somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সারপ্রাইজ

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘তুমি না গিটার বাজাতে পারো? শোনাও না আজ!’

‘এখন?’

‘হ্যা এখনই – কোন সমস্যা আছে এখন বাজালে?’

‘না সমস্যা নেই অতটা – কিন্তু আমি তো ভাল করে বাজাতে পারি না।’

‘যতটুকই পারো – ততটূকুই শোনাও! তবে আজকে শোনানো লাগবেই।’

অগ্যতা না পেরে বিছানায় গা এলিয়ে কথা বলা অর্ককে গিটার নেওয়ার উঠতেই হল। না বলার উপায়ও নেই।
ভুলটা তারই ছিল – গিটার বাজাতে কথাটা বলাই উচিত হয় নি। এটা জানলে, সে পারুক বা না পারুক – গিটার তাকে বাজিয়ে শুনানোই লাগবে।
আর অর্ক অন্যদেরকে কোন বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গেলেও তো – নিশিকে এড়াতে পারবে না। একেতো নিশি এই প্রথম বারের মত তার কাছে অনুরোধ করল – তারউপর আবার নিশি তার ‘কিছু’ একটাও লাগে।

এই ‘কিছু’ একটা টা অবশ্য কি অর্ক ভাল করেই জানে। কিন্তু নিশির ভয়ে ঐ ‘কিছু’ একটার আর কোন নাম দিতে পারে না। কারন নিশি ঐ ‘কিছু’ একটা নিয়েও সন্তুষ্ট – সে এটার কোন নাম দিতে নারাজ।

যাইহোক, গিটার হাতে নিয়ে আবারও ফোনে ফিরল অর্ক। ফোনে লাগানো হেডফোনের মাউথস্পীকারটা গিটারের তারের কাছাকাছি রাখল – যাতে বাজালে নিশি পরিষ্কার শুনতে পায়।
‘কি বাজাবো?’

‘তুমি যেইটা পারো।’

‘আমি কিছুই পারি না।’

‘তাহলে গিটার রাখছো কেন – ভাব দেখানোর জন্য?’

‘না তা না।’

‘তাহলে কি? যেইটা ইচ্ছা বাজাও।’

‘যেইটা ইচ্ছা বাজাবো?’

‘হ্যা…। ও তুমি না কয়েকদিন আগে বলছিলা একটা নতুন টিউন করেছো আমাকে নিয়ে – ঐটাই শুনাও।’

‘ওটা তো ভুলে গেছি।’

‘চেষ্টা করো না – আমি শুনতে চাই।’
লাস্টের কথাটা নিশি বাচ্চা মেয়ের মত আহ্লাদী কন্ঠে বলল। এই কন্ঠস্বর শুনলে যে কোন ছেলেই আকাশ থেকে চাঁদ বগল দাবা করে দিতে পারে – আর গিটার বাজানো তো ব্যাপারই না।
কিছুক্ষন টুংটাং করে টিউনটা বাজানোর চেষ্টা করল অর্ক। উহুমমম – হচ্ছে না। চেষ্টা করে যাচ্ছে – পারছে না কোনভাবেই।

‘পারছি না তো।’

‘না হচ্ছে তো – এটাই ভাল লাগছে।’

‘এটাই ভাল লাগছে? আমি তো কিছু বাজালামই না।’

‘যাই বাজাচ্ছ – ঐটার কথাই বলছি। ঐ টিউনটা বাজানোর চেষ্টা কর।’

মাথা চুলকানো শুরু করল অর্ক। ভাবটা এমন যেন – মাথা চুলকালেই মাথায় টিউনটা এসে যাবে।
কি আশ্চর্য! এসে গেল টিউনটা।
প্রথমে মৃদু শব্দে শুরু করলো – আস্তে আস্তে সাউন্ডটা বাড়াতে লাগল। চমৎকার সুরের ঝংকারে মোহময় করে দিতে লাগল পরিবেশটাকে। একটা সফট রোমান্টিক টিউন – কোন লিরিক্স নেই।
শুধু শব্দটাই।

‘শুনছো?’ বাজানোর ফাকেই জিজ্ঞেস করল নিশিকে।

‘হুমমম! কে বলেছে তুমি বাজাতে পারো না – অনেক সুন্দর বাজাও তো। আজকে সারারাতই আমাকে বাজিয়ে শুনানো লাগবে।’

‘সারারাত!’ বাজানো থামিয়ে দিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘হ্যা – কোন অসুবিধা আছে তাতে?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল নিশি।

‘আমার অসুবিধা নেই – কিন্তু আম্মুর আছে।’

‘আম্মুর আবার কি অসুবিধা?’

‘এই মধ্যরাতে টুংটাং করে বেসুরো গিটার বাজালে আম্মু আমাকে ঘর থেকে বের করে দিবে।’

‘হা হা হা – তাই তাহলে তো তাই করতে হয়, তুমি বাজিয়েই চল।’

অর্কের আম্মু আসমা চৌধুরী অবশ্য ততক্ষনে গিটারে টুংটাং শব্দ শুনে অর্কের ঘরে ঢু মেরেছেন। অর্ককে ঘরে না পেয়ে বারান্দায় দেখলেন। দেখলেন অর্ক কানে হেডফোন দিয়ে গিটার হাতে নিয়ে বাজাচ্ছে।
‘কিরে বাবা! তুই না হয় সারারাত নাইট শিফটের ডিউটি করবি আর দিনে ঘুমাবি – কিন্তু আমাদের তো ঘুমোতে দে। গান শুনছিস ভাল কথা – তাই বলে এত জোরে জোরে গিটার বাজাতে হবে।’

অর্কের কানে হেডফোন দেখে উনি মনে করেছেন অর্ক গান শুনছে। আর গানের সাথে সাথেই গিটার বাজাচ্ছে।
অর্কের যে একজন মিউশিয়ান হওয়ার ইচ্ছা তা উনি ভাল করেই জানেন। তাই অর্কের এই ধরনের কোন কাজে কোন বাধা দেন না। কিন্তু এই রাত আড়াইটায় তো আর এই শব্দ মেনে নেওয়া যায় না – না চাইলেও বাধা দিতে হয়।

অর্ক মায়ের এককথাতেই গিটার রেখে রুমে চলে আসল। অবশ্য কানে হেডফোন লাগিয়েই রেখেছে।
মা যখন বুঝতে পারেনি, যে সে গান শুনছে না, কারো সাথে বলছে – তখন আর উনাকে এটা বুঝতে দেওয়ারও কোন মানে হয় না।

অর্ক রুমে আসার আসমা চৌধুরী অর্কের রুম থেকে নিজের রুমে চলে আসলেন।
ঐদিকে অর্ক আবারও ফোনে কথা বলায় মনোনিবেশ করেছে।
‘শুনলা তো মা কতগুলো কথা শুনিয়ে গেল।’

‘হুমমম। আমার কিন্তু মজাই লেগেছে – আপনাকে কত্তগুলো ধমক দিয়ে গেল। হিহিহি!’

‘শুধু তুমি লাইনে ছিলে দেখে আম্মুকে কিছু বলিনি – নাহলে বলতাম।’

‘কচু বলতেন আপনি! আপনার সাহস যে কতটা তা আমার জানা আছে।’

‘আমার সাহসের কথা শুনবা? কি করছি আমি জানো?’

‘কি করেছেন?’

‘আম্মুকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।’

‘সত্যি?’

‘হ্যা।’

‘উনি কি বললেন?’

‘তোমার কথা জানতে চাইল – বললাম। দেখতে চাইল – ছবি দেখালাম। কই থাকো জিজ্ঞেস করল – খুব একটা দূরে না শুনে বলল – তোমাকে একদিন নিয়ে আসতে।’

‘কি? কেন? কি করবেন তিনি তোমাদের বাসায় গেলে?’

‘কি আর করবে? আংটি পড়াবে হয়ত।’

‘আমি পারব না আসতে।’

‘তোমাকে আসতে কে বলেছে আইসো না।’

‘তোমার আম্মু না বলল বললা?’

‘আম্মুর কথা আম্মু বলেছে। আমি বলে দিয়েছি তুমি আসতে পারবে না।’

‘কেন?’

‘কেন মানে? তুমি আসতে পারবে?’

‘জানিনা।’
রেগে গেল নিশি। কৃত্তিম অভিমান ভরা কথা বলতে লাগল অর্কের সাথে। কেন তাকে না জিজ্ঞেস করেই এই কথা বলেছে তার কৈফিয়ত চাইল।
অর্কতো কৈফিয়ত দেয়ই নি – উলটো নিশিকে বারবার এটাই জিজ্ঞেস করতে লাগল সে কি আসতে চায় কি না। নিশিও উত্তর দেয় নি।
ব্যস, বাকী রাতটা অর্কের জিজ্ঞেসা আর নিশির কৈফিয়ত চাওয়া দিয়েই অতিবাহিত হয়ে অসম্পুর্ন অবস্থায় থেকে শেষ হল। যদিও তাদের নিজের ইচ্ছায় না – মোবাইল অপারেটরের কারনে। কারন দুইজনের মোবাইলেরই ব্যালেন্স তখন শুন্য শুন্য হয়ে গিয়েছিল।

*

স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে অর্ক। ঘড়ি দেখছে একটু পর পর।
ট্রেনের আরও পাঁচমিনিট আগেই এসে পড়ার কথা – কিন্তু বাংলাদেশের ট্রেন ঠিক সময়ে আসবে!!! এটা ভাবার চেয়ে বাসায় কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমানো শ্রেয়।

যাই হোক প্রায় আধাঘন্টা পর আসল ট্রেন। সেই সাথে নিশিও। আসলে নিশির জন্যই তার এই স্টেশনে আসা।

অর্কের সাথে নিশির পরিচয় ফেসবুকে। অর্কের একটা গুনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট নিশি।
অর্কের ঐ বিশেষ গুনটা ছিল সুন্দরভাবে কিছু কথাকে গুছিয়ে লেখা – সাহিত্য সাহিত্য একটা ভাব আনার চেষ্টা লেখা গুলোতে। শুধু চেষ্টাই সাড় না – করতও। চমৎকার গল্প লিখে অর্ক।
আর এই চমৎকার গল্পগুলো পড়েই অর্কে প্রেমে পড়া শুরু হয় নিশির।

ঘটনাটা মাস চারেক আগের। অর্ক একটা গল্প লিখেছিল – রোমান্টিক ধাঁচের। অন্যান্য সাধারন প্রেমের গল্পের মত নয় – একটু বৈচিত্র্যতা ছিল গল্পটায়।
নিশি এর আগেও অর্কের গল্পগুলো পড়েছে – পড়ে ভাল লাগলেও অর্কের সাথে কোন কথা বলেনি। কিন্তু এই গল্পটা পড়ার পর আর না বলে থাকতে পারে নি।

নক করার পর অর্কের রিপ্লাই – অর্ক খুব সুন্দর লিখে, শেষ গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে বলার পর অর্কের বিনয়ী জবাব। এরপর অর্কের সাথে মেসেজিং করতে করতে একে অপরের উপর আস্তে আস্তে দুর্বল হওয়া – দুর্বল হওয়া থেকে এক আরেকজনের ‘কিছু’ একটা হওয়ার যাত্রা শুরু হওয়া।
সবই রুপকথার গল্পের মত খুবই দ্রুত গতিতে হয়ে গেল।

ফেসবুক চ্যাটিং থেকে ‘কিছু’ একটা হওয়ার যাত্রা শুরু হওয়ার পর – তা ফোনে প্রতিস্থাপিত হওয়া। রাত জেগে কথা বলা – এক আরেকজনকে রাগানো এবং আস্তে আস্তে ভালবাসার সৃষ্টি দুজনের মনে।

নিশির সাথে অর্কের এটাই প্রথম দেখা। এর আগে ফেসবুকে ছবিতে দেখেছে – অর্কের লেখার পাশাপাশি তার ছবিগুলোও নিশির খুব ভাল লাগত।
কেমন জানি একটা নিরীহ গোবেচারা ভাব আছে অর্কের চেহারায়। এই ছেলের সাথে সে কিভাবে প্রেম করে, কিভাবে ওর মত ছেলেকে সে ভালবাসতে পারে – ভেবে প্রায়ই অবাক হয় নিশি।
সামনা-সামনি দেখার পর আরও অবাক হয়ে গেল নিশি। এতো পুরো বাচ্চা!

‘হায়হায়! তুমি তো দেখি পুরোই একটা বাচ্চা ছেলে।’ কথাটা অর্ককে না বলে আর পারল না নিশি।

‘এ্যাই! আমাকে বাচ্চা বলবা না – তুমি নিজেও তো একটা বাচ্চা মেয়ে।’ মুখ বাকিয়ে জবাব দিল অর্ক।

‘কি আমি বাচ্চা মেয়ে!’
অর্কের কথায় যারপরনাই অবাল হল নিশি। ঝগড়া লেগে যেতে চাইছিল অর্কের সাথে – কিন্তু যে জায়গায় আছে তার কথা বিবেচনা করে লাগল না।
আগে এখান থেকে বের হওয়া দরকার। অর্কের হাত ধরে বেরিয়ে এল স্টেশন থেকে।

‘কই যাবে! বাসায় নিয়ে যাবে এখনই?’
অর্ককে জিজ্ঞেস করল নিশি।

‘এখনই বাসায় যেতে চাও! আগে একটু ঘুরে নিই তোমাকে।’
প্রায় বাচ্চাদের মত আবদার করে বসল অর্ক। নিশি অর্কের আব্দারটা ফেলতে পারল না।
আসলে তার নিজেরও ইচ্ছা নেই এত তাড়াতাড়ি অর্কের বাসায় যাওয়ার।

অর্কের আম্মু তার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন – এই কথা জানার পর থাকতে পারেনি নিশি, ছুটে আসল দেখা করার জন্য।
আসলে কারনটা ঠিক তা নয়। অর্কের আম্মুর ঐ কথার পর অর্কের জবাব ছিল নিশি আসতে পারবে না। এই কথা অর্ক কেন বলল? এই কারনেই ছুটে আসা নিশির।
সে এসে প্রমান করে দিয়েছে সে আসতে পারে – এবং সে এসেছেও। অবশ্য তার বাসা থেকে মিথ্যা কথা বলেই এসেছে। বলেছে এক বান্ধবীর সাথে ঘুরতে যাবে। ফিরতে অনেক রাত হতে পারে।
বান্ধবীকে বলে এসেছে – তার বাসা থেকে তাকে কোন ফোন দিলে যাতে সে কোনরকম ভাবে ম্যানেজ করে নেয়। বান্ধবী অবশ্য বারবার জিজ্ঞেস করছে কেন তার বলা লাগবে, নিশি কি এমন করবে – নিশি উত্তরে শুধু বলেছে, বিশেষ একজনের সাথে ঘুরতে যাবে।
এই বিশেষ একজনটা কে – এটা অবশ্য তার বান্ধবী বার বার জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায় নি নিশির কাছ থেকে। নিশি বলেছে, ফিরে এসে বলবে। কিন্তু তার যাওয়াটা খুব জরুরী।

রিকশায় চড়ে বসেছে দুইজনই। প্রথমত ঘুরতে যাবে – অর্কের মুখ থেকে অনেকবার শোনা তার প্রিয় নদীর পাড়ে। সেখান থেকে পার্ক, তারপর অর্কের বাসা।

*

‘তোমাকে তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম – আম্মু এখন বাসায় নেই।’
অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করার পর বাসায় এসে অর্কের মনে পড়ল তার আম্মু যে বাসায় নেই।

কথাটা শোনার পর ক্ষেপে গেল নিশি। এই কথাটা আগেও তো তাকে বলতে পারত অর্ক।

‘স্যরি! আমার একদম মনে ছিল না। সকালে যখন আমি বের হই – তখনও আম্মু বাসায় ছিল, পরে বের হবে বলেছিল – কিন্তু বাসায় দেখে গেছি তাই আর মনে ছিল না তোমাকে বলতে।’
নিশির ক্ষেপে যাওয়া দেখে কৈফিয়তের সুরে বলল অর্ক।
‘ভেবেছিলাম তোমার হাতের রান্না করা খাবার খাব – এমনিতে খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে।’
কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল নিশি।

‘আম্মু এসে যাবে বিকালের আগেই। আর খাওয়া নিয়ে ভেব না – আম্মুর হাতের রান্না না খেতে পারলে কি হয়েছে আমার হাতেরটা খেতে পারবে।’

‘তুমি রান্নাও করতে পার?’ বিস্ফোরিত নয়নে জিজ্ঞেস করল নিশি। কোন ছেলে রান্না করতে পারে – এই ধরনের কথা সে আগে শুনেনি।

‘হ্যা – এতে অবাক হওয়ার কি আছে?’

‘অবাক হব না? তুমি রান্না করতে পার! যাকজ্ঞে, কি রান্না করে খাওয়াবে?’

‘সারপ্রাইজ!’
মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে কথাটা বলল অর্ক।
‘অনেক অনেক সারপ্রাইজ দিব তোমাকে!’
শেষ কথাটা বেশ রহস্যময় ভাবে বলল। শুনে কিছুটা আশ্চর্যিত হল নিশি। অনেক অনেক সারপ্রাইজ মানে! কি কি সারপ্রাইজ দিবে অর্ক তাকে।

কথাটা বলতে গিয়ে দেখে অর্ক নেই। তার জন্য রান্না করার সরঞ্জামাদী একত্রিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
‘পাগল একটা!’ হেসে বিড়বিড় করে বলল নিশি।

ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল বাসাটা। অর্কের রুমে ঢুকল।
এলোমেলো একটা রুম। এই জায়গার জিনিস ঐ জায়গায় – ঐ জায়গার জিনিস আরেক জায়গায় – মানে জগাখিচুরী অবস্থা রুমটার।
এলোমেলো দেখতে ভাল লাগে না নিশির। কিন্তু অর্কের এই এলোমেলো রুম দেখতে বেশ ভালই লাগছে নিশির। ছেলেটা যে ভবিষ্যতে এইরকম এলোমেলো না থেকে – একদম ঠিকঠাক গোছালো হয়ে উঠবে, তা ভেবে আপন মনেই হাসল নিশি।
কিভাবে হবে – সেইটা তো সে ভাল ভাবেই জানে।

রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে নজর পড়ল অর্কের টেবিলে রাখা একটা কালো ডায়েরীর উপর।
ডায়েরীটার উপরের লেখা পড়ে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হল নিশির মনে। ডায়েরীটার উপর লেখা ছিল ‘আমার খুন কাহিনী’।
‘বাহ ছেলে তাহলে খুনের গল্পও লেখে!’ বলে আপন মনে হাসি দিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিল নিশি।

অর্ক যে গল্প লিখে তা তো আগে থেকেই জানে নিশি – খুনের গল্প লিখে তা জানত না। হয়ত খুনের গল্প গুলো নিয়ে পরে কোন কাজ করার ইচ্ছা ছিল অর্কের – সে যে কাজই হোক, সবার আগে সে এই গল্পগুলো পড়তে পারছে – সেটাই কম কিসে।
আর গল্পগুলো পড়তে পড়তে হয়ত অর্কের রান্না করাও শেষ হবে – তার এই অলস সময়টাও কাটবে।
এই ভেবে ডায়েরীটা খুলল সে।

*

প্রথমেই যে লেখাটা ডায়েরীতে আছে,

‘আফসানার খুন
৫ মে, ২০১২’

‘এত আগের লেখা! এখনও ফেসবুকে পাবলিশ করে নি কেন?’ ঠোট উলটে নিজেই নিজেকে প্রশ্নটা করল নিশি।
‘যাকজ্ঞে – করেনি হয়ত কোন কারনে। আমার সময় কাটানো দরকার – আমি সময় ই কাটাই।’ বিড়বিড় করে বলে টেবিলের উপরে বসেই পা দুলিয়ে দুলিয়ে পড়তে শুরু করল নিশি।

“আফসানার সাথে আমার পরিচয়টা হয় ফেসবুকে।
কোন এক ভোর বেলায় অন্য লাইনে কেউ না থাকায় মেয়েটাকে নক করি। এই ভোর বেলায় মেয়েটা ফেসবুকে কি করছে তা জানারও কৌতুহল ছিল মনে কিছুটা।

কৌতুহল আর কথা বলার মত কাউকে না পেয়ে নক করি মেয়েটাকে।

তড়িৎ গতিতে জবাব পেলাম মেয়েটার কাছ থেকে। তারপর গৎবাধা কিছু ফরমাল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম – সেও গৎবাধা উত্তর দিয়ে গেল। ফরমালিটি পুরোপুরি ভাবে মেইনটেইন করতেই আমাকেও গৎবাধা সেই প্রশ্ন গুলোই করল।
গৎবাধা কথাগুলো বলার পর – আমাদের চ্যাটিং কার্যত প্রায় শেষ। কিন্তু মেয়েটার সাথে কথা এত তাড়াতাড়ি শেষ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
যদিও জানিনা কি নিয়ে কথা বলব। তারপরও………

‘আচ্ছা আপনি এত সকাল সকাল ফেসবুকে কেন?’ গৎবাধা কথাবার্তা থেকে বেরুলাম।

‘এমনিতেই। সকাল সকাল আমার ঢুকতে ভাল লাগে। অযথা জ্বালানোর জন্য কেউ থাকে না – একদম শান্তিতে বিচরন করা যায়।’

অযথা জ্বালাতন! বাহবা! মেয়েতো দেখি নিজেকে পুরোই নায়িকা মনে করে। নায়িকারা যেমন কোন জায়গায় বেড়াতে গেলে অদ্ভুত কোন সময়ে যেত, যাতে তাদের ফ্যানদের কেউ না দেখে – এই মেয়েও দেখি নিজেকে তাই ভাবে।
বলতে ইচ্ছে হল কথাটা কিন্তু বললাম না। ফিঁচলেমো করার ইচ্ছে জাগল মনে।
‘বাঁচতে আর পারলেন কই? আমি তো ঠিক জ্বালাচ্ছি।’

‘ও তাই নাকি? বুঝতে পারিনি তো।’ মেয়েটার রিপ্লাই এ বুঝলাম মেয়েটাও ফিঁচলেমি করা মুডে আছে।

‘তাই নাকি? তার মানে জ্বালাচ্ছি না?’

‘তাইতো মনে হচ্ছে।’

সেই শুরু। এরপর খাওয়ার কথা ভুলে চ্যাটিংই করতে থাকলাম মেয়েটার সাথে। দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকায় যখন পেটে খিদের আঘাত পড়ল – তখন শেষ হল আমাদের চ্যাটিং।
যদি খিদের আঘাতটা না পড়ত তাহলে বোধহয় চ্যাটিং করেই যেতাম।

ঐদিনই সন্ধ্যায়,
মেয়েটাই আমাকে নক দিল। মেসেজিং চলল। একদম গভীর রাত পর্যন্ত। চ্যাটিং করতে করতেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পেলাম না। সকালে উঠে দেখি মেয়েটার অনেকগুলো মেসেজ এসে জমা হয়েছে ইনবক্সে।

‘কি হল? কোথায় গেলেন?’
‘হ্যালো?’
‘এই যে মিস্টার! ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?’
‘কাজটা ঠিক করলেন? একটা মেয়ের সাথে চ্যাট অসম্পূর্ন রেখেই চলে গেলেন? হুহ! আপনার সাথে আর কথাই বলব না।’

একদিনের পরিচিয়ে মেয়েটার এমন অভিমানমূলক মেসেজ দেখে – আমার কি হাসা উচিত না কাঁদা উচিত ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কি জবাব দিব মেসেজের তাই ভাবছিলাম।
অনেক ভেবে একটা জবাবই পেলাম।
‘স্যরি।’

মেসেজটা দেওয়ার সাথে সাথেই মুখ বাকানো একটা ইমোর রিপ্লাই পেলাম। মেয়েটা কি ঘুমায়নি নাকি? এই মেয়েকি ঘুমায় না?

‘ঘুমাননি?’

‘ঘুমিয়ে ছিলাম – উঠে গেছি আবার।’

‘এত কম ঘুম?’

‘আমি তো আর আপনার মত এত ঘুমাই না।’
বলে কি মেয়ে? এই রাতে ঘুমানোর আগে শেষ কবে যে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম – আমার তা মনেই নেই। আর মেয়ে বলে কিনা আমি বেশি ঘুমাই?
অবশ্য ভুল বলে নি – রাতে না ঘুমালেও দিনে ঘুমাই। প্রানভরে ঘুমাই।
সবে মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। এখন না ঘুমালে আর কবে ঘুমাব।

‘স্যরি বললাম তো আমি!’ মেসেজটার সাথে একটা স্যাড ইমোও দিলাম।

মেয়েটার অভিমান তখনও ভাঙেনি। তবে ভেঙে গেল একটু পরই। তারপর আবার লম্বা চ্যাটিং শুরু।
চ্যাটং এ সব মানুষকে আমি নক করি ঠিকই – কিন্তু কারো সাথে লম্বা চ্যাটিং করতে আমার এতোটা ভাল লাগে না। কিন্তু আফসানার সাথে চ্যাট করতে আমার ভাল লাগে কি না জানিনা – কিন্তু খারাপও লাগছিল না।

এভাবে দিনের পর দিন চ্যাট করতে করতে একসময় আমি সম্বন্ধটা তুমিতে নেমে আসল। টেরও পায় নি অবশ্য কখন এটা ঘটল। এটা কি প্রোমোশন না ডিমোশন বুঝতে পারছিলাম না।

‘তোমার সাথে না আমার আর চ্যাট করতে ভাল লাগে না।’ আফসানার এমন মেসেজ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। চ্যাট করতে আফসানার ভাল লাগে না ঠিকই – কিন্তু ততদিনে তো আফসানার সাথে চ্যাট করাটা আমার প্রায় নেশার মত হয়ে গেছে।
ওর সাথে চ্যাট না করলে আমার ভাল লাগে না।

‘মানে?’ বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।

‘কথা বলতে ইচ্ছে হয় – তোমার কন্ঠটা কেমন জানতে ইচ্ছে হয়।’

‘মানে?’ আবারও অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।

‘আরে গর্দভ! তোমার ফোন নাম্বারটা চাইতেছি – সরাসরি না বললে কি বুঝও না নাকি কিছু?’ হাফ ছেড়ে বাচলাম এই ভেবে যে আফসানা আমার সাথে চ্যাট করা অফ করবে না। বরং আরও প্রোমোশন দিয়ে আমার সাথে তার নিজের ভয়েসেই কথা বলবে।

ফোন নাম্বার চালাচালি হল আমাদের মাঝে। শুরু হল ফোনে কথা বলা।
দিনরাতের কোন সময় বাদ নেই যে আমরা কথা বলি নি। যখন ফোনে কথা বলতাম না – তখন ফেসবুকে চ্যাটিং চলত। ঠিক মনে নেই আমার – ঐ সময়টায় কি আমরা আসলে ঘুমাতাম কখন?
এভাবেই একটা সময় মনে হল – ভালবাসতে শুরু করেছি আফসানাকে। হ্যা আসলেই ভালবাসতে শুরু করেছিলাম।

বাট হোয়াট দ্যা ফুচকা ইজ ভালবাসা? ভুলেই গিয়েছিলাম ভালবাসার প্রতি আমার আবার অ্যালার্জি আছে।
অ্যালার্জি সৃষ্টির কারন একবার ভালবাসতে গিয়ে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছিলাম। অনেক কষ্টে সেই বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে তুলেছিলাম।
ভুলিনি আমি সেই দুর্বিসহ দিন গুলোর কথা। একেকটা দিন আমার নরকে থাকা কয়েক যুগের যন্ত্রনার সাথে অতিবাহিত হয়েছে।

সেই আমিই ভালবাসব আবার! না, আমি ভালবাসতে পারি না কাউকে। কাউকে ভালবাসতেও দিব না।
আফসানাকেও না। কিন্তু আফসানাকে মানা করলেই কি সে ভালবাসবে না আমাকে – না, কোন গ্যারান্টি নেই এর। গ্যারান্টি নেই – তাই মানা করেও লাভ নেই। কিন্তু আমি তো কাউকে ভালবাসতে দিব না।
ভাবতে লাগলাম কি করা যেতে পারে। মনে পড়ল ‘কোন গাছের নতুন পাতার আলোর মুখ দেখা বন্ধ করতে চাও – তাহলে ঐ গাছটাই উপড়ে ফেল।’
হ্যা আমারও তাই করতে হবে – গাছটাকেই উপড়ে ফেলা লাগবে। তাহলেই গাছের পাতার আলোর মুখ দেখা বন্ধের মতই আফসানার আমার প্রতি ভালবাসাটাও বিলীন হয়ে যাবে।
হ্যা মেরে ফেলা লাগবে আফসানাকে। খুন করতে হবে আমার তাকে – আমার প্রতি তার জন্মানো ভালোবাসাটাকে।

প্ল্যান করতে লাগলাম। সহজ প্ল্যান – আফসানাকে আমার এখানে নিয়ে আসতে হবে।
আম্মু এনজিওতে জব করে – বাবাও ব্যবসার কাজে প্রায়ই থাকে দেশের বাইরে। অতএব, তাকে আমার বাসায় খুন করাটা অসম্ভব কিছু না।
কিন্তু তার আগে শিকারকে তো জায়গা মত আনা লাগবে। কিন্তু আনব কিভাবে – তাকে তো আর বললেই সে আসবে না।

এক রাতে কথা বলছি আর গিটার বাজিয়ে শুনাচ্ছিলাম আফসানাকে। গিটারের শব্দ শুনে আম্মু ঘুম থেকে জেগে উঠল। আমাকে এত রাতে গিটার বাজাতে দেখে – দুই চারটা কথা শুনিয়ে গেল।
আফসানার সাথে ফোন লাইনটা কাটা হয়নি – তাই আম্মুর ঐ দুই-চারটা আফসানা শুনতে পেল। আম্মু যাওয়ার পর থেকে শুরু করল আমাকে ভীতু ভীতু বলে ক্ষেপানো। আমি নাকি ভীতু – আম্মুকে সত্যি কথা বলতে পারি না, মেয়ের সাথে কথা বলছি এটা বলতে পারি না – বলি গান শুনছি।
মেজাজ গরম হয়ে গেল আফসানার কথা শুনে। আমি ওকে মেরে ফেলার চিন্তা করছি আর সে কিনা আমাকে ভীতু বলে। অবশ্য এই কথাটা সে জানেনা। আমার রাগ তখন চরম মাত্রায় – আর ঐদিকে আফসানা ভীতু ভীতু বলেই যাচ্ছে।
রেগে-মেগে শেষ পর্যন্ত বলে দিলাম, ‘আমাকে ভীতু বলবে না – জানো আমি কি সাহসের কাজ করেছি?’

‘কি সাহসের কাজটা করেছেন মহাশয়?’ তখনও তাচ্ছিল্যের সুরেই শয়তানি হাসিতে কথা বলে যাচ্ছিল আফসানা।

‘আম্মুকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।’ ধাম করে একটা মিথ্যে কথা বলে দিলাম।
কথায় কাজ হল। চমকে গেল আফসানা। জিজ্ঞেস করতে লাগল কি কি বলেছি। যেহেতু মিথ্যেই বলছি – তো আর বাকী মিথ্যে গুলো বলতে খুব একটা কষ্ট হল না আমার।
‘বলেছি, যা সত্য তাই বলেছি।’

শেষে এইটুকও যোগ করেছি যে – আম্মু তাকে দেখতে চায়, অচিরেই যেন তাকে আম্মুর সামনে নিয়ে এসে উপস্থাপন করি।
‘কি?’ আফসানা আগের থেকে আরও বেশি অবাক হল আমার এই কথা শুনে।

‘বললামই তো। তবে আমি বলে দিয়েছি তুমি আসতে পারবে না।’

‘কেন বলছো? আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছিলা আগে যে, পারব কি পারব না?’

‘মানে কি? তুমি পারবে আসতে?’

‘জানিনা আমি। কিন্তু তুমি কেন বলেছো?’
ব্যস, শুরু হয়ে গেল তার প্যান-প্যান। কেন তাকে না জানিয়েই আম্মুকে বলেছি সে আসতে পারবে না – জ্বালিয়ে খেল কয়েকটা দিন এই প্রশ্ন করতে করতে।
শেষে একদিন নিজেই বলল সে আসবে। কবে আসতে হবে তাকে?

বাহ! মিথ্যেটা কাজে লেগে গেল। একটা নতুন জিনিস সম্পর্কেও জানতে পারলাম – মেয়েদেরকে অনেক বলেঅ কিছু করানো যায় না, কিন্তু তার অনুমতি না নিয়ে যদি বলা হয় সে পারবে না – তাহলে মেয়েরা ঐটা করবেই।
আফসানা ক্ষেত্রেও তাই হল।

কবে তাকে আসতে বলব – ভাবছি। একসপ্তাহ পরের একটা দিন ঠিক করে দিলাম তাকে – ঐদিন আম্মু বাসায়ই থাকবে। ঐদিন আসলেই ভাল হবে।
আসলে ঐদিন কেন? আমি আসলে ঐ পুরো সপ্তাহই বাসায় থাকবে না। এনজিও এর একটা কাজে একটা গ্রামের অফিসে যেতে হবে। সেখানেই থাকা লাগবে সাতদিন। আর আব্বুতো দুই মাসের জন্য সিংগাপুর।
বাসা একদম খালি। আফসানাকে মারতে আমার কোন কষ্টই হবে না।

স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছিলাম – ট্রেনের আসতে লেট। বসে থাকতে থাকতে থাকতে বিরক্ত হচ্ছিলাম।
ট্রেন আসল প্রায় আধাঘন্টা পর।

ট্রেন থেকে একটা সাদা পরী নেমে উদ্ভাসিত করল পুরো স্টেশনটাকে। হ্যা ওটাই আফসানা।
আমিই বলেছিলাম তাকে সাদা জামা পড়ে আসতে। কারন ওকে মারার পর – সাদা জামাটা আস্তে আস্তে লাল হয়ে যাবে। সেই লালটা যাতে পরিপূর্ন লাল হয় তার জন্যই সাদা পড়ে আসতে বলেছিলাম।
কিন্তু সাদাতে যে তাকে ভাল দেখাবে ভাবতে পারিনি। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আফসানার দিকে। তার রূপের ঝটকায় হারিয়ে গেলাম কোন রাজ্যে।

অবশ্য সেই রাজ্য থেকে কান ধরে টেনে নামিয়ে আনল সে নিজেই।
‘হা করে কি দেখছো গর্দভ?’

‘তোমাকে।’

‘হইছে! অত দেখা লাগবে না। এখন তোমার বাসায় নিয়ে চল – আমার প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে। তোমার আম্মুর হাতের রান্না করা খাবার খাব।’

কল্পনার রাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম। আফসানা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু আমি তাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলাম।
ওর ক্ষুদা লেগেছে – লাগুক। প্রথম দেখা – একটু তো ঘুরা লাগেই। আর এটাই শেষ দেখাও – ঘুরার শখ আহ্লাদটাও মিটিয়ে নিলাম।

অনেকক্ষন ঘুরাঘুরি করার পর যখন বাসায় আসলাম – তখন আচমকা মনে হয়েছে এমন একটা ভাব নিয়ে বললাম যে, আম্মুতো নেই এখন – কোথায় জানি গিয়েছে, আসতে বিকাল হবে।
শুনে রাগ করল আফসানা। রাগ করাটাই স্বাভাবিক। যার সাথে দেখা করার জন্য তার আসা – সেই মানুষটাই নেই, আর সেইটা আমি জানার পরও তাকে বলিনি।
আমার কোন খারাপ মতলব আছে – এটা যাতে না বুঝে যায়, তার জন্য বললাম, ‘তুমি বস - আজকে আমি তোমাকে রেধে খাওয়াব।’
আমার রান্না করার কথা শুনে হেসে ফেলল আফসানা। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, ‘কি রেধে খাওয়াবে শুনি?’

যাক বাঁচলাম – কোন কিছু সন্দেহ করে নি। বরং মেনেই নিয়েছে।

আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম আর আফসানা ঘুরে ঘুরে বাসাটা দেখতে লাগল। এঘর-ওঘর ঘুরে আমার রুমটায় আসল।
রুমের অগোছালো অবস্থা দেখে – বোধহয় ভ্রূ কুঁচকে উঠেছিল তার।
রান্নাঘর থেকে যখন আমার রুমে গেলাম তখন দেখি আমার রুমটা গোছগাছ করছে সে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম তার পিছনে। পকেট থেকে ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমালটা বের করলাম।

তার পিছে গিয়ে দাড়িয়েছি বোধহয় টের পেয়েছে সে। ঘুরে দাড়াল। মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট – বুঝতেই পারছিলাম, আমার অগোছালো রুমটাই তার জন্য দায়ী।
কিন্তু ঘুরে আমাকে কিচেন এপ্রনে দেখে রাগটা চলে গেল আফসানার –হেসে দিল। আমিও হাসলাম। সেও হাসছে – এরই মাঝে রুমালটা চেপে ধরলাম তার নাকে। কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখলাম – আফসানা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে।

অজ্ঞান অবস্থায় তাকে নিয়ে বসালাম চেয়ারে – শক্ত করে বাধলাম যাতে ছুটতে না পারে। ড্রয়ার থেকে গিয়ে স্কালপেলটা বের করে আনলাম। গতকালই কিনেছি স্কালপেলটা – ব্লেডটা এখনো কিছুর ছোয়া পায়নি।
কিছু ছোয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে ব্লেডটা। ‘কাঁদিস না বাবা – তোর বিজনেসে তোকে নামাচ্ছি।’ ব্লেডটাকে এই বলে স্বান্তনা দিয়ে অগ্রসর হলাম আফসানার দিকে।
অজ্ঞান হয়ে আছে মেয়েটা। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে মারতে ইচ্ছে হল না – তারও তো দেখা উচিত আমি তাকে কিভাবে মারছি। পানি এনে ছিটিয়ে দিলাম মুখের উপর।
জ্ঞান ফিরে আসল তার। নিজেকে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় আর আমাকে কঠিন মুখে স্কালপেল হাতে দেখে কিছুটা অবাক হল আফসানা।
‘এসব কি হচ্ছে অর্ক?’

‘কিছু না তো – জাস্ট ব্লেডটার ধার চেক করার ইচ্ছা হল।’ বলে ব্লেডের ধার চেক করার জন্য দুই হাতের রগে ফেস দিলাম।
যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠল আফসানা। এইরে! ভুল করে ফেলেছি – আফসানার চিৎকার যদি কেউ শুনে ফেলে। তাড়াতাড়ি একটা কাপড় এনে মুখে গুজে দিলাম – যাতে তার চিৎকারের শব্দটা কেউ না শুনতে পারে।

এরপর স্কালপেলটা দিয়ে গালে আঁচড় দিয়ে যেতে লাগলাম। গাল দুটো ফোলা ফোলা ছিল আফসানার – বেশি আকৃষ্ট করছিল আমাকে। তাই আঁচড় দিয়েই যেতে থাকলাম।
যন্ত্রনায় গোঙাচ্ছিল আফসানা। আসলে চিৎকারই করছিল – মুখে কাপড় গুজে রাখায় ঐটাই গোঙানোর মত মনে হচ্ছিল। ব্লেডটা ধরে গলার কাছাকাছি আনলাম – ঢুকিয়ে দিলাম কিছুটা অংশ।
একপাশ থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে মাঝের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছি আফসানাকে। কিন্তু ওর করূন চাহুনী দেখে আর দিতে ইচ্ছে করল না। ব্লেডটা শ্বাস নালীর কাছে এনে কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে চেয়ে কেটেদিলাম।
নিথর হয়ে গেল আফসানা। নড়ানড়ি বন্ধ হল – গোঙানো বন্ধ হল। যন্ত্রনা পাওয়াটাও বন্ধ হল তার।

নিথর দেহটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। কি করব এখন? এখানে রেখে দিলে পুলিশে এসে আমাকে ধরবে।
একটা বড়সড় ব্যাগ চোখে পড়ল আমার। কিন্তু ওতে তো আফসানার পুরো দেহটা ঢুকবে না। পার্ট পার্ট করে ঢুকানো লাগবে। কেটে ছোট ছোট করলাম আফসানাকে। ব্যাগে ভরে ফেলে দিয়ে আসলাম দূরের এলাকার এক নির্জন জংগলে।

মনে শান্তি পেলাম – আফসানা আর আমাকে ভালবাসতে পারবে না।”

রুদ্ধশ্বাসে গল্পটা পড়ে গেল নিশি। প্রথম দিকটায় মুখে হাসি থাকলেও শেষ দিকটায় আর রইল না ভয়ে পেয়ে গেছে।
এত ভয়ংকর সাইকো খুনীর গল্প লিখতে পারে অর্ক। অর্কের বাচ্চা বাচ্চা চেহারা দেখে তো ভাবাই যায় না।
যাই হোক – অতশত না ভেবে পরের গল্পটা পড়া শুরু করল নিশি।

‘নিরার খুন
৭ নভেম্বর, ২০১২’

একই রকম টাইটেল দেখে অবাক হল নিশি। শুরুর দিকের পরিচয়ের পর্বটা ভিন্ন হলেও শেষের দিকটা একই রকম। আফসানার মতই নিরাকেও কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে জংগলে ফেলে দিয়ে এসেছে সাইকো খুনীটা।

এরপর বাকী গুলো পড়তে লাগল। কি আজব সব গুলোই একরকম। শেষের কাহিনী একই সবকয়টাতে।
ডায়েরির একটা পাতায় এসে চোখ থমকে গেল নিশির।

লেখা,
‘নিশির খুন
৫ মে, ২০১৪।’

তার নামটা দেখেই অবাক হল নিশি। টাইটেলটা দেওয়া হয়েছে – কিন্তু এখনও লেখা হয়নি কিছুই।
নিশি বুঝতে পারল – অর্ক আসলে কোন সাইকো খুনীর গল্প লিখেনি। নিজের কাহিনীই লিখেছে – কারন সাইকো খুনীটা অর্কই।

নিশি টের পেল তার পিছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে। বুঝতে বাকী রইল না কে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ক!!!

*

ডায়েরীর লেখা অনুযায়ী অর্কের ড্রয়ারে একটা স্কালপেল থাকার কথা। ড্রয়ারটা নিজের শরীর দিয়ে ঢেকে খুলে অতি সন্তর্পনে বের করল নিশি।
হাতে ঠিক ভাবে ধরে নিল স্কালপেলটা। ঘুরল অর্কের দিকে।
অর্ক কিচেন এপ্রনটা পড়ে বাচ্চা চেহারায় বোকা বোকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত দুটো পিছনে অর্কের। নিশির বুঝতে বাকি রইল না – হাত পিছনে রেখে ক্লোরোফর্ম দেওয়া রুমালটা লুকোতে চাচ্ছে।

অর্ক যদিও বোকা বোকা হাসিতে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু নিশির কেমন জানি হাসিটা নিরীহ লাগছে না। পৈশাচিক মনে হচ্ছে হাসিটা তার কাছে।
স্কালপেলটা শক্ত করে ধরে রাখল নিশি – জানেনা এটা দিয়ে কি করবে, কিন্তু যে কোন মুহুর্তের বিপদ এড়াতে এই স্কালপেলটাই তার সবচেয়ে বড় ভরসা।
অর্কের পিছনে রাখা হাত দুটোকে কঠিন নজরে রাখছে। হাত দুটো পিছন থেকে সামনে আসতে দেখলেই স্কালপেলটা ব্যবহার করবে সে।

নিশি অদ্ভুত আচরন করছে – কেন করছে ভাল করেই জানে অর্ক। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেকোন ধরনের অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাকে বুঝানোর জন্য হাত সামনে এনে বলতে গেল ‘নিশি, ব্যাপার আসলে হল………’ আর হাত সামনে আসতে দেখেই – স্কালপেলের ব্লেডটা অর্কের দিকে তাক করে সজোরে হাত ঘুরাল নিশি।
ঘুরানোর সময় স্কালপেলের ক্ষুরধার ব্লেডটা অর্কে গলা স্পর্শ করল। গলাটা ফাক হয়ে গেল – ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল অর্ক। গলার কাটা ফাকটা থেকে গলগলিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগল।
এতরক্ত দেখে মাথা ঘুরানো শুরু করেছে নিশির – মনে হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তার আবার ব্লাড ফোবিয়া আছে। সামান্য রক্ত দেখলেও সে বেহুশ হয়ে যায় – আর এখানে তো রক্তের সাগর।
তারপরও বেহুশ হয়নি এখনও নিশি – শুধু মাত্র মাথাটা ঘুরানো শুরু করেছে। বেহুশ হয়নি এইভেবে যে এই রক্ত কোন মানুষের না – একটা মানুষরূপী পিশাচের।

হালকা রক্ত মাখা স্কালপেলটা আবার জায়গামত রাখতে গিয়ে আরেকটা ডায়েরী নজরে পড়ল। ডায়েরীটার উপরে লেখা সারপ্রাইজ। কৌতুহল জমল ডায়েরীটার উপর – একটা খুন করে ফেলেছে, বাঁচতে হলে এখন চলে যাওয়া উচিত, কিন্তু কৌতুহল দমাতে না পেরে ডায়েরীটা খুলে পড়া শুরু করল।

“অনেক কষ্টে নিশির জন্য সারপ্রাইজটা তৈরি করলাম।
কালো ডায়েরীর একটা একটা করে খুনের কাহিনী লিখতে গিয়ে – আরেকটু হলে আমি নিজেই সাইকো হয়ে যেতাম। সাধারন গল্প লেখা তো সহজ – কিন্তু এসব খুনের গল্প লেখা অসম্ভভ রকমের কঠিন।
কান ধরলাম আর জীবনেও এইধরনের গল্প লিখব না। এবারও তো চাই নি – কিন্তু নিশিকে একটা চমকপ্রদ সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই লিখতে হল।

নিশিকে যখন একটি মিথ্যে বললাম, যে আম্মু তাকে আসতে বলেছে – পাগলিটা তা বিশ্বাস করে ফেলেছে। সে যাতে না আসে তার জন্য আমিই বললাম যে সে আসতে পারবে না।
কেন এই কথা বলছি – এটা নিয়ে আমাকেই ঝাড়া শুরু করল। কয়েকদিন ঝাড়ি-টাড়ি দেওয়ার পর ভাবলাম হয়ত এখন একটূ শান্ত হবে, ভুলে যাবে ব্যাপারটা। নাহ, উলটো আসবে বলেই ঠিক করে নিল।
তখন আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না – একে তো আম্মুকে বলিনি, সে আসলে এইদিক দিয়ে পড়তে পারি একবিপদে – আবার নিশিকে যদি না করি আসার জন্য তাহলে আরেক বিপদে পড়ে যাব।

নিশিকে না করতে পারিনি – নিশি আসছেই। কিন্তু এইদিকে আম্মুকেও তো ম্যানেজ করা লাগবে – ভীত সন্ত্রস্ত মনে গেলাম আম্মুকে বলতে।
খুলে বললাম সব আম্মুকে। সব শোনার পর – আম্মু করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে।
ছেলে যে এত বড় হয়ে গেছে – ব্যাপারটা হজম করতে বেশ কষ্ট হল মনে হল আম্মুর। যাইহোক – বকাঝকা করে নি মেনে নিল সব। তখন আম্মুকে বললাম যে আমার একটা প্ল্যান আছে – একটা মেয়ের এত সাহস করে সম্পূর্ন অপরিচিত ছেলের বাসায় আসার সিদ্ধান্তটা যে ঠিক না ওটা বুঝানোর জন্য একটা শিক্ষা দিতে চাই।

আম্মুকে বললাম যে ঐদিন বাসায় থাকতে পারবে না তুমি। শুনে আম্মু আবারও টাশকি খেল। ভ্রু কুঁচকে হয়ত ভাবছিল – খালি বাসায় আমি কি করতে চাই।
আম্মুর ভাবনা বুঝতে পেরে সব খুলে বললাম – আম্মু যা ভাবছিল তার জন্য না, শিক্ষাটা দেওয়ার জন্যই বাসা খালি দরকার আমার। আম্মু জানতে চাইলেন যে – তাহলে উনি ঐদিন সারাদিন কি করবেন।
বললাম, ‘নিশির বাসায় চলে যাবে। নিশির আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলে বিয়ের কথাটা পাকা করে ফেলবে।’
শুনে আম্মু হেসে ফেললেন। বললেন, ‘এত তাড়া কিসের বিয়ে করার?’
আম্মুর কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম। দৌড়ে পালালাম আম্মুর ঐখান থেকে।

এরপর অবশ্য নিশির আব্বু-আম্মুর সাথেও কথা হল আম্মুর। ফোনেই সব পাকাপাকি করে ফেললেন তারা মিলে। নিশি যেদিন আমাদের বাসায় আসবে – ঐদিন আম্মু উনাদের বাসায়ও যাবেন এটাও বললেন।
আমার নিশিকে ছোট্ট একটা শিক্ষা দেওয়ার প্ল্যান আছে ঐটাও জানানো হল তাদেরকে।

নির্দিষ্ট দিনে আম্মু নিশিদের বাসায় যাবে একট্রেনে – আর নিশি আসবে আরেকট্রেনে। নিশিকে নিয়ে ঘুরব কিছুটা – তারপর বাসায় আসব। তারপর আম্মু বাসায় নেই, আমি ভুলে গিয়েছিলাম অযুহাতটা দিব।
আমি রান্না করতে চাইব – ঠিক যেমনটা খুনের গল্পগুলোতে লিখে রেখেছি তাই তাই করব। অনেকদিনের তৈরি করা প্ল্যান আমার – উত্তেজনার বসে ভেস্তে দিতে চাই না। যথাসম্ভব কম কথা বলে বলে নিশি থেকে দূরে থাকতে হবে আমার।

বাসায় আসার পর নিশি স্বভাব সুলভ ভাবেই আমার রুমটা দেখতে যাবে। এলোমেলো ঘরটা দেখে নাক সিটকাবে – গোয়ালিঘর বলে গালিও দিতে পারে। তারপর আমার টেবিলে রাখা ‘আমার খুনের গল্প’ শিরোনামের কালো ডায়েরীটা দেখবে।
গল্প পড়ার অভ্যাসবসতই গল্প মনে করে ডায়েরীটা খুলে পড়া শুরু করবে। প্রথম গল্পটা পড়ে গল্প মনে করলেও – পরের গুলো পরে ঠিকই আমাকে সাইকো খুনী ভাববে। ডায়েরীর লেখা অনুযায়ী ড্রয়ারে স্কালপেল আছে ভেবে ড্রয়ারটা খুলবে – খুলে স্কালপেল সাথে ‘সারপ্রাইজ’ নামের আরেকটা ডায়েরী পাবে।

তখনই তার পিছন পিছন গিয়ে আমি দাড়াব। নিশি ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকাবে। কাঁপতে থাকবে।
অনেকক্ষন এভাবেই থাকবে। আমাকে তার দিকে এগুতে দেখলেই ভয়ে পিছিয়ে যাবে। আর ঠিক তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠবে। আসবে নিশির আব্বু-আম্মু, আমার আম্মু। সবাই মিলে ভয়ার্ত নিশিকে সারপ্রাইজ করবে।

এরপর বেশ গম্ভীর কন্ঠে নিশির উদ্দেশ্যে বলব ‘মানুষকে এত সহজে বিশ্বাস করাটা বোকামি। এত বড় বোকামী করলে কি হবে? যদি ডায়েরীর লেখা গুলো আসলেই সত্যি হত?’

এরপর আর আমি জানিনা। ঐটা নিশিই জানে। এই ভয় পাওয়ানোর প্রতিশোধ ভালভাবেই নিবে – এইটুক আন্দাজ করতে পারছি। সত্যি কথা বলতে আমি নিজেই ভয়ে ভয়ে আছি।”

ডায়েরীর শেষ লেখা গুলো পড়ার নিশির চোখ টলমল করে উঠল – ফোটায় ফোটায় অশ্রু পড়তে লাগল তার গাল বেয়ে। অর্ক সাইকো ছিলনা – ঐ ডায়েরীর লেখা গুলো শুধুই গল্প ছিল, কোন সত্যতা ছিল না ওগুলোতে। সে যে ভুলটা করেছিল – সেই ভুলটার একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিল অর্ক। দিতে চেয়েছিল একটা সারপ্রাইজও।

অর্কের শিক্ষা দেওয়াটা আর হল না – হল না সারপ্রাইজ দেওয়াটাও। অর্ক পরের ডায়েরীটাতে লিখেছিল ‘এই ভয় দেখানোর প্রতিশোধ নিশি ভালভাবেই নিবে’ – নিশি ভালভাবেই নিল। এরচেয়ে ভালভাবে তো আর প্রতিশোধ নেওয়া যায় না।।
সারপ্রাইজটা নিশিকে অর্ক দিতে চেয়েছিল – কিন্তু নিশি নিজেই নিজেকে তার চেয়েও বড় এক সারপ্রাইজ দিয়ে দিয়েছে।

নিথর অর্কের দেহের দিকে তাকাল নিশি। এখনও রক্ত পড়ছে গলার কাটাটা দিয়ে।

[অনেক আগের একটি লেখা। অনলাইনে বহুবার প্রকাশিত। একবার একটি সংকলনে ছাপা হবে হবে করেও হয়নি, অনেক বড় গল্প বলে। তাই, এটা এতদিন চোখের অদূরেই ছিল। আজকে আবার সামনে পড়লো। শেষবারের মত আবার শেয়ার করলাম এটা।]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৫
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×