র করা খুলি গুলো আছে না?’ আবার বোমা ফাটাল যেন নাফিস।
ইরা গজালটা হাতে নিয়ে ছুটে আসতে চাইছিল নাফিসের দিকে। কিন্তু এর আগেই পুলিশ এসে বাধা দেয় ইরাকে।
****
পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়েছে ইরা ও তার বাবা সেলিম হায়দারকে। সাথে এসেছে নাফিস, ইরফান ও রাজু।
পুলিশপ্রধান সেলিম হায়দারকে উদ্দেশ্য করে, ‘শুরু করুন। কেন এসব করেছেন? এসবের মানে কি?’
সেলিম হায়দার চুপ করে আছেন। বলতে চাচ্ছেন না হয়ত। নাফিস এগিয়ে এসে বলল, ‘আংকেল, আপনি বলতে না চাইলে আমি বলি। ভুল বললে শুধু ঠিক করে দিয়েন।’
পুলিশ প্রধানের অনুমতি নিয়ে বলা শুরু করল নাফিস।
‘কয়েকবছর আগে সেলিম হায়দার সাহেব গিয়েছিলেন রাঙামাটিতে। উনি বলেন উনি আধিবাসীদের নিয়ে রিসার্চ করেন। কিন্তু আসলে তা নয়। তিনি আধিবাসীদের নিয়ে কৌতুহলী। যা বলছিলাম, রাঙামাটি গেলেন। ওখানে যেয়ে ‘মগজাতিক’ আধিবাসীদের সাথে কয়েকদিন ছিলেন। বই এ পড়ে ছিলেন যে, ‘মগজাতিক’ আধিবাসীদের মধ্যে একটা গল্প চালু আছে তা হলো একটি কালোপাথর নিয়ে। কালোপাথরটা লুকানো ছিল অনেকদিন। সেলিম হায়দার সাহেব পাথরটা খুজে বের করেন। কিন্তু এরপর শুরু হয়ে যায় পাথরটা নিয়ে দ্বন্দ্ব। পাথরটা সেলিম হায়দার সাহেব দিতে চান না, আর ঐ আধিবাসী গোষ্ঠীও পাথরটা ছাড়তে চান না। এই দ্বন্দ্বের ফলে মারা যান ইরার মা।’
অবাক দৃষ্টিতে নাফিসের দিকে তাকিয়ে আছেন সেলিম হায়দার। ছেলেটা একটা কথাও ভুল বলেনি।
পুলিশপ্রধানও বোকা হয়ে আছে। ‘কালোপাথরের কি এমন গুন যে ওটার জন্য এতকিছু?’
‘বলছি সে কথা। কালোপাথরটাকে মনে করা হয় ‘মগজাতিক’ উপজাতির প্রাচীন নিদর্শন। পাথরটায় নাকি তাদের সাতজন শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষের রক্ত লেগে আছে বলে গুজব আছে।’
সবাই নাফিসের কথা মন দিয়ে শুনছে।
‘যাই হোক, স্ত্রী হারানোর শোকে মানষিক ভারসাম্য হারান সেলিম হায়দার। ইরা তখন ছোট ছিল। মা নেই, বাবা পাগল প্রায়। তাই সে বাবার সব বই পড়েছে। যদিও তার বিশ্বাস হয়নি তারপরও সে দেখতে চাচ্ছিল যে এটা সত্য নাকি শুধুই রূপকথার গল্পের মত। আর কালোপাথরটা তার বাবার কাছে থাকায় সে সহজেই ওটা নিয়ে নেয়। এটা অনেকটা এরকম যে, এই পাথরটার সাহায্যে যে কোন চোখা বস্তু দিয়ে যদি সাতটা মানুষের খুলি ছিদ্র নিজের কাছে রাখে তাহলে সে ঐ প্রাচীন সাত ‘মগজাতিক’ এর বুদ্ধি আর সাহস পেয়ে যাবে। এটার আরেকটা প্রধান শর্ত হল, এই কাজটা শুরু করার এক বছরের মাঝেই শেষ করতে হবে। ইরাও তাই করল। তার জন্মদিনের দিন সে রাশেদকে দিয়ে শুরু করল। আস্তে আস্তে সংখ্যাটা বাড়াচ্ছিল কিন্তু তার ভুল ছিল একটাই সে তার সাথে যাদের সামান্য একটূ কথাকাটাকাটি হত তাদেরকেই শিকার করত। এর কারনে আরেকটু হলেই ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছিল। রাজুর সাথে জোর করে ঝগড়াটা না করলে তার বুদ্ধিমান হওয়ার আশাটা নষ্ট হয়ে যেত। গত বছর এই দিনেই সে রাশেদকে দিয়ে কাজটা শুরু করেছিল, আজ শেষদিন ছিল কাজটা করার।’
‘তুমি কিভাবে বুঝলে যে, ইরাই কাজটা করছে?’ পুলিশপ্রধানের প্রশ্ন।
‘ইরার সাথে যেদিন প্রথম কথা হয়েছিল সেদিন সে বলেছিল ‘আসলে আমার সাথে ঝগড়া হওয়ার পর ছয়জনের মারা যাওয়াটা আমাকে সবার কাছেই ভুতুড়ে বানিয়ে দিয়েছে’। তখন কথাটা বুঝিনি। কিন্তু সে কিভাবে জানল যে ছয়জন মারা গেছে, পরে তার টেবিলের উপর রাখা বই, কালোপাথর, তার জন্মদিন, রাশেদের নিঁখোজ সব মিলিয়ে বুঝতে আর দেরি হল না। তবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে এটা।’ একটা ডায়েরি বের করে দেখাল। ইরার ডায়েরি।
‘এটা ইরার বাসা থেকে মেরে দিয়েছিলাম। মনে হুচ্ছিল এটায় হয়ত রহস্যটার সম্পর্কে কিছু জানতে পারব। এইখানেই জানতে পারলাম কোন রুমে কিভাবে কি করে, লাশ গুলোর কি করে।’
‘কিন্তু সে সবাইকে তার বাসায় নিয়ে গেল কিভাবে? যারা নিঁখোজ হয়েছিল তাদের সবাই কিন্তু নিজ ইচ্ছায় ঘর থেকে বেরিয়ে ছিল। এমনকি রাজুও।’ আবারও প্রশ্ন পুলিশপ্রধানের।
‘হ্যা এটা রাজুই বলুক।’
‘আমাকে ফোন করে বলল যে, স্কুলে আমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য সে সরি। আমি রেগে ছিলাম তাই প্রথমে মানতে চাই নি। পরে বলল বাবার শরীর নাকি খারাপ। হাসপাতালে নিতে হবে। আমার সাহায্য দরকার। আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলল।’ বলল রাজু।
‘হ্যা সে সবাইকেই এইভাবে প্রথমে সরি বলেছে। যারা সহজে মেনে নিয়েছে তাদেরকে বাসায় যেতে বলেছে, ট্রীট দেবে বলে আর যারা মানেনি তাদের কাছে বাবার অসুস্থতার কথা বলেছে। এটা পড়লেই সব ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যাবে আপনার।’ বলে ইরার ডায়েরিটা পুলিশপ্রধানের হাতে তুলে দেয় নাফিস।
ডায়েরিটা হাতে পুলিশপ্রধান, ‘মেয়ের বুদ্ধি আছে কিন্তু গুজব বিশ্বাস করে ছয়জন মানুষ হত্যা করা চরম বোকামি হয়েছে। আর তার বাবা আসলেই মানসিক বিকারগ্রস্ত, নাহলে কেউ নিজের স্ত্রী বিসর্জন দেয় গুজবের জন্য, মেয়েকে গুজব সত্য করার অনুপ্রেরনা দেয়।’
‘সাইকো ফ্যামিলি।’ বলে নাফিস, ইরফান, রাজু উঠে দাঁড়ায়।
‘আচ্ছা পুলিশ যে কেস সলভ করতে পারল না, সেটা তুমি অল্প কয়েকদিনে কিভাবে পারলে?’
‘আপনারা ইরা বাদে সবাইকে চোখে চোখে রেখেছিলেন, আর আমি শুধু ইরাকেই চোখে চোখে রেখেছি।’
‘ক্লেভার বয়। আশা করি বড় হয়ে ভয়ংকর গোয়েন্দা হবে।……’
নাফিসের প্রশংসা করার ভাষা খুজছে পুলিশপ্রধান।
****
পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আসার পথে ইরাদের বাড়িটা পড়ল। ইরফান ও রাজু বাড়িটা দেখে গুঙিয়ে উঠলেও নাফিস শুধু বলল, ‘সাইকো হাউজ।’
--- X ---
↕
↕
↕
↕
↕
↕
এই গল্পের ইতিহাসটা জানাইঃ
ইদানিং নষ্টালজিয়া ভুগছি বেশ। পুরোন গল্পগুলো কত আগেই ডিলেট করে দিয়েছিলাম। এগুলোর ব্যাক-আপ যে কিভাবে রয়ে গেল বুঝিই নাই। পেয়ে তো এখন ঐগুলোই ব্লগে দিচ্ছি। শুরুর সময়ের লেখাগুলোতে মন্তব্য পেতে আলাদা অনুভূতি হয়।
যাই হোক - এইটা হল আমার লেখা প্রথম গল্প। এর আগ পর্যন্ত একজন সাধারণ পাঠকই ছিলাম আমি। সামুতেও তখন সাধারণ পাঠক হিসেবে শুধু মন্তব্য করার জন্যই প্রথম নিকটা খুলেছিলাম। থ্রিলারের পাগল তো রকিব হাসানই করেছিল। ফেসবুক আর সামু দুইটাতেই এই থ্রিলারগুলো পড়তে পড়তেই একদিন ইচ্ছা করলো আমিও দেখি দুই-একটা লাইন লিখি।
তিন গোয়েন্দার ভক্ত তাই প্রথম লেখার আগে তিন গোয়েন্দার মত করেই চিন্তা আসছিল। সেইটা ভেবেই এমনই এক শীতের ভোর পাঁচটার দিকে এইটা লিখতে শুরু করলাম। তখন প্রথমবারের মত টের পেলাম - লেখা পড়াটা কত্ত সোজা - ঐটা লিখতে জান-প্রাণ বের হয়।
লিখতেই পারছিলাম না। আবার না লিখে ঘুমাতেও পারছিলাম না। ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থাতেই টাইপ করে গিয়েছি শুধু। 'ইতিহাসে মার গুল্লি - নিজেই ইতিহাস বানায়া ফেলমু' এই চিন্তা করে নিজেই প্রাগৈতিহাসিক এক বানোয়াট ইতিহাস বসায়া জোড়াতালি দিয়ে গেছি।
শেষের জায়গাটুক লেখার সময় তো চোখ ঘুমের যন্ত্রণায় খোলাই রাখতে পারিনি। চোখ বন্ধ করেই উল্টা-পাল্টা খটখট টাইপ করলাম। তারপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে শেষ করেই ঘুম। আর পড়িও নাই।
আজকে গল্পটা দেখে ঐদিনের কথা মনে পড়ে হাসি পেল। চিন্তা করলাম - দেই আরেকবার! হাজার হোক - প্রথম লেখা তো এইটা! সবাই পড়ুক।
তবে প্রথম হোক বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় - খুনাখুনি ছাড়া গল্প ভাবতেই পারিনি কখনো। মাথায় শুধু খুন আর খুন!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৫